শাহবাগ মঞ্চের স্লোগানে আগুন জ্বললো নয়া দিগন্তে
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজুর রহমান ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৩০:০৭ সকাল
গত কয়েকদিন ধরেই পর্যবেক্ষক মহল বলে আসছিলেন শাহবাগ মঞ্চে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির আড়ালে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। অবশেষে তাদের আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হলে ওই মঞ্চ থেকে বিভিন্ন মিডিয়ার বিরুদ্ধে হুমকি প্রদান করা হচ্ছিল। সেই হুমকির জের ধরে গত মঙ্গলবার দুপুরে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার কার্যালয়ে। আগুনে পুড়ে গেল নয়া দিগন্তের গাড়ি ও কাগজের রোল। দুর্বৃত্তরা শুধু নয়া দিগন্তের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বিকেলে জুড়াইনের ছাপাখানায়ও তারা জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে আগুন লাগায়। ফ্যাসিবাদীরা সব সময় ভয় দেখিয়ে, হামলা চালিয়ে ভিন্নমতের দলন ও অবদমনের চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু ইতিহাসের সত্য হলো গণবিরোধী চেতনার কারণে ফ্যাসিবাদীরা সব সময় ‘গণশত্রু' হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে এবং তাদের পরাজয়ও অবশ্যম্ভাবী।
নয়া দিগন্তে হামলা ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় ইতোমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, নয়া দিগন্তে হামলা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ। এই হামলা দেশে গণতন্ত্র ও বহুদলীয় মত প্রকাশের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করবে। তারা এ ব্যাপারে সরকারের নির্লিপ্ততায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এদিকে গণমাধ্যমের ওপর হামলা রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি নেতৃবৃন্দ গত মঙ্গলবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে যে আন্দোলন চলছে, তার সূত্র ধরে ১২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সংঘটিত কিছু অনভিপ্রেত ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণের যে আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তার বিকাশ এবং গণতন্ত্রের প্রতি আঘাতস্বরূপ।
লক্ষণীয় বিষয় হলো শাহবাগে ব্লগাররা শুরুতে তাদের আন্দোলনকে যেভাবে রাজনীতি নিরপেক্ষ বলে অভিহিত করেছিলেন, এখন আর তা সেইরূপে বর্তমান নেই। যুদ্ধাপরাধের ফাঁসির দাবির সাথে এখন আরো অনেক দাবি যুক্ত হয়ে গেছে পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন, ব্যাংক-বীমা, কোচিং সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হুমকি ও হামলার উস্কানি দেয়া হচ্ছে এই মঞ্চ থেকে। যার পরিণতিতে মঙ্গলবার জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে নয়া দিগন্ত পত্রিকায়। আরো লক্ষণীয় বিষয় হলো, শাহবাগ মঞ্চ থেকে বলা হচ্ছে, ভোটার তালিকায় কাদের নাম থাকবে আর কাদের নাম কাটা যাবে। এর চাইতে উগ্র ফ্যাসিস্ট আচরণ আর কি হতে পারে? এরপরও কি মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে, শাহবাগ মঞ্চের আন্দোলন খুবই পবিত্র এবং রাজনীতি নিরপেক্ষ? শুধু রাজনীতি নয়, শাহবাগ মঞ্চের সাথে জড়িয়ে গেছে আগামী নির্বাচনের বিষয়টিও। নইলে তারা ভোটার তালিকা নিয়ে কথা বলতে যাবেন কেন? গত কয়েকদিন ধরে শাহবাগ মঞ্চে যা কিছু হচ্ছে তা সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই হচ্ছে। তাই পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, যুদ্ধাপরাধ বিচারের ইস্যুটিকে উগ্রতা ও ব্যাপকতা দিয়ে সরকার হয়তো চাইছে তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের গণদাবিকে ধামাচাপা দিতে। নির্বাচনের বছরে সরকার এমন কৌশল গ্রহণ করতেই পারে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধ বিচারের যে ইস্যু নিয়ে মাঠ গরম করা হচ্ছে সে ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত আছে কি? যে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, তারাও বলছেন : ‘‘যুদ্ধাপরাধ বিচারের নয়, আমরা সাজানো বিচারের বিরোধী।’’ ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা নয়, আমরা নিরপরাধ মানুষদের যুদ্ধাপরাধী সাজানোর বিরোধী।’’ এই যখন বাস্তব অবস্থা, তখন যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে এত উত্তেজনা ও নাটকের কোন প্রয়োজন আছে কি? সরকার যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য আদালত গঠন করেছে। আদালতের পক্ষ থেকে রায় প্রদানও শুরু হয়ে গেছে। এখন ‘ফাঁসির রায়' হলে মানবো, ‘যাবজ্জীবন' হলে মানবো না- এই যদি হয় স্লোগান এবং সেই স্লোগানকে কেন্দ্র করে সরকারের প্রশ্রয়ে নানা কৌশলে চলে পেশীশক্তির প্রদর্শন, তাহলে আইন-আদালতের আর কোন প্রয়োজন আছে কি? বন্দীদের ধরে এনে শাহবাগের ‘ফাঁসির মঞ্চে' ফাঁসি দিলেইতো হয়ে যায়। এতে অন্তত আশেপাশের হাসপাতালের রোগীসহ জনগণের দুর্ভোগ কমতে পারতো। লক্ষণীয় বিষয় হলো, যেসব মিডিয়া গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিয়ে সত্য প্রকাশে এবং ফ্যাসিবাদী কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরতে সচেষ্ট তাদের ওপর এখন চালানো হচ্ছে হামলা। মঙ্গলবার দৈনিক নয়া দিগন্তের ওপর হামলা তার বড় উদাহরণ। শাহবাগ মঞ্চ এখন ফ্যাসিবাদের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। আমাদের নিাপ ছাত্র-ছাত্রী ও নতুন প্রজন্মের বহু ব্লগার হয়তো বিষয়টি এখনো উপলব্ধি করতে পারেননি, কিন্তু যখন উপলব্ধি করতে সমর্থ হবেন ততদিনে অনেক ক্ষতিই হয়ে যাবে জাতির। তখনকার আফসোসে ক্ষতির কোন হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে না। তাই এই মুহূর্তে প্রয়োজন প্রকৃত সত্যের প্রকাশ এবং উপলব্ধি।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন