রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননাকারীর শরয়ী ও দেশীয় আইনে শাস্তি কি ?

লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ০২ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৫৮:২৫ রাত



রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননাকারীর শরয়ী ও দেশীয় আইনে শাস্তি কি?

আসসালামু আলাইকুম।

জনাব,

ইদানিং দেখা যাচ্ছে ফেইসবুক ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন ব্লগে রাসূল সাঃ কে নিয়ে বিভিন্ন গালাগাল কুরুচিপূর্ণ কথা প্রচার করছে কিছু বিপথগামী ব্লগার। আমার প্রশ্ন হল রাসূল সাঃ কে গালিদাতার ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তে কি শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে? সেই সাথে আমাদের দেশীয় আইনেও কি কোন শাস্তির বিধান আছে? দয়া করে জানালে উপকৃত হবো।

জবাব

بسم الله الرحمن الرحيم

ইসলামী আইন

রাসূল সাঃ কে কোন মুসলিম ইচ্ছেকৃত গালি দিলে সে কাফের হয়ে যায়। তার স্ত্রী তালাক হয়ে যায়। উক্ত ব্যক্তিকে প্রথমে তার কুফরীর ব্যাপারে সতর্ক করা হবে। সে তার ভুল বুঝতে পারলে তাকে কালিমা পড়িয়ে নতুন করে মুসলমান হতে হবে। সেই সাথে তার স্ত্রীকে নতুন করে বিয়ে করতে হবে। কারণ রাসূল সাঃ কে গালি দেয়ার দ্বারা লোকটি মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। আর মুরতাদের স্ত্রী তালাক হয়ে যায়।

আর যদি সে তার ভুল স্বীকার না করে পূর্বের অবস্থায়ই থাকে, তাহলে ইসলামী আইন দেশে প্রতিষ্ঠিত থাকলে মুসলিম শাসক উক্ত মুরতাদকে হত্যা করবে।

হত্যা কার্যকর করবে রাষ্ট্রপক্ষ। জনগণ নয়।

وأيما رجل مسلم سب رسول الله صلى الله عليه وسلم أو كذبه أو عابه أو تنقصه فقد كفر بالله تعالى وبانت منه امرأته ، فإن تاب وإلا قتل ، (رد المحتار- كتاب الجهاد، باب المرتد، مطلب توبة اليأس مقبولة دون إيمان اليأس-4/234)

অনুবাদ-যে ব্যক্তি রাসূল সাঃ কে গালি দিবে, অথবা মিথ্যুক বলবে, বা দোষারোপ করবে, কিংবা খাট করবে তাহলে সে কুফরী করল। এ ব্যক্তির স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হয়ে যাবে। সে যদি তওবা করে তাহলেতো ভাল। নতুবা তাকে হত্যা করা হবে। {ফাতওয়ায়ে শামী-৪/২৩৪}

এরকম ধর্মদ্রোহীর জানাযার নামায পড়া কিছুতেই জায়েজ নয়। তাকে ইসলামী রীতি অনুযায়ী গোসল দেয়া কাফন পড়ানোও জায়েজ নয়। বরং তাকে একটি গর্ত খুড়ে তাতে মাটিচাপা দিয়ে রাখবে। তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফনও করা যাবে না।

فى الدر المختار- أما المرتد فيلقى في حفرة كالكلب

وفى الشامية- ( قوله فيلقى في حفرة ) أي ولا يغسل ، ولا يكفن ؛ ولا يدفع إلى من انتقل إلى دينهم رد المحتار-كتاب الصلاة، باب صلاة الجنازة-3/135)

মুরতাদের সাথে বিবাহ করা জায়েজ নয়। ব্যক্তি মুসলমান অবস্থায় বিবাহ করার পর মুরতাদ হয়ে গেলে তার বিবাহ বাতিল হয়ে যায়। মুরতাদের জন্য মুসলিম , কাফের , মুরতাদ কোন মহিলাকেই বিবাহ করা জায়েজ নয়। (ফাতওয়ায়ে শামী-৪/৩৭৬, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/২৮২, আল বাহরুর রায়েক-৩/২০৯)

قَوْله تَعَالَى { وَمَنْ يَكْفُرْ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ سورة المائدة-5)

আল্লাহ তায়ালা বলেন-ঈমান আনার পর যে ব্যক্তি কুফরী করে তার সকল আমল বাতিল হয়ে যায়। আর সে আখেরাতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা মায়িদা-৫)

ولا يجوز للمرتد أن يتزوج مرتدة ولا مسلمة ولا كافرة أصلية وكذلك لا يجوز نكاح المرتدة مع أحد كذا في المبسوط(الفتاوى الهندية-1/282)

মৌলিকভাবে মুরতাদের জন্য মুরতাদকে, কোন মুসলিমকে, এবং কোন কাফেরকেও বিবাহ করা জায়েজ নয়। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী০১/২৭২}

বাংলাদেশের দেশীয় আইনে ধর্ম অবমাননার শাস্তি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন,২০০৬ ( ২০০৬ সনের ৩৯ নং আইন ) অষ্টম অধ্যায়, অপরাধ, তদন্ত, বিচার, দন্ড ইত্যাদি।

ইলেক্ট্রনিক ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ ও উহার দণ্ড

৫৭৷ (১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷

(২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক দশ বত্সর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা

ইমেইল



http://jamiatulasad.com/?p=1664#comment-2730

বিষয়: বিবিধ

১৩১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File