এক নজরে ফক্বীহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান (রহ) এর কর্ম জীবনের ১৯টি দাপ
লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ১২ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:৩৩:২৩ দুপুর
মহান আল্লাহ যুগে যুগে এই ধরাতে এমন কিছু মহা পন্ডিতদের আগমন ঘটান যাদের পদচারনায় ধন্য হয় এই পৃথিবী খুজে পায় অনন্য এক পথ চলার নির্দেশিকা তেমনি এক মহান প্রান পুরুষ, ইসলামী দার্শনীক ফক্বীহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান ছাঃ রাঃ।
তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া এমন হাজারো ঘটনা আছে যা আমাদেরকে ভবিষ্যত পথ চলার উৎসাহ যোগাবে। আজকে সংক্ষিপ্তপরিসরে আমি শুধু মাত্র হযরতের কর্ম জীবনের প্রসিদ্ধ ১৯টি দাপ নিয়ে কিছুই আলোকপাত করব। তবে এর বাহিরেও আরও অনেক অজানা তথ্য আছে যা পরবর্তিতে সংযোজন করা হবে।
১*** মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আলেম ফকীহুল
মীল্লাত মুফতি আবদুর রহমান ১৯২৫ সালে চট্টগ্রামের
ফটিকছড়ির ইমামনগর (বাবুনগর)গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম চাঁন মিয়া।
২***মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আলেম ফকীহুল
মীল্লাত মুফতী আবদুর রহমান মঙ্গলবার ১০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪০মিনিটে বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে
ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না
ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো
98 বছর।
৩*** মরহুমের নামাজে জানাযা পরদিন বুধবার সকাল ১০টায়
বসুন্ধরা কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা
শেষে বসুন্ধরা নতুন কবরস্থানে তাকে দাফন করা
হয়।
৩
৪**তিনি নাজিরহাট ও হাটহাজারি মাদ্রাসায়
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক লেখাপড়া
সমাপ্ত করেন। উচ্চমাধ্যামিক শিক্ষা সমাপ্তির পর
তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে গমন করেন। ১৯৫০ সালে
সেখানে কওমি মাদরাসা পাঠ্যক্রমের সর্বোচ্চ স্তর
দাওরায়ে হাদিস কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন।
৫**দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগের তিনি প্রথম
ডিগ্রি লাভকারী মুফতি।
৬** দেশে ফেরার পর পূর্ব এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি
শিক্ষাকেন্দ্র আল-জামিয়া আল ইসলামিয়ার
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মুফতি আজিজুল হক (রহ.)
এর আহবানে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র শিক্ষক
হিসেবে যোগ দিয়ে তাঁর কর্ম জীবনের শুভসূচনা
করেন।
৭*** ১৯৬২ সালে তিনি উত্তরবঙ্গ গমন করেন। সেখানে
জনসাধারণকে নিয়ে বহু মসজিদ ও মাদরাসা, মক্তব ও
হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করে নবপ্রজন্মের জন্য এক নতুন
দিগন্তের সূচনা করেন। সেখানকার সর্বজন পরিচিত
ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়া
কাসেমুল উলুম জামীল মাদরাসা হযরত ফকীহুল
মীল্লাত এর সর্বাত্মক চেষ্টারই ফসল।
৮** মৃত্যুর আগে তিনি দেশের প্রায় ১৮টি উত্তরাঞ্চলীয়
জেলার সহস্রাধিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত
তানযীমুল মাদারিস আদ্বীনিয়্যা বাংলাদেশ
(উত্তরবঙ্গ) এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে
আসছিলেন।
৯****সুদীর্ঘ ছয় বছরের মিশন শেষে ১৯৬৮ সালে তিনি আল-জামিয়া পটিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। সেখানে ১৯৮৯
সাল পর্যন্ত পুরোদমে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি একাধারে জামিয়ার প্রধান মুফতি, সহকারী
মহাপরিচালক ও শিক্ষা বিভাগীয় পরিচালকের
দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দাওরায়ে হাদিসে
সর্বোচ্চ কিতাব বোখারি শরিফের ১ম খণ্ডের
পাঠদান করেন।
১০**আল জামিয়া পটিয়ার সহকারী পরিচালক
থাকাকালে তিনি দেশব্যাপি একশ’ সদস্য বিশিষ্ট
ইফতা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।
১১***এ সময় তিনি
ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং-এর ক্ষেত্রেও
অনন্য অবদান রাখেন। তিনি সুদভিত্তিক অর্থনীতির
বিরুদ্ধে অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন।
আরব বিশ্ব তথা দুবাই, বাহরাইন, কাতার ইত্যাদি
রাষ্ট্র এবং ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে
বড় বড় ইসলামি অর্থনৈতিক সেমিনারে তিনি যোগ
দেন। এসব সেমিনারে ইসলামি অর্থনীতির উপর তাঁর
গবেষণালব্ধ বিভিন্ন প্রবন্ধ খুবই সমাদৃত হয়।
১২***ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরায় তিনিই
সর্বপ্রথম ২০০২ সালে ইসলামি অর্থনীতি ও ইসলামি
ব্যাংকিং বিভাগ চালু করেন। ইসলামি ব্যাংকিং
ও অর্থনীতিকে এদেশের আলেম, ওলামা ও মাদরাসা
পড়ুয়াদের মধ্যে বিস্তৃতির জন্য বেশ কয়েকবার
আন্তর্জাতিক সেমিনারেরও আয়োজন করেন তিনি।
তাঁর উদ্যোগে ২০০২ সালে ইসলামিক রিসার্চ
সেন্টার ঢাকাতে পক্ষকালব্যাপি এক আন্তর্জাতিক
সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৬ সালে ১৫ দিন ব্যাপি এক অর্থনৈতিক কর্মশালা
ও সেমিনার আয়োজন করেন তিনি। এ কর্মশালা ও
সেমিনার বাংলাদেশের আলেম ওলামাদের
ইসলামি অর্থনীতি ও ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে বহুদুর
এগিয়ে দেয়। এ বিষয়ে তাঁদের উৎসাহ ব্যাপকভাবেই
বৃদ্ধি পায়।
১৩***হযরত ফকীহুল মীল্লাত আমৃ্ত্যু আল আরাফা ইসলামী
ব্যাংকের শরীয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।
১৪***২০০৮ সালে তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের
শরীয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোনীত হন।
১৫ *** দীর্ঘদিন তিনি সেন্ট্রাল শরীয়া বোর্ড ইসলামিক ব্যাংকস- এর ভাইস চেয়ারম্যানের পদ অলংকৃত করেন।
১৬*** ১৯৯০ সালে হযরত ফকীহুল মীল্লাত আধ্যাত্মিক
জ্ঞানে পরিপূর্ণতার দিকে মনোনিবেশ করেন। খুব
কম সময়ে তিনি আধ্যাত্মিক জগতের সকল স্তর
অতিক্রম করে যুগ শ্রেষ্ঠ বুজুর্গ পীরে কামেল শাহ
আবরারুল হক সাহেব (রহ.) হতে খেলাফতপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে তাঁর অসংখ্য শাগরীদ রয়েছে দেশ-বিদেশে।
১৭** ১৯৯১ সালে তিনি রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী উচ্চ
শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। নাম দেন
মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী। এটি বর্তমানে
পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশে উচ্চতর ইসলামী
শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবেই
প্রতিষ্ঠিত।
১৮** ২০০৪ সালে তিনি বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে
বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় জামিআতুল আবরার নামে
আর একটি প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন।
বছরখানেকের ভেতর প্রতিষ্ঠানটি একটি বৃহৎ
শিক্ষাকেন্দ্রে রূপ নেয়।
১৯**ফকীহুল মীল্লাত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে তাঁর
একটি সেবামূলক সংস্থা রয়েছে। এ সংস্থার মাধ্যমে
তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য মসজিদ,
মাদরাসা, মক্তব, হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন। সুবহানাল্লাহ এমন এক মহান দ্বীনি রাহবরকে আমরা হারালাম। আল্লাহ তায়ালা তাঁর এই আমল গুলোকে নাজাতের উসীলা হিসাবে কবুল করেন।
আমাদের মুসলিম উম্মাহকেও যেন এই মহামনিষীর পদান্ক অনুসরণ করার তাওফিক দান করেন । আমিন ।
বিষয়: বিবিধ
২০৪৮ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পটিয়া মা্দ্রসার মত একটি বিশাল মাদ্রাসার হয়ে বিদেশে অর্থ সংগ্রহ করার কারণে তিনি মধ্য প্রাচ্যেও পরিচিত হয়ে উঠেন।
তবে হুজুরের পক্ষে লিখতে গিয়ে মনে হয় একটু বেশী লিখে ফেলেছেন। মৃত মানুষের সমালোচনা মোটেও ঠিক নয়, তবুও সত্য উৎঘাটনে আপনার প্রশ্নের উত্তর হিসাবে কিছু বলা যায়।
১। ইসলামী অর্থনীতিতে তাঁর কোন অবদান নাই। ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলে প্রচন্ড বিরোধীতা কারীর মাঝে তিনিও অন্যতম ছিলেন, যার ফল এখনও সমাজে বিদ্যমান।
২। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রায় বিশ বছর পরে দেশে যখন আরো বহু ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়। তখন ব্যাংক গুলোতে শরীয়তের পরামর্শ দেবার জন্য বিজ্ঞ আলেমের দরকার হয়। বেশী বেতনের আকর্ষনীয় সুবিধার এসব চাকুরীতে বহু আলেমে দ্বীন নিজেদের জড়িত করে। তিনি সে ধরনের একটি চাকুরীতে ঢুকার পড়েই ইসলামী ব্যাংক নিয়ে বলা শুরু করেন! চাকুরীতে যাবার আগে তিনি ইসলামী ব্যাংক পছন্দ করতেন না। তার মত একই কায়দায় মুফতি ফজলুল হক আমিনিও আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবদুল জলিলের ব্যাংকে চাকুরী করতেন। অথচ ইতিপূর্বে ইসলামী ব্যাংকের সমালোচনা করতেন!
৩। ইসলামী ব্যাংকিং সিষ্টেমের বিরুদ্ধে কিছু কওমী আলেমের ঘৃণা বর্ষনের কারণে মানুষের মনে ইসলামী ব্যাংক নিয়ে সংশয় ঢুকে যায়! ফলে তাবলিগ জামাতের মানুষেরা আজ পর্যন্তও ইসলামী ব্যাংকে টাকা না রেখে সুদী ব্যাংকে টাকা রাখে এমন তার সুদ তুলে দ্বীনের কাজে লাগায়। এটাকে ওনারা গুনাহের কাজও মনে করেনা! তাবলিগ জামাতের প্রধান দুটো একাউন্টের একটি স্টান্ডার্ট ব্যাংকে অবস্থিত। মরহুম আবদুর রহমানের যুক্তিকে তাবলিগ ভাইয়েরা গ্রহণ করে।
৪। অর্থনৈতিক পরিছন্নতা তাঁর জীবনে ছিলনা এটা নিয়ে তিনি যত যায়গায় দায়িত্ব পালন করেছেন সর্বত্র গোলমাল পাকিয়েছেন। একই কারণে তিনি পটিয়া মাদ্রাসা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ঢাকার মাদ্রাসাটি তাঁর একক কর্তত্বে চলে্।
৫। তার বাড়ীর আশে পাশের চাচাত-জেঠাত মিলে দশটি পরিবার ছাড়া আর কেউ তাদের দ্বারা প্রভাবিত নয়। পুরা অঞ্চলটি কবর পূজারীতে ভরা। তাঁরা এলাকার মানুষকে শিরিক মুক্ত জীবন যাপনে উৎসাহিত করতে পারেন নাই বরং দিন দিন বাড়ছে। শিরিকি অন্ধকারের মাঝে এই মহান ব্যক্তির গ্রাম।
৬। এটার মুল কারণ ছিল, এলাকার মানুষের সাথে জনবিচ্ছন্নতা। তাদের কেউ পছন্দ করেনা। তিনি ও তাঁর ছোট ভাই বাবু নগর মাদ্রাসার মোহাদ্দিস মিলে যে আলিশান বাড়ী বানিয়েছেন আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে। সে ধরনের বাড়ী তার গ্রামের আরো দুজন মন্ত্রী যথাক্রমে সিএসপি শফিউল আজম ও জামাল উদ্দীনের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। মানুষ প্রশ্ন করতেই পারে অন্তত কওমী মাদ্রাসার বেতন দিয়ে এ ধরনর বাড়ী বানানো কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এতে তারা ইসলামী সেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্থানীয় মানুষের কাছে গ্রহনীয় হয়ে উঠতে পারেনি, যদিও বাহিরে তাঁদের প্রচুর সুনাম।
৭। তিনি সর্বদা ক্ষমতাসীনদের সাথে এডজাষ্ট হয়ে চলতে পছন্দ করতেন, পারদর্শীও ছিলেন! তিনি দেশের সর্ববৃহত ভূমিদস্যুকে পটিয়ে (বসুন্ধরা), বাংলাদেশের সবচাইতে দামী ও গুরুত্বপূর্ন জায়গায়, কোটি কোটি টাকার মাটি সম্পদের উপরে কিভাবে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলেন! সেটিও আজও এক তাজ্জবের বিষয়!
যাক, আল্লাহ কাউকে ক্ষমা করার জন্য একটি ছোট আমলও গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠতে পারে। মুফতি আবদুর রহমানের মাধ্যমে অনেক মানুষ এলমে দ্বীন শিখেছেন। হয়ত তাদের দোয়ার কারণে আল্লাহ তাকে জান্নাত দিতে পারেন। এটি কোন মতেই ছোট বিষয় নয়। তারপরও বাংলাদেশের আলেমদের ঐক্য প্রচেষ্টার সাথে তাঁর ক্ষুদ্রতম কোন অবদান নাই। বরং অধিকাংশ আলেম তাকে কোন মজলিসে উপস্থিত পেলে অন্যরা সন্দেহ পোষণ করত, তিনি সরকারী কোন এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এখানে এসেছেন।
আপনাকে কষ্ট দেবার জন্য বলিনি। একজন মুসলমান হিসেবে আপনার মত আমিও তাঁকে পছন্দ করি। কিন্তু তাঁর পদ, পদবি, খ্যাতি ও ক্ষমতার মাপ অনুসারে তিনি অনেক কিছুর যা করতে পারতেন তা করেন নি বরং চুপ থেকেছেন! আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যাতে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউসের বাসিন্দা করেন। আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন