আহলে হাদীস বনাম ওহহাবী মুহামমদী ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত

লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০২:০৫:৩৫ দুপুর

আহলে হাদীস বনাম ওহহাবী মুহামমদী ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ,

আসলে ওহাবী আন্দোলন খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর আরবের একটি সংস্কার আন্দোলন। এ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহহাব (১৭০৩-১৭৯২ খ্রি.) একজন ধর্মীয় আলেম এবং সংস্কারক ছিলেন। তিনি আমাদের এ ভারতীয় উপমহাদেশের বিপ্লবী আলেম মাওলানা শাহ ওলিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভীর সমসাময়িক ছিলেন। দ্বাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত আলিম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্হাব নজদী (রহঃ) (মৃতঃ ১২০৬ হিঃ) মূলত হাম্বলী মায্হাবেরই মুক্বাল্লিদ্ ছিলেন। তৎকালীন সৌদি আরবে বিশেষত নজ্‌দে শিরক্, বিদয়া’ত, কবরপূজা, মাযারপূজা, গাছপূজা, আগুনপূজা ও প্রতিমা-মানব ইত্যাদি পূজা-উপাসনার মোকাবিলা ও প্রতিরোধে তার কার্যকরী, সাহসী ও বীরবিক্রম পদক্ষেপ আসলেও গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসার দাবী রাখে। তাঁরই অবদানে তদানীন্তন আরব মধ্যযুগীয় বর্বরতা, সীমাহীন ভ্রষ্টতা ও শিরক কুফরের অতুলনীয় অন্ধকারাচ্ছন্নতা থেকে রেহাই পেয়েছ ৷ তবে অনেক বিষয়ে নিষ্প্রয়োজনীয় বাড়াবাড়ির ফলে তাঁর সঙ্গে তদানীন্তন সউদী আলেম উলামাদের মহামতানৈক্য সৃষ্টি হয়। তিনিই মহানবী (সঃ) এর রওজার উপর বিস্তৃত গম্বুজটি ভেঙ্গে দেয়ার পরিকল্পনা করেন এবং ভিন্ন মতাবল্মীদেরকে পবিত্র হজ্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন ও তাদেরকে কাফির, মুশরিক ইত্যাদি জঘন্যতম আখ্যায় আখ্যায়িত করতে থাকেন। ফলে ভয়াবহ ফিৎনা-ফাসাদ ও বিশ্ব মুসলিম সমাজে পারস্পরিক কোন্দলের সূচনা হয়। পক্ষান্তরে যারা তার মতবাদের তাক্বলীদ করতে থাকে তাদেরকে মুসলমানদের মধ্যে বিরোধীরা ওহ্হাবী বলে আখ্যায়িত করতে থাকেন। এদিকে ভারতবর্ষের লা-মায্হাবীরাও যেহেতু নিছক ঝগড়া-বিবাদ ও মুসলমানদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্হাব নজদীর অন্তঃসারশূণ্য বিচিত্র মতবাদ গ্রহণ করে যেত, তাই তাদেরকেও মুসলমানগণ ওহ্হাবী বলে আখ্যায়িত করতে থাকেন। আর তারা নিজেদেরকে মুহাম্মদী, আহলে হাদীস বলে প্রচারের চেষ্টায় মেতে উঠে। বর্তমান অন্য সকল নাম বাদ দিয়ে আহলে হাদীস আন্দোলন নামের ব্যানারে নিজেদের কে প্রকাশ করছে ৷ এবং এ নামটি মূলত ইংরেজ কতৃক সীকৃত যা পরে আলোচনায় আসবে ,

দ্রষ্টব্য:- সাথে একটি কথা সাধারনের জ্ঞাতাথে বলে রাখি বাংলাদেশের কোন কোন স্হানে দেওবন্দী ওলামাদের কে ওহহাবী বলে তিরস্কার করতে দেখা যায় কিন্তু দেওবন্দী ওলামাদের সাথে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহ্হাব নজদীর সাথে কোন সমপর্কই নেই , কারন একেতো তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী আর সকল দেওবন্দী ওলামাগন হানাফী মাযহাব এর অনূসারী , তিনি হলেন লামাযহাবী গায়রেমোকল্লিদদের ইমাম দেওবন্দীদের ইমাম নয় দেওবন্দীগন সঠিক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এর অনুসারী ৷

উক্ত নামটি গ্রহণ করা হয়েছে রাসূল স. এর একটি হাদীসের সরাসরি শব্দ থেকে, তা হলো:-

ان بني اسرائيل تفرقت علي ثنتين وسبعين ملة وتتفرق امتي علي ثلاث وسبعين ملة كلهم في النار الا واحدة قالوا من هي يارسول الله قال ما انا عليه واصحابي (رواه الترمذي)

অর্থাৎ “বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিলো এবং আমার উম্মত তিয়...

াত্তর দলে বিভক্ত হবে। তারমধ্যে একটি দল ছাড়া সবই জাহান্নামী।(উপস্থিত সাহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ দলটির পরিচয় কী? উত্তরে রাসূল স. বললেন: যারা আমার “সুন্নাত ও আমার সাহাবাগণের মতাদর্শে অটল থাকবে”।

দারুল উলূম দেওবন্দের সাবেক নন্দিত মুহতামিম হাকীমুল ইসলাম কারী তৈয়ব রহ. তার সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘আকীদাতু তহাবী’র ব্যাখ্যাগ্রন্থে লিখেছেন-

وفي رواية احمد وابي داؤد : وهي الجماعة وفي رواية من كان علي السنة والجماعة ففيه اشارة الي أن لقب اهل الحق باهل السنة والجماعة مأخوذ من قول النبي صلي الله عليه وسلم........وهذا اللقب مركب من جزئين منهاج السنة المراد من ما,والذوات القدسية المراد من الجماعة , فمعيار الحق السنة واهلها لا احدهما فقط......فالسنة و اهلها متلازمان .....

(عقيدة الطحاوي مع الحواشي)

অর্থাৎ- উক্ত হাদীসের শেষাংশে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় উল্লেখ আছে: ‘জান্নাতী দলটিই হচ্ছে জামা‘আত। অন্য বিবরণে উল্লেখ আছে, যারা সুন্নাত এবং জামা‘আতের উপর প্রতিষ্ঠিত’ তারাই জান্নাতী দল। সুতরাং এ বিবরণ মতে রাসূলের হাদিসের মর্মই শুধু ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’ নামের উৎস নয় বরং হাদীসের সরাসরি শব্দ থেকেই এ নাম গৃহীত। এ নামের দু’টি অংশ রয়েছে, প্রথমাংশ হচ্ছে সুন্নাতের পথ বা তরিকা। যা আলোচ্য হাদীসে “ما” শব্দটির মর্ম । আর দ্বিতীয়াংশ হচ্ছে সাহাবাগণের পবিত্র আত্মাসমুহ যা “الجماعة” এর মর্ম। সুতরাং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সত্যপন্থী দলটির মানদণ্ড বা মাপকাঠি একটি নয়;বরং দু’টি। রাসূলের সুন্নাত ও সুন্নাতের অনুসারী সাহাবাগণের জামা‘আত। তাই সুন্নাত এবং জামা‘আত একটি অপরটি থেকে অবিচ্ছেদ্য ।

উল্লিখিত আলোচনা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেলো, রাসুল স.এর প্রসিদ্ধ একটি হাদীসের ভিত্তিতে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” এর নামকরণ করা হয়েছে। আর দেওবন্দি তথা কওমী ওলামাগন হদিসে বর্নিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত এর অনূসারী ৷ তবে এ ছাডা আরও অনেক মুসলিম এর অন্তভূক্ত আছেন সঠিক আক্বিদার মাধ্যম ও তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় ৷

ইসলামী আকীদার ইমামগণও ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা‘আত’এর নামকরণের কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে,রাসূল স.এর সুন্নাত ও সাহাবাগণের জামা‘আত দ্বারা যেসব আকীদা-বিশ্বাস প্রমাণিত, তার উপর যারা অটল থাকবে তারাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” বলে অভিহিত হবে।

এ মর্মে ‘শরহে আকাইদে নাসাফী’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, ماورد به السنة ومضي عليه الجماعة فسموا اهل السنة والجماعة- “রাসূলের সুন্নাত ও সাহাবায়ে কেরামের জামা‘আত দ্বারা প্রমাণিত আকীদায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণেই দলটি “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত” নামে অভিহিত হয়েছে

সাথে সাথে বৃটিশ আমলে আমাদের বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা নিসার আলী ওরফে তীতুমীর এবং হাজী শরীয়তুল্লাহর ফরায়েজী আন্দোলন সবই বৃটিশ ঐতিহাসিক ও আমলা ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার প্রমুখ কর্তৃক (ওহাবী) বলে অভিহিত হয়। হান্টারের ভাষ্যমতে, সৈয়দ আহমদ বেরলভী মক্কায় গিয়ে ওহাবী আন্দোলনে দীক্ষিত হয়ে আসেন, অথচ তিনি বা আমাদের তীতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ প্রমুখ বীরপুরুষগণ যখন ১৮২০ সালের দিকে হজে যান তখন মক্কা-মদীনায় সুদৃঢ় তুর্কী শাসন চলছিল এবং ঐ সময় ঐ সব পবিত্র নগরীতে ওহাবী আন্দোলনের নামটি উচ্চারণ করাও ছিল গুরুতর অপরাধ। এর এক দশক পূর্বেই তুর্কী সুলতানরা ১২৪৪ হিজরীতে/১৮১৩ খ্রি. ওহাবীদেরকে হটিয়ে মুক্ত করে ফেলেছিলেন। তখন ওহাবীদের কোন কতৃত্বই ছিলনা সুতরাং ওটা ছিল নেহাৎই রাজনৈতিক প্রচারণা এবং অসত্য বিবরণ। হক্ব ও ন্যায়ের পক্ষে অন্যায় অত্যাচার জুলুমের বিরুদ্বে কথা বলেছেন ইংরেজদের বিরুদ্বে জেহাদের ফতোয়া দিয়েছিলেন বলেই ইংরেজরা দেওবন্দি ওলামাসহ সমসাময়ীক আজাদী আন্দোলনের সকল কে ওহাবী বলে তিরস্কার করেছিলেন ৷ আজও যারা হক্বের পক্ষে কুফর শীরক বেদআতের বিরুদ্ধে কবর পুজা, ভন্ড পীরের বিরুদ্বে কথা বলেন তাদের কে ও ঐ সেই ইংরেজদের দালালরা ওহাবী বলে তিরস্কার করে থাকেন ৷

১৮৬৪ সালে ‘গ্রেট ওহাবী ট্রায়াল’ নামে উপমহাদেশীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে ইংরেজ‘ কতৃক কোলকাতা হাইকোর্টে’ সরকারী মামলা হয়েছিল-যার ভিত্তিতে অনেকেরই ফাঁসি ও দ্বীপান্তরের শাস্তি হয়েছিল। সে মামলার অভিযুক্তগণ আদালতে তাদেরকে ওহাবী বলে অভিহিত করার প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, আমরা ওহাবী নই, আমরা মুহাম্মাদী তরীকারই অনুসারী।’ তারা ওহাবীর পরিবর্তে তাদেরকে সুন্নী বলে অভিহিত করার দাবী করেছিলেন। স্বয়ং হান্টার লেখেন, কার্যত ওহাবীরা হচ্ছে সুন্নী সম্প্রদায়ের একটি অগ্রগামী অংশ এবং ইসলামের শুদ্ধাচারপন্থী অংশ। বাংলা ও উত্তর পশ্চিম ভারতের প্রায় সকল মুসলমানই সুন্নী সম্প্রদায়ভুক্ত। (ইন্ডিয়ান মুসলিমস পৃ. ৪৫-৪৬)

বর্তমানে ‘ওহাবী তত্ত্ব’ পুনঃআবিষ্কারকারীগণ সেই নোংরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে জানান দিলেন, ব্রিটিশ বেনিয়ারা ৬৫ বছর পূর্বেই এদেশ থেকে পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হলেও তাদের নিমক হালাল অনুগামীরা এখনো বেঁচে আছেন এবং যে কোন বাতিল শক্তিকেই তারা মদত যোগাতে সদা প্রস্ত্তত!

বিষয়: বিবিধ

৩০০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File