এই লজ্জ্বা ক্যামনে ঢাকি............
লিখেছেন লিখেছেন বিডি রকার ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৫৩:২৫ সকাল
এই লজ্জ্বা ক্যামনে ঢাকি............
২০১৩ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি। মানবতাবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার রায় দেয়া হলো। এই রায়ের ব্যপারে জনগণের কোনো নির্দিষ্ট দাবী কিংবা আকাঙ্ক্ষা ৫ ফেব্রুয়ারির আগে কিছু বোঝা যায় নি। কিন্তু সেদিন কাদের মোল্লার রায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ঘোষণা করার পর অনেকের মনেই অসন্তোষ দেখা দিল। সেদিনই দুপুরের দিকে অনলাইন ব্লগারদের একটি সংগঠনের উদ্যোগে রাজধানীর শাহবাগে জড়ো হলো কিছু ব্লগাররা। সরকারের যথাযথ সহযোগিতা, মিডিয়ার অবাধ দৌড়ঝাঁপ, জ্বালাময়ী শ্লোগান ও বক্তৃতার মাঝেই ধীরে ধীরে এ আন্দোলনের আরও প্রসার ঘটলো। বিভিন্ন কারণে সরাসরি যাওয়া হয়ে উঠে নি শাহবাগে। কিন্তু মিডিয়ার কল্যাণে সে আন্দোলনের সব কিছুই জানা যাচ্ছিল। এরই মাঝে একদিন আমার এক বন্ধু উৎফুল্ল হয়ে আমার কাছে হাজির। আমি বললাম, “কীরে দোস্ত, ব্যপারটা কী? এত খুশী!!” আমার বন্ধুর জবাব, “দোস্ত আর বলিস না, শাহবাগে গিয়েছিলাম। এরকম একটা গণআন্দোলনে যেয়ে আমার অন্যরকম অনুভূতি।” আমি বললাম, “বেশ, তাহলে তো ভালোই। তা তুই শাহবাগে যেয়ে করলি কী?” সে বললো, “কী বলিস দোস্ত; ঐসব ধর্মব্যবসায়ী রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে এক দুইটা শ্লোগান দিলেও মনে শান্তি লাগে। আর তাছাড়া সারাদিনই একটা উৎসব উৎসব ভাব আছে সেখানে। সময় কোন দিক দিয়ে পার হয় বোঝাই যায় না।” এখানে বলে রাখা ভালো, আমার সে বন্ধু পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, খুবই ধার্মিক। তাছাড়া সে একটা ইসলামী দল করে বলেও জানি।
সে যা-ই হোক, এই কথোপকথনের কয়েকদিন পরের কথা, ক্লাসে দেখা হলো আবার সে বন্ধুর সাথে। সেদিন সে কিছুটা মনমরা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কীরে, শাহবাগে আর যাস না!” তার জবাবটা এলো কিছুটা নিচু স্বরে। বললো, “যাই, তবে দোস্ত কয়েকটা বিষয়ের কারণে আর যাবো কিনা ভাবতেসি”। আমি কিছুটা অবাক হলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, “ক্যান ক্যান, এতো উৎসাহে আন্দোলনে গেলি, অল্প কয়েকদিন যেতে না যেতেই উৎসাহে ভাটা!! কেন কিছু হয়েছে নাকি?” তার উত্তর, “নাহ – মানে, শুরুতে তো আন্দোলন ভালোই চলছিল, তবে এখন আন্দোলনে এমন কিছু শ্লোগান দেওয়া হয়, শুনলেই গা শিউরে উঠে। সে শ্লোগানের সাথে আর গলা মেলাতে ইচ্ছা করে না। যেমন ধর, ‘একটা একটা শিবির ধর... ধইরা ধইরা জবাই কর’ – আরে ভাই, জামায়াতের নেতারা না হয় যুদ্ধাপরাধী, কিন্তু শিবিরের ছেলেরা তো আর যুদ্ধাপরাধী না। তারাও আমাদের মতোই ছাত্র। হয়তোবা তারা ভুল বুঝে শিবির করে, কিন্তু তাই বলে তো আর তাদের ধরে ধরে জবাই করা চলে না!! আর তাছাড়া......”
-“আর তাছাড়া কী?”, আমার বন্ধুকে ইতস্তত করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম আমি।
-“তাছাড়া আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা মোটেও ধর্মানুরাগী না। আর ছাত্রলীগের গুণ্ডাগুলাও নেতৃত্বে আছে।”
বন্ধুর কথায় মৃদু হাসলাম আমি; আর কিছু বললাম না।।
এসব ঘটনার পর বেশ কিছুদিন মোটামুটি ভালোই ব্যস্ততায় কাটলো আমার। তবে এই ব্যস্ততার পরেও একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর শাহবাগের আন্দোলনের দিকে আবার আমাকে মনোযোগ দিতেই হলো।
১৫ই ফেব্রুয়ারি রাতের অন্ধকারে অজ্ঞাত ঘাতকদের উপর্যুপুরি আঘাতে নিহত হন শাহবাগের আন্দোলনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ব্লগার রাজীব হায়দার। তার নিহতের ঘটনার পর পরই ইন্টারনেটের জগতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নানাজনের কাছ থেকে শুনতে পাই নানা কথা। আতঃপর আমি নিজেই রাজীবের ব্লগের লেখাগুলো বের করে সেগুলো পড়ি। ঈমান ও ইসলামের মৌলিক কতগুলো বিষয়ের পাশাপাশি হযরত মুহাম্মাদ (সা), তাঁর পরিবার, তাঁর সাহাবী ও স্বয়ং আল্লাহ তাআলাকে নিয়ে যেসব অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ ও দুরভিসন্ধিমূলক জিনিস লেখা হয়েছে তা পড়ে যে কোন মুসলমান তো বটেই, অমুসলমান ব্যক্তিরও বুকে ভয়াবহ ধাক্কা লাগবে বলে আমার ধারণা। এগুলো যে তারই লেখা সেগুলো নিশ্চিত হওয়ার পর রাজীব হায়দারকে কুলাঙ্গার বলতে আমার আর কোন বাধা রইলো না। আমার তখন কেবলই ইচ্ছা করছিল, চিৎকার করে বিশ্বের সব দেশের সমগ্র মুসলিমদের বলি, “দেখ মুসলমানেরা, ৯০ ভাগ কথিত মুসলমানের এই দেশে মুসলিম নামধারীরা আমাদের জানের ধর্ম ইসলাম ও আমাদের প্রাণপ্রিয় কলিজার টুকরা মুহাম্মাদ (সা)কে এভাবে কটাক্ষ করে চলছে!! তারপরও আমরা নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে সব দেখছি।”
যা হোক, স্বাভাবিকভাবেই সব মিডিয়াতে দেখলাম রাজীব হায়দারের এই ঘৃণ্য কৃতকর্মগুলোকে ধামাচাপা দিতে। বরং তাকে শহীদ উপাধি দেওয়া থেকে শুরু করে ঘটা করে জানাযাও আদায় করা হলো। হতাশ হই নি, কেবল লজ্জ্বার একটা অনুভূতি হয়েছিল আমার মনে, কেননা আমি এমন এক দেশে বাস করি যেখানে, যেখানে হলুদ ও মিথ্যা সাংবাদিকতাই হলো ভাল সাংবাদিকতা। আর সঠিক ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা হল – ‘অবাঞ্ছিত’।
তবে বরাবরের মতোই আশা জাগালো দৈনিক আমার দেশ। তারা প্রকাশ করলো আরালে থাকা এসব ভয়ঙ্কর তথ্য। উন্মোচিত করলো শয়তানদের আসল চেহারা। সারাদেশের মানুষ এবার জানলো থাবাবাবার কুকীর্তির কথা। ইসলামপ্রিয় মানুষ পড়লো সেই বিভীষিকাময় লেখা। আশা করেছিলাম এবার জেগে উঠবে এদেশের ইসলামপ্রিয় জনতা। কিন্তু না- তা হলো না। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আলেম-ওলামারা ও ইসলামপ্রিয় জনগণ কিছুটা প্রতিবাদ শুরু করলেও গলা টিপে বন্ধ করা হল সে আন্দোলন। এতো কিছুর পড় একটা প্রশ্নের উদয় হল আমার মনে, “বাংলাদেশের মতো ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এগুলো কীভাবে সম্ভব হয়??” তবে পরমুহূর্তেই এ শঙ্কাটা দেখা দেয়- “তবে কি এদেশের ৯০ভাগ মানুষ মুসলমান নয়??!!” এর একটা শক্ত জবাব পেয়েছিলাম আমার এক আলেম চাচার কাছে & তা হলো, বাংলাদেশের ১০ ভাগ মানুষও খাঁটি/পাকা মুসলমান না। নতুবা এই দেশে এতসব ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড কখনোই সম্ভব হতো না। শাহবাগে আন্দোলন করেন এমন নাস্তিক বা অমুসলিম স্বদেশীদের থেকে আমার কিছু চাওয়ার নেই। তবে মুসলমান ভাইবোনদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনি যদি আসলেই মুসলমান হয়ে থাকেন তবে যেসব ইসলামবিরোধী কর্মকান্ড এই দেশে হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে এক-আধবারের জন্য হলেও মাথা তোলেন। গর্তে মাথা ঢুকিয়ে রেখে ইসলামকে ধ্বংস হতে দেখেও না দেখার ভান করবেন না। শাহবাগের আন্দোলনের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা আপাতত নেই। তবে অন্তরের জ্বালা আছে এই ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের ব্যপারে। দুঃখের ব্যপার হলো যেসব নাস্তিকেরা ইসলাম ও আল্লাহর রাসূল (সা)এর ব্যপারে কটাক্ষ করছে তারাই শাহবাগে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
সর্বোপরি চেষ্টা করেছিলাম বাংলাদেশে যাতে এমন কুরুচিপূর্ণ লেখালেখির কর্মকাণ্ড না হয়। সেজন্য আমাদের পাড়ার মসজিদে আসরের নামাজের পর এলাকার মধ্যেই একটি মিছিল করবো। আমাদের বন্ধুরা মিলে তা ঠিক করেছিলাম। কিন্তু কীসের কী; - আসরের নামাযের পর এই ঘোষণা দেওয়ার পরেও হাতে গোণা কয়েকজন আসলো। আর অন্যরা বললো এগুলোর দরকার নেই। অনেকে আবার আমাদের ধমকও দিলো। যা হোক, আরো অনেক বাধা আসায় মিছিল আর হয়নি।
বারান্দায় বসে আছি আর ভাবছি, এমন এক কউমের বাসিন্দা আমি যেখানে ইসলামকে পোশাক হিসেবে গা ঢেকে অনেক লোকই বসবাস করছে। তবে এতকিছুর পরেও কিছু লোক আছে যারা ইসলামকে শুধু পোশাক হিসেবে নেয় নি। বরঞ্চ তারা জানে যে ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। আমিও তাদের একজন।
আমাদের তাই কোন পোশাক নেই। এর মাঝে আমার এক ছোট ভাই এসে জিজ্ঞাসা করলো, “ভাইয়া নাস্তিকেরা তাদের স্বার্থে সব এক জোট হতে পারে, আর আমাদের মুসলমানদের স্বার্থে সবাই যে যার রাস্তা মাপছে, এটা কেমন!! আমাদের সামনে ইসলামবিরোধীরা আমাদের আমাদের অনুভূতিতে আঘাত হানছে। হয়তো সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন শারীরিকভাবেও আঘাত হানবে। মুসলমানের দেশে নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করতে পারবো না, এটা কেমন!! এমন অবস্থায় আমাদের কি কিছুই করার নেই!!”
-জবাবে আমি কিছুই বলতে পারি নি, জবান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। হৃদয় কাঁদছিল হু হু করে। কেননা আমিও যে এক দুর্বল ঈমানদার মুসলিম!! এ লজ্জ্বা ক্যামনে ঢাকি!!
বিষয়: বিবিধ
১৫০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন