মুক্তিযুদ্ধে জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার অবদান:মেজর জিয়াউর রহমানের আশ্রয় ও মাওঃ দানিশ রঃ এর শাহাদাত বরণ

লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ১৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০১:১৩ দুপুর



১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চট্রগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসার অবদানের কথা শুনুন

চট্রগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসার

নাম তো আমরা সবাই শুনছি।

বাংলাদেশের

ক্বওমী মাদ্রাসা গুলির

মাঝে আয়তনের দিক

থেকে সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা হল চট্রগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসা।

১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসে মেজর

জিয়াউর রহমান যে এই

চট্রগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসায়

আশ্রয় নিয়েছিলেন এই তথ্য

কি আমরা জানি ? এবং মেজর জিয়াউর রহমান

কে আশ্রয় দেয়ার

অপরাধে পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক

আল্লামা দানেশ রহমাতুল্লাহ

আলিইহি কে পাকিস্তানি হানাদার

বাহিনীরা হত্যা করে এটা কি আপনার জানেন ? স্বাধীন বাংলা বেতার

কেন্দ্রের অন্যতম

প্রতিষ্ঠাতা বেলাল মোহাম্মদ

উনার “ স্বাধীন বাংলা বেতার

কেন্দ্র” গ্রন্থের ৫৪,৫৫ ও ১০২

পৃষ্ঠায় লিখেছেন - “ হানাদার বাহিনী যখন এপ্রিল

মাসে চট্রগ্রাম শহরে আসল

আমরা তখন কালুরঘাট বেতার

কেন্দ্রের ট্রান্সমিটার ও অন্যান্য

বেতার যন্ত্রপাতি নিয়ে পটিয়ার

উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। আমাদের সাথে তখন ছিল মেজর

জিয়া। কর্ণফুলি নদী পার

হয়ে পটিয়ার

মাটিতে পারা দিয়ে মেজর

জিয়াউর রহমান চিন্তা করছিল

কোথায় তিনি আশ্রয় নিবেন। সেই সময় পটিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম

ছিলেন প্রিন্সিপাল হাজী ইউনুস।

উনি সেই সময় হজ্জে গিয়েছিলেন।

মুহাদ্দেস আল্লামা দানেশ

রহমাতুল্লাহ আলিইহি তখন

পটিয়া মাদ্রাসার দায়িত্বে ছিলেন। উনিই জিয়াউর

রহমান কে উনার মাদ্রাসায়

আমন্ত্রন জানান। যুদ্ধের

কারনে মাদ্রাসা ছুটি ছিল। মেজর

জিয়াউর রহমান ১ সপ্তাহ

পটিয়া মাদ্রাসায় ছিলেন। ১ সপ্তাহ পর মেজর জিয়াউর রহমান

পটিয়া মাদ্রাসা ত্যাগ করেন।

পাকিস্তানি হানাদার

বাহিনী গোয়েন্দা মারফত তথ্য

পেয়ে প্রথমে বিশ্বাসই

করতে পারে নি যে পটিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মুহাদ্দেস

আল্লামা দানেশ ও অন্যান্য

শিক্ষকরা জিয়াউর রহমান

কে আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু যখন

পাকিস্তানি হানাদার

বাহিনী নিশ্চিত হয় যে পটিয়া মাদ্রাসার সম্মানিত

আলেমরা মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন

করেছে তখন ১৯৭১ সালের ১৭

এপ্রিল পটিয়া মাদ্রাসা উপর

জঙ্গি বিমান দিয়ে বোমা বর্ষন

করা শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার

বাহিনী। পাকিস্তানি হানাদার

বাহিনীর এই

বোমা বর্ষনে পটিয়া মাদ্রাসার

সম্মানিত শিক্ষক মুহাদ্দেস

আল্লামা দানেশ রহমাতুল্লাহ আলাইহি ও পটিয়া মাদ্রাসার

ক্বারী জেবুল হাসানের একজন

মেহমান শহীদ হন এবং আরো অনেক

সম্মানিত শিক্ষক গুরুতর আহত হন।

মেজর জিয়াউর রহমান প্রায়ই এই

পটিয়া মাদ্রাসার কথা বিশেষ করে আল্লামা দানেশ রহমাতুল্লাহ

আলাইহির কথা বলতেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যে এই

পটিয়া মাদ্রাসার বিশেষ অবদান

আছে, পটিয়া মাদ্রাসার সম্মানিত

শিক্ষক মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহর

কাছে যে মুক্তিযুদ্ধারা এসে দোয়া নিয়ে যেতেন,

পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ ১৯৭১

সালে স্পষ্ট ফতোয়া দিয়েছিলেন

যে আমরা মজলুম আর

পাকিস্তানিরা জালেম

মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করা ফরয

এই তথ্য এখনকার কয় জন ছেলে জানে ? আমরা শুধু

জানি যে রাজাকার আল বদর আল

শামস এইসব বাহিনীর

লোকেরা ইসলামের নাম ব্যবহার

করে পাকিস্তানি হানাদার

বাহিনী কে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনীর

গনহত্যা কে সমর্থন করেছে কিন্তু

আমাদের দেওবন্দ

পন্থী কওমি মাদ্রাসার সম্মানিত

আলেমরা যে মুক্তিযুদ্ধ কে সমর্থন

করেছিল অনেক আলেম মুক্তিযুদ্ধ করেছিল এই তথ্য আমরা কয় জন

জানি? যুগান্তর পত্রিকার সাবেক

সাংবাদিক শাকের হোসাইন

শিবলীর একটা অসাধারন বই

কিনলাম নাম হল “ আলেম

মুক্তিযোদ্ধার খোজে ” এই বইয়ে তথ্যপ্রমান দিয়ে অনেক

আলেমের ১৯৭১ সালে তাদের

মুক্তিযুদ্ধের অবদানের

কথা তুলে ধরা হয়েছে। বইটি আল-

ইসহাক প্রকাশনী, ৩৭, নর্থব্রুক হল

রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। সারাজীবন

সংগ্রহে রাখার মত একটি বই।

আল্লামা দানেশ রহমাতুল্লাহ

আলাইহি ১৯০৭ সালের

দিকে চট্রগ্রামের

লোহাগড়া থানার চরম্বায় জন্মগ্রহন করেন।

বাল্যকালে তিনি রাঙ্গুনিয়া খন্ডলিয়াপাড়া মাদ্রাসায়

হেদায়াতুন নাহু পর্যন্ত

পড়াশুনা করেন। এরপর

দাওরা হাদীস পাস করেন আল

জামিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস

পাস করেন। তারপর

উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্য

ছুটে যান দারুল উলুম দেওবন্দে।

দারুল উলুম দেওবন্দ

থেকে ফিরে এসে হাটহাজারি মাদ্রাসার বিশিষ্ট মুহাদ্দিস

মাওলানা ইয়াকুব এর

পরামর্শে বার্মার আকিয়াবের

পাথর কিল্লা মাদ্রাসায় কর্ম

জীবন শুরু করেন।

সেখানে তিনি সম্মানের সহিত ৫ বছর কাটান। সেখান

থেকে বাংলাদেশে এসে সাতকানিয়ার

আলিয়া মাদ্রাসায় ১৬/১৭ বছর

পড়ান। তখন পটিয়া মাদ্রাসার

প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আযিযুল হক

বারবার তাকে পটিয়ায় যোগদানের জন্য উৎসাহ দিচ্ছিলেন। যেহেতু

মুফতি আযিযুল হক সাহেব

আল্লামা দানেশ রহমাতুল্লাহ

আলাইহির শিক্ষক ছিলেন তাই তার

কথা না রাখাটা উনার জন্য ছিল

কষ্টকর। তারপরও উনি পটিয়া মাদ্রাসায় যাচ্ছিলেন

না। পরে একদিন মুফতি আযিযুল হক

সাহেব

সরাসরি সাতকানিয়া এসে আল্লামা দানেশ

কে এক প্রকার জোর করে উনার

পটিয়া মাদ্রাসায় নিয়ে যান। পটিয়া মাদ্রাসায় কয়েক বছর

অধ্যাপনা করার পরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু

হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু

হয়ে গেলে একে একে সবাই

মাদ্রাসা ত্যাগ করে। কিন্তু

আল্লামা দানেশ রহমাতুল্লাহ আলাইহি মাদ্রাসা রক্ষানাবেক্ষনের

জন্য মাদ্রাসায় থেকে যান। আর

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল পাক

হানাদার বাহিনীর বোমারু

বিমানের আঘাতে আল্লামা দানেশ

রহমাতুল্লাহ আলাইহি শহীদ হন।

লিখেছেনঃ শাফিউর রহমান ফারাবী (তারিখঃ বুধবার, ১২/১২/২০১২ - ২০:৪৬)

বিষয়: বিবিধ

২১৭২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

162082
১৩ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ক্কওমী মাদ্রাসা আমাদের মাথার তাজ(মুকুট) হাটহাজারী মাদ্রাসা আর পটিয়া মাদ্রাসা এক হতে পারছেনা এটাই দুঃখ। কত রাজাকারের ছেলেরা আজ বড় বড় মুক্তিযোদ্ধা, ঐ নামধারী মুক্তিযোদ্ধারাই দেশের হাজার কটি টাকা ডাকাতি করে মুক্তিযোদ্ধকে কলংকিত করেছে। মুক্তিযোদ্ধাকি জান্নাতের সার্টিপিকেট? সমাজে কার ভূমিকা কি ছিল তা জনগণই জানে। আপনাকে ধন্যবাদ
১৩ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৩
116308
হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : পটিয়া আর হাটহাজারির মধ্যে কোনো বিরোধ আছে বলে কখনো শুনিনি। তারা মিলে মিশে আছে সবসময়। এটা ভাল দিক।
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:৫৩
116525
এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া লিখেছেন : ভাই কুয়েত থেকে @ বলছা হাটহাজারী-পটিয়াতে অমিলের কি দেখলেন ? আমরা পটিয়ার রুহানী সন্তান হয়ে ও সকল কে এক ভাবে জানি মানি শ্রদ্ধা করি
162105
১৩ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০২
হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:৫৮
116531
এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া লিখেছেন : ধন্যবাদ , হাবিব ভাই
162117
১৩ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:২৭
আহমদ মুসা লিখেছেন : পটিয়া মাদ্রাসার একজন নাম করা মোহাদ্দিস ছিলেন রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। তার বাড়ী রাঙ্গুনিয়া। সম্ভবত শরফবাটা নামক গ্রামে। তার নাম মাওলানা ইসহাক (রাহিহুল্লাহ). তিনি দীর্ঘদিন পটিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। হাদিস শাস্ত্রে অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী এই মুক্তিযোদ্ধা আলেম এই আত্মপ্রচার বিমূখ ছিলেন যে কেউ তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিনতো না। অনেকদিন আগের কথা। সন তারিখ মনে নেই। সম্ভবত আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। আমি তার নিজের মুখেই শুনেছিলাম শেখ মুজিবের প্রতি তার সমর্থন ও মুক্তিযোদ্ধে তার ভূমিকা।
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:৫৭
116528
এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া লিখেছেন : মুক্তি যুদ্ধে হাজারো কওমী আলেমের ভূমিকা অনেক বেশী ছিল কিন্তু কলম বাজদের লিখায় তা স্হান পায়নি ,
এখন সময় এসেছে গবেষনা করে তা বাহির করার
162126
১৩ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৮
জাগো মানুস জাগো লিখেছেন : thanks for sharing.
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:৫৭
116530
এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া লিখেছেন : ধন্যবাদ
162136
১৩ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৯
এমএ হাসান লিখেছেন : nice
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:৫৭
116529
এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া লিখেছেন : ধন্যবাদ
197785
২৫ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১২
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : ধন্যবাদ, খুব চমৎকার একটি ঘটনা জানলাম। আমার মনে হয় শতকরা ৯৯ জনই এটা জানে না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File