রাজাকার কাদের সিদ্দিকী ও অরাজনৈতিক (?) শাহবাগ আন্দোলন: আমাদের ইতিহাসগত বোকা বনে যাওয়ার সরল প্রবনতা!
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজ আল হেলাল ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১০:৪০:২৯ রাত
শাহবাগে "বিদ্বেষ-হানাহানিতে তরুন প্রজন্মের বাধ্যবাধকতা" শীর্ষক প্রশিক্ষন
অষ্টম দিনে গড়িয়েছে শাহবাগ আন্দোলন। পাওয়া না পাওয়ার হিসাব নিকাশ এখনও শুরু হয় নি। আন্দোলনের দিকে সাধারন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করার প্রচেষ্টা আয়োজকদের একটুও কমে নি। কিছুটা সফল হয়েছে, সেটা কোনভাবেই বলা যায় না। স্কুল কলেজের কোমলমতি ছেলেমেয়েদের ধরে এনে সংখ্যাটা বাড়ানো গেছে বটে, তাতে আন্দোলনে গতি বাড়েনি বিন্দুমাত্র। আন্দোলনকারীদের দাবী দাওয়াগুলোও বেশ রহস্যময়। তরুন প্রজন্মকে শাহবাগে ডাকা হয়েছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবীতে। সপ্তাহান্তে সে দাবী পরিনত হয়েছে ফ্যাসিবাদের ভয়ংকর হাক ডাকে। এই রাজনীতি, ঐ দল; অমুক প্রতিষ্ঠান, তমুক পত্রিকা বন্ধের দাবী করে শাহবাগের ফ্যাসিস্টদের লক্ষ্য তরুন প্রজন্মকে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানিতে চরম প্রেষনা যোগানো। আর এজন্যই শাহবাগে সাম্রাজ্যবাদীদের আন্দোলনের নামে "ফ্যাসিবাদ" নাটকের মহাআয়োজন।
বোকা বনে যাওয়ার প্রবনতা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিয্যগত
ইতিহাস ও ঐতিয্যগতভাবে বাংলার মানুষ বেশ আবেগপ্রবন। চলচ্চিত্রে দেখা গ্লিসারিনের চোখের পানিও আমাদের অনেক কাদায়। "হুজুগে বাঙ্গালী" কথাটাও বেশ প্রচলিত আমাদের সমাজে। এদেশের আপামর জনসাধারনের সরলতা যেমনিভাবে সকলকে আকৃষ্ট করেছে, আবার সেই সরলতার সুযোগ নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদেরকেই বোকা বানিয়েছে বারংবার। মনে নেই নবাব সিরাজউদ্দৌলার কথা? তার সরলতাকে পুজি করে সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলার স্বাধীনতার সূর্য স্তিমিত করেছিল দুইশ বছরের জন্য। এমন হাজারো ইতিহাস প্রশ্নের সৃষ্টি করে, শাহবাগে আমরা বোকা বনে যাচ্ছি না তো? না বোকা বনেই গিয়েছি? শাহবাগের প্রথমদিনের চিত্র আর অষ্টম দিনের চিত্র দেখার পরও কি আমাদের নতুন করে কিছু বুঝতে হবে? অরাজনৈতিক আন্দোলনের ঢেউ তুলে শাহবাগ চত্বরে সাম্রাজ্যবাদীদের এদেশীয় রাজাকার আওয়ামী লীগ ও বাম দলগুলোর হিংস্র অভিব্যক্তি নিশ্চিতভাবেই আমাদেরকে ধোকায় ফেলেছে। শাহবাগে প্রজ্জলিত ফ্যাসিবাদের ভয়ংকর দাবানল সাধারন জনগনের ছোট্ট একটি অংশকে হলেও অগ্নিদগ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে।
জনতার সাথে "অরাজনৈতিক সংগঠন" আওয়ামী লীগ ও বাম দলগুলোর চতুরতা
'ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম' নামক একটি সংগঠনের ব্যনারে শুরু হয়েছিল শাহবাগ নাটকের প্রাথমিক পর্ব। নেপথ্যে ছিল ছাত্রলীগ ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর কতিপয় নেতা-নেত্রী। তখনও শুরু হয় নি নাটকের অভিনয় পর্ব। মঞ্চের চারপাশে কিছু অচেনা, আরও কিছু চেনা মুখ। অচেনা অরাজনৈতিক (?) লাকি নামক মেয়েটির স্লোগানে উপস্থিত তরুন সমাজ দারূন উচ্ছসিত। আরেক অপরিচিত অরাজনৈতিক (?) ব্লগার' ইমরানের চরমপত্র পাঠ। শাহবাগ আন্দোলন সর্বসাধারনের আন্দোলন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেল প্রথম পর্বে। নাটকের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতে আরও কিছুটা অপেক্ষা। একে একে বাম ও আওয়ামী নেতৃবৃন্দের মঞ্চে পদার্পন। অতঃপর শকুনবেশে অরাজনৈতিক (?) ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মঞ্চ দখল। হাসপাতালের বেডে একটি অচেতন দেহের আবিষ্কার; উনি আগ্নিকন্যা লাকি আপু, অরাজনৈতিক (!) ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিউনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেত্রী। জনতার সামনে মুখোশ খুলেছে ইমরানসহ অন্যান্যদেরও। আর নাটকের চলতি পর্বে অরাজনৈতিক (?) সংগঠন আওয়ামী লীগ ও বাম দলগুলোর শঠতা আর চতুরতার কাছে পরাজিত হয়েছে তরুন সমাজের একটি অংশ।
কাদের সিদ্দিকী রাজাকার, এই মুহুর্তে বাংলা ছাড়!!
শুরু থেকে প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবিদের অনেকেই বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে শাহবাগ নাটকের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। দু একজন ছাড়া প্রগতিহীন বুদ্ধিজীবিরা নীরব নিশ্চুপ। হয়ত উনারা কাদের সিদ্দিকী কিংবা পিয়াস করিমের মত রাজাকার হতে চান নি। রাজাকার উপাধীটা দু তিন বছর আগেই পেয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। তবুও দমে যান নি। কথা বলেছেন শাহবাগ আন্দোলনের একপেশে দাবী দাওয়া নিয়েও। দাবী করেছেন সরকার দলীয় রাজাকারদের ন্যায্য বিচার। তাতে তার রাজাকার উপাধীটা বেশ পাকাপোক্ত হয়েছে। আর হবেই না কেন? পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে "কাদেরিয়া বাহিনী" গঠন করে তো তিনি অপরাধই করেছেন! ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করায় ডান বাম সকলে যখন আনন্দ মিছিল আর মিষ্টি বিতরনে ব্যস্ত, তখন তিনি প্রতিবাদ করেছেন। আ'লীগের চোখে এটাও আজ মস্তবড় অপরাধ? ওরা নেমক হারাম, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ওদের সবকিছু লোক দেখানো। বিশ্বাস করুন ওরা ফ্যাসিবাদী, ওরাই শাহবাগ নাটকের মূল অভিনেতা।
দেশব্যাপী 'ফ্যাসিবাদ' নাটকের চুড়ান্ত মহড়া
শাহবাগে "ফ্যাসিবাদ" নাটকের সূচনা হয়েছে তরুন প্রজন্মকে একত্রিত করে, তাদের মাঝে হিংসার আগুন প্রজ্জলিত করে জাতিকে স্থায়ীভাবে বিভক্ত করার একটি সুক্ষ ষড়যন্ত্রের নিমিত্তে। কয়েক পর্ব নিয়ে নাটকের প্রথম দৃশ্যের যবনিকাপাত। অষ্টম দিনে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দৃশ্যের প্রথম পর্ব। তাতে অসাবধানতা বশতঃ "ফ্যাসিবাদ" নাটকের একজন পরিচালক (প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান) আহত হয়েছেন। প্রতিপক্ষের ক'জন মরেছে আর ক'জন হাসপাতালে কাতরাচ্ছে, সে কথা বলাই বাহুল্য। সত্যি করে বলছি সেখবর আমরা রাখছি না। তবে ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পত্রিকা অফিস ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যের পরবর্তী পর্বগুলো যে আরও ভয়ঙ্কর হবে তা ঠাহর করতে মোটেও কষ্ট হচ্ছে না। বুঝতে বাকি নেই, একদিকে পুলিশ প্রহরায় কথিত আন্দোলন; অন্যদিকে অসহায়-নিরস্ত্র মানুষের উপর পশুর মত গুলিবর্ষন, বিভীষিকাময় অবস্থা সৃষ্টি; "ফ্যাসিবাদ" নাটকেরই চূড়ান্ত মহড়া।
অতঃপর বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর সহজতর ফর্মুলা
শাহবাগ ধারাবাহিকে অরাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ এবং বাম দলগুলো সুশীলদের সহযোগীতায় পেয়েছে সাময়িক পরিচালনার দ্বায়িত্ব। সাধারন মানুষের চিন্তার বাইরে রয়েছে প্রধান পরিচালক ও পৃষ্ঠপোষকদের পরিচয়-পরিচিতি। তাদের পরিচয় তারা দক্ষিন এশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি এবং তাদের এদেশীয় রাজাকার। তাদের উদ্দেশ্য তরুন সমাজকে বিভ্রান্ত করা, অতঃপর হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে অস্ত্র সরবরাহ। তারপর একজনকে অন্যের বিরুদ্ধে হানাহানিতে উৎসাহিত করে সোনার বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি মৌলবাদী ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে অভ্যন্তরীন সম্পদ লুন্ঠন। আর এখানে গিয়েই থামতে পারে শাহবাগ নাটকের সমাপনী দৃশ্য। তাতে বাংলাদেশকে পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান বানানোর যৌক্তিকতাও বেড়ে যাবে কয়েকগুন। ভুল বুঝলে চলবে না, শাহবাগ আন্দোলন "ফ্যাসিবাদ" নাটকের প্রথম ভাগ। এর শেষ কোথায়? সময় বলে দেবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন