২য় রত্ন:-বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিকোণে ইসলামের আমল

লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ১১ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:১৫:৩৩ দুপুর

২য় রত্ন:-বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিকোণে ইসলামের আমল

এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে শুধুমাত্র 6টি আমল সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক গবেষনার আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ (১)বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি কোণে নামাজ:-নামাজ আল্লাহর বিশেষ এক এবাদত,যা আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের সহায়ক, একমাত্র নামাজ মুসলিম-অমুসলিমদের মধ্যে পার্থক্যকারী এক বিশেষ এবাদত,তাছাডা হাজারো উপকারীতার কথা আমরা কোরআন-হাদীস থেকে জানতে পারি। কিন্তু আজকাল বিজ্ঞান আমাদের নামাজ সম্পর্কে কি বলে তা নিয়েই আলোচনা করবো। তবে একথা দিবালোকের ন্যায়ই সত্য যে কোরআন বুঝতে আমাদেরকে বিজ্ঞান বুঝতে হবেনা তবে বিজ্ঞান বুঝতে হলে কোরআন বুঝতে হবে। তবে আজকাল বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন গবেষনার মাধ্যমে আমাদেরকে কোরআন বুঝতে অনেকাংশে সহায়ক হচ্ছে ।

আমরা অনেকেই জানি নামাজের বিভিন্ন ধরনের রুহানী উপকারীতার সঙ্গে সঙ্গে বৈজ্ঞানিক উপকারিতাও রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল শারীরিক উপকারীতা। যার উপর অনেক গবেষনা হচ্ছে ঐ সকল গবেষনার থেকে গুটি কয়েক উপস্হান করছি।এবং পাঠকদের সুবিধার্থে প্রত্যেকটি গবেষনাকে আলাদা ভাবে পৃথক পৃথক আঙ্গিকে উপস্হাপন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ ।

(ক) স্বাস্হ্য বিজ্ঞানের একটা মূলনীতি হল এই যে " মানুষের অন্তরে যখন শান্তি লাভ হয় তখন দেহের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলির শক্তিও কয়েকগুন বেড়ে যায়" । আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শক্তি শারীরিক সুস্হতার ভিত্তি হিসাবে কাজ করে"। যার ফলে মানুষের শুধু প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তার বিক্ষিপ্ততা এবং চিন্তার ভিড় থেকে নিঃস্কৃতি লাভ হয় না বরং শারীরিক দিক দিয়েও মানুষের শক্তি সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়।

বর্তমান যুগের মানুষ বিশেষ করে পাশ্চাত্য জগত দুষিত ও বিকৃত ধ্যানধারনার এমনভাবে শিকার হয়ে পড়েছে যার ফলে শান্তির মহৌষধ এবং ঘুমাবার পিলও তাদের কোন কাজে আসছেনা । বস্তুত প্রকৃত আরোগ্য শুধুমাত্র বাহ্যিক বস্তুসমূহে অন্বেষন করাই তাদের বঞ্চিত হওয়ার প্রধান কারন । সুস্হতা একমাত্র আল্লাহর হাতে এটা তারা ভুলেই গিয়েছে।

যেমন ইব্রাহীম আঃ বলেছেনঃ "এবং আমি অসুস্হ হয়ে গেলে তিনিই আমাকে সুস্হতা দান করেন । সূরা শুআরাঃ আয়াতঃ ৮"এ ব্যাপারে সর্বোত্তম পন্থা হল ঔষধের সাথে সাথে দুআ করা আর নামাজই সর্বোত্তম দোয়া বা এবাদত। তাই বেশী বেশী করে আল্লাহর স্মরন করা এবং আল্লাহর প্রতি রুজু হওয়া। আর নামাযের মাধ্যমে এই কাজটা আমরা সবচেয়ে সুন্দরভাবে করতে পারি।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম প্রায় ১৪০০বছর আগে বলে গিয়েছিলেন -" নিশ্চয়ই নামাযে শেফা ও আরোগ্য রয়েছে "। (ইবনে মাজাহ) মুসলমান ছাড়া এমনকি বিধর্মীরা পর্যন্ত জানেন এবং অনেকে মানেন যে নবীজী কখনও মিথ্যা বলেননি।তাই তারা এই হাদীসটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখা চেয়েছেন বিভিন্ন ভাবে।তাই মুসলমানদের মধ্যে পাকিস্তানের বিখ্যাত হৃদরোগ চিকিৎসক ডাক্তার মুহাম্মদ আলমগীর একটি মেডিক্যাল টীম তৈরী করেন যখন বিধর্মীরা এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখা চান । পাকিস্তানী একজন নামাজীর শরীরে তারা নামাযরত অবস্থায়ই ইলেকট্রনিক radiology মাধ্যমে পরীক্ষা করেন এবং নবীজীর কথার সত্যতা যাচাই করেন। আমি নিচে তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ননা করছি।

মানুষের বয়ঃবৃদ্ধির সাথে সাথে তার দেহের কোল্যাষ্টোল (CHOLESTEROLF) চর্বির দ্বারা দেহের শিরাগুলি ক্ষীন হতে ক্ষীনতর হতে থাকে । এই ক্ষীনতার কারনেই অসংখ্য রোগ-ব্যাধি দেখা দেয় । যেমন, ব্লাড প্রেসার, অর্ধাঙ্গ, হৃদরোগ, বৃদ্ধতা, হজম মন্দা ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখ্য । এই চর্বির বৃদ্ধিতারোধ করার সর্বোওম পন্হা হলো ব্যায়াম । যা নামাযের মাধ্যমে অতি উওমভাবে পূরন হয়ে যায় ।নামাজের প্রত্যেকটি রুকনই এক একটি প্রেসক্রিপশান

যেমন *তাকবীরে উলা, তাকবীরে উলা অর্থাৎ নিয়ত বাঁধার জন্য যখন কনুই পর্যন্ত হাত কাঁধ বরাবর উঠানো হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই রক্ত সঞ্চ।লনের তীব্রতা বেড়ে যায় ।

*কিয়াম – অর্থাৎ দাড়ানো অবস্হায় হাত বেঁধে রাখার সময় কনুই থেকে কব্জি ও আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত হাত ব্যবহৃত হয় ।এতে রক্তের চলাচল তীব্র হয় ।

*রুকু – রুকুর সময় হাঁটু কনুই কব্জি এবং কোমরের সবগুলি জোড় প্রবলভাবে ঝাকুনী দেয় ।

*সেজদা – সেজদার অবস্হায় হাত পা পেট পিঠ কোমর রান ও শরীরের সবগুলি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জোড়ায় নাড়া পড়ে এবং টানটান অবস্হায় থাকে । সেজদারত অবস্হায় মেয়ে লোকদের বুক রানের সাথে মিশে থাকে । এতে তাদের বিশেষ অভ্যন্তরীন রোগব্যাধির উপশম হয়। এতদ্ব্যতীত সেজদার সময় রক্ত মস্তিষ্ক পর্যন্ত সঞ্চালিত হয়। যা সুস্ততার জন্য একান্ত আবশ্যকীয় ।

*তাশাহহুদ - এই অবস্হায় কোমর থেকে পা পর্যন্ত রগগুলি টানটান হয়ে থাকে । একদিকে থাকে টাখনো ও পায়ের অন্যান্য জোড় এবং অন্যদিকে থাকে কোমর এবং গর্দানের জোড়াগুলি ।

*সালাম – সালাম ফেরানোর সময় গর্দানের দুই দিকের জোড়াগুলিই কাজ করে এবং গর্দান ঘুরানোর সময় রক্ত সঞ্চালন তীব্র হয় ।

নামাযের এই নড়চড়াগুলির দ্বারা একটি উত্তম ব্যায়াম হয়ে থকে । নামাযের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকার কারনে কুদরতী ভাবে ব্যায়ামের মধ্যেও একটি সামঞ্জস্য সৃষ্টি হয় । অন্যান্য ব্যায়ামের মত এতে কোন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্হার সৃষ্টি হয়না । উত্তম পন্থায় রক্ত সঞ্চালিত হওয়ার কারনে হৃদযন্ত্র সম্পূর্ন রূপে সুস্থ থাকে। এতে না রক্ত ঘন হয়ে যায় আর না রক্তের সঞ্চালনে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় ।তবে এ ক্ষেত্রে যথাযথ উপকারীতা সুন্নতি তরিকার নামাজেই সম্ভব।

(খ)নামাজের শ্রেষ্ঠতম অংশ হল সিজদা:- তাই এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে পবিত্র কোরআনে সিজদা শব্দটি কম করে হলেও ৯০ বার উল্লেখ করা হয়েছে। একবার ভেবে দেখুন কিভাবে সিজদা করি আমরা। স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা যখন দাড়িয়ে থাকি বা বসে থাকি তখন আমাদের ব্রেইনে রক্ত পৌছায় ঠিকই, কিন্তু তাএকটা স্বাস্থ্যকর ব্রেইনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু আমরা যখন সিজদায় যাই তখন মস্তিষ্কে/ব্রেইনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্ত সঞ্চালিত হয়, যা একটা স্বাস্থ্যকর ব্রেইনের জন্য খুবই জরুরী। আর আমরা যখন সিজদা করি তখন ব্রেইনের ন্যায় আমাদের মুখমণ্ডলের ত্বকেও অতিরিক্ত রক্তসঞ্চালন হয়, যা আমাদের চিল্বলাইন(chilblain) নামক এক ধরনের চর্মরোগ এবং এজাতীয় আরও অনেক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।তাছাড়া সিজদা আমদেরকে সাইনুসাইটিস (sinusitis) থেকেও বাছিয়ে রাখে। কেননা যারা নিয়মিত সিজদা করে অর্থাৎ নামাজ পড়ে তাদের সাইনাসের (sinus) প্রদাহ হবার সম্ভাবনা অনেক কম।

এছাড়াও সিজদার আরও উপকার রয়েছে। যেমন, যারা নিয়মিত সিজদা করে তাদের ব্রঙ্কাইটিস (bronchitis) হবার সম্ভাবনাও অনেকাংশে কম। একটা লোক যখন স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস ছাড়ে তখন আমদের ফুসফুসে থাকা দূষিত বায়ুর কেবল দুই-তৃতীয়াংশ বের হয় বাকি একতৃতীয়াংশ ভিতরেই থেকে যায়। কিন্তু কেউ যখন সিজদায় অবনত হয় তার এবডমিনাল ভিসেরা(abdominal viscera) ডায়াফ্রামের(diaphragm) উপর চাপ প্রয়োগ করে, ফলে ডায়াফ্রাম ফুসফুসের নিছের দিকে (lower lobes) চাপ প্রয়োগ করে।

ফলে কেউ যখন সিজদায় অবনত অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস নেয় তখন ফুসফুসের ভিতরে জমে থাকা এক তৃতীয়াংশ দূষিত বাতাসও বের হয়ে যায়, যা একটা সুস্থ ফুসফুসের জন্য খুবই দরকারি। এর ফলে আমদের ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ হবার সম্ভাবনাও কমে যায় অনেকাংশে।

যদি কেউ নিয়মিত সিজদা করে তবে সিজদার সময় করা অঙ্গভঙ্গি ও শরীরের বিভিন্ন রকমের নাড়াচাড়ার কারণে তার অর্শ(hemorrhoid) বা পাইল্‌স(piles) এবং হার্নিয়া (hernia) হবার সম্ভাবনাও কমে যায় অনেকাংশে।

আবার আমরা যখন সিজদা থেকে উঠে দাড়াই তখন শরীরের পুরো ওজন আমদের পায়ের উপর পড়ে এবং আমদের পা আর রানের পেশীতে চাপ পড়ে। তখন সে পেশীগুলু সক্রিয় হয়ে উঠে যা আমাদের নিন্মাঙ্গে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও নামাজে রুখু সিজদা বসা আর উঠে দাঁড়ানোর সময় আমরা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করি যার কারণে আমাদের মেরুদণ্ডে ও বিভিন্ন রকমের নাড়াচাড়া হয়, যা আমদের মেরুদণ্ডের বিভিন্ন রকমের রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে।

নামাজের এরকম হাজারো উপকারিতা আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু আমরা মুসলিমরা সালাত আদায় করি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আর তার প্রশংসা করবার জন্য। তাই আমাদের মুসলিমদের জন্য উপরে উল্লেখ করা উপকারগুলো হল এক ধরনের সাইড ডিশ(side dishes)।

বলতে পারেন ডেজার্ট(dessert), যা মূল খাবারের পরে সামান্য পরিমাণে খাওয়া হয়। একজন অমুসলিমকে নামাজের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য উপরোক্ত উপকারগুলুর কথা বলতে পারেন আপনি; তা হয়ত তাকে নামাজের দিকে আকৃষ্ট করবে, কিন্তু আমাদের মুসলিমদের জন্য প্রধান বা মূল খাবার অর্থাৎ নামাজের মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর হুকুম পালনে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার সাথে তাঁর প্রিয় বান্দা ও তার রসূলের বিধান মেনে চলা। এখানে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন যে আমরা অনেকে নামাজ আদায় করি কিন্তু তার ফলাফল ঘরে তুলতে অক্ষম,তাহলে বুঝতে হবে যে,যেভাবে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সুন্নত তরীকা মোতাবেক নামাজ আদায় করা প্রয়োজন ছিল,তা আমার আপনার দ্বারা সে ভাবে নামাজ হচ্ছেনা। যদি কেউ মুরগীর ঠোকরের ন্যায় নামাজ পড়ে তাহলে কি আদৌ সেই নামাজ এই সকল রুহানী ও জাগতীক উপকার সাধন সম্ভব?

(গ)কিছু রোগের জন্য নামাজ ছাড়া প্রেসক্রিপশান নাই

নামাজ হার্ট এ্যাটাক,প্যারালাইসিস,ডায়াবেটিস,মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত,নামাজ মানুষকে সব সময় সতেজ রাখে, অলসতা এবং অবসাদগ্রস্ততাকে শরীরে বাড়তে দেয় না। অন্যসব ধর্মের মধ্যে এমন সামগ্রিক ইবাদত আর নেই। নামাজীর জন্য এটা একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, এটা একান্তই সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব মানবের সকল অঙ্গগুলোতে পড়ে এবং সামগ্রিক মানব অঙ্গগুলোতে নড়াচড়া ও শক্তি সৃষ্টি হয় এবং স্বাস্থ্য অটুট থাকে।

তুরস্কের ডাক্তার হুলুক নূর বাকী নামাজের আত্মিক দিকের ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তিনিও এর দৈহিক উপকারিতার দিকে দৃষ্টি দেননি। এভাবে তিনি লিখেছেন—It today even materialist acknowledge that there can be no prescription other than prayer for the relief of joints.‘আজ বস্তুবাদীরাও স্বীকার করে যে, জোড়ার ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য আজ নামাজ ব্যতিত আর কোনো ব্যবস্থাপত্র নেই।

’ ক্যামিস্ট্রির ব্যবস্থাপত্র :নামাজের ব্যায়াম যেমন বাইরের অঙ্গ সুনিপুণ সৌন্দর্য ও বৃদ্ধির মাধ্যম, এটা তেমনি ভেতরের অঙ্গগুলো যেমন-হূদয়, প্লীহা, জঠর, ফুসফুস, মগজ, অন্ত্র, পাকস্থলী, মেরুদন্ডের হাড়, ঘাড়, বুক এবং দেহের সকল গ্লান্ড ইত্যাদি সুদৃঢ় করে ও উন্নত করে এবং দেহের সিডিউল এবং সৌন্দর্য রক্ষা করে। নামাজের প্রচলন যদি হতো তাহলে :কিছু রোগ এরূপও আছে যেগুলো থেকে নামাজ চালু করার দ্বারা রক্ষা পাওয়া যায়, কেননা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দেহে এসব রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

এর ধারাবাহিকতায় ডাক্তার হাসান গজনবীর এ বাক্যগুলো চিন্তার খোরাক জোগায়। তিনি লেখেন :“In addition to saving us from the sins and elevating us to the hights of spirituality prayers are great help in maintaining our physical health. The keep our body active, help digestion and save us from nuscase and joint diseaes through regular balanced exercise. They help the circulation of blood and also the bad effect of cholesterol. Prayers a vital role in acting as preventive measure against heart attack, Paralyes. diabetes mellitus etc. Hearts patients should offer the five obligatory prayers regularly as they get the permission from their doctor to leave bad. (Islamic Medicine. P. 68).”

“আমাদেরকে পাপ থেকে রক্ষা করা এবং আধ্যাত্মিকতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করানোর সাথে সালাত আমাদের দৈহিক স্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ধরনের সাহায্য করে।

এটি আমাদের দেহকে সক্রিয় রাখে, হজমে সাহায্য করে, আমাদেরকে জড়তা ও জোড়ার রোগ থেকে নিয়মিত সুষম ব্যায়ামের দ্বারা রক্ষা করে। এটি রক্ত পরিসঞ্চালনে এবং কলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সালাত হার্ট এ্যাটাক, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত, যেমনিভাবে তারা তাদের ডাক্তারদের নিকট খারাপ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অনুমতি লাভ করে থাকেন’ (প্রাগুক্ত)”

পশ্চিমারা সহ সারা বিশ্বে আজ হরেক রকমের ব্যায়াম করছেন যাতে তাদের দেহের কলেস্টেরল গড়মাত্রা সীমাতিক্রম না করে। এছাড়াও এদের দেহ সব প্রভাবশীল পন্থায় কাজ করে। তারা এ সত্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ইসলামী নামাজ যা কোনোরূপ ব্যায়াম নয় অথচ তা নানারূপ ব্যায়ামের রূপ পরিগ্রহ করে। তা স্বাস্থ্যসম্মতও বটে।

যেমন জার্মানের প্রসিদ্ধ পত্রিকা ‘ডি হায়েফ’-এ প্রসিদ্ধ জার্মান মান্যবর ও প্রাচ্যবিদ জাওয়াকীম ডি জুলফ এ সত্যকে প্রকাশ করেছেন তার জবানীতে। তিনি লিখেছেন: যদি ইউরোপে ইসলামী নামাজের প্রচলন হতো তাহলে আমাদের দৈহিক ব্যায়ামের জন্য নতুন নতুন ব্যায়াম ও নড়াচড়া আবিষ্কার করার প্রয়োজন হতো না (আল মাসালিহুল আমলিয়াহ লিল আহকামিশ শরইয়াহ পৃ. ৪০৬)।

(ঘ) নামাজ সর্বোত্তম পর্যায়ের চিকিত্সা :-

এক পাকিস্তানি ডাক্তার মাজেদ জামান উসমানী ইউরোপে ফিজিওথেরাপির ওপর উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের জন্য গিয়েছেন। যখন সেখানে সম্পূর্ণ নামাজের ব্যায়াম পড়ালেন এবং বুঝালেন তখন তিনি এ ব্যায়াম দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন যে, আমরা এতদিন পর্যন্ত নামাজকে এক ধর্মীয় আবশ্যক বলেই জানতাম এবং পড়তে থাকতাম, অথচ এখানে তো আশ্চর্য ও অজানা জিনিসের আবিষ্কার হয় যে, নামাজের মাধ্যমে বড় বড় রোগ নিরাময় হয়ে যায়।

ডাক্তার সাহেব তাকে একটি তালিকা প্রদান করেন যা নামাজের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে নিরাময় হয়— ১. মানসিক রোগ (Mental Diseases) ২. স্নায়ুবিক রোগ (Nerve Diseases) ৩. মনস্তত্ত্ব রোগ (Psychic Diseases) ৪. অস্থিরতা, হতাশা ও দুশ্চিন্তা রোগ (Restlessness, Depression and Anxiety) ৫. হার্টের রোগ (Heart Diseases) ৬. জোড়ার রোগ (Arthritis) ৭. ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ (Diseases due to Uric Acid) ৮. পাকস্থলীর আলসার (Stomach Ulcer) ৯. চিনি রোগ (Diabetes Mellitus) ১০. চোখ এবং গলা ইত্যাদির রোগ (Eye and E.N.T. Dieases).

মনস্তাত্তিক রোগ নামাজের মধ্যে মনস্তাত্তিক রোগ যেমন- গুনাহ, ভয়, নীচুতা, হতাশা, অস্থিরতা, পেরেশানি ইত্যাদিরও চিকিত্সা রয়েছে। যার বর্ণনা পুস্তকের কলেবর দীর্ঘ হওয়ার ভয়ে বাদ দিতে হচ্ছে। যা হাদীসে রসুল অধ্যয়ন করলে আমরা জানতে পারবো। তবে এখানে একটা কথা না বললে নয় তাহল উপরোক্ত বৈজ্ঞানীক উপকারীতা গুলো আমরা সকলেই উপভোগ করতে পারবো যদিনা আমরা রসুল সাঃ এর পূর্নাঙ্গ বাতানো তরীকা মোতাবেক নামজ আদায় করি ।কিন্তু নামাজের রুকু সেজদাহ গুলো যথাযথ সুন্নত মোতাবেকই আদায় করতে হবে ছেলে খেলা বা মুরগীর ঠোকরের ন্যায় তাড়াহুড়ো করে ধায় সাড়া নামাজ আদায় করলে হবেনা ।

একই সঙ্গে নামাজ দ্বারা পূর্বোক্ত উপকারিতা ছাড়াও দৈহিক ও মেধাগত উপকারিতাও হয়। আজ ইসলামি ইবাদতের বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলো সামনে আসছে। নামাজের প্রত্যেকটি রুকন কোনো না কোনো চিকিত্সাগত ও মনস্তাত্তিক উপকারের বাহক।

ব্যায়াম ও নামাজ :- নামাজের রুকনগুলো এককভাবে ব্যাখ্যা করলে তার আলোকে দেখা যায় নামাজের প্রত্যেক রুকন আদায়ের মধ্যেই বিশেষ অঙ্গ ও জোড়ার আন্দোলন সৃষ্টি হয় এবং বিশেষ অঙ্গগুলোর ব্যায়াম হয়। শরীরতত্ত বিদ্যার (Physiology) একটি মূলনীতি এই যে, যখন মানুষ নড়াচড়ার ইচ্ছে করে তখন সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের কেন্দ্র থেকে নড়াচড়া স্নায়ুর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঙ্গে পৌঁছায় এবং অঙ্গগুলো স্থানভেদে সংবর্ধিত, সংকুচিত হয়ে উদ্দিষ্ট কাজ করে থাকে এবং যখন নামাজ আদায়ের শুরুতে বারবার নামাজের রুকনগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন এ আকার একটি ব্যায়ামের প্রকৃতি গ্রহণ করে যার দ্বারা অঙ্গ ও জোড়াগুলোর বর্ধন ও উন্নতি এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।

এভাবে নামাজের সব রুকন আদায়ের মাধ্যমে মানবের সব অঙ্গের ব্যায়াম হয়ে যায়। যার দ্বারা মানব দেহের সতেজতা ও শক্তি বহাল থাকে এবং দৈহিক কার্যাবলি প্রাকৃতিক মাপকাঠির ওপর চলতে থাকে। সামগ্রিক ইবাদত নামাজ একটি উত্তম ইসলামি ব্যায়াম, যা মানুষকে সর্বদা সতেজ রাখে। অলসতা ও অবসাদকে দেহের মধ্যে বাড়তে দেয় না কিন্তু অন্য কোনো ধর্মে এমন কোনো সামগ্রিক ইবাদত নেই যা আদায়ের মাধ্যমে মানুষের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ বৈশিষ্ট্য শুধু নামাজের মধ্যেই রয়েছে যে এটা সমগ্র ইসলামের সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব সমগ্র মানব অঙ্গের ওপর সমভাবে পড়ে এবং দেহের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি সৃষ্টি হয় এবং স্বাস্থ্য রক্ষিত থাকে (ইসলামি স্বাস্থ্য বিধি, পৃ-৩৬)।সংকলিত।

(ঙ) কঠিন বস্তু সচল করা

নামাজ আত্মা ও দেহ উভয়ের জন্য ব্যায়াম-এ জন্য এর মধ্যে দাঁড়ানো, বসা, রুকু, সিজদা এগুলোর বিভিন্ন ধরনের নড়াচড়া হয়ে থাকে এবং নামাজী এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থার দিকে পরিবর্তিত হতে থাকে। নামাজে দেহের অধিকাংশ জোড়া নড়াচড়া করতে থাকে এবং এর সাথে বেশির ভাগ অদৃশ্য অঙ্গগুলো পাকস্থলী, অন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র, এবং খাদ্যের অঙ্গগুলো এসবের গঠনে নড়াচড়া এবং পরিবর্তন আসে। অত:পর এ অবস্থায় কোনো কথা নিষেধকারী যে এ সব নড়াচড়ার দ্বারা কিছু অঙ্গ শক্তি অর্জন করবে এবং অপ্রয়োজনীয় আবশ্যিক জিনিসগুলো সচল না হবে? (তিব্বে নববী, পৃ.-৩৯৯)।সুতরাং কোরআনের সাথে বিজ্ঞানের কোন সংঘর্ষ নেই বরং বিজ্ঞানের কারণে আজকাল সাধারন লোকের সাথে সাথে অমুসলিমরাও ইসলামকে বুঝার চেষ্টা করছে।যদিও কোরআন কে বুঝার জন্য বিজ্ঞানের প্রয়োজন নেই।

(চ) কেন দৈনিক পাঁচবার সালাত আদায় করি আমরা?

সালাত হল সৎকাজের জন্য একধরনের প্রশিক্ষণ বা প্রোগ্রামিং। আর প্রশিক্ষণের মূল জিনিষটিই হল কোন একটি কাজ বার বার করা বা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে তাআয়ত্ত করা। তাই আমদেরকেও সালাত আদায় করতে হয় দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার। উদাহারন স্বরূপ বলা যেতে পারে, আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য অর্থাৎ সুস্বাস্থ্যের জন্য দৈনিক কমপক্ষে তিন বেলা খাবার খেতে হয় আমাদের। একইভাবে আত্তাকে সুস্থ রাখবার জন্য দৈনিক পাঁচবার নামাজ পড়া দরকার আমাদের।এছাড়াও সমাজে যেহেতু পাপের ছড়াছড়ি তাই নামাজের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ না নিলে সিরাত-উল-মুস্তাকিম অর্থাৎ সৎপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ বা বাধ্যতামূলক।

(ছ)প্রত্যেক নামাজ প্রত্যেক অঙ্গের শুকরানাস্বরূপ

আল্লাহপাক আমাদের দেহের মধ্যে যেসব মূল্যবান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করেছেন তার শুকরানাস্বরূপ আমরা নামাজ পড়ব কেননা হাশরের দিন প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি প্রশ্ন করা হবে। কাজেই আমরা যে অনুভব শক্তি প্রাপ্ত হয়েছি তাতে সুখ-দুঃখ দুটি জিনিস অনুভব করতে পারি সেই জন্য ফজরের ২ রাকাত নামাজ। জিহ্বা দ্বারা মিষ্টি, টক, তিতা ও কটু এই ৪টা স্বাদ গ্রহণ করতে পারি এজন্য জিহ্বার শুকারানাস্বরূপ ৪ রাকাত নামাজ জোহর। নাসিকা দ্বারা শ্বাস-প্রশ্বাস, সুগন্ধ ও দুর্গন্ধ অনুভব করতে পারি এজন্য আসরের ৪ রাকাত নামাজ। চক্ষু দ্বারা ডান-বাম ও সামনে দেখি এজন্য মাগরিবের তিন রাকাত নামাজ। কর্ণ দ্বারা চারদিকের শব্দ শুনতে পাই এজন্য এশার ৪ রাকাত নামাজ। সুতরাং মূলকথা প্রত্যেক নামাজ প্রত্যেক অঙ্গের শুকরানাস্বরূপ।

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে চলনশীল দেহ প্রদান করেছেন। এজন্য তার স্বাস্থ্য দেহের চলার (অর্থাৎ ব্যায়াম ইত্যাদি) ওপর টিকে থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানুষকে সচল রাখে। থেমে থেমে নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। জামাতে নামাজ পড়া একই সঙ্গে উচ্চমানের ব্যায়াম হিসেবেও কাজ করে।

(জ) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হেকমত:-

ফজরের সময় : যখন রাত শেষ হয়ে আসে, তখন সূর্য উদয় হওয়ার আগে ফজরের নামাজ ফরজ করা হয়েছে। এ সময়ের নামাজ হালকা প্রকৃতির। সারারাত আরাম করার পর ওই সময় পাকস্থলীও খালি হয়ে যায়। এজন্য এ সময় হালকা ও সংক্ষিপ্ত নামাজ নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে মানুষের ক্ষতি না হয়। নামাজি এই চার রাকাত নামাজ পড়ে শারিরীক ও মানসিকভাবে উপকৃত হয়। ফজর নামাজ পড়ে লোকেরা নিজ অবসাদগ্রস্ত দেহকে পুনরায় সক্রিয় ও চলমান করে। এরপর সারাদিন নিজ রিজিক ও জীবিকা অর্জন করার জন্য কাজকর্মে মনোযোগ দেয়ায় উদ্দীপনা ফিরে পায়। মস্তিষ্ক চিন্তা-ভাবনার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। সুবেহ সাদিকের সতেজ প্রকৃতি এবং আলোতে মানুষ নামাজের জন্য বাইরে বের হয় এবং পায়ে হেঁটে মসজিদে যায়, এতে সতেজ পরিচ্ছন্ন প্রশান্ত পরিবেশ থেকে যে সূক্ষ্ম অনুভূতির সৃষ্টি হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

জোহরের সময় : দিন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ জীবিকা অর্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ধুলা-ময়লা তার গায়ে লাগে। রোগ-জীবানু হাত-পায়ে লাগার আশঙ্কাও রয়েছে। কেননা মানুষ জীবাণুযুক্ত বায়ুর মধ্যে থাকে। তখন তার দেহের ওপর জীবাণু আক্রমণ করে। এছাড়াও দুপুর পর্যন্ত কাজ করতে করতে ক্লান্তিও অনুভূত হয়। এ কারণে একজন নামাজি জোহর নামাজের জন্য অজু করে স্বীয় হাত, মুখ, পা ইত্যাদি ধৌত করায় দেহমনে পরিচ্ছন্নতার কারণে প্রফুল্লতা আসে। এর ফলে রোগের কোনো আশঙ্কাও থাকে না।

ক্লান্ত দেহে জোহরের নামাজ পড়ে আরাম ও প্রশান্তি অনুভব করে এবং পুনরায় উজ্জীবিত হয়, যার দ্বারা ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এসব উপকারিতা একজন নামাজির জোহরের নামাজের সময় অর্জিত হয়।

আসরের সময় : জ্ঞানবান ও চিন্তাশীল ব্যক্তি এবং বিজ্ঞ মাত্রেই জানেন, পৃথিবী দুই ধরনের গতিতে চলে। এগুলো হলো : লম্ব ও বৃত্তীয়।

যখন সূর্য ঢলতে থাকে, তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে, এমনকি আসরের সময় ঘূর্ণনের পরিমাণ একেবারেই কমে যায়। এ কারণে মানুষের ওপর দিনের অনুভূতি প্রবল হতে থাকে, প্রকৃতির মধ্যে স্থবিরতা এবং অবসাদগ্রস্ততা প্রদর্শিত হতে থাকে। আসরের নামাজের সময় মানুষের সচেতন অনুভূতির ওপর অচেতন অনুভূতির প্রভাব শুরু হয়, যার দ্বারা মানুষ আরামদায়ক অনুভূতি লাভ করে।

মাগরিবের সময় : মানুষ সারাদিন শ্রম ও কষ্টের মধ্যে কাটায় এবং নিজ ও পরিবারের জন্য রুজি-কামাই করে আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া আদায় করে যে, সেই মহান সত্তা এগুলো অর্জন করার জন্য শক্তি প্রদান করেছেন। এটি আনন্দের মধ্যে হয়, যার দ্বারা অন্তর এক বিশেষ প্রকারের আনন্দ অনুভব করে। মাগরিবের সময় সে আল্লাহ তায়ালার নিকট হাজিরা দিয়ে নিজ দাসত্বকে প্রকাশ করে, আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করে। মানুষের এই আকুতি তাকে নূরানী তরঙ্গমালায় আচ্ছাদিত করে এবং তার আত্মাকে প্রশান্তি প্রদান করে।

এশার সময় : মানুষ স্বভাবগতভাবে রাতে বাড়ি ফিরে সুস্বাদু খাবার খায়। যখন সে কাজকর্ম থেকে ঘরে ফিরে আসে, খানা খায় এবং স্বাদ ও লোভের কারণে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। যদি সে খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়ে, তাহলে সে ধ্বংসকারী রোগের শিকার হয়। মানুষ সারাদিনের ক্লান্তির পর খাবার খেয়ে তৎক্ষণাৎ শুয়ে পড়লে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শোয়ার আগে এবং অতিরিক্ত খানা খাওয়ার পরে কমবেশি ব্যায়াম করে নেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এশার নামাজ সে ক্ষেত্রে আত্নিক চাহিদার পাশাপাশি দৈহিক চাহিদা অর্থাৎ ব্যায়ামের কাজটিও করে।যেমন হাদিসে রসুল সাঃ থেকে আমরাআরও জানতে পারি সুস্বাস্হের জন্য রাত্রে খানা খাওয়ার পর কম পক্ষে ৪০ কদম পথ চলার কথা।

( ঝ) নামাজ নিজেকে চাঙ্গা করার হাতিয়ার

ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আপনার ধারনা থাকলে আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে, একটা লোক নিরবিচ্ছিন্নভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে পারেনা। একটা লোক যদি সকাল ৯’টায় অফিসে এসে সন্ধ্যা ৬’টা পর্যন্ত একটানা কাজ করতে থাকে, তবে তার কর্ম উৎপাদনশীলতা বাড়ার পরিবর্তে কমে যেতে পারে উল্টো। আর একারণেই অফিসের কাজের ফাকে ফাকে সংক্ষিপ্ত বিরতির ব্যবস্থা রাখা হয় পৃথিবীর সব দেশেই, যাতে করে নিজেদের চাঙ্গা করে নিতে পারি। একইভাবে নামাজও আমাদের চাঙ্গা করে আমাদের কর্ম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

এটা আমদের শরীর ও মনকে সতেজ করে তুলে। একজন মুসলমানের জন্য নামাজ হল একপ্রকারের বিনোদন। এখন কেউ যদি বলে যে কাজের ফাকে ১৫ মিনিট একটা লাঞ্চ ব্রেক নিলে সময়ের অপচয় হয়, উৎপাদনশীলতা কমে যায় তবে সেটা হবে অযৌক্তিক। একইভাবে কেউ যদি কাজের ফাকে নামাজটা আদায় করে নেয় নিয়মিত, তবে তার হয়ত অল্প কিছুক্ষণের জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হতে পারে, কিন্তু নামাজ আদায় করে সে যখন চাঙ্গা মন নিয়ে ফিরবে আবার কাজে, তখন মোট উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাবে তার। তাই একজন যৌক্তিক ও আধুনিক মানুষের এটা মেনে নেওয়া উচিত যে অফিসে কাজের ফাকে ফাকে প্রয়োজনীয় বিরতির ব্যবস্থা রাখা দরকার যাতে করে কর্মীরা চাঙ্গা করে নিতে পারে নিজেদের, আর একজন মুসলমানের জন্য নামাজ হল নিজেকে সতেজ ও চাঙ্গা করে তুলবার সর্বোত্তম মাধ্যম।

(ঞ) মনোবিজ্ঞানের গবেষনা, নামায কেন পড়বো?

অন্তত ১০ হাজর বিষাদগ্রস্ত লোকের ওপর গবেষণা চালানোর পর ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী হেনরি র্যা ঙ্ক বলেছেন,আমি এখন ধর্মীয় বিশ্বাসগুলোর গুরুত্ব খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করছি। সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে,যে কেউ ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাস লালন করবে কিংবা যথাযথত নিয়মে প্রার্থনালয়ে উপস্থিত হবে,তারা উন্নত মানবীয় ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার অধিকারী হবে।

আমেরিকার স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর ফ্রেডরিক পাওয়ার্স বলেছেন, এমন এমন কিছু রোগী আমাদের কাছে এসেছে যাদের অবস্থার উন্নতির ব্যাপারে বড়ো বড়ো এবং অভিজ্ঞ ও দক্ষ ডাক্তারগণও খুব কমই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে তাদের অবস্থার উন্নতির ব্যাপারে যা তাদের ওপর প্রভাব ফেলেছিল,তাহলো আল্লাহর সাথে সম্পর্ক এবং মোনাজাতের মতো অলৌকিক বিষয়। ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী সেরেল ব্রেতও বলেছেন,আমরা নামায এবং দোয়ার মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক আনন্দের বৃহৎ সম্ভারে প্রবেশ করতে পারি,যেখানে সাধারণভাবে প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই।

এ কারণেই যারা নামায পড়েন তাদের জন্যে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে,দৈনিক কয়েকবার নামায পড়া আন্তরিক প্রশান্তির জন্যে সর্বোৎকৃষ্ট কর্মসূচি ও অনুশীলন।

হযরত মূসা (আ) এর প্রতি ওহী নাযিল হয়েছিল যে তোমরা সারিবদ্ধ হও এবং নামায কায়েম কর। হযরত ইব্রাহীম (আ) ও তাঁর দোয়ায় আল্লাহর কাছে চেয়েছেন-হে পরোয়ার দেগার! আমাকে নামায কায়েমকারীদের অন্তর্ভুক্ত করো। আমার বংশধরকেও নামাযে সুপ্রতিষ্ঠিত করে দাও! হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার দোয়া কবুল করো। দোলনায় থাকা অবস্থায় হযরত ঈসা (আ)ও নিজেকে নামায কায়েম করার জন্যে আদেশপ্রাপ্ত বলে আত্মপরিচয়ে উল্লেখ করেছেন। সূরা মরইয়ামের ৩১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-আমি যেখানেই থাকি না কেন তিনি আমার অস্তিত্বকে বরকতপূর্ণ তথা মঙ্গলময় করেছেন,যতোদিন আমি জীবিত আছি ততোদিন আমাকে নামায কায়েম করার এবং যাকাত আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,,

(ট) ৫ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের রহস্য বা দর্শন

এক ফন্দি অনুযায়ী বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে জ্ঞানের দিক থেকে দূর্বল হিসেবে তুলে ধরার জন্য ইহুদি পন্ডিতরা তাঁকে কিছু জটিল প্রশ্ন করার উদ্যোগ নেয়। আল্লাহর সর্বশেষ (সাঃ) রাসূল এইসব জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না এবং এর ফলে তাঁর ও ইসলাম ধর্মের দূর্বলতা মানুষের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হবে বলে ইহুদি পন্ডিতরা ভেবেছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে মসজিদে প্রকাশ্য জনসভায় বিশ্বনবী (সাঃ) ইহুদি পন্ডিতদের জটিল সব প্রশ্নের জবাব দিতে লাগলেন এবং তারা সবাই উত্তর পেয়ে বিস্মিত হল। সবশেষে ইহুদি পন্ডিতদের নেতা তার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নটি উত্থাপন করে রাসূল (সাঃ)কে জব্দ করতে চাইলেন। ঐ পন্ডিত বললেন, হে মুহাম্মাদ! বলুন তো দেখি আল্লাহ কেন দিন ও রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আপনার ওপর ফরজ বা বাধ্যতামূলক করেছেন ? কেন এর চেয়ে কম বা বেশী করা হল না ?

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র পবিত্র চোখে তখন বিদ্যুৎ খেলছিল এবং মহান আল্লাহর প্রেমে তাঁর নূরানী চেহারা ছিল উদ্ভাসিত । তিনি বললেন,

যোহরের নামাজের সময় আল্লাহর আরশের নীচে অবস্থিত সব কিছু আল্লাহর প্রশংসা করে ও তাঁর গুণ-গানে মশগুল হয়। আর এ জন্যই আল্লাহ এ সময় অর্থাৎ মধ্যাহ্নের পর আমার ও আমার উম্মতের জন্য নামাজ ওয়াজেব করেছেন এবং এ জন্যই মহান আল্লাহ বলেছেন, সূর্য মধ্য আকাশ থেকে পশ্চিমে হেলে পড়ার পর থেকে অন্ধকার নেমে আসার সময় পর্যন্ত নামাজ আদায় কর।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আসরের নামাজ ফরজ বা বাধ্যতামূলক হবার কারণ সম্পর্কে বললেন, আসরের সময় হল সেই সময় যখন হযরত আদম (আঃ) তার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত গাছের ফল খেয়েছিলেন। ফলে আল্লাহ তাঁকে বেহশত থেকে বহিষ্কার করেন। আল্লাহ আদমের সন্তানদেরকে আসরের নামাজ পড়তে বলেছেন এবং আমার উম্মতের জন্যও তা ওয়াজেব করা হয়েছে। এই নামাজ মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নামাজসমূহের মধ্যে অন্যতম।

এরপর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মাগরিবের নামাজ ফরজ বা বাধ্যতামূলক হবার কারণ সম্পর্কে বললেন, মহান আল্লাহ অনেক বছর পর হযরত আদম (আঃ)'র তওবা কবুল করেন এবং তিনি তখন তিন রাকাত নামাজ আদায় করেন। আল্লাহ আমার উম্মতের জন্যও মাগরিবের নামাজ বাধ্যতামূলক করেছেন, কারণ এ সময় দোয়া কবুল হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, তোমরা রাত নেমে আসার সময় ও সকালে আল্লাহর প্রশংসা কর ।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এশা'র নামাজ ফরজ বা বাধ্যতামূলক হবার কারণ সম্পর্কে বললেন, কবরে ও কিয়ামতের দিনের ভয়াবহ অন্ধকারগুলো এশা'র নামাজের আলোয় কেটে গিয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আল্লাহ বলেছেন, এশা'র নামাজ আদায়ের জন্য অগ্রসর হওয়া এমন কোনো ব্যক্তি নেই যাকে আল্লাহ দোযখ বা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন না। আর ফজরের নামাজের দর্শন হল, সূর্য-পূজারীরা সূর্য উদয়ের সময়ে এবাদত করতো। তাই আল্লাহ কাফেরদের সিজদার আগেই ইবাদতে মশগুল হতে মুমিনদেরকে ফজরের নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের রহস্য বা দর্শন সম্পর্কে বিশ্বনবী (সাঃ)'র কাছ থেকে বক্তব্য শোনার পর ইহুদি পন্ডিতরা লা-জওয়াব হয়ে গেলেন। কারণ, তাদের আর বলার কিছুই ছিল না। ফলে তারা অবনত মস্তকে মসজিদ ত্যাগ করে।

(2) মুসলিমদের "হাঁচিতে আলহামদুলিল্লাহ"বলাতে কি বিজ্ঞান রয়েছে ?

আমরা হাদীস সূত্রে জানতে পারি যে হাঁচি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত স্বরুপ,আর হাইম্মানী শয়তানের পক্ষ থেকে,সেই হিসাবে নবী সাঃএর শিক্ষা অনুযায়ী আমরা হাঁচি দিলে আলহামদুলিল্লাহ ও হাইম্মানী দিলে লা-হাওলা ওয়ালা ক্বুয়্য়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ পাঠ করে থাকি। ইউরোপের এক খৃষ্টান ডাক্তার মুসলমানদের হাঁচি নিয়ে গবেষণা করছিলেন যে, মুসলমানরা হাঁচির পর 'আলহামদু লিল্লাহ" পড়ে কেন? সাধারণত কোন সুসংবাদ পেলে মুসলমানরা আলহামদুলিল্লাহ পড়ে। হাঁচিতে কিসের সুসংবাদ? অনেক গবেষণার পর তথ্য উদঘাটন হল যে, একটি হাঁচির সাথে তিন হাজার রোগ- জীবাণু বেরিয়ে যায় আর মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় একসাথে দু'টি হাঁচি দেয়। এভাবে দু'টি হাঁচির সাথে ছয় হাজার রোগ জীবাণু বেরিয়ে যায়।এই রোগ জিবানু বের হয়ে সুস্হ হওয়া অবশ্যই একটি রহমত এবং খুশির বিষয়। তিনি ভাবলেন এ তথ্য বের করতে আমার অন্তত বিশ বছর লেখ-পড়া করতে হয়েছে। আরো কত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয়েছে। কিন্তু যে যুগে মুসলমানদের নবী এ শিক্ষা দিয়ে গেছেন সে যুগেতো এত মেশিন ছিল না আর তিনি তো দুনিয়ার কারো কাছে লেখা-পড়াও শিখেননি। তিনি এগুলো জানলেন কিভাবে? নিশ্চই তিনি সত্য নবী। আল্লাহ পাক তাঁকে জানিয়েছেন বিধায় তিনি তাঁর উম্মতদেরকে এ শিক্ষা দিয়ে গেছেন যে, হাঁচির পর 'আলহামদু লিল্লাহ" পড়বে। অতএব তিনি সত্য নবী। ফলশ্রুতিতে ঐ খৃষ্টান ডাক্তার স্বপরিবারে মুসলমান হয়ে গেলেন সুবাহানাল্লাহ

(3) আল্লাহ্‌কে ডাকার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা

নেদারল্যান্ডের মনোবিজ্ঞানী ভ্যান্ডার হ্যাভেন প্রবিত্র কোরআন অধ্যয়ন ও বারবার ‘আল্লাহ্‌’ শব্দটি উচ্চারণে রোগী ও স্বাভাবিক মানুষের ওপর তার প্রভাব সম্পর্কিত একটি আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছেন। ওলন্দাজ এই অধ্যাপক বহু রোগীর ওপর দীর্ঘ তিন বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে অনেক গবেষণারপর এই আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন। যেসব রোগীর ওপর তিনি সমীক্ষা চালান তাদের মধ্যে অনেক অমুসলিমও ছিলেন, যারা আরবি জানেন না। তাদের পরিষ্কারভাবে ‘আল্লাহ্‌’ শব্দটি উচ্চারণ করার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এই প্রশিক্ষণের ফল ছিল বিস্ময়কর, বিশেষ করে যারা বিষণ্ণতা ও মানসিক উত্তেজনায় ভুগছিলেন তাদের ক্ষেত্রে। সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত দৈনিক আল-ওয়াতান প্রত্রিকা হ্যাভেনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, আরবি জানা মুসলমানরা যারা নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করেন তারা মানসিক রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারেন। ‘আল্লাহ্‌’ কথাটি কিভাবে মানসিক রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে তার ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। তিনি তার গবেষণা কর্মে উল্লেখ করেন, ‘আল্লাহ্‌’ শব্দটির প্রথম বর্ণ আলিফ আমাদের শ্বাসযন্ত্র থেকে আসে বিধায় তা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি আরও বলেন, লাম বর্ণটি উচ্চারণ করতে গেলে জিহ্বা উপরের মাড়ি সামান্য স্পর্শ করে একটি ছোট বিরতি সৃষ্টি করে এবং তারপর একই বিরতি দিয়ে এটাকে বারবার উচ্চারণ করতে থাকলে আমাদের শ্বাসযন্ত্রে একটা স্বস্তিবোধ হতে থাকে। শেষ বর্ণ হা –এর উচ্চারণ আমাদের ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের মধ্যে একটা যোগসূত্র সৃষ্টি করে তা আমাদের হৃদযন্ত্রের স্পন্দনকে নিয়ন্ত্রণ করে।

(4) ‘মাছি’ প্রসঙ্গে বিশ্বনবীর বাণী,ও আধুনিক বিজ্ঞান

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ১৪০০ বছর আগে মাছি প্রসঙ্গে যে কথাটি বলেছিলেন তা আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানও মেনে নিয়েছে। বুখারী ও ইবনে মাজাহ হাদীসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন

:

ﺇﺫﺍ ﻭَﻗَﻊَ ﺍﻟﺬُّﺑﺎﺏُ ﻓِﻲ ﺇﻧَﺎﺀِ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﻓَﻠْﻴَﻐْﻤِﺴْﻪُ ﻓَﺈﻥَّ

ﻓِﻰ ﺃﺣَﺪِ ﺟِﻨَﺎﺣﻴْﻪِ ﺩَﺍﺀً ﻭَﻓﻰ ﺍﻟْﺄﺧَﺮِ ﺷِﻔﺎﺀ ( ﺭﻭﺍﻩ

ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ)

অর্থ : যদি তোমাদের কারো পাত্রে মাছি পতিত হয় সে যেন উক্ত মাছিটিকে ডুবিয়ে দেয়। কেননা তার একটি ডানায় রোগ জীবানু রয়েছে, আর অপরটিতে রয়েছে রোগনাশক ঔষধ"(বুখারী)।

আমাদের মাঝে এমন কি কেউ আছে যে উক্ত রোগের জীবানুগুলো দেখেছে? আমাদের কেউ কি উক্ত রোগ নাশক ঔষধ অবলোকন করেছে? অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : নিশ্চয়ই তা রয়েছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। সেখানে রোগ রয়েছে মানুষ তা জানতোনা। তারা দেখতে পায়, মাছি তার দুই ডানা দিয়ে উড়ে যায়। কিন্তু এ বিষয়ে তারা কিছুই জানতো না যে, তার ভিতরে কল্যাণ রয়েছে, না অকল্যাণ রয়েছে।

জ্ঞান বিজ্ঞানের যখন অগ্রগতি হলো, যখন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জীবানু সম্পর্কে জ্ঞানের অগ্রগতির মাধ্যমে বর্ণিত হচ্ছে যে, মাছি মানুষের শত্রু“, সে রোগ জীবানু বহন করে এবং স্থানান্তরিত করে। মাছির ডানায় রোগ জীবানু রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই যদি হয় তাহলে কিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগ জীবানু বহনকারী মাছিকে ডুবিয়ে নেয়ার আদেশ করলেন?

এই বিষয়ে জার্মান, ব্রিটেন ,ওফ্রান্সে পৃথক পৃথক গবেষনা হয়েছে কিন্তু সম্প্রতি ২০১৫সালে সৌদিআরবের কিং আব্দুল আজীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উস্তাদ ডক্টর ওয়াজিহ বায়েশরী এই হাদীসের আলোকে মাছিকে নিয়ে কয়েকটি পরীক্ষা চালান। জীবানুমুক্ত কিছু পাত্রের মাধ্যমে কয়েকটি মাছি ধরে নিয়ে জীবানুমুক্ত টেষ্ট টিউবের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখেন। তারপর নলটি একটি পানির গ্লাসে উপুড় করেন। মাছিগুলো পানিতে পতিত হওয়ার পর উক্ত পানি থেকে কয়েক ফোটা পানি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন যে, সেই পানিতে অসংখ্য জীবানু রয়েছে।

তারপর জীবানুমুক্ত একটি সূঁচ দিয়ে মাছিকে ঐ পানিতেই ডুবিয়ে দেন। তারপর কয়েক ফোটা পানি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন যে, সেই পানিতে আগের মত আর জীবানু নেই, বরং কম। তারপর আবার ডুবিয়ে দেন। তারপর কয়েক ফোটা পানি নিয়ে আবার পরীক্ষা করেন। এমনি ভাবে কয়েকবার পরীক্ষা করে দেখেন যে, যত বার মাছিকে ডুবিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন ততই জীবানু কমেছে অর্থাৎ ডক্টর ওয়াজীহ এটা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, মাছির একটি ডানায় রোগ জীবানু রয়েছে এবং অপরটিতে রোগনাশক ঔষধ রয়েছে। সৌদী আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত অষ্টম চিকিৎসা সম্মেলনে কানাডা থেকে দু’টি গবেষণা-রিপোর্ট পাঠিয়েছিল যাতে বর্ণিত ছিল, মাছিতে এমন কোন বস্তু রয়েছে যা জীবানুকে ধ্বংস করে দেয়। শাইখ মোস্তকা এবং শাইখ খালীল মোল্লা এই বিষয়ে জার্মান ও ব্রিটেন থেকে রিসার্চগুলো ধারাবাহিক সংগ্রহের মাধ্যমে একটি বই বের করেছেন যার মূল বিষয় ছিল :

ﻓﺈﻥ ﻓﻰ ﺃﺣﺪ ﺟﻨﺎﺣﻴﻪ ﺩﺍﺀً ﻭَﻓﻰ ﺍﻟْﺂﺧﺮ ﺷﻔﺎﺀ

(ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ )

অর্থঃ নিশ্চয়ই মাছির একটি ডানায় রয়েছে রোগ, আর অপরটিতে রয়েছে রোগ নাশক ঔষধ। (বুখারী)

মাছি যখন কোন খাদ্যে বসে তখন যে ডানায় জীবানু থাকে সে ডানাটি খাদ্যে ডুবিয়ে দেয়। অথচ তার অপর ডানায় থাকে প্রতিরোধক ভাইরাস সেটাকে উপরেই রাখে। এমতাবস্হায় যদি মাছিকে ডুবিয়ে দেয়া হয়

তাহলে প্রতিরোধক ভাইরাস খাদ্যের সঙ্গে মিশে মারাত্মক জীবানুগুলিকে ধ্বংস করে দেয় ।এবং খাদ্য স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য অনুকুল থাকে। নতুবা এই খাদ্যই জীবানুযুক্ত হয়ে মানব ধ্বংসের কারণ হতে পারে। সেই চৌদ্দশত বছর পূর্বে এই ক্ষুদ্র জীবানু দেখার শক্তি মানুষের ছিল না।এমনি এই ধরনের যন্ত্রের আবিস্কার সম্পর্কে হয়তো কল্পনাও করেনি অথচ রাসূল (সHappy সেগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছেন এবং সে সম্পর্কে কথা বলেছেন এবং ঐ বিপদজনক দিক বর্ণনা করেছেন যা আমাদের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক। সেই জাহেলী যুগে এই আশ্চায্যিত তথ্য কে তাঁকে জানিয়ে দিলেন? এটা কি নবীজির নবুয়াতের প্রমাণ রাখেনা?

সূত্র:-২২ জুলাই,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/এমআর

(5) খানার প্লেট ও আঙ্গুল চুষে খেলে ভিটামিন-বি-কমপ্লেক্স ওডাইজেষ্টের উপকার একটি বৈজ্ঞানীক সমিক্ষা :-

আজকাল একটা পেশন হয়ে গেছে যে খানা খাওয়ার সময় খানার কিছু অংশ প্লেটে রেখে দেয়া হয়,এবং খানার প্লেট ও আঙ্গুল চুষে খাওয়াকে অভদ্র মনে করা হয়।আসলে এটা একটা মূর্খতা জেহালত,এটা একদিকে অপচয় অপরদিকে আল্লাহর নেয়ামতের সাথে অবজ্ঞা করার শামীল। واما بنعمت ربك فحدث কেয়ামতে প্রত্যেকটি নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।এমনকি একগ্লাস পানি, একলোকমা ভাত,একটুকরো রুটি আর খেজুর যাই হউকনা কেন?খানা খাওয়ার সময় খানার প্লেট বা হাতের আঙ্গুল চুষে খাওয়া নবী সাঃ এর সারা জীবনের একটা সুন্নত।আজকের বিজ্ঞানের যুগে পরিক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমান হয়েছে যে,এসুন্নতটা কতই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন খানা খাই তখন আঙ্গুল থেকে এক প্রকার প্লাসভাটা নির্গত হয়,যা খালি চোখে দেখা যায়না।যেটা ডাইজেষ্টের উপকার করে এবং ভাটামিন বি-কমপ্লেক্সের উপকার করে।কিন্তু মজার ব্যাপার হল এই ভিটামিনটা খাদ্যের সর্বশেষ কণিকার মধ্যে পাওয়া যায়,যা একমাত্র প্লেট ও আঙ্গুল চুষে খেলেই তাসম্ভব।তাইতো নবী সাঃ বলেছেন فان البركة فى اخره অর্থাৎ "নিশ্চয়ই খানার বরকত শেষ কণিকাতেই"নবী সাঃ যেটাকে বরকত বলেছেন সেটাকেই বৈজ্ঞানীকরা ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স বলছেন,আবার আঙ্গুল চুষে খাওয়ার ব্যাপারে নবী সাঃ আরও বলেছেন فان لم يلعقها فيلعقها اخاه অর্থাৎ কেউ যদি (খানা খাওয়ার শেষে) নিজের আঙ্গুল গুলো চুষে না খায়,সে যেন তার ভাইকে আঙ্গুল গুলো দিয়ে দে,চুষে খাওয়ার জন্য।তারপরও যেন এই খাদ্য কণীকা গুলোকে নষ্ট না করে।কেননা এই কণিকাতেই বরকত নিহীত রয়েছে। গবেষক বৈজ্ঞানীকেরা বলেছেন যে আঙ্গুল গুলো চুষে খেলে যে প্লাসভাটা নির্গত হয়, ঐ প্লাসভাটার কারণে ৫টা আঙ্গুল চুষে খেলে ৫টা ডাইজেষ্ট তথা হজমের জন্য যে সকল পানীয় বা ট্যাবলেট সেবন করা হয়,তার চেয়েও বেশী উপকার হবে ইনশাআল্লাহ।যারা বদহজমী সহ গ্যাষ্টিকের সমস্যায় ভূগছেন তাদের জন্য মহৌষধ।

(6) গর্ভের বাচ্ছাকে কি শেখাতে চান?এখনি সিদ্ধান্ত নিন বৈজ্ঞানীক গবেষনা :-

বুখারী এবং মুসলিম উভয়ের মধ্যেই এর উল্লেখ আছে: মাতৃগর্ভে ১২০ দিনের পর ফেরেস্তারা আল্লাহতালার নির্দেশে শিশুর দেহে রুহ প্রবেশ করান.

"Verily the creation of everyone of you is brought together in the mother's womb as a drop of semen for forty days, then it becomes a clot for the same period, then it becomes a blob of flesh for the same period. Then the angel will be sent unto it to blow into it a spirit (Ruh), and the angel ordered (to carry out) with four instructions: to write down his livelihood, the span of his life, his deeds, and either he is wretched or fortunate..."

বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে উপরিলিখিত হাদীসটির সত্যতা খুঁজে পেয়েছে. তাদের হিসাবে ফার্টিলাইজেসনের প্রায় ৬ সপ্তাহ (৪০ দিন) পর এমব্রিও গঠিত হয়. তারপর আরো প্রায় ৬ সপ্তাহ (৪০ দিন) লাগে ফিটাস গঠন করার জন্য. তারপর একটি পূর্ণাঙ্গ মানুষের রূপ নিতে আবার একই সময় অর্থাৎ প্রায় ৬ সপ্তাহ (৪০ দিন) লাগে.

এমব্রিওলজিস্টরা আরো মনে করে যে, ১২০ দিনের আগে মানব শিশুটি চিন্তা করতে পারে না. প্রথম ৬ সপ্তাহ শিশুটির (এমব্রিও) মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা ইলেকট্রেকেলি সাইলেন্স থাকে. তারা মোটামুটি নিশ্চিত যে, গর্ভস্থ একটি শিশুর যখন ৪ মাস (১২০ দিন), তখন থেকেই তারা চিন্তা করতে পারে, আবেগ প্রকাশ করতে পারে. এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন,

উপরলিক্ষিত হাদিসটিতে বলা হয়েছে ১২০ দিনের পর ফেরেস্তারা আল্লাহতালার নির্দেশে শিশুর দেহে রুহ প্রবেশ করান. চিন্তাশীলদের জন্য এখানে ভেবে দেখার বিষয় আছে!

এই সময় (১২০ দিন বয়সের পর) শিশু একই সাথে শব্দ শোনা, বুঝতে পারা এবং পার্থক্য করার ক্ষমতা অর্জন করে. এই ব্যপারটি পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় মা এবং তার গর্ভস্থ শিশুর উপর. তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কোনো গল্প দিনে দুবার করে গর্ভস্থ শিশুকে পড়ে শোনানো. দেখা গেছে, জন্মের পর সেই একই গল্প যদি শিশুকে শোনানো হয় তাহলে সে অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে গল্পটি শোনে, নতুন গল্পের ক্ষেত্রে যা তারা করে না. আবার কোনো অনুষ্ঠানের থিম মিউজিক যা গর্ভবতী অবস্থায় মাকে বারে বারে শোনানো হয়েছিল, জন্মের পর সেই একই মিউজিক শিশুকে শোনালে সে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি শান্ত থাকে নতুন মিউজিকের তুলনায়.

এখন ভেবে দেখুন আমরা কত চমৎকারভাবে এই ব্যপারটাকে কাজে লাগাতে পারি আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য? একজন মুসলিম মা তার সন্তান যখন গর্ভে তখন প্রতিদিন তাকে কোরান পড়ে শোনাতে পারে. যখন মা কাজ করছে, অথবা বিশ্রাম নিচ্ছে তখন কোরান তেলওয়াত শুনতে পারে, অবসরে বাবা তার স্ত্রীর পাশে বসে কোরান তেলওয়াত করতে পারে. বা কোন ভাল আলেম ওলামার ওয়াজ নসিহত শুনাতে পারে বা তাজবীদের সাথে কোরআন তেলাওয়াত শুনাতে পারে ।এর ফলে, যখন শিশুটি পৃথিবীর আলো দেখবে তখন সে তার অন্তরে কুরআনের প্রতি ভালবাসা ও এই অসাধারণ জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ নিয়ে জন্মাবে. আপনার নিজের অজান্তেই আপনি আপনার গর্ভস্থ শিশুকে কোরান শিক্ষায় হাতেখড়ি দিয়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম দিচ্ছেন! অভিভাবক হিসাবে কত বড় একটি উপহার আপনি আপনার শিশুকে দিচ্ছেন, একবার ভেবে দেখুন.

বাকিটা সম্পূর্ণই আপনার সিদ্বান্ত. এরপর যখনি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ সন্তানসম্ভবা (pregnant) হবেন, একব২র হলেও চিন্তা করে দেখবেন আপনি তাকে কি শোনাতে চান, কেমন ভাবে পৃথিবীর আলো বাতাসে তাকে আনতে চান

বিষয়: বিবিধ

৪০২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File