সৌদি প্রবাসীদের সমস্যার ব্যপারে আঃ সরকারই দায়ী

লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ০৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:২০:১৯ রাত

মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ক্রান্তিকাল চলছে গত বেশ কয়েক বছর থেকেই। আর বাংলাদেশিদের এই করুন পরিনতির জন্য বাংলাদেশ সরকার ই দায়ী এতে কোনো সন্দেহ নাই। বসতবাড়ি আর সহায় সম্বল বিক্রি করে অবৈধ হওয়ার জন্য কেউ বিদেশ আসেনা। রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারনা এবং কিছু অসাধু সৌদি নাগরিকদের কারনে অবৈধ হতে হয় মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দু পয়সা রুজি করতে দেশ ছেড়ে বিদেশ আসা প্রবাসীদের।

আজকে সৌদি প্রতিনিধি দলের সাথে সুর মিলিয়ে আমাদের শ্রমমন্ত্রীর বক্তব্য রীতিমত হতবাক করেছে প্রবাসীদের। মাননীয় মন্ত্রীর কাছে বিনীতভাবে প্রশ্ন, আপনারা গত চার বছরে সৌদি আরব প্রবাসীদের কি উপকার করতে পেরেছেন? বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি সরকারী টাকায় এখানে এসে সময় কাটানো ছাড়া আমাদের জন্য কিছুই করতে পারেননি। আর আজকে সৌদিদের সাথে সুর মিলিয়ে বললেন "সৌদি সরকার অবৈধদের রাখবেনা"। আপনার এই বক্তব্যের নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নাই।

যা হলে আপনাদের পকেট ভারী হয় সেটাই আপনারা করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশকে ধংস করে দিয়ে আপনাদের পকেট ভারি করার চিন্তা হিতে বিপরিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বিষয়টি ভেবে দেখবেন। মনে রাখবেন আপনারা সরকারের নয় জনগনের টাকায় বেতনভোক্ত কর্মচারী।

সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স বিভাগের তথ্যমতে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। বর্তমানে সৌদিতে যে অবস্থা চলছে তাতে এখান থেকে রেমিটেন্স যাওয়া বন্ধ হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। ভিসা বিক্রির কমিশন দিয়ে আপনাদের পকেট ভারী হবে কিন্তু সরকারের অ্যাঁয় বাড়বেনা।

দুতাবাসের তথ্যমতে গত ৪বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩০টির বেশি সফর হয়েছে। সফরের পর সরকারের বড় বড় মন্ত্রীদের মুখ থেকে অনেক আশার বানী শুনতে পেয়েছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত ৪বছরে সরকারের কাছে প্রবাসীদের একতাই দাবী ছিলো আর সেটা হলো বাংলাদেশিদের তানাজ্জুল(ভিসা ঠিক রেখে কফিল পরিবর্তন)চালু করা। হবে হচ্ছে বলতে বলতে পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ চারটি বছর।

২০১২সালের ২৯ আগষ্ট প্রকাশিত সৌদি সরকারের এক পরিসংখ্যা অনুযায়ী সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশী শ্রমিক ভারতের। সরকারী হিসাব মতে ভারতের শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ২০লাখ দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ এই পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের শ্রমিক সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে প্রায় ১৫লক্ষ।শ্রমিক সংখ্যায় বাংলাদেশের কাছা কাছি অবস্থা করছেপাকিস্থান এর পর ফিলিপাইন। সৌদি সরকারের এই সিব্ধান্ত কার্যকরের ফলে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে ধারনা করছেন অভিজ্ঞমহল।

ভোক্তভোগি একাধিক প্রবাসী টেলিফোন করে তাদের হতাশার কথা জানিয়ে বলেন, এই অবস্থায় ধরা খেয়ে দেশে চলে গেলে পথে বসা যারা উপায় থাকবেনা। এখানকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তা করে দেশে বিভিন্ন প্রকল্পে হাত দিয়েছেন হুট করে চলে যেতে হলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পরতে হবে বলেও জানান অনেকে।

সরকার যদি আন্তরিক ভাবে চেষ্ঠা করে বাংলাদেশিদের তানাজ্জুলের ব্যবস্থা করতে পারতো তাহলে আজকে সৌদি প্রবাসী ৭৫/৮০শতাংশ শ্রমিক বৈধভাবে এখানে থাকার সুযোগ পেতো। নিতাকাত বা সৌদি করন কার্যক্রম শুরু পর থেকে বাংলাদেশ ছাড়া সকল দেশের তানাজ্জুল চালু ছিলো। অন্যান্য দেশের লোকেরা সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লাল ক্যাটাগরি থেকে সবুজ কেটাগরিতে চলে যেতে পেরেছে। অপর দিকে বাংলাদেশিদের তানাজ্জুল বন্ধ থাকায় তারা শুধু চেয়ে চেয়ে অবৈধ হওয়ার প্রহর গুনেছে।

বাংলাদেশিদের তানাজ্জুল বন্ধ থাকায় অনেক সৌদি নাগরিক তার সরকারি চাকুরি বাচানর জন্য তার আমেল(শ্রমিক)কে অন্যত্র স্থানান্তর করতে না পেরে খুরুজ(ফাইনাল এক্সিট) এবং হুরুপ( নিষেধাজ্ঞা) লাগাতে বাধ্য হয়েছেন। এর জন্যেও আমাদের দুতাবাস এবং সরকার দায়ী।

১৫/২০বছরের পুরোনো শ্রমিকদের কথা বাদই দিলাম। যারা এখানে গত ৪/৫বছর যাবত কাজ করে নিজেদের একটা অবস্থান তৈরী করে নিয়েছে এবং যে পরিমান টাকা রোজগার করছে একজন নতুন শ্রমিক দেশ থেকে এসে কি সেই টাকা রোজগার করতে পারবে? কখনোই নয়। একজন নতুন শ্রমিক এখানে এসে ভাষা শিখে কাজ বুঝতে বুঝতে ২/৩বছর কেটে যাবে ততক্ষনে তার আবার দেশে ফেরত যাওয়া সময় ঘনিয়ে আসবে। এতে করে হুমকির মুখে পরবে রেমিটেন্স প্রবাহ।

আজকে খুশি হতাম যদি মাননীয় মন্ত্রীর কাছ থেকে শুনতাম যে তারা সৌদি সরকারের জি টু জি লোক নেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে পুরোনো এবং অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার দাবী জানিয়েছেন। অবৈধ শ্রমিক বৈধ না করলেও যদি তানাজ্জুলের ব্যবস্থা টুকুও অন্তত করতে পারতো তাহলেও লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক নিরাপদ আশ্র্য খুজে নিতে পারতো।

ইন্ডিয়ান কোনো লোক যেকোনো অভিযোগ নিয়ে দুতাবাসে গেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হয় এমনকি নিজেদের অপরাধ থাকলেও সেটা চেপে রেখে ব্যবস্থা নেয়া হয় অথচ কোনো বাংলাদেশি যৌক্তিক অভিযোগ নিয়ে দুতাবাসে গেলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। দুতাবাস দালালাওদের আখড়া উল্লেখ করে ঐ প্রবাসী বলেন, দালাল ছাড়া দুতাবাস থেকে কোনো উপকার পাওয়া যায়না। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দুতাবাসের সামনে শত শত দালালদের দেখা যায়। অন্য কোনো দেশের দুতাবাসের সামনে বিনা কারনে একজন লোক দাড়াতে দেখা যায়না।

কর্মদিবসে প্রভাবশালী(দলীয়,দালাল) শ্রেনীর লোকদের পদচারনায় মুখর থাকে দুতাবাস প্রাঙ্গন এবং তাদের সাথে খোশ গল্পে মেতে উঠেন কর্মকর্তারা। দুতাবাস কর্মকর্তাদের সামনেই তাদের নিরুব্ধে এই প্রতিবেদকের কাছে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন অসহায় প্রবাসীরা।

এই অবস্থায় বাংলাদেশিদের কফিল পরিবর্তিনের ব্যবস্থা না করতে পারলে আগামী ২/৩মাসের মধ্যে প্রায় ৮/১০লক্ষ বাংলাদেশিকে একেবারে শুন্য হাতে দেশে ফিরে যেতে হবে। আর এই ফিরে যাওয়া শ্রমিকদের বেকারত্বের বুঝা চাপবে সরকারের মাথায়।

প্রবাসীরা বলছেন যেকোনো শর্তে সৌদি আরবের সাথে আলোচনা করে প্রবাসীদের এই সমস্যা সমাধান করা জরুরী। নতুন ভিসা চালু করার চাইতে পুরাতন অভিজ্ঞ প্রবাসীদের এদেশে থাকার ব্যবস্থা করা বেশি প্রয়োজন মনে করছেন সাধারন প্রবাসীরা।

লেখকঃ সৌদি আরব প্রবাসী

বিষয়: বিবিধ

১৩৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File