*** রিমান্ডনামাঃ
লিখেছেন লিখেছেন বিডি রকার ২৯ মে, ২০১৩, ০৫:১৫:৩৩ বিকাল
যেখানে ছাগলকে ভিতরে ঢুকানোর ৩ দিনের মাথায় সে হরিণ আকারে বের হয়ে আসে , কিংবা
দেখতে হরিণ না হলেও নিজেকে হরিণ বলে স্বীকার করে নেয় তাকেই বাঙ্গাল রিমান্ড
বলে ।
উল্লেখ্য , আমরা জানি রিমান্ডে অতিথির মুখ থেকে কিছু সুমধুর কথা বের করার জন্য সামান্য কিছু এটা-সেটা দেওয়া হয় । কিন্তু বাঙ্গাল রিমান্ডে শুধু সামান্য না ব্যাপক আকারে যত্ন আর আহার আপ্যায়ন করানো হয় । তারই কিছু লোভনীয় বর্ণনা নিচে পেশ করা হল ।
এখানে প্রতি সপ্তাহে বোনাস স্বরূপ একখান মুরগির আণ্ডা দেওয়া হয়
তবে তা মুখ দিয়ে খেতে দেওয়া হয় না । কেবলমাত্র শরীরের বিশেষ একখান জায়গাই
তার স্বাদ আহরণ করতে পারে ।
আল্লাহ আপনারে ভাল কপাল দিলে প্রতিদিন শ খানেক খাঁটি চিকন কইঞ্চার বারি খাইতে পারেন ।
আপনি বড় কোন লিডার হইলে পায়ে এবং কোমরে শোভা পাবে ১০০% লোহার তৈরি চমৎকার একটি অলংকার - একে আবার অনেকে শখ করে করে ডান্ডাবেড়িও বলে থাকে । আর যদি বড় কোন লিডার না হইয়া বাইচান্স কোন আদর্শবাদী ছাত্রসংঘটনের নেতা হইয়া থাকেন তাহলে আপনি ডাণ্ডাবেরি পড়ার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক না হলেও আপনাকে সর্বাধিক যত্ন সহকারে তা পড়াই দেওয়া হবে । এমনকি আপনার শয়নে চলনে সবসময় ( প্রয়োজনে চ্যাংদোলা করে হলেও ) আপনাকে তা পড়িয়ে রাখা হবে ।
খাবার নিয়ে চিন্তা করছেন , ভাবছেন খামু কি ? নো টেনশন , আপনাকে সবময় বিনা পয়সায় অসাধারণ খাবার সাপ্লাই দেওয়া হবে । অসাধারণ কেন ? কারন এতদিন আপনি যে মানুশ্য সাধারণ খাবার ভক্ষন করে আসছেন এতে আপনার জিভে ঘা হয়ে রুচি নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম । তাই এই রিমান্ডে আপনাকে সার্ভ করা হবে এমন সব খাবার যা অনেক কুকুর-বিলাইয়ের খাওয়ারও সৌভাগ্য হয় না । খেয়ে আপনি যে ইয়া একখান ঢেঁকুর তুলবেন এইটা আমি শিউর ।
সারা জীবন হাতপায়ের নখ না কাইটা খেতের মতন চলাফেরা করছেন আপনি । "হাত-পায়ের নখ বড় কেন" কেউ যখন এমন প্রশ্ন করত তখন ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলতেন , "সময় কই - শুক্রবারে " । আসল কথা নখ কাটার মত টাইম আর শক্তি আপনার মত অলসের নাই । এইখানে ইনশা আল্লাহ আপনাকে এই বেইজ্জতির মধ্যে পরতে হবে না । বরঞ্চ এমন ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে যেন সারা জীবনেও আপনাকে আর নখ কাটতে না হয় ।
আপনার শরীরের গিরায়-গারায় ব্যথা , পয়েন্টে- পয়েন্টে ব্যথা , জয়েন্টে-জয়েন্টে ব্যথা । নো প্রবলেম বস । রিমান্ডে যতদিন থাকবেন ততদিন আপনার পুলিশ ভাইয়েরা তাদের শরীরের রক্ত পানি করে আপনার সমগ্র শরীরে মেসাজ কইরা দিবে অথচ এক কানি পয়সাও নিবে না ।
পরিশেষে ঘুম নিয়ে একটা সন্দেহ আপনার মনের জানালায় উঁকি মারছে । ভাই খাড়ান ...... সারা জীবন তো আরামের বিছানায় ব্যারামের ঘুম দিয়া আসছেন , এখন একটু বিছানা ছাড়াই আরামের ঘুম দেন । সারা দিন একটার পর একটা থেরাপি খাইয়া আপনি যখন আন্দোলিত তখন ঘুমেও আপনাকে দেওয়া হবে চমক । আপনার আরামের ঘুমের জন্য সেখানে ব্যবস্থা করা হবে লোহার শক্ত চেয়ার , আর ইচ্ছা থাকলে ঘোড়ার মত দাড়িয়েও ঘুমের স্বাদ আহরণ করতে পারেন আপনি ।
ভাই আমাদের গর্বের এই রিমান্ডে যে আরও কত রকমের আরাম আয়েশের কাহিনি আছে সেগুলোর কথা আর কত বলমু । তাই আপনাদের বিনা পয়সায় একখান দামী পরামর্শ দেই , যারা এখনও বাংলাদেশে আছেন আর রিমান্ডের এই অসাধারণ মজা থেকে বঞ্চিত তারা আর দেরি না কইরা রিমান্ডে চইলা যান ।
--- তো কিভাবে যামু ?
-এই তো দিলেন আবার প্যাঁচে ফালাইয়া । এইডা কোন ব্যাপার , বাংলাদেশের সব জায়গায় যাওয়া কঠিন হইলেও এই রিমান্ডে যাওয়ার মোটামুটি সহজই । কেবল কিছু সিস্টেম ফলো করলেও হইব ।
---কি সিস্টেম ?
প্রথমত , আপনারে খুবই ভাল মানুষ হইতে হবে , বর্তমানে পুলিশ আবার ভাল মানুষ ছাড়া অন্য কাউরে রিমান্ডে নিতে চায় না । দ্বিতীয়ত, আপনারে কিছু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর কাজে শরিক হইতে হবে , বিশেষ করে কোন ইসলামিক দল হইলে তো কথাই নাই । আর এরপর স্বাভাবিকভাবেই দিনাতিপাত করতে থাকেন , হঠাতই একদিন আপনি নিজেকে রিমান্ডে আবিষ্কার করে বসবেন ।
আর এখনও যেসকল ভাই-ব্রাদাররা বিদেশে বইসা আছেন তারা আর দেরি না কইরা দ্রুত বাংলাদেশে আইসা পড়েন , এই সুযোগ কিন্তু সীমিত । পড়ে আর সুযোগ নাও পাইতে পারেন । প্রয়োজনে আপনার প্রিয় বিদেশি বন্ধুদেরও নিয়ে আসতে পারেন । বাংলাদেশের মত একটা গরিব রাষ্ট্রে এতো সুন্দর একখান বিনোদনের ব্যবস্থা আছে সেইটা তারা নাও জানতে পারে । তাদেরও তো একখান হক আছে নাকি ।
ও ভাল কথা , আমার কথামত সত্যি সত্যিই তাদের নিয়ে আসলে উনাদের ফেরত যাওয়ার সময় কিন্তু এয়ার এম্বুলেন্সের প্রয়োজন হইতে পারে , ব্যাপারটা মাথায় রাইখেন ।
সর্বোপরি সকলকে বাঙ্গাল রিমান্ডে আসার দাওয়াত দিয়ে আমি বিদায় নিচ্ছি ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন