লিফ্টের সেই মেয়েটি
লিখেছেন লিখেছেন misbah monjur ০৫ জুন, ২০১৩, ০৮:২১:০৩ রাত
হৃদয় বিছানায় শুয়ে আছে । কিছুতেই রাত কাঠছে না । সময় যেন কিছুতেই যাচ্ছে না । চোখে ঘুম নেই; মনে শান্তি নেই। ঘুমানোর জন্য অনেক চেষ্টা করল; কিন্তু পারলনা । ধীরে ধীরে চলে গেল বাসার ছাদে । চারিদিক কুওয়াশায় ঘেরা। ছাদের উপরের হাছনা হেনা গাছটিও যাচ্ছেনা দেখা । শুধু তার মুগ্ধ করা সুগন্ধ আসছে। হৃদয় ইন্দ্রিয় দ্বারা হাছনা হেনার সুগন্ধী উপভোগ করছে। বৃষ্টির মত ঝিরঝির করে কুওয়াশা পড়ছে। হৃদয়ের খুব ঠান্ডা লাগছে। শরীর থরথর করে কাঁপছে। তবুও তার ভালো লাগছে। চারিপাশে নিঃশব্দ। শুধু মাত্র বাসার পাশের বাগানে শুনা যাচ্ছে কীটপতঙ্গ গুলোর ডাকা বিচিত্র শব্দ। পাশের বাসার পোষা কুকুর গুলো ঘেঁউ ঘেঁউ করছে। হৃদয় ভাবার্থ মনে ছাদের উপরে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রায় এক বছর আগে আল-হামরা মার্কেটে সে ঈদের কাপড় কিনতে গিয়েছিল । নিচে নামার জন্য লিফ্টের সামনে এসে অপেক্ষা করছিল । লিফ্ট এসে যখন থামল । ভিতরে ঢুকেই সে বিস্মিত হলো। লিফটে শুধু মাত্র একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। মেয়েটি হৃদয়ের দিকে একবার তাকালো । অতপর নিচের দিকে চোখ নামিয়ে নিলো। হৃদয়, মেয়েটির চোখ দেখে মুগ্ধ হল। অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকলো। তার জীবনে কোন মেয়ের সাথে এভাবে একা থাকেনি। কোন মেয়ের এতো নিকটে সে দাঁড়ায়নি । কখনো অনুভব করেনি , কোন যুবতী-তরুণী, সুন্দরীর শরীরের সুগন্ধ। এমন ভূবন মোহনী চাহনি; এমন নজর কাড়া দৃষ্টি। হঠাৎ এভাবে একটি মেয়েকে একা পেয়ে আবেগে আত্বহারা হয়ে গেলো। হৃদয় তার জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছে, কিন্তু এমনভাবে কোন মেয়েকে তার ভালোলাগেনি । ভালোলাগা , ভালোবাসা নিয়ে একটিবারও ভাবেনি । ভালোবাসা কাহাকে বলে ? তাও জানেনি। একটি মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় ? তা শিখেনি। লিফটে দাঁড়িয়ে হৃদয় মনে মনে অনুভব করল ভালোবাসা মানে কী। মেয়েটিকে একটা কিছু বলতে চেষ্টা করলো। এমন সময় লিফ্ট এসে গন্তব্য স্থলে পৌঁছে গেলো। মেয়েটি লিফ্ট থেকে নেমে চলে গেল। হৃদয় ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। কী করবে ? কিছুই বুঝল না। মেয়েটির নামই সে জানল না। মাত্র এক মিনিটের দেখা, এক পলকের চাওয়া, তাকে অস্থির করে তুলল।
বাসায় এসে ভাবতে লাগলো: তার মন কেন এমন করছে? কেন মেয়েটিকে দেখার জন্য আগ্রহ জাগছে ? কেন ওর পাশে যেতে ইচ্ছে জাগছে ? কেন মনটা এমন যটপট করছে ? এরই নাম কি প্রেম ? এরই নাম কি ভালোবাসা ? ভাবতে লাগলো : ওর মনটাও কি আমার জন্য এমন করছে…? আমাকে দেখার জন্য ওর কি ইচ্ছা জাগছে। ওই মেয়েটির দেখা পাবো…? না-কি পাবো না ? পাবো… না-কি পাবো না ? ওই সব ভাবছে । মনে মনে বলছে , “এই মেয়ে তুমি এসেছিলে , আবার চলে গেলে । মনে হয় আমার জীবনে বসš— এসেছিলো, আবার চলে গেলো । পাখিরা যেমন করে ফুলের কাছে এসে , ফুলের মধু নিয়ে চলে যায় ; তেমনি করে তুমিও আমার কাছে এসে, আমার মনের সব মাধুরী নিঃশেষ করে নিয়ে, তুমি চলে গেছ”।
দীর্ঘ এক বৎসর মেয়টিকে পথে-প্রান্তরে, হাজারো মুখের ভীড়ে, দিগন্ত রেখায়, আকাশের নীলিমায়, জোৎস্নার শুভ্রতায় , স্বপ্নের নগরে, মেয়েটিকে খোঁজছিলো। অনেক দিন মেয়েটিকে খুঁজতে আল-হামরায় গিয়েছিলো । মেয়েটিকে না পেয়ে একা একা কাঁদছিলো । মেয়েটিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছিলো; অনেক কবিতা লিখছিলো। ঘুমের মধ্যে মেয়েটিকে স্বপ্নে দেখে কেঁদে ওঠছিলো; মাতা-পিতার কাছে প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছিলো। মেয়েটিকে দেখার জন্য কখনো একা একা কাঁদতে-কাঁদতে মানসিক ভারসাম্য প্রায় হারিয়েই ফেলছিলো। দিনের পর দিন; রাতের পর রাত, সাপ্তাহের পর সাপ্তাহ; মাসের পর মাস অতিক্রম করে, এককাল হঠাৎ মেয়েটির দেখা পেলো। অনেক দিন পর মেয়েটিকে পেয়ে, সে পুলকিত, আনন্দিত । আকাশের চাঁদটি যেন হাতে পেলো। অশার মনে একটু সান্তনা পেলো । তথ্য নিয়ে জানতে পারলো মেয়েটি তার পাড়ায় থাকে । বাসায় নতুন এসেছে। দু-তিন বাসার পরেই মেয়েটির বাসা। শুধু এতটুকুই জানে । মেয়েটি কার সাথে আছে; কিভাবে আছে, তা কিছুই জানে না।
হৃদয় ছাদের মধ্যে গম্ভীর মনে মেয়েটির বাসার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ভোরে ঘুম থেকে জেগে মেয়েটির বাসায় যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছাদে অনেক্ষণ থাকার পর নেমে চলে আসলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত তিনটা। সে আর ঘুমাতে চাইল না। ঘুম না আসার জন্য একটি বই পড়তে শুরু করলো। বই পড়ে সারা রাত কাঠিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করলো। কিছুক্ষণ পরপর শুধু ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। আবার কখনো হেঁটে হেঁটে পায়চারী করছে। এ রকম করে রাত কাঠিয়ে দিয়েছে।
বাসা থেকে যখন বের হলো। তখন পূর্বসার প্রান্তে অত্যাসন্ন আলোর ইঙ্গিত। ভোরের অন্ধকার তখনো ধূসর কুওয়াশায় সিলেট শহরকে বেস্টন করে আছে। পৃথিবীর পূর্ব দিগন্তে ওঠেনি সূর্য। কুয়াশার কল-কাকলিতে প্রকৃতি রয়েছে আবিষ্ঠ। কুঞ্জবিতানের ফুল গুলো রয়েছে ঘুমন্ত। অফুরন্ত হাওয়া, পাতার দম্পন, আর ভেজা ঘাষের স্পর্শের মধ্য দিয়ে হৃদয় হাঁটছে। ধীরে ধীরে সামনে এগুচ্ছে। মনে মনে ভাবছে, মেয়েটি কি তাকে চিনবে ? কিভাবে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে? মেয়েটিকে গিয়ে কী বলবে? ও কি তার ভালোবাসাকে সাধরে গ্রহণ করে নিবে? এইসব ভেবে, ভয়ে থরথর করে তার বুক কাঁপছে। প্রচন্ড শীত ! তবুও তার শরীর থেকে ঘাম ঝরছে…
মেয়েটি তার বাসার কুঞ্জবিতানে বসে আছে। পাখির খেলা; প্রকৃতির মেলা দেখছে। হৃদয় দূর থেকে তাকে দেখতে পেলো। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে সামনে অগ্রসর হলো। শরীর জুড়ে তার অজানা এক শিহরণ লাগছে। ভাবছে তার অনেক দিনের অপূর্ণ স্বপ্ন, হয়ত আজ পূরণ হবে । নাম না জানা মেয়েটির নাম, হয়ত আজ জানতে পারবে । দীর্ঘ দিনের না বলা কথা, হয়ত আজ বলতে পারবে । প্রেমের গভীরতা, মনের গহীনতা , কখনো বোঝেনি; হয়ত আজ বুঝবে। মেয়েটি হয়ত তাকে দেখে, লিফ্টের সেই মুগ্ধ করা হাসি উপহার দিবে। ওর হাসিতে পৃথিবীর সবগুলো ফুল উদ্যানে একসঙ্গে ফুটে ওঠবে। হাজার-হাজার ফুল ভ্রমরেরা গুণ-গুণ করে গান গাইবে। এসব ভাবতে ভাবতে, সে সামনে এগুচ্ছে ।
যখন মেয়েটির বাড়ির পাশে চলে গেলো। ভয়ে তার পা-দু’টি কেঁপে ওঠলো। বুকের কম্পন বেড়ে গেলো। শরীরের সমস্থ শক্তি চলে গেলো। আর যেন সামনে এগুতে পারছে না। গলা একেবারে শুকিয়ে গেছে। মনের সাহস চলে গেছে। তবুও অনেক কষ্ট করে মেয়েটির দিকে এগুচ্ছে। মেয়েটি সামনের দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে বসে আছে। হৃদয় মেয়েটির পিছন দিয়ে আসছে। পথ যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছে না। অনেক কষ্ট করে যখন হলো মেয়েটির একেবারে কাছাকাছি; একেবারে পাশাপাশি। তখন মেয়েটির পিছনে দাঁড়িয়ে থাকলো। ভয়ে আর এগুতে পারলো না। কী বলবে? ভাবতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ মেয়েটি পিছনের দিকে তাকালো। হৃদয়কে দেখে কেঁপে ওঠলো। তুরিৎ গতিতে রুমে চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়ালো। হৃদয় কিছুই বলতে পারছে না; কিছুই করতে পারছে না। অনেক কষ্ট করে হাত তুলে মেয়েটিকে দাঁড়ানোর জন্য ইশারা করলো। মেয়েটি দাঁড়ালো। হৃদয়ের দিকে তাকালো। হৃদয় কাঁপতে শুরু করলো! কথা ছিলো অনেক কিছু বলবে; অনেক কিছু করবে। কিন্তু হায়! কিছুই পারছে না বলতে! কণ্ঠনালী শুকিয়ে গেছে! কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে। দাঁড়াতে খুব কষ্ট হচ্ছে! কোন রকমে নিজেকে সংযত রাখলো। কম্পিত স্বরে বলতে লাগলো: আ… আমি… মেয়েটি বলল: কী বলবেন? তাড়াতাড়ি বলুন! বাচ্চা ঘুম থেকে জেগে যাবে……
বিষয়: বিবিধ
২৬৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন