রমজান প্রেক্ষিত আমিরাত ও বাংলাদেশ

লিখেছেন লিখেছেন ইছমাইল ২৬ জুন, ২০১৫, ১২:০২:৫৮ রাত



মাহে রমজান সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আল্লাহর বিশেষ করুণা ও দয়ার অপার সুযোগের মাস মাহে রমযান। দীর্ঘ এগারটি মাসের পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার অপূর্ব সুযোগ পবিত্র রমযান। রমজান মুসলমানদেরকে সংযমের পাশাপাশি অনেক খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ, পাপ মোচন আর সৎকাজ করার সুযোগ এনে দিয়েছে। রমজান মাসের ইবাদাত বন্দেগীর তাৎপর্য অনেক। এর কোন শেষ নেই। আমার লিখনি রমজান বা রমজানের তাৎপর্য নিয়ে না। সিয়ামের মাসে সংযমের তুলনা মুলক পার্থক্য কিছুটা তুলে ধরা যা প্রবাস ও বাংলাদেশে হয়ে থাকে।

এক মহান বার্তা নিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের কাছে মাহে রমজানের আগমন ঘটে। যাতে ভেদাভেদ ভুলে জাতি, বর্ণ, ধনী গরীব সবাই এক কাতারে আসতে পারেন। যে উদ্দেশ্য নিয়ে রমজান আমাদের মাঝে আসে সেই উদ্দেশ্য অনেক ক্ষেত্রেই পূর্ণতা পায়না। বিশেষ করে আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে রমজান আসলে ও অনেক ক্ষেত্রে তার প্রভাব হিতে বিপরীত।

মানূষের জীবন ধারনের জন্য কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের প্রয়োজন হয়, আর রমজান আসলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের সাথে আরো কিছু পন্যের ও প্রয়োজন দেখা দেয়। আর এই সুযোগে মুনাফা লোভী কিছু ব্যবসায়ী রমজানের আগে পন্যের মজূদ করে রমজান মাস আসলে পন্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কোনো কোনো পন্যের ক্ষেত্রে দ্বিগুন পর্যন্ত দাম বাড়ায়, যার কারনে ধনী লোক ছাড়া গরীবদের কাছে রমজান বাড়তি বোঝা হয়ে যায়। তাই সেই পান্তা ভাতের সেহরী বা ছোলা মুড়ি বিহীন ইফতারে কোনোরকমে রমজান শেষ হয়। অথচ মধ্যপ্রাচ্যে এই চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন, রমজান আসার আগ থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের পাশাপাশি রমজানের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পন্যের উপর ৭৫% পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকে। যাতে করে স্হানীয় জনগনের সাথে আধিবাসী বা সল্প আয়ের শ্রমিকরা রমজানের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এই পক্রিয়া পুরো রমজান মাস চলতে থাকে।

রমজানের অনন্য এক নেয়ামত ইফতার, রমজান মাসে মুসলিমগণ সারা দিন রোযা রাখার পর মাগরিব তথা সূর্যাস্তের সময় যে খাবার গ্রহণ করেন তাই ইফতার। বিভিন্ন দেশে ইফতারের উপকরন ভিন্ন হলে ও রমজান মাসে সবাই একত্রে বসে ইফতার গ্রহণ করেন। মধ্যপ্রাচ্যে তথা সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইফতার আয়োজন এতই সুন্দর যা প্রশংসা করার মত। সরকারী ব্যবস্হাপনার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এমনকি স্হানীয় জনগন নিজস্ব উদ্যেগে ইফতারের ব্যবস্হা করে থাকে। যেখানে ভেদাবেদ ছাড়া আরবী, অনারবী, স্হানীয় অধিবাসীদের সাথে বিভিন্ন দেশের নিম্ন আয়ের নির্মান শ্রমিকরা ও ইফতার করে থাকেন। ইফতারের খাবার হিসাবে খোরমা, ঠান্ডা পানি, লেবান আপ (টক দইয়েয় মত), বিভিন্ন রকমের ফল, এবং বিরিয়ানি পরিবেশন করা হয়। ইফতারের এই দৃশ্য দেখে মনকে শান্তনা দেয়া যায় যে রমজানের উদ্দ্যেশ্য কিছুটা হলে ও সার্থক। কিন্তু বাংলাদেশে ইফতার মানে হচ্ছে এক শ্রেনীর মানুষের রসনা বিলাস, অঞ্চলবেধে বাব দাদার ঐতিহ্যের ইফতার। বাপের বড় পোলারা ঐ ইফতার খায়।ইফতারের খাবার হিসাবে পিঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, মুড়ি, হালিম, জিলাপি সহ আরো কত কি! ইফতারের নামে চলে অপচয়ের মহা উৎসব। অথচ তাদের খুবই নিকটে সেই সব রোজাদারেরা থাকেন যাদের সেহরী শুরু হয় পান্তা ভাতে আর ইফতার হয় পানিতে। ধনীরা ইফতারে যে পরিমান অপচয় করেন তা সামান্যতম কমিয়ে তার বাসা বাড়ির পাশের একজন গরীব লোককে দিলে সেই দরিদ্র লোকটি ভালোবাবে সেহরী বা ইফতার করবে। আর এতেই রনজানের সার্থকতা কিছুটা হলে ও পুরন হবে।

যাকাতের কাপড়ের নামে গরীবের সাথে চলে এক ধরনের নাটক। ব্যবসায়ীরা রমজান এলেই দোকানে যাকাতের কাপড়ের জন্য নতুন করে জায়গা করেন। আর এখান থেকে শুরু হয় যাকাতের কাপড়ের নাটক। কেন ভালো কাপড় কি যাকাতের কাপড়ে হিসেবে দেয়া যায়না!! ব্যবসায়ীরা যাকাতের কাপড়ের নামে যে নাটকের সূচনা করেন তা শেষ করেন এই সমাজের কিছু বিত্তবান মানুষ যেখানে চলে যাকাতের কাপড় বিতরনের নামে পাঁছ ঘন্টার লম্বা সিরিয়াল, ভাগ্য খারাপ হলে যাকাতের কাপড়ের বিনিময়ে কারো লাশ মেলে। ফিতরার টাকা দেয়ার ক্ষেত্রে ও ফিতরা গ্রহনকারীদের সাথে চলে অনেক নাটক। সে হিসেবে দুবাই তে কোনো কিছু পরিলক্ষিত হয়না। আরবীরা তাদের যাকাত ফিতরার অর্থ দিয়ে বিভিন্ন লেবার এরিয়ায় ইফতার আয়োজনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সেবা মুলক প্রতিষ্ঠানে দান করে থাকেন। আমাদের দেশ থেকে ও কিছু আলেম রমজান মাসে দুবাই আসেন এবং বিপুল পরিমান সাহায্য নিয়ে আবার দেশে ফিরে যান।

আমি বলছিনা যে আরবরা খুবই ভালো কিন্ত অপচয় করলে ও তারা গরীব বা অসহায় মানুষের প্রতি রমজান মাসে যতটা দয়া বা করুনা দেখান আমাদের দেশের বিত্তবানরা তাদের মত এগিয়ে আসলে তথা গরীব ও অসহায় মানুষের ন্যয্য হক আদায় করলে সিয়ামের সংযম কিছুটা হলে ও সার্থক হবে।

http://natunfeni.com/%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%93/

http://desher-khobor.com/probasher-diary/emirates/125-emirates/8947.html

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

327505
২৬ জুন ২০১৫ রাত ১২:৫০
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : খুবই সুন্দর হয়েছে আপনার লেখাটা। আমার মনের মত। আমি চিন্তা করছিলাম বাংলাদেশে রোজার মাসে যা হয়, অন্য দেশে কি রকম হয়? দেশে দাম বৃদ্ধি, যাকাতের কাপড় এ ধরনের কথা চালু আছে। এ ধরনের কাজ রোজার মূল উদ্দেশ্য বিরোধী। ধন্যবাদ আপনাকে।
২১ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:৩৪
273254
ইছমাইল লিখেছেন : ইসলাম বিধি নিষেধের অনেক ভিন্নতা রয়েছে রয়েছে আরবী ও আমাদের মাঝে... সঠিক ইসলামী বিধান পালনের ব্যপারে আমদের এখনো অনেক কিছু শিখার বাকী আছে..
327507
২৬ জুন ২০১৫ রাত ০১:০০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো। আমরা তাদের সমালোচনা করি। অথচ তাদের থেকে আমরা কতটুক পিছিয়ে!! সেই চিন্তা করিনা। এই দেশে সাধারন অথিতিদের মুরি,ছোলা দিয়ে মন্ত্রি খান চিকেন গ্রিল!!
২১ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:৪৯
273249
ইছমাইল লিখেছেন : খাইবে ও মন্ত্রীরা, আর চুরি করবে ও মন্ত্রীরা আবার যাকাতের নামে গরীব মারবে বড় লোকেরা।
327519
২৬ জুন ২০১৫ রাত ০৩:৪০
শেখের পোলা লিখেছেন : কানাডা খ্রীষ্টান প্রধান দেশ৷রোজার জন্য এখানের অনেক বড় বড় স্টোরে রোজায় ব্যবহৃত খাদ্য দ্রব্যের দাম সেলের নামে কমিয়ে দেওয়া হয়৷অথচ ৯০%০মুসলীমের দেশ বাংলা দেশে রোজার অজুহাতে প্রতিটা জিনিষের দাম অসম্ভব ভাবে মজুদদারেরা বাড়িয়ে দেয়৷ সরকারের কোন নিয়ন্ত্রন নেই৷তাই সত্যই রমজান ধনীক শ্রেনীর উৎসব আর গরীবের গাত্রদাহের কারণ৷ধন্যবাদ৷৷
২১ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:৩৬
273255
ইছমাইল লিখেছেন : নামের হাজী সাহেবরা নাম দিয়া জাতির সাথে প্রতারনা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না..তারা নাম আর লেবাস দিয়া...।
327558
২৬ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৪
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : সুন্দর উপস্থাপনের জন্য ধন্যবাদ। আমিরাতে একবার ইফতারে অভিজ্ঞতা আছে আমারো। আমার ব্লগে আমন্ত্রন।
২১ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:৪৬
273248
ইছমাইল লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদGood Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File