মুক্তমনার ব্যবচ্ছেদ!
লিখেছেন লিখেছেন Hossain Al Irfan ২৪ মে, ২০১৩, ১০:২৪:১৯ রাত
আস্তিকতা-নাস্তিকতা, ইসলাম-বৈরীতা, মুখোশ উন্মোচন :
কেউ ‘মুক্তমনা’ কেন জিজ্ঞেস করলে গতানুগতিক ভুংভাং ছাড়া সন্তোষজনক কোন উত্তর অধিকাংশ মুক্তমনারাই দিতে পারবে কিনা সন্দেহ! জানা উত্তরগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে ধর্ম খারাপ (সম্ভবত একমাত্র ইসলাম!), ধর্মের কারণে অশান্তি ইত্যাদি তাই তারা মুক্তমনা- ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এটাই সারকথা। প্যারাসাইটের মতো ধর্মের খারাপের মধ্যেই মুক্তমনা হবার কারণ নিহীত, মুক্তমনা মতবাদের নিজস্ব স্বকীয়তার জন্য নয়! নয়তো ইসলামের জন্য তারা যে সময় দেয় তার কানাকড়ি তাদের মতবাদের পক্ষে দিতো। এখানে বাড়িয়ে কিছুই বলা হয় নাই (হায় কপাল- ইসলামের কাছে চার্বাক দর্শনও 'অচ্ছুৎ' হয়ে গেল!)
স্বকীয়তাহীনতার মধ্যেও মুক্তমনাগো কিছু বৈশিষ্ট্য খুব নজরকাড়া! বিজ্ঞান-মনস্ক হবার কারণে, প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা না করেই তারা উপসংহারে আসতে পারে। উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে না, প্রয়োজনও মনে করে না। তবে প্রশ্ন করতে ভালবাসে, কারণ প্রশ্নবাণে ছেড়াবেড়া করে ফেলার আরেক নাম মুক্তমনা!
মুক্তমনাদের ইসলাম সচেতনতা দেখে মনে হবে পৃথিবীর প্রধান সমস্যা ইসলাম! কিন্তু সমালোচনা করতেওতো যোগ্যতা লাগে। খৃস্টান মিশনারী জাতীয় সাইট দিয়া কপিপেস্টের কাজ সমালোচনা নয় অথবা বজরংদল ও শিবসেনাদের বলা কথাগুলারে ঘুরাইয়া পেঁচাইয়া বলার মধ্যে অন্ততঃপক্ষে যোগ্যতা থাকে না! তবে এসব ঢাকতে আবার বিশেষজ্ঞের ভান করতে হয়!
মুক্তমনারা গল্প লিখতে ভালবাসে। শৈশবের মাদ্রাসার জীবনকাহিনী তাদের চেয়ে ভাল কেউ বলতে পারে না, হুজুরেরাও ফেইল। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের মুসলমানিত্বের কাহিনী রচনায় অনন্যতা তাদের নিন্দুকেরাও অস্বীকার করতে পারে না। তাদের মুসলিম পরিচয় নিয়া ব্যাপক সন্দেহ থাকলেও সেটা গল্পের মানকে কমাতে পারে না। আর ব্যাকগ্রাউন্ড যাই হোক নিজেরে সাচ্চা মুসলমান বইলা পরিচয় দিতে ইন্টারনেট এর চাইতে ভালো আর কোন মাধ্যম বোধ করি হইতে পারে না।
ইসলাম বিদ্বেষের বাইরে তাদের ধ্যান-জ্ঞান খালি বিজ্ঞান! বিবর্তনবাদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান নো কম্প্রোমাইজ! বুইঝা বা না বুইঝা বিবর্তনবাদের স্তুতির মধ্যে তাদের ওজন বাড়ার একটা ব্যাপার আছে। বিবর্তনবাদ নিয়া উচ্ছ্বাস ব্যারোমিটারের মত মুক্তমনরে মাপা হয়। যত উচ্ছ্বাস তত জাতে উঠা। ভোগবাদী মানসিকতার জন্য পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতি আলগা উচ্ছ্বাসও কাজ করে। বিবর্তনবাদের উৎপত্তি, প্রয়োগ (ইউজেনিক্স) ও বিবর্তনবাদের সিড়িতে অগ্রভাগে থাকা পাশ্চাত্যদের (কম উন্নতরা অধিকতর উন্নতদের অনুসরণ করবে সেটাইতো স্বাভাবিক!) কারণে হয়ত এই আবেগ। পাশ্চাত্য দর্শন তাদের প্রগতিশীল (!) করে আর ভারতীয় দর্শন লাবড়ার (নিরামিষ) স্বাদ দেয়। একুল-ওকুল, আস্তিক নাস্তিক নিয়া চিন্তার কিছু নাই সব কুলের সংস্থানই লাবড়ায় আছে!
জনমানসে নাস্তিকদের প্রতি নৈতিকতাহীনতার যে স্টেরিওটাইপ বিরাজিত সেটা মুক্তমনারা ভাঙ্গতে পারছে বলেই অনুমান হয়! তাদেরও নৈতিকতা আছে! তবে তা জৈববিবর্তন থেকে উদ্ভুত, তাই পশুপাখির আচরণের ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রতি তাদের জোরালো সমর্থন বিদ্যমান। সমকামীতা (এখানে), অজাচার (এখানে), ধর্ষণ বিবর্তনের হাত ধরে তাদের নৈতিকতাকে সমৃদ্ধ করছে। একদিকে মধু মিশাইয়া মানবতার কথা বললেও, প্রকৃতির দোহাই দিয়াই আরেকদিকে দাঁত ও নখের রাজত্বের প্রতি একনিষ্ঠ সমর্থন দেয়। এই মানবতার দোহাই দিয়াই তারা পুঁজিবাদ তথা ভোগবাদকে শক্তিশালী করে।
তারপরও পুঁজিবাদী/ভোগবাদী বা সমাজবাদী বা বামপন্থী সব ধরণের ইসলাম বিদ্বেষীদের জন্যই তাদের খোয়াড় খোলা। বিভিন্ন বাদ ও পন্থার এসব বিভাজন মুক্তমনা হবার পথের অন্তরায় নয়। বস্তুবাদ এমনই এক জিনিষ- পুঁজিবাদ ও বামপন্থার মধ্যে দূরত্ব ঘোচাইয়া দেয়! বামপন্থী হইলে সময়ে সময়ে পুঁজিবাদীগো উষ্ঠা-বিষ্ঠা খাইতে হইতে হয়, তবে মানায়ে নিতে পারলে মুক্তমনার সন্মানটা তারা ঠিকই পায়। বস্তুবাদের নামে পুঁজিবাদের উচ্ছিষ্টরে অমৃতসম মনে করা অনেক খ্যাতনামা বামপন্থীদের দৃষ্টান্ত আছে।
তারা আশাবাদী, মানুষকে আশার কথা শোনায়, স্বপ্ন দেখায় ধর্মহীন সমাজের। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে কিছুদিনের জন্য বোকা বানানো যায় কিন্তু তাদের আজীবনের জন্য বোকা বানানো যায় না। বলার অপেক্ষা রাখে না এই বোকারা ধার্মিক! তাদের এধরণের আশাবাদ কয়েক হাজার বছর আগে চার্বাকরাও করেছে। কিন্তু হাজার বছরেও বোকাদের সংখ্যা কমে নাই! আলেয়ার আগুনের কেরামতি খোলস হইবার পরেও দলে দলে বোকাগুলা চালাক হইয়া অবিশ্বাসের খাতায় নাম লিখায় নাই। মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে আগের চাইতে উন্নত হইছে, এইবার যদি বোকাদের সংখ্যা কমে! আশার শেষ নাই! আশায় ভিটামিন আছে, বিশ্বাসের (!) জন্য উপকারী!
সৌজন্য শামস্ ভাই ......
বিষয়: বিবিধ
১৬০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন