আমি দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রাজাকার
লিখেছেন লিখেছেন বিডি রকার ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৬:১৭:১৮ সন্ধ্যা
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে শাহবাগে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে গণআন্দোলন। ক্রমেই সারাদেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলার চোখ(!) ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও বাংলার কথা(!) প্রিন্ট মিডিয়া গুলো একে আখ্যা দিচ্ছে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে!! স্বাভাবিকভাবে একে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ বলাটা কিছুটা হাস্যকরই বটে। তবে আমি যুক্তি দিয়ে এর অনেক মিলই খুঁজে পেয়েছি। নিচে মিলগুলো দিলামঃ
১) ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা ঘোষণার আগ পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান একই দেশ ছিল। তবে ১৯৪৭ সালে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা অনুসারে পাকিস্তান রাষ্ট্র হওয়ার পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানই শাসনকার্য চালাতো। কিন্তু শাসকদের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় পাওয়া যায় পদে পদে। জনবহুল পূর্ব পাকিস্তানকে তারা সবসময়ই শাসনের স্থলে শোষণ করে আসছিল। তবে তৎকালীন দংবাদমাধ্যমে এই শোষণ যত না হতো তার চেয়েও বেশি হতো প্রচার। ক্রমেই পরিস্থিতি এমন খারাপ পর্যায়ে চলে যায় যে, দুই প্রদেশের ভাঙন যে আসন্ন ছিল তা বোঝাই যাচ্ছিল। কিন্তু এই আলাদা হওয়াটা যেন রাজনৈতিক উপায়ে ও শান্তিপূর্ণভাবে হয় এটাই ছিল সব জ্ঞানী, ইসলামপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক মানুষের আশা। তবে ভারতের ইন্ধন, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের গাফিলতি ও পূর্বপাকিস্তানি শাসকদের ধৈর্যহীনতার ফলাফলই হল মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধকে এখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বলা হলেও তৎকালীন সময়ে গৃহযুদ্ধই বলা হতো।
এখন বর্তমানে শাহবাগ থেকে যে কথিত ২য় মুক্তিযুদ্ধ চলছে তাও মূলত একটা গৃহযুদ্ধ। কেননা যে জামায়াত শিবিরকে এখানে প্রতিহত করার ঘোষণা এখানে দেওয়া হচ্ছে, সে জামায়াত-শিবিরের লোকজন এদেশেরই নাগরিক, তারা কেউ পাকিস্তানে জন্ম নেয়নি। দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, হসপিটাল, স্কুল, কলেজ, কোচিং, পত্রিকা, টেলিভিশন নানারকম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই তারাও দেশেরই অংশ। তাদেরকে প্রতিহত বা নির্মূল করা আর উভয়পক্ষের সংঘর্ষ একই সূতোয় বাঁধা। তাই এখন যে আন্দোলন চলছে তাকেও ১৯৭১ সালের মতোই একপ্রকার গৃহযুদ্ধ বা গৃহযুদ্ধের আগাম অবস্থাই বলা যেতে পারে।
২) ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় চিরশত্রু পাকিস্তান যেন ভেঙে যায় সেজন্য ভারত পূর্বপাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল। সেখানে ভারতের সাহায্য ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বাঙালীদের বিজয়ী হওয়া অসম্ভব ছিল। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক প্রকার পুতুলযুদ্ধ যেখানে পিছন থেকে রশি টেনে রেখেছিল স্বার্থান্বেষী ভারত।
অপরদিকে ২০১৩ সালের শাহবাগের এই আন্দোলনেরও সাহায্যকারী ও ক্ষেত্রবিশেষে জন্মদাতা হল ঐ ভারত। কেননা এই গণজাগরণে আওয়ামী সরকার আপ্রাণ সাহায্য করছে (ভারতের সহযোগিতা ও বুদ্ধিতে) যেন তাদের স্বার্থহাসিল হয় অর্থাৎ জামায়াতকে যেন তারা ধ্বংস করতে পারে।
৩) ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বেশিরভাগই যারা অংশগ্রহণ করেছিল তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম যে জিনিসটির অভাব ছিল তা হল ইসলামী জ্ঞানের অভাব এবং পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতার অভাব। এছাড়াও তারা অনেকেই ছিল তরুণ এবং অনেকেই আবেগের স্রোতেই এতে অংশগ্রহণ করেছিল। জ্ঞানসম্পন্ন মুসলিমরা খুব কমই এতে অংশগ্রহণ করেছিল। তবুও যারা অংশগ্রহন করেছিল তাদের অনেকে অংশগ্রহণ করেছেন যুদ্ধের শেষের দিকে। যখন প্রাণ বাঁচানোর তাগিদেই যুদ্ধ করতে হয়েছে।
অপরদিকে শাহবাগেও বেশিরভাগই অংশগ্রহণকারী হল তরুণ যারা আবেগ ও হুজুগের স্রোতে এখানে আসছে। এছাড়াও বিকৃত ইতিহাসের শিকার অনেকেও এখানে এসেছে।
৪) ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামক ছিল পূর্বপাকিস্তানের তৎকালীন গণমাধ্যমগুলো যেগুলো ছিল নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষীদের দখলে যাদের নিয়ন্ত্রণ করতো ভারত। ১৯৭১ সালের অনেক আগে থেকেই তারা নানানভাবে মানুষকে ইন্ধন দিতো পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে।
বর্তমানে শাহবাগসহ সারাদেশে যে আন্দোলন চলছে তাও কিন্তু ইসলামী জ্ঞানহীন ও ভারতের পুতুল গণমাধ্যমেরই আপ্রাণ প্রচেষ্টার ফসল। শুরুতেই বলেছিলাম স্বাভাবিকভাবে শাহবাগসহ সারাদেশে যে আন্দোলন (আসলেই কি আন্দোলন? আন্দোলনের সংজ্ঞার সাথে কি কোন মিল আছে??!!) শুরু হয়েছে তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ বলা হাস্যকরই বটে, শুধু হাস্যকরই না, মারাত্মক জোকসও বটে।
যা হোক এত কিছুর পরেও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বেশ কিছু যৌক্তিক কারণও ছিল যেখানে আজকের এই আন্দোলন সম্পূর্ণ অর্থহীন ও সাজানো। তাই সব বিবেকসম্পন্ন মুসলিমের মত আমিও একে মুক্তিযুদ্ধ বা ‘মুক্তির জন্য যুদ্ধ’ বলে মানতে নারাজ। কী জন্য নারাজ বা মুক্তিযুদ্ধের সাথে এর অমিলগুলো কী কী তা বলে শেষ করা যাবে না। তাছাড়া এই নিয়ে পাঠকের অনেক জ্ঞানও আছে বলে আমি আশা করি। তাই তা আপাতত লিখছি না।
সর্বোপরি আমি এটাই আশা করি, যদি আমরা সত্যিকার অর্থেই দেশপ্রেমিক হয়ে থাকি, তবে আমরা জামায়াত-শিবির নির্মূলের নামে দেশকে সংঘাত তথা গৃহযুদ্ধের দিকে না ঠেলে বরং এক হয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
পরিশেষে বলতে পারি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা যারা করেছিল, তারা ভাল মানুষ হলেও এখন তাদেরকে রাজাকার বলা হচ্ছে (অথচ সত্যিকারের মানবতাবিরোধী রাজাকারেরা মন্ত্রীপর্যায়ে বিদ্যমান)। আর আমিও যেহেতু কথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের কঠোর বিরোধিতা করছি তাহলে আমাকে “২য় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রাজাকার” বলতে দোষ কি.........
বিষয়: বিবিধ
১২৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন