** অপরিবর্তন **
লিখেছেন লিখেছেন বিডি রকার ০৩ নভেম্বর, ২০১৩, ০২:৫১:১৫ দুপুর
- ‘ ড্রাইভার , এসিটা আরেকটু বাড়িয়ে দাও তো । .... ইশ কি গরম ।’
- জি স্যার দিচ্ছি । বলে এসির সুইচটা আরও ঘুড়িয়ে দিল ড্রাইভার ।
পুরো রাস্তা জুড়ে এক বিশাল জ্যাম লেগে আছে । অথচ শরীফ সাহেবের অনেক তাড়া । আজ সকাল ১০টার মধ্যে তার গ্রামের বাড়ি পৌঁছানোর কথা । সেখানে অনেক পরিশ্রম করে এক বিশাল বৃদ্ধাশ্রম করছেন তিনি । এর দ্বারা কমপক্ষে ১০০ বৃদ্ধ দম্পত্তির থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুর ব্যয়ভার বহন করবেন । এ লক্ষ্যে তিন তলা একটি ফাউন্ডেশনওয়ালা পাকা বিল্ডিং করা হয়েছে । সেখানেই উদ্বোধন করা হবে ‘শরীফ মেমোরিয়াল ওল্ডহোম’ ।
অবশ্য শরীফ সাহেব এতো কষ্ট করে এই কাজগুলো এমনি এমনি করছেন না । তিনি এসব করছেন এক সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য সামনে রেখে । সারাটা জীবন রাজনীতি করে এসেছেন । যার ফলে অনেক অবৈধ কাজও করতে হয়েছে তাকে ।
তবে তার এলাকায় তিনি খুব ভালো মানুষ বলেই পরিচিত ছিলেন এতদিন । কিন্তু কিছুদিন আগে তার কিছু অপকীর্তির কাহিনী কোনোভাবে এলাকায় ফাঁস হয়ে যায় । এরপরপরই রাতারাতি তার আকাশসমান সম্মান আর মর্যাদায় ভাঁটা পড়ে । তাই আবার সেই হারানো সম্মান আর মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্যই মূলত এই বৃদ্ধাশ্রমের পরিকল্পনাটি করা হয়েছে ।
এর দ্বারা আরও নানাভাবে লাভবান হবেন তিনি ।
ভাগ্যের জোরে যদি এই পরিকল্পনাটা ঠিকঠাক দাঁড়া করিয়ে ফেলতে পারেন, তবে ভবিষ্যতে আরও বিভিন্ন দুঃসময়ে এই বৃদ্ধাশ্রম তাকে সাপোর্ট দিবে । সর্বোপরি , সমাজসেবক হিসেবে শরিফ হাসানের নামটাও অনেকদিন মনে রাখবে এই গ্রাম ।
--
এই সেই নানা কিছু চিন্তা করে শরীফ সাহেব নিজের ব্যাপারে বেশ গর্ববোধ করলেন মনে মনে । একা একাই হাসলেন এই ভেবে যে , তার মত একজন গতানুগতিক রাজনীতিবিদকে একসময় মানুষরা মনে রাখবে একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক হিসেবে ....
এমন সময় টের পেলেন রাস্তার সিগনাল ছেড়ে দিয়েছে । সব গাড়ি চলা শুরু করেছে । কিন্তু একি ! তার গাড়ি নড়ছে না !
- কি ব্যাপার ড্রাইভার ?
- স্যার একজন ভিক্ষুক ....
সাথে সাথেই জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালেন তিনি , দেখলেন এক ল্যাংড়া বৃদ্ধ ফকির তার শীর্ণ-ময়লা হাত দুটি দিয়ে জানালায় নক করছে । কিন্তু সেই নক করার শব্দ এতো ক্ষীণ যে এতক্ষণ তা শুনা যায়নি ।
হাত দিয়ে তাকে ইশারা করলেন সরে যেতে , কিন্তু সেই ভিক্ষুক কি বুঝল কে জানে ? সে তখনও জানালায় নক করছে ..
আর পারলেন না শরীফ সাহেব । চিৎকার করে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললেন , “ কি মাথায় সেন্স নাই , এই ফকিররে দেইখা দাড়াই আছ কেন ? টান দাও । ”
তরুণ ড্রাইভার যেন মনিবের অর্ডার শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিল । তাই আদেশ শেষ হওয়ার আগেই এক্সেলারেটরে এক ভয়ংকর চাপ দিয়ে সামনে এগিয়ে চলল সে .......
..
..
..
-- আর সেইসব বৃদ্ধরা এতদিন যেখানটায় ছিল – সেখানেই থাকল ..
বিষয়: বিবিধ
১১৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন