কাবার প্রথম ও প্রধান মূর্তি " হুবাল" বা হুবুল" ইলাত বা ইলাহ নয়
লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ১৪ জুলাই, ২০১৫, ০১:৩৪:৪৩ রাত
কাবার প্রথম ও প্রধান মূর্তি " হুবাল" বা হুবুল" ইলাত বা ইলাহ নয়
=====================================
সম্প্রতি আলোচীত সমালোচীত নব্য ইতিহাস বিকৃতিকারী আঃ গাফ্ফার চৌধুরী অন্য এক বক্ততায় বলছে, কাবার প্রথম মূর্তির নাম নাকী " ইলাত, বা ইলাহ," থেকে আল্লাহ শব্দ এসেছে ,নাউযুবিল্লাহ । অথচ এই আগাছা বুড়ো বয়সে ইতিহাস বিকৃত করে মানুষ কে কি মেসেজ দিতে চাচ্ছে আমরা জানিনা আসলে ইতিহাস বলছে তৎকালীন আইয়্যামেজাহেলিয়াতে মক্কার প্রথম ও প্রধান মূর্তির নাম হল " হুবাল" বা হুবুল " যা সর্ব প্রথম তৎকালীন মুশরেকদের সরদার আমর বিন লুহাই ,সিরিয়া থেকে এনে সেই কাবা ঘরে রেখেছিল সেই থেকে মক্কা তথা কাবা ঘরে মূর্তি পুজা শুরু হয়। সুতরাং হুবাল বা হুবুল হল কাবার প্রথম মূর্তি ।
আমর বিন লুহাই কি ভাবে মূর্তি আনলেল
আমর ইবন লুহাই বনু খুজা‘আ গোত্রের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। ছোটবেলা থেকে এ লোকটি ধর্মীয় পূণ্যময় পরিবেশে প্রতিপালিত হয়েছিল। ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল অসামান্য। সাধারণ মানুষ তাকে ভালবাসার চোখে দেখতো এবং নেতৃস্থানীয় ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে মনে করে তার অনুসরণ করতো। এক পর্যায়ে এ লোকটি সিরিয়া সফর করে। সেখানে যে মূর্তিপূজা করা হচ্ছে সে মনে করলো এটাও বুঝি আসলেই ভাল কাজ। যেহেতু সিরিয়ায় অনেক নবী আবির্ভূত হয়েছেন এবং আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছে। কাজেই সিরিয়ার জনগণ যা করছে সেটা নিশ্চয় ভালো কাজ এবং পূণ্যের কাজ। এরূপ চিন্তা করে সিরিয়া থেকে ফেরার পথে সে ‘হুবাল’ নামের এক মূর্তি নিয়ে এসে সেই মূর্তি কা‘বাঘরের ভেতর স্থাপন করলো। এরপর সে মক্কাবাসীদের মূর্তিপূজার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে শির্ক করার আহবান জানালো। মক্কার লোকেরা ব্যাপকভাবে তার ডাকে সাড়া দেয়। মক্কার জনগণকে মূর্তিপূজা করতে দেখে আরবের বিভিন্ন এলাকার লোকজন তাদের অনুসরণ করলো। কেননা, কা‘বাঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারীদের বৃহত্তর আরবের লোকেরা ধর্মগুরু মনে করতো। (শায়খ মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওহাব, মুখতাছারুস সীরাত, প্রাগুক্ত, পৃ. ২)।
অবশ্য তার পূর্বেই নূহ ‘আলাইহিস সালাম-এর সময়ে সর্বপ্রথম মূর্তিপূজার সূচনা হয়।
সর্বপ্রথম ‘কাওমে নূহ’ মূর্তিপূজার প্রচলন করেছিল। তারা ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগুছ, ইয়া‘উক ও নসর নামক মূর্তির পূজা করত। এ মর্মে কুরআনে এসেছে
﴿ وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣ ﴾ [نوح: ٢٣]
“তারা বলল, তোমরা ছাড়বে না তোমাদের উপাস্যদের এবং তোমরা ওয়াদ্দ, সূওয়া, ইয়াগুছ,
ওয়াদ ছিল ‘কালব’ গোত্রের দেবতা, ‘সুওয়া’ ‘হুযাইল’ গোত্রের, ‘ইয়াগুছ’ ‘মায্যাহ’ গোত্রের, ‘ইয়া‘উক’ ইয়ামেনের ‘হামদান’ গোত্রের এবং ‘নাসর’ ইয়ামেন অঞ্চলের ‘হিমইয়ার’ গোত্রের দেবতা ছিল। (ড. জামীল আব্দুল্লাহ আল-মিসরী, তারিখুদ দা‘ওয়াহ আল-ইসলামিয়্যাহ ফি যামানির রাসূল ওয়াল খোলাফায়ির রাশেদীন, (মদীনা মুনওয়ারা : মাকতাবাতুদ দার, ১৯৮৭ খৃ.), পৃ. ৩১।
এ মর্মে কুরআন মাজীদে এসেছে
[﴿ أَفَرَءَيۡتُمُ ٱللَّٰتَ وَٱلۡعُزَّىٰ ١٩ وَمَنَوٰةَ ٱلثَّالِثَةَ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ ٢٠ ﴾ [النجم: ١٩، ٢٠ “তোমরা কি ভেবে দেখছো ‘লাত’ ও ‘উয্যা’ সম্পর্কে এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্পর্কে ?” আল-কুরআন, সূরা আন্ নাজম : ১৯-২০।
লাত: চারকোণ বিশিষ্ট একটি পাথরের মূর্তি, যার চতুষ্পার্শে আরবরা তাওয়াফ করতো। এটি তায়েফে স্থাপন করা হয়েছিল। (আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী, আর রাহীকুল মাখতুম, অনু: খাদিজা আক্তার রেজায়ী, (ঢাকা: আল-কোরআন একাডেমী লন্ডন, বাংলাদেশ সেন্টার, ৯ম সংস্করণ, ২০০৩), পৃ. ৫১)।
মানাত : কালো পাথরে নির্মিত মূর্তি, যা লোহিত সাগরের উপকূলে কোদাইদ এলাকার মুসাল্লাল নামক জায়গায় স্থাপন করা হয়েছিল। (প্রাগুক্ত)
উয্যা: উয্যা ছিল ‘আরাফাতের নিকটবর্তী ‘নাখলা’ নামক স্থানের মূর্তি। কুরাইশদের নিকট এ মূর্তিটি সর্বাধিক সম্মানিত ছিল।
ইসাফ’ ছিল কা‘বাঘর সংলগ্ন। আর ‘নায়েলা’ ছিল যমযমের কাছে। কুরায়শরা কা‘বা সংলগ্ন মূর্তিটাকেও অপর মূর্তির কাছে সরিয়ে দেয়। এটা ছিল সে জায়গা যেখানে আরবরা কুরবানী করত। (সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, নবীয়ে রহমত, অনু: আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী, (ঢাকা ও চট্টগ্রাম : মজলিস নাশরাত-ই-ইসলাম, ১৯৯৭ খৃ), পৃ. ১১১।
তাহের সূরাটী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫১৫।
বিষয়: বিবিধ
২০৮৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই মানুষগুলি মনে করে যে তাদের কথা শুনলেই সবাই বিশ্বাস করবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন