রসুল সাঃ এর যুগে ব্যভিচার , চুরি , মিথ্যা অপবাদের শাস্তি , পর্দা ও হারাম-হালাল খাবার এর বিধান রচনা

লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ২৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৯:৫২:৪৮ রাত



ব্যভিচারের শাস্তি বিধান

===্

হিজরী ষষ্ঠ সন।

ইসলামী রাষ্ট্রে তখন অনেক সুসংহত। পাপ ও অশ্লীলতার দ্বারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিবেশ এখন পবিত্র। এই পবিত্র পরিবেশ বিনাশ করতে পারে এমন কিছুকে আর প্রশয় দেয়া যায় না। এই সময় আল্লাহ ব্যভিচারের শাস্তি সংক্রান্ত নির্দেশ নাযিল করেন-

الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِئَةَ جَلْدَةٍ وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

যিনাকার মেয়েলোক ও যিনাকার পুরষ-প্রত্যেককে একশতটি কোড়া মার। তোমরা যদি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান পোষণকারী হও আল্লাহর বিধানের ব্যাপারে তাদের প্রতি তোমাদের মনে যেন দয়ার ভাব সৃষ্টি না হয়। আর তাদেরকে শাস্তিদানের সময় মুমিনদের একটি দল যেন উপস্থিত থাকে। (সূরা আন নূর : ২)

অবিবাহিত পুরুষ ও নারী যিনায় লিপ্ত হলে এই দন্ডবিধান। কিন্তু বিবাহিত পুরুষ ও নারী যিনায় লিপ্ত হলে, আর তা চারজন প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী দ্বারা প্রমাণিত হলে তাদের শাস্তি হল, পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদন্ড প্রদান।

পর্দার বিধান

=======

হিজরী ষষ্ঠ সনের প্রথম ভাগ। সামাজিক আচরণ, ব্যভিচারের শাস্তি বিধান সংক্রান্ত বাণীর সঙ্গেই নাযিল হয় পর্দার বিধান।

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّوَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آَبَائِهِنَّ أَوْ آَبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

এবং মুমিন মহিলাদেরকে বলে দাও, তারা যেন নিজেদের চোখ বাঁচিয়ে রাখে, নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে, নিজেদের সাজসজ্জা না দেখায় কেবল সেটুকু ছাড়া যা আপনিতেই প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং নিজেদের বুকের উপর যেন ওড়নার একাংশ টেনে দেয়।

তারা যেন নিজেদের সাজসজ্জা না দেখায়, কেবল এই লোকদের সামনে ব্যতীত- তাদের, স্বামী, তাদের আব্বা, তাদের স্বামীর পিতা, তাদের পুত্র, তাদের স্বামীদের পুত্র, তাদের দাসী, অধীনস্থ পুরুষ যাদের অন্য কোন রকম গরজ নেই এবং সে সব বালক যারা স্ত্রীদের গোপন বিষয়াদি সম্পর্কে এখনো ওয়াকিফহাল হয়নি। তারা যমীনে এভাবে না মেরে চলবে না যাতে যেই সৌন্দর্য লুকিয়ে রেখেছে তা লোকেরা জানতে পারে। (সূরা আন নূর : ৩১)

এই বিধান মুতাবিক একজন নারীর জন্যে আপন চাচাতো ভাই, জ্যেঠাতো ভাই, মামাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, খালাতো ভাই, স্বামীর ভাই, স্বামীর চাচা-জ্যেঠা, স্বামীর ভাগিনা, স্বামীর ভাতিজা, নিজ ছেলে বা মেয়ের শ্বশুর, নিজ ছেলে বা মেয়ের শ্বশুর, স্বামীর মামা, স্বামীর ফুফা, স্বামীর খালু, বোনের স্বামী প্রমুখের সাথে পর্দা করা অবশ্য কর্তব্য হয়ে যায়।

মিথ্যা অপবাদের শাস্তি বিধান

================্

হিজরী ষষ্ঠ সনে মুনাফিকরা উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. সম্পর্কে অপবাদ রটনা করে। অবিরাম প্রচার চালিয়ে তারা মদীনার পরিবেশ বিষাক্ত করে তোলে। মুনাফিকদের চক্রান্তে মদীনার পবিত্র পরিবেশ বিষাক্ত হবার উপক্রম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্থির হয়ে উঠেন। এই সময়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেসব বাণী নাযিল করেন তার একাংশ হচ্ছে -

وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

যারা সচ্চরিত্র নারীদের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে অথচ অন্তত: চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে ব্যর্থ হয় তাদেরকে আশি কোড়া মার। অতপর এদের সাক্ষ্য আর কোনদিন গ্রহণ করো না। (সূরা আন নূর : ৪)

আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পরিবেশ আবার সুস্থ হয়ে উঠে। মুনাফিকদের চক্রান্ত ব্যর্থ হয়।

চুরির শাস্তি বিধান

============

হিজরী সপ্তম সনের প্রথম ভাগ। ইতিমধ্যে মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের বুনিয়াদী প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করে। প্রতিটি মানুষই খুঁজে পায় তার বেঁচে থাকার অধিকার। নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকার সুনিশ্চিত করার পর ইসলামী রাষ্ট্র অপরাধ প্রবণতা দমনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। চুরির প্রবণ প্রতিরোধের জন্য এই অপরাধের শাস্তি বিধান করে আল্লাহ বলেন,

وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

চোর পুরুষ হোক বা স্ত্রী হোক উভয়ের হাত কেটে দাও। এটা তাঁদের কর্মফল এবং আল্লাহর নিকট থেকে শিক্ষামূলক শাস্তিবিধান। আর আমার সর্বজয়ী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আল-মায়িদা : ৩৮)

রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাসনকালে একটি ঢালের দামের চেয়ে কম দামের জিনিস চুরি করলে হাত কাটা হতো না। সেই যুগে একটি ঢালের দাম ছিল দশ দিরহাম।

হারাম খাদ্য চিহ্নিত করণ

===============

হিজরী সপ্তম সন।

হারাম-হালালকে সুনির্দিষ্ট করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিভিন্ন বাণী নাযিল করেন-

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ

তোমাদের জন্যে গৃহপালিত জন্তগুলোকে হালাল করা হয়েছে সেই সব বাদে যা একটু পরেই জানিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু ইহরামের অবস্থায় শিকার কাজকে নিজেদের জন্য হালাল করে নিয়ো না। বস্তুত : আল্লাহ যা চান তারই আদেশ দান করেন।

তোমাদের জন্য হারাম মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত ও সেই সব জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা হয়েছে, যা গলায় ফাঁস পড়ে আঘাত খেয়ে, উপর হতে পড়ে অথবা সংঘর্ষে পড়ে মারা গেছে বা যাকে কোন হিংস্র জন্তু ছিন্নভিন্ন করেছে- অবশ্য যা জীবিত পেয়ে জবাই করা হয়েছে তা ব্যতীত এবং যা কোন আস্তানায় (অথ্যাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নযর-নিয়াজের জন্য নির্দিষ্ট করা স্থানে) জবাই করা হয়েছে। সেই সংগে পাশা খেলার মাধ্যমে নিজের ভাগ্য নেওয়াও তোমাদের জন্য জায়েয নয়। এই সব কাজ অপরাধ। (সূরা আল-মায়িদা : ৩)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, মদ, জুয়া, আস্তানা ও পাশা খেলা এই সবই নাপাক শয়তানী কাজ। তোমরা এইসব পরিহার কর, যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার। (সূরা আল মায়িদা : ৯০)

পরবর্তীকালে আরো যেসব জন্ত জানোয়ার খাওয়া নিষিদ্ধ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে নখরধারী পাখি, মৃত ভক্ষণকারী প্রাণী, যাবতীয় হিংস্র জন্তু-জানোয়ার, গাধা ও খচ্চর।

বিষয়: বিবিধ

১১২৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File