কোরআনের ওপেন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মত কোন নাস্তিক আছেন কি ?

লিখেছেন লিখেছেন Hossain Al Irfan ২৩ মে, ২০১৩, ১২:০২:০৪ রাত

১ম পর্ব

“আমি আমার বন্দার প্রতি যাহা অবতীর্ন করেছি, তাহাতে তোমাদের বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ থাকলে, তোমরা ইহার অনুরুপ কোন সূরা আনয়ন কর। এবং তোমরা যদি সত্যবাদি হও তাহলে আল্লাহ ব্যাতিত তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে নিয়ে আস। যদি আনয়ন না কর তবে সেই আগুনকে ভয় কর কাফিরদের জন্য যাহা প্রস্তুত করিয়া রাখা হয়েছে। (সূরা বাকারা:২৩, ২৪)।

এটা এমন এক বিষ্ময়কর কথা, যা মানব ইতিহাসে কোন গ্রন্থকারই নিজের বইয়ের পক্ষে দাবি করেন নি এবং জ্ঞানবুদ্ধি থাকা অবস্থায় কোন মানুষই এমন সাহস করতে পারবেন না যে, সে কোরআনের মত একটা বই লিখে ফেলেছে।

কোরআনের এই চ্যালেঞ্জ চলে আসছে সেই কোরআন নাযিলের সময় থেকে। শত শথ লোক, শত শত সংগঠন এই চ্যালেঞ্জ এর মোকাবেলা করতে এগিয়ে এসেছে। চরমভাবে ব্যার্থ হয়ে সম্পূর্ণ নিরাস হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাদের সাবাইকেই।

দুটি ঘটনা :

১. লবিদ বিন রাবিয়া। তৎকালীন আরবের শেষ্ঠ কবি। তার শক্তিশালী ভাষা আর তেজোদিপ্ত ভাব তাকে সারা আরবে পরিচিত করে তুলেছিল। উনি যখন কোরআনের এই চ্যালেঞ্জের কথা জানলেন তখন জবাবে একটি কবিতা রচনা করে কাবা শরীফের চৌকাঠের উপর ঝুলিয়ে রাখলেন। পরে একজন মুসলমান কোরআনের একটি সূরা লিখে ঐ কিতাবের পাশে ঝুলিয়ে দেন।

লবিদ পরের দিন কাবার দরজায় এলেন এবং ঐ সূরা পাঠ করলেন। অত:পর বললেন, “নি:সন্দেহে এটা মানুষের কথা নয় এবং আমি এর উপর ইমান আনলাম” অত:পর তিনি প্রকাশ্য কালেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। তিনি কোরআনের ভাব আর ভাষায এতো বেশী প্রভাবান্নিত হন যে, পরবর্তীতে তিনি আর কোনদিন কোন কবিতাই রচনা করেন নি।

২. দ্বিতীয় ঘটনাটি হল ইবনে মুকাফ্ফা এর। যা ঘটে কোরআন নাযিলের প্রায ১০০ বছর পর। এই ঘটনা প্রথমটির চাইতেও চাঞ্চল্যকর। এই ঘটনা সম্বন্ধে প্রাচ্যবিদ Wollaston বলেন “That Muhammad is boast as to the literary excellence of Quran was not unfounded is further evidence by a circumstance which occurred about a century after the establishment of Islam”

ঘটনাটি এরকম, ধর্মবিরোধীদের একটি সংগঠন সিদ্ধান্ত নিল ওরা কোরআনের অনুরুপ একটি বই লিখবে। এই লক্ষে ওরা ইবনে মুকাফ্ফার (মৃত্যু-৭২৭ খৃ) কাছে এলো। যিনি ছিলেন ঐ সময়ের সবথেকে জ্ঞানী, প্রখ্যাতি সাহিত্যিক এবং বিষ্ময়কর প্রতিভার অধিকারী। তিনি তার নিজের কাজের উপর এতো বেশী আস্থাবান ছিলেন যে উনি সাথে সাথে রাজি হয়ে যান। এবং বলেন এক বছরের মধ্যে তিনি কাজটি করে দিবেন। শর্ত ছিল এই এক বছরকাল সময়টা যাতে তিনি পুরোপুরি মনোযোগের সাথে সূরা রচনা চালিয়ে যেতে পারেন এ জন্য তার যাবতীয় সাংসারিক আর অর্থনৈতিক কাজের দায়িত্ব সংগঠনটিকে নিতে হবে।

ছ’মাস পেরিয়ে গেলে সঙ্গিরা কি পরিমান কাজ হয়েছে জানার জন্য তার কাছে এলো। তারা দেখতে পেল বিখ্যাত ঐ ইরানী সাহিত্যিক অত্যন্ত ধ্যানমগ্ন অবস্থায় হাতে একটি কলম নিয়ে বসে আছেন; তার সামনে রয়েছে একটি সাদা কাগজ এবং কক্ষের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছিড়েফারা কাগজের স্তুপ। অসীম প্রতিভাধর, যাদুকরী ভাষার অধিকারী ঐ ব্যাক্তি আপন সর্বশক্তি ব্যায় করে ছয়মাস চেষ্টা করে কোরআন তো দূরের পথ একটি আয়াতও রচনা করে উপস্থাপন করতে পারেন নি।

যা হোক শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত লজ্জিত ও নৈরাশ্যমনে তিনি কাজে ইস্তফা দেন। এই ঘটনাটি ঘটেছিল কোরআন নাযিলের ১০০ বছর পর। কুরআনের ঐ চ্যালেঞ্জ কত শতাব্দি পেরিয়ে গেছে আজো বিদ্যমান। এই চ্যালেঞ্জ থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত।

সত্য প্রত্যাখানকারীরা কি ভেবে দেখে না পৃথিবীর তাবত তাগুতি শক্তি কিভাবে পরাজিত হয়ে আছে কোরআনের কাছে ?

কোরআন নাজিলের সময় বৈজ্ঞানিক পরিস্থিতি :

সপ্তম শতাব্দিতে কোরআন নাযিল হয়। মানুষ তখন পযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে কুসংস্কার ও প্রাচীন উপকথায় বিশ্বাসী ছিল। তখন মানুষ মহাবিশ্ব, পদার্থ, জীববিজ্ঞান, মানুষের সৃষ্টি, বায়ুমন্ডলের গঠন এবং জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় উপাদান ইত্যাদি সম্বন্ধে সঠিক কিছুই জানতো না। এই যেমন-

সে সময় তারা বিশ্বাস করত যে,

১. পৃথিবী সমতল। গোলাকার নয়।

২. পাহাড় আকাশকে ধরে রাখে। অর্থাৎ পাহাড় হল আকাশের খুটি বা স্তম্ভ।

৩. পৃথিবীর দুই প্রান্তে বিশাল বিশাল পাহাড় আছে।

৪. মানুষের শুক্রানুর ভিতরে ছোট্ট একটা মানুষ থাকে। ওটাই মায়ের পেটে বড় হয়।

৫. বাচ্চার লিঙের জন্য মা দায়ি।

৬. গাছের লিঙ্গ নেই।

৭. কর্মি মৌমাছি হল পুরুষ মৌমাছি।

৮. ব্যাথা লাগে মস্তিস্কে। ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এরকম এক সময়, যখন মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের বহর ছিল ঠিক উপরের অবস্থা সেই সময়েই নাযিল হয়েছিল আল-কোরআন। যাতে শুধু বিজ্ঞানের সাথে রিলেটেড আয়াতের সংখ্যাই আছে হাজারের বেশি। অথচ সেই কোরআনেরই ১ টি আয়াতও পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণিত হয় নি। বরং বিজ্ঞানেরই কিছু ভুল ধারণা পরবর্তিতে সংশোধন করলে দেখা গেছে, তা কোরআনের সাথে মিলে গেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৫০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File