সমালোচনা যে করে আর সমালোচনা যে সহে...
লিখেছেন লিখেছেন misbah monjur ২৬ মে, ২০১৩, ০২:৩৭:০৬ রাত
---মিসবাহ মনজুর
বন্ধু আমায় নিয়ে উদ্ধিগ্ন। বলল “সমালোচনা থেকে দূরে থাকতে। কারো সমালোচনা না করতে। সমালোচনা করে কিছু না লিখতে। সমালোচকদের সাথে না চলতে”। আমি হাসলাম। স্তম্ভিত হলাম! সমালোচকদের সাথে আমার কোনো মিল নেই। তাদের সাথে আমার কোনো চলাফিরা নেই। আমি কারো সমালোচনা করি না; সে-ই প্রমাণও নেই। আমি কোনো ব্যক্তি নিয়ে সমালোচনা করি না। সমালোচনা থেকে আমি দূরে থাকি। সমালোচকদের থেকে আমি দূরে থাকি। যারা সমালোচনা করে, ওদের সাথে আমি চলি না। ওদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
সমালোচনা যারা করে ওদের কাছে আমার প্রশ্ন, যাকে নিয়ে সমালোচনা করে সে কি তাঁর উপযুক্ত? যাকে নিয়ে লিখতে বসে, সে কি সমালোচকদের সমান? নাকি সম্মানি? যদি সম্মানি হয়, তাইলে তাঁকে নিয়ে সমালোচনা করা কতটা উচিত হয়? সম্মানি মানুষকে নিয়ে সমালোচনা করার স্পর্ধা আমার নেই। সেই ধৃষ্টটা আমার নেই। যারা সম্মানি মানুষকে নিয়ে সমালোচনা করে, আমি ওদের ঘৃণা করি। যারা কাঁচা হাতে পাকা মানুষকে নিয়ে লিখতে বসে, আমি ওদের ঘৃণা করি। যারা সাধারণ মানুষকে সম্মানি মানুষের দুষ দেখায়, আমি ওদের ঘৃণা করি। যারা সম্মানি মানুষের দুষ খুঁজে বের করে, আমি ওদের ঘৃণা করি। যারা সম্মানি মানুষকে নিয়ে সমালোচনা করে নিজের দাম বাড়াতে চায়, আমি ওদের অপততপরতার অগ্রাভিজান দমন করতে চাই। যারা সম্মানি মানুষকে নিয়ে সমালোচনা করে নিজের পরিচিতি লাভ করতে চায়, আমি ওদের দমন করতে চাই।
ওরা আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়, আমি তাদের মাঝে নেই। ওরা সম্মানি মানুষকে অসম্মানি সাঁজাতে চায়, আমি তাদের মাঝে নেই। আমি ব্যক্তির সমালোচনা করি না; যদি করতে হয় দলের সমালোচনা করি। আমি রাজনৈতিক কোনো নেতার সমালোচনা করি না; যদি করতে হয় দলের সমালোচনা করি। আমি কোনো শিক্ষকের সমালোচনা করি না; যদি করতে হয় প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করি। এটা আমার দুষ? নাকি গুন? তা- জানি না। তবে এই অভ্যাস পাল্টাতে চাই না। সমালোচনা করতে হলে দুষের সমালোচনা করি, দুষির নয়। কাউকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে আগে তাঁর পরিমাপ বুঝার চেষ্টা করি, তারপর পরিমাণ অনুযায়ী কথা বলি। কাউকে নিয়ে কিছু লিখতে গেলেও তা-ই করি। এটা আমার অভ্যাস। আমি আমার এই অভ্যাসকে আঁকড়ে রাখতে চাই; সমালোচক হতে চাই না। আমি ওদের মতো হতে চাই না, যারা বেহুদা বকওয়াসি করে। আমি ওদের মতো হতে চাই না, যারা সম্মানি মানুষকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা কমানোর হীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। ওরা কাউকে নিয়ে ছোট্ট একটা রিপোর্ট তৈরি করে, বিন্দু বিষয়কে সিন্ধুতে পরিণত করে। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করে। আমি ওইসব করি না, করতে যাই না। এটা আমার অভ্যাসের বিপরীত। এটা আমার আদর্শের বিপরীত। এটা আমার সাংবাদিকতার বিপরীত। হ্যাঁ! যাদের হাত ধরে আমি সাংবাদিকতা পেশায় এসেছি, এটা তাদের বিপরীত। তাঁরা কাউকে নিয়ে সমালোচনা করতে চায় না। আমি তাঁদের এই চাওয়াকে খেয়ালিপনা করতে পারি না; পারবও না।
সমালোচনা করতে হলে, কাজের সমালোচনা করা উচিৎ। কেউ বক্তব্য দিলে, বক্তার নয়; বক্তব্যের সমালোচনা করা উচিৎ। কেউ কবিতা লিখলে, কবির নয়; কবিতার সমালোচনা করা উচিৎ। কেউ কোনো কিছু লিখলে, লেখকের নয়; লিখার সমালোচনা করা উচিৎ। এইসব সমালোচনা দ্বারা অপকার নয়; উপকারই হবে। তড়িৎ গতিতে কোনো ব্যক্তির সমালোচনা করা উচিৎ নয়; অনুচিত। কাউকে সম্বোধন করে কিছু লিখা বা বলা অনুচিত। আমি লিখতে পারি, তাই লিখবো। আমি বলতে পারি, তাই বলবো। তাই বলে কি মন্তব্যের ভিতরেই থাকবো। মন্তব্যের বাহিরে কি কোনো গন্তব্য নেই? নিজের উপর আর কি কোনো কর্তব্য নেই?
আমি জেনেছি শয়তানকে যখন তাড়ানো হয়েছিল, তখন সে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনকে বলছিল: “আমি প্রতি বনিআদমকে বিভ্রান্ত করবো। সারা জীবন বনিআদমের পিছনে ব্যয় করবো। তার ডানে, বামে, সামনে এবং পেছনে ৪ দিক থেকেই আক্রান্ত করবো। কখনো তাকে তোমার অনুগত বান্দা হতে দেব না। জাহান্নামে তাদের সঙ্গে নিয়েই যাব; একা যাবো না”।… এখানে শয়তান মানুষকে চার দিক থেকে বিভ্রান্ত করার কথা বলেছে। উপর এবং নিচ থেকে বিভ্রান্ত করবে- এমন কিছু বলেনি। কারণ, উপর থেকে সে আক্রমণ করতে পারবে না, জ্ঞান, বুদ্ধি, ও মেধা আল্লাহ্র রহমত। আর উপর থেকে আল্লাহ্র রহমত নাজিল হয়। এখানে সে বাধা হতে পারবে না। তাই উপরের প্রসঙ্গ আনেনি। কারণ, শয়তান জানে, সে যে এদিকে অক্ষম। নিচ থেকে মানে পায়ের দিক থেকেও সে বিভ্রান্ত করার কথা বলেনি। কারণ, এখানেও তার আছে ভয়। নিচের দিক থেকে গজব নাজিল হয়। ফেরাউনকে আল্লাহপাক মাটিতেই দাবিয়ে দিয়েছিলেন। শয়তান, সে-তো জ্ঞানী। মহা জ্ঞানী। পিছনের এই জায়গাটাই তার সকল ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র। এই কেন্দ্রকে ব্যবহার করে মিডিয়া হিসেবে। যেখান থেকে যত তথ্য আসে, সব যাচাইবাছাই শেষে তার মতো করে সে পরিবেশন করে। দেশি-বিদেশি, ছোট-বড় সব মিডিয়ায় এতবেশি গসিপ বা মিথ্যার ছড়াছড়ি থাকার পেছনে মূল কারণ এটাই। মাথার পেছনের অংশ শয়তানের নিয়ন্ত্রণে। সে তার মতো করেই তার অনুচরদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। সংবাদ শব্দের ইংরেজি ‘নিউজ’। এতে ‘n, e, w ,s’ ৪টি বর্ণ আছে। n দিয়ে নর্থ, e দিয়ে ইস্ট, w দিয়ে ওয়েস্ট এবং s দিয়ে সাউথ বোঝানো হয়েছে। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ বা ডানে, বামে, সামনে, পেছনে যাকিছু ঘটে, তাই নিউজ বা সংবাদ। শয়তান যে বলেছিল, ডানে, বামে, সামনে, পেছনে ৪ দিক থেকে বিভ্রান্ত করবে নিউজ এবং এই নিউজনির্ভর মিডিয়াই শয়তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। রোবটচালিত ড্রোন এবং পারমাণবিক বোমাই তার বা তার দোসর-প্রেতাত্মাদের বড় অস্ত্র নয়। এগুলো সহযোগী। ইসলাম এবং মুসলিম উম্মাহ সবচেয়ে নির্মম মিডিয়াসন্ত্রাসের শিকার। প্রিয়তম নবি হযরত মুহাম্মদ (সা) এর আবির্ভাবের পর থেকে শয়তানের একমাত্র শত্র“ তারই উম্মত, মুসলিম উম্মাহ। প্রিয়নবি নিজে বলেও গেছেন, ‘আল কুফরু মিল্লাতুন ওয়াহিদাহ’। তোমাদের খতম করতে গোটাবিশ্ব ঐক্যবদ্ধভাবে যা করার সব করবে। মুমিন মানুষদের বাইরে সকল মানুষ সেই শয়তানেরই মিডিয়া বা মিডিয়ানিয়ন্ত্রিত। পৌনে ২ শ’ কোটি মুসলমান মাত্র একদিন পেশাব করলেই যেখানে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ইসরায়েল রাষ্ট্র সেই পেশাবের স্রোতে ভেসে যাবে, তারাই নিয়ন্ত্রণ করে গোটা বিশ্ব। পরাশক্তি আমেরিকাও তাদের হাতে জিম্মি। বিবিসি থেকে শুরু করে বাংলাদেশের আলু-পেয়াঁজ-মরিচ নামের প্রভাবশালী মিডিয়াগুলোর নিয়ন্ত্রণও সেই ইহুদি বা শয়তানের মানুষরূপী দোসরদের হাতে।
এও জানি, সব নবি-রসুলকে আল্লাহপাক সহিফা দিয়েছেন। সহিফা মানে পত্রিকা। সাহাফি মানে সাংবাদিক। নবি অর্থও সাংবাদিক, রসুল মানেও মিডিয়াব্যক্তিত্ব। সকল নবি-রসুলকে সহিফা বা পত্রিকা দিয়েছিলেন, তাদেরকে আবশ্যিক ও জন্মগতভাবে সাংবাদিকতা ও মিডিয়াব্যক্তিত্ব গুণের অধিকারী বানিয়ে পাঠানোর পেছনে মূল কারণ শয়তানের সেই মিডিয়া চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করা। এই যোগ্যতা তাদের না থাকলে সকল নবি-রসুলকে শয়তানের কাছে হার মানার ঝুঁকি ছিল। তাদের পরিণতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তারা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠায় শয়তানি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে কঠিন হিমশিম খেতেন।...
অতএব আমি মিডিয়ায় আছি, তাই বলে শয়তানের দলে যেতে হবে; এমন না। নিজের দাম বাড়ানোর জন্য একটা কিছু করতে হবে; তাও না। মিডিয়ার মাধ্যমে আদর্শ প্রচার করলে সমস্যা কোথায়? মিডিয়ার মাধ্যমে সভ্যতা বিস্তার করলে সমস্যা কোথায়? মিডিয়ার মাধ্যমে শয়তানের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা হলে সমস্যা কোথায়? সমালোচনা করতে হলে কর্তার সমালোচনা না করে; কাজের সমালোচনা করলে অপরাধ কোথায়? লেখকের সমালোচনা না করে; লিখার সমলাচোনা করলে আপত্তি কোথায়? নিজের যোগ্যতাকে ভ্রান্ত পথে ব্যায় না করে; সঠিক পথে ব্যায় করলে বাঁধা কোথায়?
আমি শয়তান থেকে দূরে থাকতে চাই। আমি শয়তানি থেকে দূরে থাকতে চাই। নিজেকে আড়ালে রাখি, রাখতেও চাই। সম্মানী মানুষের সমালোচনা করে সমাজে পরিচিত হতে চাই না; অপরিচিতই থাকতে চাই। আমি কারো সাথে নবপরিচয় হই না, হতে চাইও না। আমি নবদিগন্তে যাই না, যেতে চাইও না। আমি যেথায় আছি, সেথায় থাকতে চাই। নিজেকে নিজের মতো রাখতে চাই।
(বন্ধুর কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হলাম। হয়ত কিছুটা কষ্টও পেলাম। ও আমায় কেনো এমন বলল? অতচ সে জানে আমি কেমন? তখন আলিয়া মাঠে মানুষের ভীড় আর মাইকের শব্দে চারিপাশ ছিল মুখরিত। আমি শুধুমাত্র তার কথাই শুনলাম, কিছু বললাম না। নিরবে নিবৃত্তে, একাগ্রচিত্তে বসে তার কথা ভাবলাম। এক কুঁড়ি বছর এক সাথে চলেও প্রাণের বন্ধু মোরে চিনল না।)
ভাবলাম উত্তর দেব বন্ধু বিকেল বেলায়...
বিষয়: বিবিধ
২১৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন