সৌদিতে অবমাননাকর গৃহকর্মি নয় , অন্য পেশায় নারী কর্মি প্রেরন করার অনুরোধ
লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:০৫:৪৩ বিকাল
সৌদি আরব প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে ১০ হাজার মহিলা গৃহকর্মী নেবে বলে গত ৫ এপ্রিল ২০১১ তারিখে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন (দৈনিক সমকাল, ৬ এপ্রিল ২০১১)। তিনি আরও বলেছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীদের প্রশিক্ষিত গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে প্রেরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। সাম্প্রতিককালে জনশক্তি রফতানিতে ব্যাপক ভাটা পড়ার প্রেক্ষিতে এ খাতে সরকারের এটি একটি বড় অগ্রগতি–মন্ত্রীর বক্তব্য শুনে এমনটিই মনে হয়েছে। অন্যদিকে কেউ কেউ এটিকে খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফরের ফল বলে মনে করছে।
জনশক্তি রফতানি নিঃসন্দেহে জাতীয় অর্থনীতির একটি অগ্রাধিকার খাত, যা থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়ে থাকে। তাই বিভিন্ন পেশায় দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও বিদেশে প্রেরণ আরও জোরদার করা প্রয়োজন। কিন্তু গৃহকর্মী হিসেবে নারীদের বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি নানা কারণে কেবল নারীদের জন্যই অবমাননাকর নয়, বরং দেশের জন্যও অসম্মানজনক। এ ব্যাপারে সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আরও চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন বলে মনে করি।
মধ্যপ্রাচ্যের ধনাঢ্য আরব দেশগুলি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নারী গৃহকর্মী নিয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব নারীরা তাদের চাকুরিদাতা গৃহকর্তা বা পরিবারের অন্যান্য পুরুষ সদস্যের বিকৃত লালসা ও অবৈধ যৌনাচারের শিকার হয়। দেশে সহায়-সম্বল বিক্রি করে, পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটানোর উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি দেওয়া এসব অসহায়, দরিদ্র নারীরা তাদের এই যৌন ও দৈহিক নির্যাতনের কথা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রকাশ করতে পারে না অথবা প্রকাশ করার সুযোগ পায় না। এরপরও মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মী নির্যাতনের অসংখ্য খবর ছড়িয়ে আছে অনলাইন সংবাদপত্রের পাতায় পাতায়। সম্প্রতি সৌদি সাময়িকী ‘সাইয়্যিদাতী’ কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, আরব বিশ্বে আনুমানিক তিন মিলিয়ন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে (আল আরাবিয়া, ২০ জানুয়ারি ২০১১)। বলাই বাহুল্য, এসব গৃহকর্মীর বেশির ভাগই বিদেশি।
একসময় সৌদি আরবে থাকার এবং সৌদিদের সাথে কথা বলার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকেও জানি, অনেক অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও ধর্মান্ধ, তবে ধনাঢ্য সৌদিই বেতনভূক নারী গৃহকর্মীদের নিতান্ত ক্রীতদাসী মনে করে এবং তাদের ওপর উপগত হওয়াকে ধর্মীয় দৃষ্টিতে বৈধ বলে মনে করে। অবশ্য সুশিক্ষিত, হৃদয়বান ও প্রকৃত ধর্মপ্রাণ সৌদিরা এর ব্যতিক্রম। তবে তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয় বলেই মনে হয়েছে।
সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশি নারীদের ভয়ংকর যৌন ও দৈহিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও, ২০০৫ সালে এ কারণে সে দেশে গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত মহিলা আনসার সদস্যদের দেশে ফেরার কথা আমরা জানি (ডেইলি স্টার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৫)। এমনকি সৌদি চাকুরিদাতা কর্তৃক তাদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগও তখন শোনা গিয়েছিল। এ ছাড়া বিনা পারিশ্রমিকে ও অল্প পারিশ্রমিকে কাজ করানোর অভিযোগ তো আছেই। এক ফিলিপিনো ও এক শ্রীলংকান নারীকে সৌদি আরবে আটকে রেখে বছর পর বছর বিনা বেতনে ঘরের কাজ করানোর খবর দেখুন যথাক্রমে এখানে ও এখানে। অথচ আরব দেশগুলির মানবাধিকার পরিস্থিতি ও বিচার ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশি কর্মীদের অনুকূল নয়।
এসব কারণে ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকাসহ কয়েকটি দেশ মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মী হিসেবে নারী জনশক্তি রফতানি হ্রাস করেছে (অ্যারাব নিউজ, ১১ আগস্ট ২০০৮ ও ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। সম্ভবত এ কারণেই সৌদি আরব এখন বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী নিতে চাইছে এবং এজন্য আমরা উল্লসিত বোধ করছি! আমাদের নারীরা পেটের দায়ে বিদেশে গিয়ে যৌনদাসী হবে–এটি কি জাতি হিসেবে আমাদের কাছে সম্মানজনক কিংবা গ্রহণযোগ্য?
তাই নারীর সম্মান ও দেশের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি পূনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। তবে নারীদের জন্য উপযুক্ত অন্যান্য পেশায় তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠানো যেতে পারে।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে জনমত গড়ে তোলা প্রয়োজন। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে এগিয়ে আসবে কে বা কারা?
বিষয়: বিবিধ
২৬৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন