বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিকোণে ইসলামের আমল নামাজ ২য় পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ০৪ এপ্রিল, ২০১৫, ০২:২৩:০৮ দুপুর
বন্ধুরা আমি গত পর্বে
বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিকোণে ইসলামের আমল নামাজ ১ম পর্বে , উক্ত শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করেছিলাম , অনেকের উৎসাহ মূলক মনতব্যে অনূপ্রানীত হয়ে আজ ২য় পর্ব
কেন দৈনিক পাঁচবার সালাত আদায় করি আমরা?
==============================
সালাত হল সৎকাজের জন্য একধরনের প্রশিক্ষণ বা প্রোগ্রামিং। আর প্রশিক্ষণের মূল জিনিষটিই হল কোন একটি কাজ বার বার করা বা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে তা আয়ত্ত করা। তাই আমদেরকেও সালাত আদায় করতে হয় দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার। উদাহারন স্বরূপ বলা যেতে পারে, আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য অর্থাৎ সুস্বাস্থ্যের জন্য দৈনিক কমপক্ষে তিন বেলা খাবার খেতে হয় আমাদের। একইভাবে আত্তাকে সুস্থ রাখবার জন্য দৈনিক পাঁচবার নামাজ পড়া দরকার আমাদের। এছাড়াও সমাজে যেহেতু পাপের ছড়াছড়ি তাই নামাজের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ না নিলে সিরাত-উল-মুস্তাকিম অর্থাৎ সৎপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের। তাই দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ বা বাধ্যতামূলক।
আল্লাহপাক আমাদের দেহের মধ্যে যেসব মূল্যবান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করেছেন তার শুকরানাস্বরূপ আমরা নামাজ পড়ব কেননা হাশরের দিন প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি প্রশ্ন করা হবে। কাজেই আমরা যে অনুভব শক্তি প্রাপ্ত হয়েছি তাতে সুখ-দুঃখ দুটি জিনিস অনুভব করতে পারি সেই জন্য ফজরের ২ রাকাত নামাজ। জিহ্বা দ্বারা মিষ্টি, টক, তিতা ও কটু এই ৪টা স্বাদ গ্রহণ করতে পারি এজন্য জিহ্বার শুকারানাস্বরূপ ৪ রাকাত নামাজ জোহর। নাসিকা দ্বারা শ্বাস-প্রশ্বাস, সুগন্ধ ও দুর্গন্ধ অনুভব করতে পারি এজন্য আসরের ৪ রাকাত নামাজ। চক্ষু দ্বারা ডান-বাম ও সামনে দেখি এজন্য মাগরিবের তিন রাকাত নামাজ। কর্ণ দ্বারা চারদিকের শব্দ শুনতে পাই এজন্য এশার ৪ রাকাত নামাজ। সুতরাং মূলকথা প্রত্যেক নামাজ প্রত্যেক অঙ্গের শুকরানাস্বরূপ।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে চলনশীল দেহ প্রদান করেছেন। এজন্য তার স্বাস্থ্য দেহের চলার (অর্থাৎ ব্যায়াম ইত্যাদি) ওপর টিকে থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানুষকে সচল রাখে। থেমে থেমে নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। জামাতে নামাজ পড়া একই সঙ্গে উচ্চমানের ব্যায়াম হিসেবেও কাজ করে।
ফজরের সময় : যখন রাত শেষ হয়ে আসে, তখন সূর্য উদয় হওয়ার আগে ফজরের নামাজ ফরজ করা হয়েছে। এ সময়ের নামাজ হালকা প্রকৃতির। সারারাত আরাম করার পর ওই সময় পাকস্থলীও খালি হয়ে যায়। এজন্য এ সময় হালকা ও সংক্ষিপ্ত নামাজ নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে মানুষের ক্ষতি না হয়। নামাজি এই চার রাকাত নামাজ পড়ে শারিরীক ও মানসিকভাবে উপকৃত হয়। ফজর নামাজ পড়ে লোকেরা নিজ অবসাদগ্রস্ত দেহকে পুনরায় সক্রিয় ও চলমান করে। এরপর সারাদিন নিজ রিজিক ও জীবিকা অর্জন করার জন্য কাজকর্মে মনোযোগ দেয়ায় উদ্দীপনা ফিরে পায়। মস্তিষ্ক চিন্তা-ভাবনার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। সুবেহ সাদিকের সতেজ প্রকৃতি এবং আলোতে মানুষ নামাজের জন্য বাইরে বের হয় এবং পায়ে হেঁটে মসজিদে যায়, এতে সতেজ পরিচ্ছন্ন প্রশান্ত পরিবেশ থেকে যে সূক্ষ্ম অনুভূতির সৃষ্টি হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
জোহরের সময় : দিন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ জীবিকা অর্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ধুলা-ময়লা তার গায়ে লাগে। রোগ-জীবানু হাত-পায়ে লাগার আশঙ্কাও রয়েছে। কেননা মানুষ জীবাণুযুক্ত বায়ুর মধ্যে থাকে। তখন তার দেহের ওপর জীবাণু আক্রমণ করে। এছাড়াও দুপুর পর্যন্ত কাজ করতে করতে ক্লান্তিও অনুভূত হয়। এ কারণে একজন নামাজি জোহর নামাজের জন্য অজু করে স্বীয় হাত, মুখ, পা ইত্যাদি ধৌত করায় দেহমনে পরিচ্ছন্নতার কারণে প্রফুল্লতা আসে। এর ফলে রোগের কোনো আশঙ্কাও থাকে না।
ক্লান্ত দেহে জোহরের নামাজ পড়ে আরাম ও প্রশান্তি অনুভব করে এবং পুনরায় উজ্জীবিত হয়, যার দ্বারা ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এসব উপকারিতা একজন নামাজির জোহরের নামাজের সময় অর্জিত হয়।
আসরের সময় : জ্ঞানবান ও চিন্তাশীল ব্যক্তি এবং বিজ্ঞ মাত্রেই জানেন, পৃথিবী দুই ধরনের গতিতে চলে। এগুলো হলো : লম্ব ও বৃত্তীয়।
যখন সূর্য ঢলতে থাকে, তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে, এমনকি আসরের সময় ঘূর্ণনের পরিমাণ একেবারেই কমে যায়। এ কারণে মানুষের ওপর দিনের অনুভূতি প্রবল হতে থাকে, প্রকৃতির মধ্যে স্থবিরতা এবং অবসাদগ্রস্ততা প্রদর্শিত হতে থাকে। আসরের নামাজের সময় মানুষের সচেতন অনুভূতির ওপর অচেতন অনুভূতির প্রভাব শুরু হয়, যার দ্বারা মানুষ আরামদায়ক অনুভূতি লাভ করে।
মাগরিবের সময় : মানুষ সারাদিন শ্রম ও কষ্টের মধ্যে কাটায় এবং নিজ ও পরিবারের জন্য রুজি-কামাই করে আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া আদায় করে যে, সেই মহান সত্তা এগুলো অর্জন করার জন্য শক্তি প্রদান করেছেন। এটি আনন্দের মধ্যে হয়, যার দ্বারা অন্তর এক বিশেষ প্রকারের আনন্দ অনুভব করে। মাগরিবের সময় সে আল্লাহ তায়ালার নিকট হাজিরা দিয়ে নিজ দাসত্বকে প্রকাশ করে, আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করে। মানুষের এই আকুতি তাকে নূরানী তরঙ্গমালায় আচ্ছাদিত করে এবং তার আত্মাকে প্রশান্তি প্রদান করে।
এশার সময় : মানুষ স্বভাবগতভাবে রাতে বাড়ি ফিরে সুস্বাদু খাবার খায়। যখন সে কাজকর্ম থেকে ঘরে ফিরে আসে, খানা খায় এবং স্বাদ ও লোভের কারণে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। যদি সে খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়ে, তাহলে সে ধ্বংসকারী রোগের শিকার হয়। মানুষ সারাদিনের ক্লান্তির পর খাবার খেয়ে তৎক্ষণাৎ শুয়ে পড়লে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শোয়ার আগে এবং অতিরিক্ত খানা খাওয়ার পরে কমবেশি ব্যায়াম করে নেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এশার নামাজ সে ক্ষেত্রে আত্নিক চাহিদার পাশাপাশি দৈহিক চাহিদা অর্থাৎ ব্যায়ামের কাজটিও করে।যেমন হাদিসে রসুল সাঃ থেকে আমরাআরও জানতে পারি সুস্বাস্হের জন্য রাত্রে খানা খাওয়ার পর কম পক্ষে ৪০ কদম পথ চলার কথা।
বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিকোণে ইসলামের আমল নামাজ ১ম পর্ব
http://www.todaybd.net/blog/blogdetail/detail/2300/salamat/63487#.VR-c5vysWuI
বিষয়: বিবিধ
১৫৫০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই আমলটি করা আমার জন্য খুব কষ্ট হয়ে যায়, কেন জানি খাওয়ার পর নড়তেই ইচ্ছে করে না। তবু এখন থেকে ইন শা আল্লাহ্ চেষ্টা করব।
আমার অনুরোধ রেখেছেন বলে অনেক অনেক শোকরিয়া আল্লাহর দরবারে।
জাযাকাল্লাহু খাইর।
ইনশাআল্লাহ আরও দুই পর্বে আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করে পোষ্ট দেয়ার চেষ্টা করব । ইনশাআল্লাহ
চমৎকার লিখেছেন। কিন্তু আমি আগে একটু ভিন্ন রকম শুনে আসছিলাম। মানুষের মধ্যে যে পঞ্চ ইন্দ্রীয় আছে, সেগুলোর শুকরিয়া হল নামায। ১.নাসিকা দ্বারা আমরা দু'ধরনের সুবিধা ভোগ করি, সুগন্ধ ও দূর্গন্ধ. তাই ফজরে দু'রাকাত। ২. তক্বশক্তি দ্বারা আমরা চার ধরনের সুবিধা ভোগ করি, শক্ত নরম ঠান্ডা গরম. তাই জোহর চার রাকাত। ৩. কর্ণ দ্বারা চারো দিক থেকে শুনতে পাই, তাই আছর চার রাকাত। ৪. চক্ষু দিয়ে তিন দিক দেখতে পাই, তাই মাগরীব তিন রাকাত। ৫. জিহ্বা দ্বারা চার প্রকার স্বাধ অনুভব করা যায়, মিষ্টি টক তিতা কটু, তাই এশার চার রাকাত শুকরানা স্বরুপ আদায় করতে হয়।
দু'টোই প্রায় একই ধরনের, হয়তো বর্ণনা একটু ভিন্ন।একথাটির আবিস্কারক কে? জানা থাকলে একটু সুত্র উল্লেখ করবেন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া,
মন্তব্য করতে লগইন করুন