শিশুর সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব ও সুন্দর নামে ডাকুন [ ৩ ]

লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১০:০৫:৫৩ রাত

এক কাহিনী

============

মন্দ নামের করুণ পরিণতির এক কাহিনী ইমাম মালেক তাঁর মুয়াত্তায় উল্লেখ করেছেন।

ইয়্হাইয়া বিন সায়ীদ হতে বর্ণিত আছে যে, উমার ইবনে খাত্তাবের কাছে জুহায়না কবীলার এক ব্যাক্তি এল। তিনি তাকে বললেন, তোমার নাম কি? সে জবাব দিল শিহাব (অগ্নি স্ফুলিঙ্গ)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন: তুমি কার ছেলে? সে উত্তর দিল ইবনে দেরাম (অগ্নি শিখার ছেলে)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি কোন গোত্রের লোক? সে বলল, হারাকা (প্রজ্জলন)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তোমার বাসস্থান কোথায়? সে বলল,বাহরুন্নার (অগ্নি গর্ভে)। তিনি সর্বশেষ প্রশ্ন করলেন, কোন অংশে? সে জবাব দিল বিযাতিল লাযা (শিখাময় অংশে)। তখন উমর (রাঃ) তাকে বললেন: যাও তোমার গোত্রের লোকদের কাছে গিয়ে দেখ তারা ভস্মীভুত হয়েছে। লোকটি তাদের কাছে গিয়ে দেখল সত্যিই তারা সকলে ভস্মীভুত হয়েছে।

উমার (রাঃ) দুরদর্শিতার মাধ্যমে এটা উপলব্ধি করেছিলেন। এ থেকে বুঝা যায় মন্দ নাম রাখা ভাল নয়। তাই এক জন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর উত্তম নাম তালাশ করা পিতা মাতা বা অভিভাবকদের উচিত।

নামকরণের সময়

==================

শিশু জন্মগ্রহণ করার পর কখন নামকরণ করা সুন্নাত এ সম্পর্কে আলেমদের কয়েকটি মত আছে। কেউ কেউ বলেছেন শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে নামকরণ ও আকীকা করা সুন্নাত।

হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ (সঃ) হযরত হাসান ও হোসাইনের (রাঃ) আকীকা করলেন জন্মের সপ্তম দিনে এবং তাদের দুই জনের নাম রাখলেন। (ইবনে হাব্বান ও আল মুস্তাদরাক)

আর কেউ কেউ মনে করেন শিশুর জন্ম হবার পর পরই তার নামকরণ করা সুন্নাত। তাঁরা হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেন

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আবি তালহার জন্ম হলে তাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে গেলাম। তখন তিনি উটকে হাত বুলিয়ে আদর করছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার কাছে কি খেজুর আছে? আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর আমি তাঁকে খেজুর দিলাম। তিনি তা চিবিয়ে নরম করলেন এবং শিশুটির মুখ ফাঁক করে তার মুখের ভিতর ভরে দিলেন, শিশুটি তখন তার মুখ নাড়াতে শুরু করলো। নবী (সঃ) বললেন আনসারদের প্রিয় হচ্ছে খেজুর। পরে তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ। (বায়হাকী)

এ থেকে বুঝা যায় শিশু জন্মেও পর পরই তার নাম রাখা যায়।

নামকরণে কুসংস্কারের উদাহরণ

==========================

বাংলাদেশের একটি দ্বীপে আমার জন্ম হয়। আমি ছোট বেলা গ্রামেই কাটিয়েছি। গ্রামে নামকরণ কেন্দ্রীক অনেক কুসংস্কার প্রত্যক্ষ করেছি। গ্রাম থেকে এসে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েক বছর ছিলাম। অনেক শিক্ষিত লোকদেরকেও দেখেছি, তাঁদের মধ্যে গ্রামের সেই কুসংস্কার বিরাজ করছে।

আমি গ্রামে লক্ষ করেছি যাদের ছেলে বা মেয়ে জন্ম নেয়ার পর পরই মারা যেত, পরবর্তীতে তাদের সন্তান হলে কপালে কালি মেখে দেয়া হতো এবং তাদের অদ্ভুত ধরনের নাম রাখা হতো। যেমন ধুলো, কালো, গজা, পচা ইত্যাদি। এ ধরনের নামকরণের পিছনে উদ্দেশ্য ছিল ভুত, পেত্নী, জ্বিন এমনকি যমদুতের কুদৃষ্টি এড়ানো। এটা এক ধরনের কুসংস্কার। সকল মানুষের জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তাই এ ধরনের কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে শিশুর নামকরণ করা ঠিক নয়।

শেরকী আকীদা।

=============

আবার অনেককে দেখেছি দীর্ঘ দিন সন্তান না হবার কারণে পীরের দরবারে বা আওলিয়াদের মাজারে গিয়ে সন্তান ভিক্ষা করতে। এটা সম্পূর্ণ শেরকী আকীদা। কেননা আল্লাহ ছাড়া কারও পক্ষে সন্তান দেয়া সম্ভব নয়। তাঁদের অনেককে দেখেছি দীর্ঘদিন পর সন্তান লাভ করলে এটাকে পীরের দান বলে মনে করতে। তাই তাদের নাম রাখা হতো পীর বখশ বা পীরের দান, খাজা বখশ বা খাজার দান। এ ধরনের নাম রাখাও ঠিক নয়।

এভাবে মুসলমানদের কারো কারো মধ্যে নামকরণ কেন্দ্রীক অনেক কুসংস্কার বিদ্যমান।

নামকরণে কতিপয় লক্ষ্যণীয় দিক

====================

একজন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার নাম রাখা হয়। শিশুর নামকরণের ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

১. নাম সুন্দর, মার্জিত, শ্রুতিমধুর ও অর্থবহ হওয়া প্রয়োজন।

২. আব্দুল্লাহ বা আব্দুর রহমান তথা আল্লাহর সত্তাবাচক বা গুণবাচক নামের আগে আবদ বা অন্য শব্দ যোগ করে নামকরণ করা ভাল। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে ডাকার সময় যেন আবদ বা অন্য শব্দ যোগ করে ডাকা হয়। শুধু রহমান, রহীম, রাজ্জাক ইত্যাদি গুণবাচক নামে যেন ডাকা না হয়।

৩. নামের আগে কুনিইয়া রাখা যায়। আল্লাহর রাছুল এ ধরনের কুনিইয়া রাখতেন।

৪. মুসলিম শিশুর এমন নাম রাখা উচিত যা শোনার সাথে সাথে বুঝা যায় এটা এক জন মুসলিম শিশুর নাম। অনেক সময় দেখা যায় এমন নাম রাখা হয় যা শুনে বুঝা যায় না এটা কি মুসলিম শিশুর নাম না অন্য কোন ধর্মাবলম্বীর? আবার অনেক সময় ছেলে বা মেয়ের নামের মধ্যে ফারাক করা যায়না। যেমন কাজল, নিশাত, ময়না, টিংকু, শীতল, রীতা, অভি ইত্যাদি।

৫. যে সকল গুণবাচক নামের হকদার একমাত্র রাসুলে কারীম (সঃ) সে সব নামে কারও নামকরণ করা ঠিক নয়। যেমন খাতামুন্নাবীয়্যীন (সর্বশেষ নবী), সাইয়েদুল মুরসালীন (রাসুলগণের নেতা)।

৬. আল্লাহ পাকের যাতী নামে কারও নামকরণ করা হারাম। শুধু আল্লাহ কারও নাম রাখা জায়েয নাই। অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে খাস এমন কোন নাম কারো সাথে লাগোনো যাবেনা। যেমন মালেকুল মুলক (জগতের বাদশাহ) সুলতানুস সালাতীন (বাদশাহদের বাদশাহ) ইত্যাদি।

৭. ফেরেশতাদের নামে নামকরণ করাও অধিকাংশ আলেমের মতে নিষিদ্ধ। তাই জিবরীর, ইসরাফীল, আজরাঈল, মীকাঈল ইত্যাদি নামে নামকরণ করা ঠিক নয়।

৮. যে সকল নাম ইসলামের ইতিহাসে খুবই ঘৃণিত সে সকল নামে কোন শিশুর নামকরণ করা ঠিক নয়। যেমন ইবলীশ, শাদ্দাদ, কারুন, ফেরাউন, আবু জেহেল, আবু লাহাব প্রভৃতি নাম রাখা উচিত নয়।

৯. যে সব নামে আল্লাহর সাথে বিদ্রোহের অর্থ বুঝা যায় সে ধরনের নাম রাখাও ঠিক নয়, যেমন আচিয়া (বিদ্রোণী)।

১০. শিশুর একটি সুন্দর নাম রাখা ভাল। তবে কোন কারণে একাধিক নাম রাখা যেতে পারে।

১১. কারও নাম যদি অসুন্দর হয়, সে বড় হয়ে গেলেও তার নাম পরিবর্তন করা যায়।

১২.এমন কোন নাম রাখা ঠিক নয় যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও আবদ বা গোলাম হওয়া বুঝায়। যেমন গোলাম মোস্তফা, গোলাম নবী, গোলাম রাসুল, আব্দুন্নবী, আব্দুস শামস ইত্যাদি।

তাহনীক ও আকীকা

============

সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর মিষ্টি জাতীয় কোন নরম খাদ্য কিংবা খেজুর চিবিয়ে নরম করে শিশুর মুখের ভিতর দেয়াকেই তাহনীক বলা হয়। তাহনীক করা সুন্নাত। আল্লাহর রাসুল (সঃ) খেজুর দিয়ে তাহনীক করতেন। আমাদের সমাজে মধু দিয়ে তাহনীক করার প্রচলন আছে।

সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর তাহনীক ও নামকরণ করার সাথে সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সন্তানের আকীকা করা। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলে কারীম (সঃ) হযরত হাসান (রাঃ) ও হোসাইন (রঃ) এর জন্মেও সপ্তম দিনে আকীকা করেছেন।

পুত্র সন্তান হলে দুইটি ছাগি, বকরী বা কোরবানীর গরুর মধ্যে দুই অংশ দেয়া ভাল। ছেলে সন্তান হলে সামর্থ না থাকলে এক অংশ দেয়াও জায়েয আছে। আর মেয়ে সন্তান হলে একটি ছাগি, বকরী বা এক অংশ দিতে হয়।

আকীকার গোশত ফকীর মিসকীনকে, আত্বীয় স্বজনকে দেয়া যায় এবং নিজেও খাওয়া যায়। আর আকীকা সপ্তম দিন করতে না পারলে পরে করলেও চলবে।

আল্লাহর যাতী ও সিফাতী নামের আগে আবদ বা অন্য শব্দ যোগে শিশুর নামকরন

আল্লাহ তায়ালার অনেকগুলো গুণবাচক নাম রয়েছে। তিনি সুরা আল-আরাফের ১৮০ নম্বর আয়াতে নিজের গুণগত নামের বর্ণনা দিয়ে বলেন,

আল্লাহর অনেক সুন্দর নাম রয়েছে। সে নাম গুলোতে তোমরা তাঁকে ডাকো। (আল-আরাফ ১৮০) আলেম গণ আল্লাহ পাকের নামগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন।

১.সত্তাবাচক নাম

২. গুণবাচক নাম

আল্লাহর এ সব নামের পুর্বে আবদ শব্দ যোগ করে শিশুর নামকরণ আল্লাহ খুবই পছন্দ করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর কাছে তোমাদের নামগুলোর মধ্যে প্রিয়তম হলো আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। (সহীহ মুসলিম, তিরমিযি ও আবু দাউদ)

এ ভাবে আল্লাহর অন্যান্য গুণগত নামের আগে আবদ বা অন্য শব্দযোগ করে নাম রাখা ভাল। তবে খেয়াল রাখতে হবে আবদ বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহর গুণগত নামে কাউকে ডাকা যাবেনা।

যেমন কারো নাম আব্দুর রহমান,আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, আব্দুল মালেক, আতা উররহমান আব্দুর রহীম রাখার পর শুধু রহমান, রহীম, খালেক, মালেক, রাজ্জাক.রব নামে ডাকা ঠিক নয়।

কেননা এ নামগুলোর হকদার হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তবে আল্লাহর এমন কিছু গুণবাচক নাম আছে-যেগুলো আবদ ছাড়াও ডাকা বৈধ। যেমন ওদুদ মানে স্নেহময়। স্নেহের গুণ আল্লাহ ছাড়াও মানুষের মধ্যে আছে। তাই এ নামে মানুষকে ডাকা যায়। উল্লেখ্য যে, আল্লাহর স্নেহ মমতা আর মানুষের স্নেহ মমতার মাঝে আকাশ পাতাল ফারাক। আল্লাহর মমতার সাথে মানুষের স্নেহ মমতা তুলনা করার সুযোগ নেই।

নতুন সংযোজন =====================================================************************************************************************************************************************************************************************************************************************

মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানদের মাঝেও ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে শিশুর নাম নির্বাচন করার আগ্রহ দেখা যায়। এজন্য তাঁরা নবজাতকের নাম নির্বাচনে পরিচিত আলেম-ওলামাদের শরণাপন্ন হন। তবে সত্যি কথা বলতে কী এ বিষয়ে আমাদের পড়াশুনা অতি অপ্রতুল। তাই ইসলামী নাম রাখার আগ্রহ থাকার পরও অজ্ঞতাবশত আমরা এমনসব নাম নির্বাচন করে ফেলি যেগুলো আদৌ ইসলামী নামের আওতাভুক্ত নয়। শব্দটি আরবী অথবা কুরআনের শব্দ হলেই নামটি ইসলামী হবে তাতো নয়। কুরআনে তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কাফেরদের নাম উল্লেখ আছে। ইবলিস, ফেরাউন, হামান, কারুন, আবু লাহাব ইত্যাদি নাম তো কুরআনে উল্লেখ আছে; তাই বলে কী এসব নামে নাম রাখা সমীচীন হবে!? তাই এ বিষয়ে সঠিক নীতিমালা আমাদের জানা প্রয়োজন।

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে- “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।” এ নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল- এ নামদ্বয়ে আল্লাহর উপাসনার স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামদ্বয়ের সাথে সমন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ (বান্দা) শব্দটিকে সমন্ধিত করে নাম রাখাও উত্তম।

আব্দ’ (বান্দা) শব্দ সমন্ধিত করে কয়েকটি নাম:

• আব্দুল আযীয (عبد العزيز- পরাক্রমশালীর বান্দা),

• আব্দুল মালিক (عبد المالك),

• আব্দুল কারীম (عبد الكريم-সম্মানিতের বান্দা),

• আব্দুর রহীম (عبد الرحيم-করুণাময়ের বান্দা),

• আব্দুল আহাদ (عبد الأحد- এক সত্তার বান্দা),

• আব্দুস সামাদ (عبد الصمد- পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্বের অধিকারীর বান্দা),

• আব্দুল ওয়াহেদ (عبد الواحد-একক সত্তার বান্দা),

• আব্দুল কাইয়্যুম (عبد القيوم-অবিনশ্বরের বান্দা),

• আব্দুস সামী (عبد السميع-সর্বশ্রোতার বান্দা),

• আব্দুল হাইয়্য (عبد الحي-চিরঞ্জীবের বান্দা),

• আব্দুল খালেক (عبد الخالق-সৃষ্টিকর্তার বান্দা),

• আব্দুল বারী (عبد الباري-স্রষ্টার বান্দা),

• আব্দুল মাজীদ (عبد المجيد-মহিমান্বিত সত্তার বান্দা) ইত্যাদি।

পক্ষান্তরে এই ‘আব্দ’ শব্দটিকে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কোন শব্দের সাথে সমন্ধিত করে নাম রাখা হারাম। যেমন:

• আব্দুল ওজ্জা (ওজ্জার উপাসক),

• আব্দুশ শামস (সূর্যের উপাসক),

• আব্দুল কামার (চন্দ্রের উপাসক),

• আব্দুল কালাম (কথার উপাসক),

• আব্দুন নবী (নবীর উপাসক),

• আব্দুল আলী (আলী এর উপাসক),

• আব্দুল হোসাইন (হোসাইন এর উপাসক) ইত্যাদি।

তবে আমাদের দেশে প্রেক্ষাপটে দেখা যায় নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটা থাকলেও ডাকার সময় ‘আব্দ’ শব্দটা ছাড়া ব্যক্তিকে ডাকা হয়। যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয় রহমান বলে। আব্দুর রহীমকে ডাকা হয় রহীম বলে। এটি অনুচিত। যদি দ্বৈত শব্দে গঠিত নাম ডাকা ভাষাভাষীদের কাছে কষ্টকর ঠেকে সেক্ষেত্রে অন্য নাম নির্বাচন করাটাই শ্রেয়।

তাছাড়া যে কোন নবীর নামে নাম রাখা ভাল। যেহেতু তাঁরা আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা। নবী করিম (সাঃ) তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহিম। কুরআনে কারীমে ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ আছে। এর থেকে পছন্দমত যে কোন নাম নবজাতকের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। যেমন:

• মুহাম্মদ (محمد),

• আহমাদ (أحمد),

• ইব্রাহীম (إبراهيم),

• মুসা (موسى),

• ঈসা (عيسى),

• নূহ (نوح),

• হুদ (هود), লূত (لوط),

• শিছ (شيث),

• হারুন (هارون),

• শুআইব (شعيب),

• আদম (آدم) ইত্যাদি।

নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখাও উত্তম। এর মাধ্যমে নবজাতকের মাঝে সংশ্লিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির স্বভাব চরিত্রের প্রভাব পড়ার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। আরবীতে এটাকে তাফাউল বলা হয়। নেককার ব্যক্তিদের শীর্ষস্থানে রয়েছেন রাসূল (সাঃ) এর সাহাবায়ে কেরাম। তারপর তাবেয়ীন। তারপর তাবে তাবেয়ীন। এরপর আলেম সমাজ। বিশিষ্ট সাহাবী যুবাইর ইবনে আওয়াম তার ৯ জন ছেলের নাম রেখেছিলেন বদনের যুদ্ধে শহীদ হওয়া ৯ জন সাহাবীর নামে। তারা হলেন-

• আব্দুল্লাহ (عبد الله),

• মুনযির (منذر),

• উরওয়া (عروة),

• হামযা (حمزة),

• জাফর (جعفر),

• মুসআব (مصعب),

• উবাইদা (عبيدة),

• খালেদ (خالد),

• উমর (عمر)। ।[তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১৭]

ব্যক্তির নাম তাঁর স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শাইখ বাকর আবু যায়েদ বলেন, “কাকতালীয়ভাবে দেখা যায় ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহর তাআলার হেকমতের দাবী। যে ব্যক্তির নামের অর্থে চপলতা রয়েছে তার চরিত্রেও চপলতা পাওয়া যায়। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রের মধ্যে গাম্ভীর্যতা পাওয়া যায়। খারাপ নামের লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে, আর ভাল নামের লোকের চরিত্রও ভাল হয়ে থাকে।” [তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১০, তুহফাতুল মাওদুদ-ইবনুল কাইয়্যেম ১/১২১]

আমাদের দেশে শিশুর জন্মের পর নাম রাখা নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা দেখা যায়। দাদা এক নাম রাখলে নানা অন্য একটা নাম পছন্দ করেন। বাবা-মা শিশুকে এক নামে ডাকে। খালারা বা ফুফুরা আবার ভিন্ন নামে। এভাবে একটা বিড়ম্বনা প্রায়শঃ দেখা যায়। এ ব্যাপারে শাইখ বাকর আবু যায়দ বলেন, “নাম রাখা নিয়ে পিতা-মাতার মাঝে বিরোধ দেখা দিলে শিশুর পিতাই নাম রাখার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।’[সূরা আহযাব ৩৩:৫]” অতএব শিশুর পিতার অনুমোদন সাপেক্ষে আত্মীয় স্বজন বা অপর কোন ব্যক্তি শিশুর নাম রাখতে পারেন। তবে যে নামটি শিশুর জন্য পছন্দ করা হয় সে নামে শিশুকে ডাকা উচিত। আর বিরোধ দেখা দিলে পিতাই পাবেন অগ্রাধিকার।

ইসলামে যেসব নাম রাখা হারাম:

আল্লাহর নাম নয় এমন কোন নামের সাথে গোলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দটিকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা হারাম। যেমন,

• আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের দাস),

• আব্দুল কালাম (কথার দাস),

• আব্দুল কাবা (কাবাগৃহের দাস),

• আব্দুন নবী (নবীর দাস),

• গোলাম রসূল (রসূলের দাস),

• গোলাম নবী (নবীর দাস),

• আব্দুস শামছ (সূর্যের দাস),

• আব্দুল কামার (চন্দ্রের দাস),

• আব্দুল আলী (আলীর দাস),

• আব্দুল হুসাইন (হোসাইনের দাস),

• আব্দুল আমীর (গর্ভনরের দাস),

• গোলাম মুহাম্মদ (মুহাম্মদের দাস),

• গোলাম কাদের (কাদেরের দাস) ইত্যাদি।

অনুরূপভাবে যেসব নামকে কেউ কেউ আল্লাহর নাম মনে করে ভুল করেন অথচ সেগুলো আল্লাহর নাম নয় সেসব নামের সাথে আব্দ বা দাস শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও হারাম। যেমন- আব্দুল মাবুদ (মাবুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেব কুরআন ও হাদীছে আসেনি, বরং আল্লাহর বিশেষণ হিসেবে এসেছে) আব্দুল মাওজুদ (মাওজুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেব কুরআন ও হাদীছে আসেনি)

• অনুরূপভাবে শাহেনশাহ (জগতের বাদশাহ) নাম রাখা হারাম। [মুসলিম] মালিকুল মুলক (রাজাধিরাজ) নাম রাখা হারাম। সাইয়্যেদুন নাস (মানবজাতির নেতা) নাম রাখা হারাম। [তুহফাতুল মাওলুদ ১/১১৫]

• সরাসরি আল্লাহর নামে নাম রাখা হারাম। যেমন- আর-রাহমান, আর-রহীম, আল-আহাদ, আস-সামাদ, আল-খালেক, আর-রাজেক, আল- আওয়াল, আল-আখের ইত্যাদি।

যেসব নাম রাখা মাকরুহ :

ক) যেসব নামের মধ্যে আত্মস্তুতি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ। যেমন, মুবারক (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। অনুরূপভাবে বাররা (পূন্যবতী)।•

খ) শয়তানের নামে নাম রাখা। যেমন- ইবলিস, ওয়ালহান, আজদা, খিনজিব, হাব্বাব ইত্যাদি।

গ) ফেরাউনদের নামে নাম রাখা। যেমন- ফেরাউন, হামান, কারুন, ওয়ালিদ।[তুহফাতুল মাওদুদ ১/১১৮]

ঘ) বিশুদ্ধ মতে ফেরেশতাদের নামে নাম রাখা মাকরুহ। যেমন- জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল।

ঙ) যে সকল নামের অর্থ মন্দ। মানুষ যে অর্থকে ঘৃণা করে এমন অর্থবোধক কোন নাম রাখা। যেমন, কালব (কুকুর) মুররা (তিক্ত) হারব (যুদ্ধ)।

চ) একদল আলেম কুরআন শরীফের নামে নাম রাখাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন- ত্বহা, ইয়াসীন, হামীম ইত্যাদি।[ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৭]

ছ) ইসলাম বা উদ্দীন শব্দের সাথে সম্বন্ধিত করে নাম রাখা মাকরূহ। ইসলাম ও দ্বীন শব্দদ্বয়ের সুমহান মর্যাদার কারণে।[ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৫, তুহফাতুল মাওদুদ ১/১৩৬]•

জ) দ্বৈতশব্দে নাম রাখাকে শায়খ বকর আবু যায়দ মাকরুহ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন- মোহাম্মদ আহমাদ, মোহাম্মদ সাঈদ।

ঝ) অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে আব্দ (দাস) শব্দ বাদে অন্য কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করা। যেমন- রহমত উল্লাহ (আল্লাহর রহমত)।

ঞ) শায়খ বকর আবু যায়দের মতে রাসূল শব্দের সাথে কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও মাকরূহ। যেমন- গোলাম রাসূল (গোলাম শব্দটিকে যদি আরবী শব্দ হিসেবে ধরা হয় এর অর্থ হবে রাসূলের চাকর বা বাছা তখন এটি মাকরূহ। আর যেসব ভাষায় গোলাম শব্দটি দাস অর্থে ব্যবহৃত হয় সেসব ভাষার শব্দ হিসেবে নাম রাখা হয় তখন এ ধরনের নাম রাখা হারাম যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।)

নির্বাচিত আরো কিছু ছেলেদের সুন্দর নাম:

• উসামা (أسامة-সিংহ),

• আফীফ (عفيف-পুতপবিত্র),

• হামদান (প্রশংসাকারী),

• লাবীব (لبيب-বুদ্ধিমান),

• রাযীন (رزين-গাম্ভীর্যশীল),

• রাইয়্যান (ريَّان-জান্নাতের দরজা বিশেষ),

• মামদুহ (ممدوح-প্রশংসিত),

• নাবহান (نبهان- খ্যাতিমান),

• নাবীল (نبيل-শ্রেষ্ঠ),

• নাদীম (نديم-অন্তরঙ্গ বন্ধু),

• আব্দুল ইলাহ (عبد الإله- উপাস্যের বান্দা),

• ইমাদ (عماد- সুদৃঢ়স্তম্ভ),

• মাকহুল (مكحول-সুরমাচোখ),

• মাইমূন (ميمون- সৌভাগ্যবান),

• তামীম (تميم),

• হুসাম (حُسَام-ধারালো তরবারি),

• বদর (بدر-পূর্ণিমার চাঁদ),

• হাম্মাদ (حماد-অধিক প্রশংসাকারী),

• হামদান (حمدان-প্রশংসাকারী),

• সাফওয়ান (صفوان-স্বচ্ছ শিলা),

• গানেম (غانم-গাজী, বিজয়ী),

• খাত্তাব (خطاب-সুবক্তা),

• সাবেত (ثابت-অবিচল),

• জারীর (جرير), খালাফ (خلف),

• জুনাদা (جنادة), ইয়াদ (إياد),

• ইয়াস (إياس),

• যুবাইর (زبير),

• শাকের (شاكر-কৃতজ্ঞ),

• আব্দুল মাওলা (عبد المولى- মাওলার বান্দা),

• আব্দুল মুজিব (عبد المجيب- উত্তরদাতার বান্দা),

• আব্দুল মুমিন (عبد المؤمن- নিরাপত্তাদাতার বান্দা),

• কুদামা (قدامة),

• সুহাইব (صهيب) ইত্যাদি।

১ম অংশ

http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/2300/salamat/2265

২য় অংশ

http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/2300/salamat/2266

বিষয়: বিবিধ

৮০০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File