কেউ একজন বলেন এখানে একটা লাইনও মিথ্যা
লিখেছেন লিখেছেন সিদরাতুল মুনতাহা ২৪ জানুয়ারি, ২০১৩, ১১:২২:৫৬ সকাল
এই যে যুদ্ধাপরাধী ইস্যুটা, একাত্তুরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে; ২০০১ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আমাদেরকে, জামায়াতে ইসলামীর নেতাদেরকে এরা রাজাকার বলে গালি দিতো, স্বাধীনতাবিরোধী বলে গালি দিতো; কিন্তু কোনদিন যুদ্ধাপরাধী বলতো না। এ ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলা শুরু হয়েছে ২০০১ সালের ইলেকশনে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয়ের পরে। পত্রিকায় রেকর্ড আছে, আমি চ্যালেঞ্জ করছি কেউ প্রমাণ করুক যে ঐ ইলেকশনের আগে কেউ একজন, কোন সেক্টর কমান্ডার, কোন আওয়ামী লীগ নেতা কেউ একজন আমাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বলেছে কিনা? প্রমাণ করুক!!
এই ‘যুদ্ধাপরাধী’ অপবাদ তারা কেন দেওয়া শুরু করলো আমাদের উপরে? তারা দেখলো যে, (স্বচ্ছ) নির্বাচনের মাধ্যমে তারা কোনদিন ক্ষমতায় যেতে পারবে না যে পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি থেকে সরায়ে দেয়া না যায়। বিএনপির সাথে জামায়াত যদি এক হয়ে ইলেকশন করে তো আওয়ামী লীগ কোনদিনও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তারা হিসাব পরিস্কার দেখতে পেলো। সেজন্যই তারা এই সেক্টর কমান্ডারদের লাগিয়েছে। হামিদুল্লাহ খানও তো সেক্টর কমান্ডার, ইনি তাদের সঙ্গে যান নাই। ইনি বিএনপিতে আছেন। (যাই হোক,) এরা এই যুদ্ধাপরাধের ইস্যু তুললো। অথচ শেখ মুজিব এ ইস্যুর মীমাংসা করে দিয়ে গেছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পাকিস্তান আর্মির ১৯৫জন উচ্চ সামরিক কর্মকর্তাকে তালিকাভুক্ত করলেন। এবং আইন করলেন তাদের বিচার করার জন্য। সে আইনে আমাদের বিচার করার চেষ্টা হচ্ছে। তাদেরকে (১৯৫জনকে) তিনি (শেখ মুজিব) ক্ষমা করে দিলেন। পাকিস্তানের সঙ্গে সিমলা চুক্তি হলো, এ চুক্তিতে তাদেরকে সবাইকে মুক্তি দিয়ে দিলো, তারা তো ভারতে আটক ছিলো, তাদেরকে পাকিস্তানে চলে যেতে দিলো, তাদেরকে ক্ষমা করে দিলো। শেখ মুজিব বললো যে, “বাঙালি জানে কীভাবে ক্ষমা করতে হয়”। গর্বের সঙ্গে তিনি বললেন তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে যে, “বাঙালি জানে কীভাবে ক্ষমা করতে হয়”।
শেখ মুজিব এই দেশী কোন লোককে যুদ্ধাপরাধী বলেন নাই। তাঁর তালিকায় পাকিস্তান আর্মির লোক ছাড়া কোন সিভিল লোক ছিলো না। যুদ্ধাপরাধীদের তালিকার ১৯৫জনের মধ্যে কেউ সিভিল লোক ছিলো না। যারা পাকিস্তানকে সমর্থন করতো, পাকিস্তান থেকে এই দেশকে আলাদা করার পক্ষে যারা ছিলো না, তাদেরকে শেখ মুজিব বলতেন কোলেবরেটর (collaborator)। Collaborator মানে সহযোগী। তাদের বিচারের জন্য আলাদা আইন করেছিলেন। সেই আইনে লক্ষাধিক লোক গ্রেপ্তার হলো এরেস্ট হলো; এতো লোক তার মধ্যে বিচার করে কিছু লোককে শাস্তি দিলো; এগুলির পরিসংখ্যান আছে; তার পরে বাকি লোককে তিনি ক্ষমা করে দিলেন; General Amnesty। বললেন যে, যারা খুন করেছে, ব্যভিচার করেছে, লুট করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, এদের ছাড়া বাকি সবাই মাফ। তো এদেরকে বিচার করার জন্যন কোন সাক্ষী প্রমাণ যোগাড় করতে না পেরে মাফ করে দিলেন। যে আইনে বিচার করতে চেয়েছিলেন সে আইনটা তখনো উঠে নাই। জিয়াউর রহমান ল্লহমতায় এসে দেখলেন যে এ আইনে তো বিচার করতে গেলে কোন সাক্ষী প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি (জিয়া) এ আইনটা উঠায়ে দিলেন।
সুতরাং যুদ্ধাপরাধী ইস্যু শেখ মুজিব নিজেই মীমাংসা করে দিয়ে গেছেন। সেটাকে নতুনভাবে তোলা হলো শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতির ময়দান থেকে উৎখাত করার জন্য।
এ ট্রাইবুন্যাল যে বিচারকদের দিয়ে করা হয়েছে, ৯২ সালে ৯৩ সালে যারা নাকি আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলো; ঘাদানিক কায়েম করে, ঘাদানিক কমিটি হয়েছিল যে, জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। সেই ঘাদানিকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো এমন লোক হল এ ট্রাইবুন্যালএর চেয়ারম্যান, নিজামুল হক নাসিম। তারপরে তদন্ত করার জন্য তদন্তসংস্থা যেটা করা হয়েছে, দলীয় লোক (দিয়ে পূর্ণ)!! তারা তাদের দলীয় লোকদের দিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়াচ্ছে; এবং যারা নিরপেক্ষ সাক্ষী দেবার লোক তাদেরকে কাছে ভীড়তেই দিচ্ছে না, এ সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে হাজার হাজার পৃষ্ঠার যে তদন্ত করেছে, এর সব মিথ্যা। কয়েকটা পত্রিকায় এসেছে, আমার বিরুদ্ধে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তদন্ত রিপোর্ট, সেখানে এমনো অভিযোগ করেছে যেগুলি অভিযোগ হয় না, যেগুলি অপবাদ। ২৫শে মার্চের আর্মি একশনের পরিকল্পনা নাকি আমি করেছি!! মানে টিক্কা খান ক্ষমতায় ছিলো না, আমি ক্ষমতায় ছিলাম!!!! এই হচ্ছে তাদের তদন্ত রিপোর্টএর অবস্থা!! ইয়াহইয়া খান পুলিশের মাধ্যমে, এখন যেমন আনসার আছে না? এরকম আনসারের মতো রাজাকার বাহিনী পুলিশের সহায়ক হিসেবে রিক্রুট করেছে। এইগুলি নাকি আমি করেছি!!!! তো গভর্নমেন্ট কি আমার হাতে ছিলো????
তো এইভাবে তারা যে তদন্ত করছে, উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন একটা প্রহসন করে শাস্তি দিয়ে ফেলা। এমনকি লতিফ সিদ্দিকি নামে এক মন্ত্রী সেদিন বলেছে বিচারের দরকার নাই এদেরকে ফাঁসি দিয়ে ফেলো!!!!!!!!! বলেছে কিনা??
আসলে বিচার তাদের উদ্দেশ্য না। ফাঁসি দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্বহীন করে ফেলা, যাতে রাজনৈতিক ময়দানে জামায়াত পূর্বের মতো কোন ভূমিকা পালন করতে না পারে। সুতরাং এই ট্রাইবুন্যাল হচ্ছে একটা প্রহসন। এবং সারা দুনিয়া থেকে, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শুধু না, ইন্টারন্যাশনাল ল-ইয়ারস এসোসিয়েশন; তারপরে ইংল্যান্ড আমেরিকা এসব দেশের যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে অভিজ্ঞ লোকদের, এই ট্রাইবুন্যাল সম্পর্কে তাদের মন্তব্য আছে। আমাদের দেশের (কিছু কিছু) পত্রিকায় এগুলো এসেছে। তারা বলেছে, “এ এ ব্যাপারগুলো সংশোধন করো; আন্তর্জাতিক মানে না পৌঁছলে পরে এটাকে গ্রহণ করা যায় না”।
এই ট্রাইবুন্যাল কি বিচার করবে? রায় তো আগেই ঠিক হয়ে আছে। বিচার একটা প্রহসনমাত্র। তারা এ প্রহসন করে বিএনপির কয়েকজন নেতা, জামায়াতে ইসলামীর টপ নেতা তাদের সবাইকে ফাঁসি দিয়ে রাজনৈতিক ময়দান থেকে জামায়াতকে নির্বাসিত করতে চায়।
from Interview of Professor Golam Azam at ATN Bangla:
http://www.facebook.com/photo.php?v=303791676409057&set=vb.204480719673487&type=3&theater
বিষয়: বিবিধ
৮৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন