শিশুর সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব ও সুন্দর নামে ডাকুন [ ১]

লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:২৬:৪০ দুপুর

আমি যখন লোহাগডা/আমিরাবাদ মাদ্রাসায়ে হোছাইনিয়া আজিজুল উলুম রাজঘাটায় ছিলাম, সে সময়ের কথা। একদিন আমার রুমে কয়েক জন মেহমান আসলেন। তাঁদের মেহমানদারীর জন্য, দুই জনকে দোকানে পাঠালাম।

তাদের এক জনের নাম ছিল মিষ্টি।

কিছু খাবার নিয়ে অন্যজন ফিরে এসে আমাদেরকে নাস্তা দেয়ার সময়, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মিষ্টি কই?

অন্যান্য মেহমানরা বুঝলেন নাস্তার মধ্যে মিষ্টি না থাকায় আমি মিষ্টির কথা বলছি। তাই তারা বলতে লাগলেন , অনেক নাস্তা হয়েছে, মিষ্টি লাগবেনা। সে সময়ই নীচ থেকে মিষ্টি নামক ভদ্র লোকটি এসে হাজির। তখন আমি তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললাম এর নামই মিষ্টি।

সবাই মিষ্টি খাবার আনন্দের চেয়ে বেশী আনন্দ উপভোগ করলেন। এভাবে আমরা প্রতি নিয়ত অনেক নাম শুনি।

সে সব নাম শুনে বুঝা যায় না, এটা কিসের নাম?

যেমন আমার পরিচিত এক জনের নাম ছিল আকাশ।

রাস্তায় চলতে হঠাৎ যদি তাকে দেখে কোন বন্ধু বলে উঠতো এইতো আকাশ। তখন অনেকের চোখ আকাশের দিকেই নিবদ্ধ হতো। আরেক জনের নাম ছিল পল্লব। এই পল্লব কি গাছের পাতা না আশরাফুল মাখলুকাত কোন এক মানুষের নাম তা বুঝা একটু কঠিন। আমার পরিচিত আরেক জনের নাম ছিল ইতি, ইতি অর্থ শেষ। এ ধরনের আরও কত নাম শুনেছি, যা নিয়ে বন্ধু মহলে হাসাহাসি হত।

সাধারণত নিজের নাম রাখা কেন্দ্রীক নিজের কোন দায়িত্ব নেই। বাবা মা বা আত্মীয় স্বজনরাই নাম রাখেন। কিন্তু বড় হলে নাম কেন্দ্রীক ব্যাঙ্গ তাকেই শুনতে হয়। কেননা বাবা মা বা আত্মীয় স্বজন নাম রাখার সময় চিন্তা করেননি নামের অর্থ কি?

তাই অনেককে বড় হয়ে এফিডেভিট দিয়ে নাম সংশোধন করতেও দেখা যায়।

একজন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার আকীকা করা ও নাম রাখা পিতা মাতার দায়িত্ব। শিশুর জন্মের পর সপ্তম দিন আকীকা ও নাম রাখা সুন্নাত।

কোন কোন হাদীস অনুযায়ী জন্মের পর পরই নাম রাখা যায়। আর কোন কোন হাদীসে জন্মের পর তৃতীয় দিবসে নাম রাখার কথা উল্লেখ আছে। নাম যখনই রাখা হোক না কেন, নামকরণের ক্ষেত্রে উত্তম নাম তালাশ করা উচিত। রাসুল (স.) শিশুর সুন্দর নাম রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন; ‘‘ কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের নাম এবং তোমাদের পিতার নামে।

তাই তোমাদের নাম গুলো সুন্দর রাখো”। তাঁর কাছে কোন নতুন ব্যক্তি এলে তার নাম জিজ্ঞাসা করতেন , অপছন্দ হলে সে নাম পরিবর্তন করতেন। যেমন তিনি আসিয়া ( বিদ্রোহিণী) নাম পরিবর্তন করে জামিলা নাম দিয়েছিলেন আর আসসারম (কঠোর) নাম পরিবর্তন করে সায়ীদ নামকরণ করেছিলেন। তিনি এভাবে অনেকের নাম পরিবর্তন করেন।

মানুষ একে অপরকে নাম ধরেই ডাকে। কারো সাথে পরিচয়ের শুরুতেই জানতে চায় আপনার নাম কি? বিশেষত একজন শিশুর সাথে কারো দেখা বা পরিচয় হলে তার নাম জানতে চায়। তাই শিশুর জীবনে নামকরণের বিরাট প্রভাব পড়ে।

আমার এক আত্মীয়ের এক ছেলের নাম সালেহ, এটা একজন নবীর নাম। তাঁর আরেক ছেলের নাম এহসান। এহসান কোন নবীর নাম কিনা তা কারো জানা নেই। সালেহ প্রায়ই গর্ববোধ করে বলে তার নাম একজন নবীর নাম, কিন্তু তার অপর ভাইর নাম নবীর নাম নয়। এভাবে সকল শিশুই একটু বড় হলেই তার নামের অর্থ জানার চেষ্টা করে।

আরেকটু বড় হলে তার নামের সাথে অন্য কারো নাম মিলে গেলে তার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। আরও একটু বড় হলে তার নামের সাথে প্রসিদ্ধ কারো নামের মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করে এবং তার জীবনী পড়ে। যার গভীর প্রভাব তার জীবনে গিয়ে পড়ে। অবশ্য সকল ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম থাকে, তার কথা আলাদা।

মুসলিম সমাজে আলেম উলামাদের সাথে পরামর্শ করে সুন্দর নাম রাখার রেওয়াজ ছিল। তাঁরা নামের অর্থ ও ফযীলতের দিকে দৃষ্টি রেখেই নামকরণ করতেন। তাই সে সব নামের মধ্যে মুসলিম কালচারের প্রভাব ছিল।

এ ধরনের নাম শুনলেই আঁচ করা যায় এটা কোন মুসলমানের নাম। কিন্তু আস্তে আস্তে নামকরণের ক্ষেত্রেও তথা কথিত আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। আরবী অর্থ বহ নামের পরিবর্তে সংস্কৃত, ইংরেজী বা বাংলা এমন সব নাম রাখা শুরু হয়। যার অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়না। আবার অর্থ থাকলেও তা শুনতে শ্রুতিমধুর লাগেনা।

যেমন ডলি, বেনু, অনিল, শ্যামা, শিপ্রা, চপল, চঞ্চল, তুষার, সৈকত, বাদল, শিমুল কাজল, নিশাত, ময়না, টিংকু, শীতল, রীতা, অভি

কপি , ছেন্টু , বলটু , সাগর , সিজার, জিকা, ইত্যাদি।

এ ধরনের নাম শুনে মুসলিম বা অমুসলিম কিছুই বুঝা যায় না। প্রাসঙ্গিক ভাবে এ কথা খেয়াল রাখতে হবে যে, আরবী নাম রাখলেই অর্থ বহ হয়না। কেননা আল্লাহর রাসুল যে সব নাম পরিবর্তন করেছেন, তা আরবীতেই ছিল। যেমন খায়ল (ঘোড়া) যুওয়াইব (ছোট নেকড়ে বাঘ) শিহাব (অগ্নিস্ফুলিঙ্গ) গোরাব (কাক) বাহীর (কানকাটা) হারব (যুদ্ধ) প্রভৃতি নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দিয়েছেন।

বিষয়: বিবিধ

৩০০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File