চট্টগ্রাম: সাগরতীরে আলোর শহর ----গোলাম মাওলা মুরাদ
লিখেছেন লিখেছেন মুরাদ ২৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৩:৩৬:২৮ দুপুর
চট্টগ্রাম: সাগরতীরে আলোর শহর
----গোলাম মাওলা মুরাদ
সাগর পাহাড় আর নদীর তীরে অপরুপ সুন্দর এক নগরী চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম কেমন একবাক্যে যদি বলতে গেলে এভাবে হয়তো বলা যাবে। এখানে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে তার প্রিয়তমাকে।
প্রাচীন বনিকদের মতো বর্তমানেও বিশ্বের ব্যবসা-বানিজ্যের এক প্রিয় স্থান চট্টগ্রাম। প্রকৃতির অপরুপ রুপের মাঝেই প্রাচীনকাল থেকে সৃষ্ট চট্টগ্রাম বন্দর এ অঞ্চলের গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন।
প্রাগৈতিহাসিক কালে জীন-পরীদের রাজ্য হিসেবে চিহ্ণিত এই জনপদে আলো জ্বালিয়েছিলেন এক আলোর দিশারী। তারপর সে আলো ছড়িয়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে। স্থলে, জলে, সাগরে মহাসাগরে। চেরাগী পাহাড়, পরীর পাহাড় কিংবা জিলাপীর পাহাড়ের স্মৃতি চিহ্ণ আজো টিকে আছে সগৌরবে। এ রকম কতো ইতিহাস আলোর এই শহরকে ঘিরে। ইতিহাসের পাতায় পাতায় চট্টগ্রামকে খুজে পাওয়া যায়, নানান রুপ, রং আর বর্ন বৈচিত্রে। এখানে জন্ম নিয়েছেন অনেক নজন্মা প্রতিভা, যাদের আলোয় আলোকিত শুধু দেশ নয়, সে আলো ছড়িয়েছে বিশ্বময়।
পর্তুগিজ, ফরাসী কিংবা আরব বনিকদের মতো পৃথিবীর অনেক দেশের বনিকদেরই পছন্দের জায়গা ছিল এই চট্টগ্রাম। বিদেশী বনিকদের আগমনের সেই সাী আজো আছে এখানকার ফিরিঙ্গিবাজার কিংবা আনোয়ারার খোট্টাপাড়ায়।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সুর্যসারথি মাষ্টারদা সুর্যসেন, প্রীতিলতার মতো ইতিহাসের অংশ হয়ে আছেন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুবকদের সংগঠিত করতে যে বলী খেলার প্রচলন করেছিলেন আবদুল জব্বার সওদাগর, কালের পরিক্রমায় সেই জব্বারের বলি খেলা আর বৈশাখী মেলা আজো টিকে আছে শতবর্ষ পরেও।
ভাষা আন্দোলনের পাশাপাশি এদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষনাও এসেছে এই চট্টগ্রাম থেকে। যে ঘোষনা ইথারে ছড়িয়েছে স্বাধীনতার স্বপ্ন জয়ের নতুন আলোর মশাল।
যখন বিশ্বের বনিকরা সাগরে কিভাবে যাতায়াত করবেন কিংবা সাগরে কিভাবে নিরাপদে চলাচল করবেন ভাবছিলেন তখন এই চট্টগ্রামের দ কারিগরেরাই তৈরি করেন কাঠের নৌকা আর যুদ্ধ জাহাজ। সমুদ্র যাত্রায় ব্যবহৃত সেই জাহাজ আজোও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাদুঘরে স্থান আলো করে আছে। রক্তে মিশে থাকা সেই জাহাজ নির্মান শিল্পে নতুন সম্ভাবনার পাশাপাশি শিপ ব্রেকিং শিল্পেও এখন চট্টগ্রাম অতুলনীয়। আছে সাগর বিদ্যা নিয়ে অধ্যয়নের প্রিয় স্থান মেরিন একাডেমিও।
চট্টগ্রামের পাশেই সাগরতীরে কক্সবাজারে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা বিশ্বের বৃহৎ বালুকাময় সৈকত সাগরপ্রেমীদের নিরাপদ পছন্দের স্থান। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য্য যে কাউকে মুগ্ধ করবেই। আছে পাহাড়ের বুনো আকর্ষনের রাঙ্গামাটি, বান্দরবান আর খাগড়াছড়ির বর্নিল বৈচিত্র।
কর্ণফুলীর ঢেউয়ের তালে আজো খুজে পাওয়া যায় জীবনের নতুন ছন্দ, যা দুলে উঠে সাম্পানের মনকাড়া শব্দে। দিনে কিংবা রাতে হালদা বা কর্নফুলী নদী আর নদীপাড়ের সৌন্দয্যে মুগ্ধ হবেন না এমন মানুষ মিলবে না।
এছাড়া মানুষকে প্রবলভাবে কাছে টানে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, পারকী বিচ, সীতাকুন্ডের ইকোপার্ক, কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নিহত নাবিকদের সমাধিস্থল ওয়ার সিমেট্টি।
যোগাযোগ ব্যবস্থার সামগ্রিক দিক বিবেচনায় চট্টগ্রামকে বেছে নেয়া হয়েছিল আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের হেড কোয়ার্টার হিসেবে, সেই সিআরবি আজো কালের সাী হয়ে টিকে আছে। আছে সেই পুরোনো রেলস্টেশন, রেলওয়ে জাদুঘর।
সাগরতীরের জনপদ হওয়ায় হরেক রকমের মাছের পাশাপাশি শুটকি এখানকার মানুষের সংগ্রহে থাকতো সব সময়। যা আজো মানুষের খাদ্যতালিকায় পছন্দের তালিকায় স্থান করে আছে।
চট্টগ্রামকে আবাদ করতে আসা অনেক সুফী সাধকদের মাজার এখানকার এক বড়ো আকর্ষন। বদর শাহ, আমানত শাহ, বারো আউলিয়া, বায়েজিদ বোস্তামীর মতো সাধকদের মমতায় ধন্য এ নগরী। তাদের মাজার যেমন আছে তেমনি আছে মুসলমানদের অনেক ঐতিহাসিক মসজিদ, খ্রীষ্টানদের চার্চ, হিন্দু এবং বৌদ্ধ মন্দির, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় উপসনালয়। এ যেন সব ধর্মের, বর্নের এবং আদিবাসী মানুষের এক মহামিলন মেলা।
চট্টগ্রামকে ঘিরে যে আলোর মশাল ছড়িয়েছিলেন এখানকার পুর্বপুরুষরা, সেই আলোয় আজো আলোকিত এই বিশ্ব। পাহাড়, নদী আর সাগর তীরের এই আলোর শহর বেচে থাকবে যুগ যুগ ধরে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য, মানুষের জীবন বৈচিত্র আর কর্মের মাঝে। তৈরি করবে নতুন নতুন ইতিহাস।
---- গোলাম মাওলা মুরাদ, চট্টগ্রাম।
০১৯১২১৩৪৯৬৩
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন