হেফাযতে ইসলামের ১৩ দফা থেকে কিছু দফা বাদ দেয়ার দাবিতে কতিপয় আলীমের সিলেট সফর...

লিখেছেন লিখেছেন misbah monjur ২৬ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৪৫:৪৪ রাত

হেফাযতে ইসলামের ১৩ দফা থেকে কিছু দফা বাদ দেয়ার দাবিতে কতিপয় আলীমের সিলেট সফর...

--- মিসবাহ মনজুর

সকালে ঘুল থেকে ওঠতেই ৪জন আলীম আমাদের বাসায় আসলেন। তাঁদেরকে আমরা যতাযত সম্মান দিলাম। আপ্যায়ন করলাম। কিন্তু তাঁদের সিলেট সফরেরে কারণ জেনে আমি স্তম্ভিত হলাম। তাঁরা ‘হেফাজতে ইসলাম’ দরদী। তাঁরা হেফাজতকে বাঁচাতে চায়। হেফাজতে ইসলাম না কি অচিরেই ব্যর্থ হবে। তাঁরা ব্যর্থার আত্মগ্লানি থেকে হেফাজতকে বাঁচাতে চায়। তাই তাঁদের আগমন। তাঁরা ছিলেন মোট ৪ জন। মাওলানা মাসউদুর রাহমান, মাওলানা আবুল হাসানাত, মাওলানা ফয়জুল্লাহ মাসউদ, মাওলানা মশিউর রাহমান।

আমি তাঁদের সাথে কথা বললাম। অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। নিম্নে তা কিছুটা হলেও তুলে ধরলাম।

বিক্রম্পুরী: আঙ্কেল আপনি কি আমাদের সাথে একটু আলোচনা করবেন?

আমিঃ হ্যাঁ! অবশ্যই।

বিক্রম্পুরী: হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি কি সরকারের জন্য মানা সম্ভব মনে করেন?

আমি: অসম্ভব হলেও সম্ভব করতে হবে।

বিক্রম্পুরী: না, তা সরকারের জন্য কোনো ক্রমেই মানা সম্ভব না। আর আওয়ামীলীগ কেন, বিএনপিও পারবে না। তাই হেফাজতে ইসলামের বিএনপিকেও বুঝতে হবে। বিএনপি যে দাবিগুলো মানবে না, তা কিন্তু নিশ্চিত। তখন আপনারা কী করবেন?

আমি: হেফাজতে ইসলামের ভাষ্য হল সরকার ক্ষমতায় থাকতে হলে এই ১৩দফা মেনে থাকতে হবে; আর সরকার ক্ষমতায় আসতে হলেও এই ১৩ দফা মেনেই আসতে হবে। তার মানে এই প্রথম ইঙ্গিত (ক্ষমতায় থাকতে হলে) আওয়ামীলীগের প্রতি, আর দ্বিতীয় ইঙ্গিত (ক্ষমতায় আসতে হলে) তা- বিএনপির প্রতি।

বিক্রম্পুরী: আমরা মনে করি এই ১৩দফা থেকে কিছু দফা বাদ দেয়া উচিৎ। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমাদের কথা হয়েছে এই বিষয়ে, তিনি বলেছেন কিছু দফা মানতে পারবেন, আর এই জন্যই আজ আমাদের সিলেট সফর।

আমি: তাঁর মানে আপনারা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এসেছেন? কোথায় কোথায় গেছেন এই পর্যন্ত? কার কার সাথে আলোচনা হয়েছে?

বিক্রম্পুরী: না আমরা চিটাগাং থেকে প্রথম সিলেটে আসলাম আপনাদের বাসায়।

আমি: আপনাদের সিলেটে আসার মূল হেতু কী? কাদের সাথে আপনারা সাক্ষাত করতে চান? আপনাদের মূল টার্গেট কী?

বিক্রম্পুরি: আপনার আব্বা তো আর আমাদের সাথে একমত হলেন না। দেখি! আর কোথায় যাওয়া যায়?

আমি: আপনারা কি মনে করেন যে, আপনারা সফল হবেন? আর আপনারা হেফাজতে ইসলাম ছেড়ে সরকারের দাবি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণ কী?

বিক্রম্পুরি: কারণ হেফাজতের সবগুলো দাবি সরকার মানবে না; কিছু মানবে। আমরা তাতে একমত হওয়ার জন্য কাজ করছি। কারণ, যদি একটাও না মানে, তাইলে আমাদের লজ্জা লাগবে, আমাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই আমরা চাই কিছুটা হলেও মানুক।

আমি: সরকার দাবি না মানলে তো অন্য কর্মসূচি আছে, ব্যতিক্রম উদ্যোগ আছে। আর ১৩দফা দাবির ব্যখ্যা তো করা হল, তবে কেনো দাবি নিয়ে আপনাদের আপত্তি?

বিক্রম্পুরি: এই দাবির মাঝে আভেগ ছিল, আর এই দাবিগুলো তো আর আহমদ শফির না; তাঁর পাশে কিছু আছেন, যারা এই দাবিগুলো লিখেছেন। আচ্ছা আপনি কি আমাদের এই বিষয়কে সমর্থন করেন?

আমি: কেন্দ্রীয় নেতাদের সমর্থন হয় নাই; আমাদের সমর্থন পাবেন কেন?

বিক্রম্পুরি: (মুচকি হেসে) তাইলে তো আপনারা সফল হতে পারবেন না।

আমি: ‘আপনারা’ মানে কী? এখানে ‘আপনারা’ বলে আপনি যে হেফাজত থেকে রহিত হয়ে গেলেন! আপনি হেফাজতে ইসলামের কর্মী হলে এখানে বলা উচিত ছিল ‘আমরা’ সফল হব না। আপনি নিজেই প্রমাণ করে দিলেন আপনি হেফাজতে ইসলামের কেউ না।

বিক্রম্পুরি: (অন্য প্রসঙ্গ) আপনি কি মনে করেন সরকার দাবি না মানলে হেফাজতে ইসলাম কিছু করতে পারবে?

আমি: অবশ্যই।

বিক্রম্পুরি: না আঙ্কেল, না। সরকারের সাথে হেফাজতের সামাধান না হলে সরকার তত্ত্বাবধায়ক ডাকবে। তখন আন্দোলন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আর এটাই সরকারের সিদ্ধান্ত। তাই আমরা সেই ব্যর্থতা থেকে বাঁচাতে একটা কিছু করতে চাই।

আমি: আমি জানি না আপনারা কী করতে চান? হেফাজতে ইসলামের দাবি আদায় করতে চান, না হেফাজতে ইসলাম থেকে কিছু আলিমদের সরাতে চান? আর আপনারা কী বা দাবি আদায় করবেন? নবি আবমাননাকারী নাস্তিকদের কী হবে? সবাইকে আটক করা হবে? ফাঁসি দেয়া হবে?

বিক্রম্পুরি: আটক তো করা হয়েছে। আর ফাঁসি কেনো? শাস্তি দেয়া হবে।

আমি: আটক সবাইকে করা হয় নি, বিশেষ করে এইচ ইমরানকে। আর আমাদের দাবি যে, ফাঁসি।

বিক্রম্পুরি: এটা আভেগ (ফাঁসির দাবি )। যা কক্ষনো সম্ভব না। এই দাবিগুলো লিখে আহমদ শফি সাহেব যে ভুল করেছেন, তা জীবনেও শুধরানো সম্ভব না। আর ইমরানকে আটক করা হবে কেনো? তার বিরুদ্ধে তো কোনো অভিযোগ নেই।

(“আহমদ শফি সাহেবের ভুল” শব্দটা শুনে আমার ভাই পর্দার আড়াল থেকে উত্তেজিত হয়ে আসলেন, আমি কী হতে যাচ্ছে, তা- বুঝতে পেরে পরিস্থিতি সামাল দিলাম)

আমি: তাইলে আপনারা প্রথম দাবিটাই মানলেন না। আহমদ শফি সাহেব ভুল করেছেন তার মানে কী? আর আভেগ বলতে কী বুঝাতে চাইছেন? আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন, ১৩ দফা দাবির বাস্তবায়নকে আপনি অবাঞ্ছিত ও খেয়ালিপনা করবেন কেন? আবার বলছেন আপনি হেফাজতের দাবি আদায় করার জন্য সফর করছেন।

বিক্রম্পুরি: জানেন, আহমদ শফির সবচেয়ে বড় ভূল কী? তা- হল ইমরান এইচ সরকারকে হাটাজারিতে সাক্ষাতের সুযোগ না দেয়া।

আমি, হাটাজারিতে নাস্তিক পা’ রাখবে! এটা কী করে ভেবে নিলেন? আর আপনি আবারো আহমদ শফি সাহেবের ভুল বলতেছেন।

(এমন সময় আবুল হাসানাত সাহেবকে বরকতপুরি হুজুরের ফোন, বৈঠকের স্থান বাতায়ন)

আবুল হাসানাত সাহেব: মিসবাহ মনজুর, আমাদের এখন উঠতে হবে।

আমি: ঠিক আছে। যান। তবে সাবধান থাকবেন, আপনাদের আগমন কিন্তু সাবাই জানে।

বিষয়: বিবিধ

১৮৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File