তাবলীগ ইসলাম ধর্মে নতুন কিছু নয়

লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ০৬ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৯:২৩:১৭ রাত

তাবলীগ জামাআত ইসলাম ধর্মে কি নতুন বিদআত?

তাবলীগ শরীয়ত সন্মত একটি আমল।

তাবলীগ জামাআত কোন নতুন দল বা সংগঠনের নাম নয়, বরং ধারাবাহীক একটা আমল নবী করীম সাঃ এর তিরোধানের পূর্ব থেকেই বিদায় হজ্বের পর থেকে ব্যাপক হারে সাহাবায়ে কিরাম রাঃ এবং রাসূল সাঃ এর মৃত্যুর পর থেকে প্রত্যেক যুগেই পৃথিবীর সকল ওলামায়ে কেরাম কমবেশি সম্মিলিত ও বিচ্ছ্ন্নিভাবে দাওয়াতের এ দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ৷এখন ও অনেকে বিভিন্ন পন্থায় এ কাজ করে যাচ্ছেন ৷"হাদীসের আলোকে দাওয়াত-তাবলীগ"অংশেও আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু হযরত ইলিয়াস রহঃ ব্যাপক আকারে ও সংগঠিতরূপে সেটির পুনঃজাগরণের চেষ্টা করেছেন মাত্র ৷

প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই যেমন কর্মধারা ও সূচি থাকে, তিনিও তেমনি এ কাজের জন্য কিছু কর্মধারা তৈরী করেছেন সাধারণ মানুষের জন্য প্রাথমিকভাবে অধিক উপকারী ও জরুরী বিষয় চিন্তা করে ৷ পূর্ণ শরীয়তকে সামনে রেখে এর মাঝে কোন বিষয়গুলো প্রথমে আমলে আনতে পারলে পূর্ণ শরীয়তের উপর পাবন্দ হওয়া সহজ হয়ে যাবে তা চিন্তা করে একটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন ৷ যা কোনভাবেই শরীয়তের গন্ডির বাহিরে থেকে নয়। সেই সাথে শরয়ী কোন হুকুমকে অস্বিকার করে ও নয় , তাছাডা এ পদ্ধতিটি পালন করা কোন ফরজ-ওয়াজীব ও নয় ৷ অন্য যে কোন পদ্ধতিতেও এ কাজ করা যেতে পারে ৷

যেমন বর্তমান মাদরাসা শিক্ষা শরীয়তের মাঝে নতুন কোন সংযোজন নয়, বরং সাহাবায়ে কিরামের মাঝে আসহাবে সুফফার যে জামাআত মসজিদে নববীতে (মসজিদে নববীতে রওজা মোবারকের পাশে লাগোয়া উঁচু স্হানটি এখন ও ইতিহাসের সাক্ষি হিসাবে বিদ্ধমান আছে ) সার্বক্ষণিক দ্বীন চর্চায় নিমগ্ন থাকতেন সেটাই ছিল ইসলামের ইতিহাসে সর্ব প্রথম মাদরাসা। যদিও বর্তমান মাদরাসা পদ্ধতি আর আসহাবে সুফফার মাদরাসার মাঝে পদ্ধতিগত অনেক পার্থক্য রয়েছে। মৌলিকত্বে কোন পার্থক্য নেই। সে সময় কোন সিলেবাস ছিল না। ছিল না কোন ক্লাসিক্যাল অবকাঠামো। ছিল না সার্টিফিকেট দেওয়ার পদ্ধতি। ছিল না বিধিবদ্ধ শিক্ষক ষ্টাফের কোন মূলনীতি ৷ কিন্তু পরবর্তীতে আম ফায়দার জন্য এবং দ্বীন চর্চায় অধিক উপকারের নিমিত্তে একটি একাডেমিক পদ্ধতি আবিস্কার করা হয়েছে ৷ যে আবিস্কার কোন বিদআত নয় মর্মে বিশ্বের সকল ওলামায়ে কিরাম একমত ৷তেমনি তাবলীগ জামাআতের বর্তমান সাংগঠনিক ভিত্তি হিসেবে কিছু মূলনীতি নির্ধারণও কোন নতুন বিষয় নয়, বা বিদআত নয়। কারণ মাদরাসা শিক্ষার বর্তমান পদ্ধতিকে যেমন আমরা সওয়াবের কাজ মনে করি না, কিন্তু ইলমী দ্বীন চর্চাকে জানি সওয়াবের কাজ। তেমনি তাবলীগ জামাআতের পদ্ধতিটা মূলত সওয়াবের কারণ নয়, বরং এর দ্বারা যে কাজটি আঞ্জাম দেয়া হয় তথা তাবলীগ বা দ্বীন প্রচার সেটিই হল সওয়াবের কাজ ৷এ দু’টিতে কোন পার্থক্য নেই ৷ সুতরাং তাবলীগ জামাআতকে দ্বীন এর মাঝে নতুন সংযোজন বলে বিদআত সাব্যস্ত করাটা বিদআতের সংজ্ঞা ও দ্বীন সম্পর্কে চূড়ান্ত পর্যায়ের অজ্ঞতার পরিচায়ক ৷

কারণ বিদআত বলা হয়

عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আমাদের দ্বীনের মাঝে যে ব্যক্তি নতুন বিষয় আবিস্কার করে যা তাতে নেই তাহলে তা পরিত্যাজ্য। {সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৬০৮, সহীহ বুখারী, হাদিস নং-২৫৫০, সহীহ মুসলিম-৪৫৮৯}

এই হাদিসে লক্ষ্য করুন কি কি শর্তে নব আবিস্কৃত বস্তুকে পরিত্যাজ্য বলেছেন নবীজী সাঃ।

১-সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। যার কোন সামান্যতম প্রমাণ নবীযুগে বা সাহাবা যুগে নাই এমন বিষয় হতে হবে।

২-দ্বীনী বিষয় হতে হবে ৷ সুতরাং দ্বীনী বিষয় ছাড়া যত নতুন বিষয়ই আবিস্কারই হোকনা কেন তা বিদআত নয় ৷ যেমন মাদ্রাসা তৈরী , মসজিদ পাক্কা করা , বৈজ্ঞানিক আবিস্কার যেমন বিমান, গাড়ী ,কম্পিউটার ,মোবাইল সহ আরও নতুন নতুন আসবাব ইত্যাদী এসব বিদআত নয় কারণ এসব দ্বীনী বিষয় নয়। বরং বৈষয়িক বিষয় ৷

৩-দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার হতে হবে ৷ দ্বীনের জন্য হলে সমস্যা নাই ৷ কারণ দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার করা এর মানে হল এটা সওয়াবের কাজ সুন্নাত, ওয়াজিব ইত্যাদী মনে করে আদায় করা ৷আর দ্বীনের জন্য হলে সেটা মূলত সওয়াবের কাজ নয়, বরং সওয়াবের কাজের সহায়ক। যেমন মাদরাসা শিক্ষা একাডেমিক পদ্ধতি নববী যুগে ছিলনা। পরবর্তীতে আবিস্কার করা হয়েছে। এই একাডেমিক পদ্ধতিটি দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার নয়, বরং দ্বীনী কাজের জন্য সহায়ক হিসেবে আবিস্কার হয়েছে। অর্থাৎ দ্বীন শিখার সহায়ক। আর দ্বীন শিখাটা সওয়াবের কাজ। কিন্তু সিষ্টেমটা মূলত সওয়াবের কাজ নয় বরং সহায়ক ৷ তেমনি তাবলীগের বর্তমান পদ্ধতিটি ইলিয়াস রহঃ আবিস্কার করেছেন দ্বীন প্রচারের সহায়ক হিসেবে ৷ তথা দ্বীনের জন্য আবিস্কার ৷ দ্বীন মাঝে আবিস্কার নয় ৷

তাই এটি বিদআত হওয়ার কোন সুযোগই নেই।

যারা বলেন এ পদ্ধতি বিদআত, তারা মূলত দ্বীন সম্পর্কে বা বেদআতের সংজ্ঞা সমপর্কে চূড়ান্ত অজ্ঞতার পরিচয় দেন এসব কথা বলে ৷তছাডাতাবলীগ জামাতের বেপারে আরবের শীর্ষ আলীম শায়খ উছাইমিন রহ: এর মত হল তাবলীগের ৪০ দিন ১০ দিন এগুলো সুন্নাতও নয় বেদাত ও নয় তবে এগুলো হলো তারতীব, তাবলীগি ভাইয়েরাও তাই বলেন।

বিষয়: বিবিধ

১১৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File