শিশুর সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব ও সুন্দর নামে ডাকুন [ ২ ]

লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:৪৪:৩৬ রাত

শিরকী নাম

===============

এ থেকে বুঝা যায় নাম সুন্দর ও অর্থবহ হওয়া জরুরী। কিন্তু অর্থ না জানা বা চিন্তা করে নাম না রাখার কারণে অনেককে শিরকী নাম পর্যন্ত রাখতে দেখা যায়। শিরকী নাম হলো আল্লাহ ছাড়া আর কারও নামে আবদ বা গোলাম ইত্যাদি যোগ করে নাম রাখা। যেমন কেউ কেউ পীরের এত ভক্ত যে, সন্তান হবার পর নাম রাখেন পীর বখশ (পীরের দান) ।

গোলাম নবী , গোলাম রসুল, আবদুননবী, আবদুর রসুল ,

অথচ এক জন মুসলমানের এ আকীদা থাকতে হবে যে রাসুল,পীর, অলী কারো পক্ষে সন্তান দেয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সন্তান দিতে পারেনা। আর একজন মুসলমান একমাত্র আল্লাহরই আবদ বা গোলাম। অন্য কারো নয়, তাই একজন শিশুর নামকরণের ক্ষেত্রে এমন নাম রাখা উচিত নয় যার অর্থ দ্বারা অন্য কারো গোলাম হওয়া বুঝায়।

ইসলামী ও উত্তম নাম

================

আল্লাহর নামের আগে আবদ যোগ করে আব্দুল্লাহ কারো নাম রাখা খুবই উত্তম। এ ভাবে আল্লাহর সিফাতী (গুনবাচক) নামের আগে আবদ যোগ করে নাম রাখা ভাল। যেমন আব্দুর রহমান, আব্দুল করিম, আব্দুর রহিম, আব্দুল আউয়াল, আব্দুল কুদ্দুস প্রভৃতি। তবে এ ক্ষেত্রে নাম ডাকার সময় অবশ্যই আবদ যোগ করেই ডাকতে হবে।

কিন্তু অনেককে দেখা যায় আবদ যোগ না করে শুধু রহীম, রহমান, করীম, কুদ্দুস এ ধরনের আল্লাহর সিফাতী নাম ধরে ডাকেন,এটা অনুচিত। কারণ আল্লাহ যেসব গুনে গুনান্বিত সেব গুনে একজন মানুষ গুনান্বিত হতে পারেনা। তাই মানুষকে আল্লাহর সিফাতী নাম ধরে ডাকা উচিত নয়। তাই আল্লাহর নামের পুর্বে আবদ বা অন্য কোন শব্দ (যেমন আতাউল্লাহ,রহমত উল্লাহ ) যোগ করেই ডাকতে হয়।

নামকরণের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী, শিশুর পরিচয় পিতার সাথেই সম্পৃক্ত। তাই নামকরণের অধিকার পিতার। অবশ্য পিতা মাতা পরামর্শ করেই নাম ঠিক করা ভাল। অনেক সময় দেখা যায় পিতা মাতা দুই জন দুই নাম পছন্দ করেন, তাই দুই জন দুই নামে ডাকেন। শিশুর অর্থবহ সুন্দর একটি নাম রাখাই উত্তম। আবার অনেকের খুবই দীর্ঘ নাম রাখা হয়, যার কারণে পরবর্তীতে নানা ধরনের সমস্যা পোহাতে হয়। যাদের নাম খুব দীর্ঘ তারা অন্য কোন দেশে গেলে অনেক সময় পরিচিত নামটি হারিয়ে যায়। এজন্য আমি মনে করি এক জন শিশুর সুন্দর, অর্থবহ, সংক্ষিপ্ত, শ্রুতিমধুর নাম হওয়া ভাল। তবে কুনিইয়া (উপনাম) রাখা যেতে পারে। কেননা রাসুল (স) অনেককে এ ধরনের কুনিইয়া বা উপনামে ডাকতেন।

শিশুর সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব

======================================

এক জন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার নাম রাখতে হয়। সে সময় তার যে নাম রাখা হয় সবাই তাকে সেই নামেই ডাকে। সে ডাক শুনেই সে দুধ পানরত অবস্থায়ও বুঝতে পারে, তাকে ডাকছে। তাই কেউ ডাকলে তার দিকে তাকায়। আর বড় হবার পর এ নামেই সে পরিচিতি লাভ করে।

শিশু জন্মগ্রহণ করার পর নিজের নাম নিজে রাখতে পারেনা। এটা পিতা মাতা বা আত্মীয় স্বজনের দায়িত্ব। পিতা মাতা বা যারাই নাম রাখবে তাদের উচিত সুন্দর নাম রাখা। এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস ও আবু সাঈদ থেকে বর্ণিত আছে যে,রাছুল (সঃ) বলেছেন,যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে ও সুশিক্ষা দেয় এবং সাবালক হলে তার বিবাহ দেবে। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বিবাহ না দেবার কারণে গুনাহ হলে সে গুনাহ তার পিতার উপর বর্তাবে। (বায়হাকী, হাদীছটি যঈফ)

এ থেকে বুঝা গেল শিশুর সুন্দর নাম রাখা পিতার কর্তব্য। অর্থবোধক, মার্জিত, ইসলামী ভাবধারায় উজ্জীবিত, সুন্দর নাম রাখলে তা শিশুর জীবনে প্রভাব পড়ে।

অন্য আরেক হাদীসে আছে, আবু দারদা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতাদের নামে, তাই তোমাদের নামগুলি সুন্দর রাখো। ( আবু দাউদ)

এ থেকে বুঝা যায় শিশুর নাম রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুখের বিষয় হচ্ছে মুসলিম সমাজে অনেকেই শিশুর এমন নাম রাখেন যা অর্থবোধক নয়। এবং এই নাম শুনে বুঝা যায়না এটা কোন মুসলিম শিশুর নাম কিনা?

ভাল ও মন্দ নামের প্রভাব

====================

এক জন শিশুর যে নামই রাখা হোক না কেন তা তার জীবনে প্রভাব ফেলে। ভাল নামের ভাল প্রভাব আর মন্দ নামের খারাপ প্রভাব পড়ে। এক জন শিশু যখন বড় হয় তখন সে নামের অর্থ জানার চেষ্টা করে। মনে করুন এক জন শিশুর নাম সালেহ, যার অর্থ সৎ কাজ কারী। সে যখন কোন খারাপ কাজ করে তাকে যদি বলা হয় তোমার নামের অর্থ হচ্ছে সৎ কাজ কারী। তুমি যে খারাপ কাজ করলে তা কি ঠিক হলো? নিশ্চয়ই এ কথাটি তার মনে রেখাপাত করবে। এভাবে অনেক শিশু নামের কারণে মন্দ কাজ করতে লজ্জা বোধ করে।

যেমন কারো নাম আবদুল্লহ আর্থ আল্লাহর বান্দা/গোলাম কাজেই তার কাজই হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে আল্লাহর গোলামী/এবাদত করা , আর তা না করলে স্বভাবতই সে লজ্যা বোধ করবে /মানুষ লজ্যা দিবে,

রাসুল (সঃ) এর সামনে কোন লোক এলে তিনি তার নাম জিজ্ঞাসা করতেন। কারো নাম সুন্দর হলে তিনি খুশী হতেন। আর কারো নাম অসুন্দর হলে তিনি তা পরিবর্তন করে দিতেন।

বিষয়: বিবিধ

১৮১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File