রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কিছু কথা. ও ৩টি ঐতিহাসিক ঘটনা
লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ২৯ আগস্ট, ২০১৩, ০১:২৬:৪৬ রাত
প্রথমেই বলে রাখি শবে মেরাজের ব্যপারে বিজ্ঞান যাই বলুক না কেন , এটা আমাদের ঈমানের অংশ মেরাজ হক্ব এতে সন্দেহের অবকাশ নেই ৷
প্রতি বছর মিরাজ রজনী আসলেই কিছু উৎসাহী ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ এর সাথে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব কে মিলিয়ে কিছু আজগুবী ব্যাখ্যা দিতে চায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর মিরাজ হচ্ছে এমন একটি ঘটনা যা আমাদের মাঝে প্রচলিত কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মতে আলোর গতির চেয়ে বেশি কোন গতি অর্জন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কোন বস্তুর গতি আলোর গতির চেয়ে বেশি হয়ে গেলে সেই বস্তুটি ভরশূন্য হয়ে যাবে। অর্থ্যাৎ আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের মূল কথাই হইল যে ঘটনাটি আপনি উল্লেখ করবেন তার মাঝে কখনই আলোর গতির চেয়ে বেশি গতি হতে পারবে না।
এখন আমাদের কাছে মিরাজ রজনী সম্পর্কে যে সকল বর্ণনা আছে তাতে আমরা পাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বোরাক নামক একটি প্রানীর পিঠে চড়ে মহাকাশ অতিক্রম করে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার আরশে উপস্থিত হয়েছিলেন।
এই বোরাকের গতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “ আমার চোখ যে দিকে যায়, বোরাকের পাও সাথে সাথে সেদিকে পড়ে। ”
অর্থ্যাৎ ধরুন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখ সূর্যের দিকে পড়ল। সাথে সাথে বোরাক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখের পলক পড়ার আগেই সূর্যের দূরত্ব পরিমান দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে ফেলল।
এখন পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব হল ১৫ কোটি কিলোমিটার। আর আলোর গতিবেগ হল প্রতি সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার। তাইলে হাদীস অনুসারে বোরাক ১ সেকেন্ডের আগেই ১৫ কোটি কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ফেলল যেটা আলোর গতিবেগের চেয়ে অনেক বেশি।
আর বোরাক যদি আলোর গতিবেগে চলত তাইলে বোরাকের সূর্যের দূরত্ব পরিমান দৈর্ঘ্য অতিক্রম করতে লাগত ৮ মিনিট যেটা পূর্বোক্ত হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক।
আমি এখানে শুধু সূর্যের কথা বললাম। সূর্য ছাড়াও আকাশে আরো অনেক নক্ষত্র আছে যেগুলি এই পৃথিবী থেকে শত শত কোটি কিলোমিটার থেকে বেশি দূরে। তাইলে হাদীসের কথা মতে বোরাক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখের পলক পড়ার আগেই সেই সব নক্ষত্র পরিমান দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলত। তাই বোরাকের প্রতি সেকেন্ডের গতি আলোর প্রতি সেকেন্ডের গতির চেয়ে বহু গুণ বেশি ছিল এটাতে কোন সন্দেহ নাই।
তাই মিরাজ রজনীর ব্যাখ্যায় কখনই আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব আসতে পারে না। কারন বোরাকের গতির ব্যাখ্যা আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব দিতে পারে না।
এছাড়া মিরাজ শেষ হওয়ার পরও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ায় এসে দেখেন উনার বিছানা তখন গরম ছিল এবং যে পানি দিয়ে উনি ওযু করেছিলেন সেই ওযুর পানি তখনও গড়িয়ে যাচ্ছিল। এর কি কোন ব্যাখ্যা আমাদের মাঝে প্রচলিত বিজ্ঞান দিতে পারবে ? না পারবেনা।
কারন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ হচ্ছে উনার একটি বিশেষ মুজেজা যা শুধুমাত্র উনার জন্যই প্রযোজ্য ছিল। অন্য কোন নবী রাসূলরা এই বিরল ঘটনার সাথে পরিচিত হতে পারেন নি। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা উনার বিশেষ ক্ষমতা দ্বারা এই মিরাজ কে ঘটিয়েছেন।
তো এখন বিজ্ঞান দ্বারা ব্যাখ্যা না করা গেলে কি মিরাজ ভুল বা মিথ্যা ? কখনই নয়। কারন খোদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনের ৩ টি ঘটনা দ্বারা মিরাজ যে সত্য তা প্রমান করে দিয়েছেন।
প্রথম ঘটনা টা হল
==========্ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াসের কাছে যে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন ঐ চিঠির সূত্র ধরে রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াসের সাথে আবু সুফিয়ানের কথা হয়েছিল। তখন আবু সুফিয়ান রোম সম্রাটের কাছে মিরাজ রজনীর কথা উল্লেখ করলে সেই সময়ের বায়তুল মোক্কাদ্দাসের প্রধান পাদ্রী ইলিয়র বলেন- “ আমি সেই রাত্রির কথা জানি। আমি রাত্রে বায়তুল মোকাদ্দাসের সকল দরজা বন্ধ না করা পর্যন্ত ঘুমাতাম না। তো ঐ রাত্রে একটা দরজা আমি কিছুতেই বন্ধ করতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত আমি কর্মকার/মিস্ত্রীদের কে ডেকে নিয়ে আসি। তারাও ঐ দরজা টা বন্ধ করতে পারছিল না। মনে হচ্ছিল ঐ দরজাটির চৌকাঠ পড়ে গিয়েছিল বা দরজাটি দেয়ালের সাথে শক্ত ভাবে লেগে গিয়েছিল। যাই হোক আমরা দরজাটি খোলা রেখেই চলে আসলাম। পরদিন ভোরে আমি ঐ দরজায় রক্ষিত পাথরের গায়ে একটি ছিদ্র দেখলাম। মনে হচ্ছিল ঐখানে কোন জন্তু বাধা হয়েছিল। তখন আমি সহকারীদেরকে বললাম হয়ত কোন মহান ব্যক্তির আগমনের উদ্দেশ্যেই গত রাতে দরজাটি এভাবে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। ” [ তথ্যসূত্রঃ আল-কোরয়ানের সূরা বনী ইসরাইলের ১ম ভাগের তাফসীর] উল্লেখ্য পরে বায়তুল মোক্কাদ্দাসের প্রধান পাদ্রী ইলিয়র মুসলমান হয়েছিলেন এবং উনি একজন সম্মানিত তাবেঈন।
২য় ঘটনা ========্
আর আমরা সবাই জানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ শুরু হয়েছিল ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ হতে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ থেকে আসার পরে যখন কাফেরদের প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছিলেন তখন একটি কাফেলা যা মক্কা থেকে অনেক দূরে ছিল ঐ কাফেলায় কয়টি উট ছিল, কয়টি রাখাল ছিল, ঐ কাফেলার একটি লাল বর্ণের উট হারিয়ে গিয়েছিল, ঐ লাল বর্ণের উটের পিঠে কি কি ব্যবসায়িক পন্য ছিল তার হুবহু বর্ণনা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে যখন ঐ কাফেলাটি মক্কায় আসে তখন ঐ কাফেলা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রত্যেকটি কথার সত্যতা মক্কার কাফের রা পায় এবং যথারীতি কাফেররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একজন বড় যাদুকর হিসাবে আখ্যায়িত করে। নাউযুবিল্লাহ।
৩য় ঘটনা==
তাছাড়া কাফেররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের কয়টি দরজা আছে, দরজাগুলির রঙ কি রকম, কোন দরজা কোন মিহরাবের পাশে এ জাতীয় অসম্ভব কিছু প্রশ্ন করেছিল। তখন জিবরাইল আলাইহিস সাল্লাম বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের একটি চিত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে উপস্থিত করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের বায়তুল মোকাদ্দাস সম্পর্কিত প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর দেন। সুবহানাল্লাহ। আল-কোরয়ানের সূরা বনী ইসরাইল ও সূরা নজমে মিরাজ রজনী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে ঐ ২ টি সূরার তাফসীর দেখতে বলা হচ্ছে।
সত্যিকার অর্থে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আঙ্গুলের ইশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার কোন ব্যাখাও কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান দিতে পারবে না। মূলত নবী রাসূলদের মুজেজা তো তাকেই বলা হয় যা মানুষের চিন্তা- কল্পনার বাইরে। আধুনিক বিজ্ঞানের সুচনা হয়েছে তো ১০০ বছর হল আর ইসলামের সূচনা হয়েছে হযরত আদম আলাইহিসসাল্লাম থেকে। তাই ইসলামের সবকিছুর সাথে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব জুড়ানো ঠিক নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৮৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন