কাবার প্রথম ও প্রধান মূর্তি " হুবাল" বা হুবুল"

লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ১৯ জুলাই, ২০১৫, ১১:৩৩:০২ রাত

কাবার প্রথম ও প্রধান মূর্তি " হুবাল" বা হুবুল" ইলাত বা ইলাহ নয়

=====================================

সম্প্রতি আলোচীত সমালোচীত নব্য ইতিহাস বিকৃতিকারী আঃ গাফ্ফার চৌধুরী অন্য এক বক্ততায় বলছে, কাবার প্রথম মূর্তির নাম নাকী " ইলাত, বা ইলাহ," থেকে আল্লাহ শব্দ এসেছে ,নাউযুবিল্লাহ । অথচ এই আগাছা বুড়ো বয়সে ইতিহাস বিকৃত করে মানুষ কে কি মেসেজ দিতে চাচ্ছে আমরা জানিনা আসলে ইতিহাস বলছে তৎকালীন আইয়্যামেজাহেলিয়াতে মক্কার প্রথম ও প্রধান মূর্তির নাম হল " হুবাল" বা হুবুল " যা সর্ব প্রথম তৎকালীন মুশরেকদের সরদার আমর বিন লুহাই ,সিরিয়া থেকে এনে সেই কাবা ঘরে রেখেছিল সেই থেকে মক্কা তথা কাবা ঘরে মূর্তি পুজা শুরু হয়। সুতরাং হুবাল বা হুবুল হল কাবার প্রথম মূর্তি ।

আমর বিন লুহাই কি ভাবে মূর্তি আনলেল

আমর ইবন লুহাই বনু খুজা‘আ গোত্রের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। ছোটবেলা থেকে এ লোকটি ধর্মীয় পূণ্যময় পরিবেশে প্রতিপালিত হয়েছিল। ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল অসামান্য। সাধারণ মানুষ তাকে ভালবাসার চোখে দেখতো এবং নেতৃস্থানীয় ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে মনে করে তার অনুসরণ করতো। এক পর্যায়ে এ লোকটি সিরিয়া সফর করে। সেখানে যে মূর্তিপূজা করা হচ্ছে সে মনে করলো এটাও বুঝি আসলেই ভাল কাজ। যেহেতু সিরিয়ায় অনেক নবী আবির্ভূত হয়েছেন এবং আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছে। কাজেই সিরিয়ার জনগণ যা করছে সেটা নিশ্চয় ভালো কাজ এবং পূণ্যের কাজ। এরূপ চিন্তা করে সিরিয়া থেকে ফেরার পথে সে ‘হুবাল’ নামের এক মূর্তি নিয়ে এসে সেই মূর্তি কা‘বাঘরের ভেতর স্থাপন করলো। এরপর সে মক্কাবাসীদের মূর্তিপূজার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে শির্ক করার আহবান জানালো। মক্কার লোকেরা ব্যাপকভাবে তার ডাকে সাড়া দেয়। মক্কার জনগণকে মূর্তিপূজা করতে দেখে আরবের বিভিন্ন এলাকার লোকজন তাদের অনুসরণ করলো। কেননা, কা‘বাঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারীদের বৃহত্তর আরবের লোকেরা ধর্মগুরু মনে করতো। (শায়খ মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওহাব, মুখতাছারুস সীরাত, প্রাগুক্ত, পৃ. ২)।

অবশ্য তার পূর্বেই নূহ ‘আলাইহিস সালাম-এর সময়ে সর্বপ্রথম মূর্তিপূজার সূচনা হয়।

সর্বপ্রথম ‘কাওমে নূহ’ মূর্তিপূজার প্রচলন করেছিল। তারা ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগুছ, ইয়া‘উক ও নসর নামক মূর্তির পূজা করত। এ মর্মে কুরআনে এসেছে

﴿ وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣ ﴾ [نوح: ٢٣]

“তারা বলল, তোমরা ছাড়বে না তোমাদের উপাস্যদের এবং তোমরা ওয়াদ্দ, সূওয়া, ইয়াগুছ,

ওয়াদ ছিল ‘কালব’ গোত্রের দেবতা, ‘সুওয়া’ ‘হুযাইল’ গোত্রের, ‘ইয়াগুছ’ ‘মায্যাহ’ গোত্রের, ‘ইয়া‘উক’ ইয়ামেনের ‘হামদান’ গোত্রের এবং ‘নাসর’ ইয়ামেন অঞ্চলের ‘হিমইয়ার’ গোত্রের দেবতা ছিল। (ড. জামীল আব্দুল্লাহ আল-মিসরী, তারিখুদ দা‘ওয়াহ আল-ইসলামিয়্যাহ ফি যামানির রাসূল ওয়াল খোলাফায়ির রাশেদীন, (মদীনা মুনওয়ারা : মাকতাবাতুদ দার, ১৯৮৭ খৃ.), পৃ. ৩১।

এ মর্মে কুরআন মাজীদে এসেছে

[﴿ أَفَرَءَيۡتُمُ ٱللَّٰتَ وَٱلۡعُزَّىٰ ١٩ وَمَنَوٰةَ ٱلثَّالِثَةَ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ ٢٠ ﴾ [النجم: ١٩، ٢٠ “তোমরা কি ভেবে দেখছো ‘লাত’ ও ‘উয্যা’ সম্পর্কে এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্পর্কে ?” আল-কুরআন, সূরা আন্ নাজম : ১৯-২০।

লাত: চারকোণ বিশিষ্ট একটি পাথরের মূর্তি, যার চতুষ্পার্শে আরবরা তাওয়াফ করতো। এটি তায়েফে স্থাপন করা হয়েছিল। (আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী, আর রাহীকুল মাখতুম, অনু: খাদিজা আক্তার রেজায়ী, (ঢাকা: আল-কোরআন একাডেমী লন্ডন, বাংলাদেশ সেন্টার, ৯ম সংস্করণ, ২০০৩), পৃ. ৫১)।

মানাত : কালো পাথরে নির্মিত মূর্তি, যা লোহিত সাগরের উপকূলে কোদাইদ এলাকার মুসাল্লাল নামক জায়গায় স্থাপন করা হয়েছিল। (প্রাগুক্ত)

উয্যা: উয্যা ছিল ‘আরাফাতের নিকটবর্তী ‘নাখলা’ নামক স্থানের মূর্তি। কুরাইশদের নিকট এ মূর্তিটি সর্বাধিক সম্মানিত ছিল।

ইসাফ’ ছিল কা‘বাঘর সংলগ্ন। আর ‘নায়েলা’ ছিল যমযমের কাছে। কুরায়শরা কা‘বা সংলগ্ন মূর্তিটাকেও অপর মূর্তির কাছে সরিয়ে দেয়। এটা ছিল সে জায়গা যেখানে আরবরা কুরবানী করত। (সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, নবীয়ে রহমত, অনু: আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী, (ঢাকা ও চট্টগ্রাম : মজলিস নাশরাত-ই-ইসলাম, ১৯৯৭ খৃ), পৃ. ১১১।

তাহের সূরাটী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫১৫।

পৌত্তলিকরা বিভিন্নভাবে উল্লেখিত মূর্তির উপাসনা করত। যেমন,

ক. তারা মূর্তির সামনে নিবেদিত চিত্তে বসে থাকত এবং তাদের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করত। তাদেরকে জোরে জোরে ডাকত এবং প্রয়োজনপূরণ, মুশকিল আসান বা সমস্যার সমাধানের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করত।

খ. মূর্তিগুলোর উদ্দেশ্যে হজ্ব ও তওয়াফ করতো। তাদের সামনে অনুনয় বিনয় এবং সিজদায় উপনীত হতো।

গ. মূর্তির নামে নযর-নেওয়ায ও কুরবানী করত। এমর্মে কুরআনে এসেছে, “তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে সেসব জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম নিয়ে যবাই করা হয়েছে হয়।”

ঘ. মূর্তির সন্তুষ্টি লাভের জন্য পানাহারের জিনিস, উৎপাদিত ফসল এবং চতুষ্পদ জন্তুর একাংশ মূর্তির জন্য তারা পৃথক করে রাখতো। পাশাপাশি আল্লাহর জন্যেও একটা অংশ রাখতো। পরে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে আল্লাহর জন্য রাখা অংশ

মূর্তির কাছে পেশ করতো। কিন্তু মূর্তির জন্য রাখা অংশ কোন অবস্থায়ই আল্লাহর কাছে পেশ করতো না।

আল-কুরআন, সূরা আল-মায়িদা : ৩।

****যখন কোনো সফরের ইচ্ছা করত, তখন তারা বাহনে আরোহন করার সময় মূর্তি স্পর্শ করত। সফরে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে এটা ছিল তাদের শেষ কাজ এবং ফিরে এসেও ঘরে প্রবেশের পূর্বে এটা ছিল তাদের সর্বপ্রথম কাজ।

*****এছাড়াও তারা বিভিন্ন মূর্তির নামে পশু মানত করতো। সর্বপ্রথম মূর্তির নামে পশু ছেড়েছিল, ‘আমর ইবন লুহাই।

লুহাই।

*****তারা এসব আচার অনুষ্ঠান এজন্যে পালন করতো যে, এগুলো তাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সক্ষম করে দেবে এবং আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করবে। তাদের এ আকীদা বিশ্বাসের বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, “ওরা আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করে তা তাদের ক্ষতিও করে না, উপকারও করে না।

ইমাম বুখারী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৯৯।

বিষয়: বিবিধ

৩৯৬৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

330769
২০ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:২৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : তার মত গর্দভ কে যারা জ্ঞানি বানায় তারা আরো বড় গাধা।
অনেক ধন্যবাদ
330789
২০ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০১:৫৮
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ খাইর
330870
২০ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:৪৭
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। জাজাকাল্লাহু খায়রান।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File