সংযমের প্রবাস অসংযমের বাংলাদেশ!!!!
লিখেছেন লিখেছেন ইছমাইল ০৮ জুলাই, ২০১৪, ০২:৪২:৪৩ দুপুর
মাহে রমজান সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।আল্লাহর বিশেষ করুণা ও দয়ার অপার সুযোগের মাস মাহে রমযান। দীর্ঘ এগারটি মাসের পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার অপূর্ব সুযোগ এনে দিয়েছে পবিত্র রমযান। রমজান মুসলমানদেরকে সংযমের পাশাপাশি অনেক খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ, পাপ মোচন আর সৎ কাজ করার সুযোগ এনে দিয়েছে। রমজান মাসের ইবাদাত বন্দেগীর তাৎপর্য অনেক।এর কোন শেষ নেই। আমার লিখনি রমজান বা রমজানের তাৎপর্য নিয়ে না। সিয়ামের মাসে সংযমের তুলনা মুলক পার্থক্য কিছুটা তুলে ধরা যা প্রবাস ও বাংলাদেশে হয়ে থাকে।
এক মহান বার্তা নিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের কাছে মাহে রমজানের আগমন ঘটে। যাতে বেদাবেদ ভুলে জাতি,বর্ণ,ধনী গরীব সবাই এক কাতারে আসতে পারেন। যে উদ্দেশ্য নিয়ে রমজান আমাদের মাঝে আসে সেই উদ্দেশ্য অনেক ক্ষেত্রেই পূর্ণতা পায়না।বিশেষ করে আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে রমজান আসলে ও অনেক ক্ষেত্রে তার প্রভাব হিতে বিপরীত। যেমন:
নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম বৃদ্ধি: মানূষের জীবন ধারনের জন্য কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের প্রয়োজন হয়, আর রমজান আসলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের সাথে আরো কিছু পন্যের ও প্রয়োজন দেখা দেয়। আর এই সুযোগে মুনাফা লোভী কিছু ব্যবসায়ী রমজানের আগে পন্যের মজূদ করে রমজান মাস আসলে পন্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কোনো কোনো পন্যের ক্ষেত্রে দ্বিগুন পর্যন্ত দাম বাড়ায়,যার কারনে ধনী লোক ছাড়া গরীবদের কাছে রমজান বাড়তি বোঝা হয়ে যায়। তাই সেই পান্তা ভাতের সেহরী বা ছোলা মুড়ি বিহীন ইফতারে কোনোরকমে রমজান শেষ হয়। অথচ মধ্যপ্রাচ্যে এই চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন, রমজান আসার আগ থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের পাশাপাশি রমজানের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পন্যের উপর ছাড় দিয়ে থাকে। যাতে করে স্হানীয় জনগনের সাথে আধিবাসী বা সল্প আয়ের শ্রমিকরা রমজানের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এই পক্রিয়া পুরো রমজান মাস চলতে থাকে।
ইফতার: রমজানের অনন্য এক নেয়ামত ইফতার, রমজান মাসে মুসলিমগণ সারা দিন রোযা রাখার পর মাগরিব তথা সূর্যাস্তের সময় যে খাবার গ্রহণ করেন তাই ইফতার।বিভিন্ন দেশে ইফতারের উপকরন ভিন্ন হলে ও রমজান মাসে সবাই একত্রে বসে ইফতার গ্রহণ করেন। মধ্যপ্রাচ্যে তথা সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইফতার আয়োজন এতই সুন্দর যা প্রশংসা করার মত। সরকারী ব্যবস্হাপনার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এমনকি স্হানীয় জনগন নিজস্ব উদ্যেগে ইফতারের ব্যবস্হা করে থাকে। যেখানে ভেদাবেদ ছাড়া আরবী, অনারবী, স্হানীয় অধিবাসীদের সাথে বিভিন্ন দেশের নিম্ন আয়ের নির্মান শ্রমিকরা ও ইফতার করে থাকেন। ইফতারের খাবার হিসাবে খোরমা, ঠান্ডা পানি, লেবান আপ (টক দইয়েয় মত), বিভিন্ন রকমের ফল, এবং বিরিয়ানি পরিবেশন করা হয়। ইফতারের এই দৃশ্য দেখে মনকে শান্তনা দেয়া যায় যে রমজানের উদ্দ্যেশ্য কিছুটা হলে ওসার্থক।
কিন্তু বাংলাদেশে ইফতার মানে হচ্ছে এক শ্রেনীর মানুষের রসনা বিলাস, অঞ্চলবেধে বাব দাদার ঐতিহ্যের ইফতার। বাপের বড় পোলারা ঐ ইফতার খায়।ইফতারের খাবার হিসাবে পিঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, মুড়ি, হালিম, জিলাপি সহ আরো কত কি! ইফতারের নামে চলে অপচয়ের মহা উৎসব। অথচ তাদের খুবই নিকটে সেই সব রোজাদারেরা থাকেন যাদের সেহরী শুরূ হয় পান্তা ভাতে আর ইফতার হয় পানিতে। ধনীরা ইফতারে যে পরিমান অপচয় করেন তা সামান্যতম কমিয়ে তার বাসা বাড়ির পাশের একজন গরীব লোককে দিলে সেই দরিদ্র লোকটি ভালোবাবে সেহরী বা ইফতার করবে। আর এতেই রনজানের সার্থকতা কিছুটা হলে ও পুরন হবে।
যাকাতের কাপড়: যাকাতের কাপড়ের নামে গরীবের সাথে চলে এক ধরনের নাটক। ব্যবসায়ীরা রমজান এলেই দোকানে যাকাতের কাপড়ের জন্য নতুন করে জায়গা করেন। আর এখান থেকে শুরু হয় যাকাতের কাপড়ের নাটক। কেন ভালো কাপড় কি যাকাতের কাপড়ে হিসেবে দেয়া যায়না!! ব্যবসায়ীরা যাকাতের কাপড়ের নামে যে নাটকের সূচনা করেন তা শেষ করেন এই সমাজের কিছু বিত্তবান মানুষ যেখানে চলে যাকাতের কাপড় বিতরনের নামে পাঁছ ঘন্টার লম্বা সিরিয়াল, ভাগ্য খারাপ হলে যাকাতের কাপড়ের বিনিময়ে কারো লাশ মেলে।
সে হিসেবে দুবাই তে কোনো কিছু পরিলক্ষিত হয়না। বরং আমাদের দেশ থেকে কিছু আলেম রমজান মাসে দুবাই আসেন এবং বিপুল পরিমান সাহায্য নিয়ে আবার দেশে ফিরে যান।
পরিশেষে আমি বলছিনা যে আরবরা খুবই ভালো কিন্ত অপচয় করলে ও তারা গরীব বা অসহায় মানুষের প্রতি রমজান মাসে যতটা দয়া বা করূনা দেখান আমাদের দেশের বিত্তবানরা তাদের মত এগিয়ে আসলে তথা গরীব ও অসহায় মানুষের ন্যয্য হক আদায় করলে সিয়ামের সংযম কিছুটা হলে ও সার্থক হবে।
সর্বোপরি যাকাত বিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্হা বাংলাদেশে চালু হলে বাংলাদেশ একটি সম্পদশালী রাষ্টে পরিনত হবে।
ইসমাইল,
দুবাই, আরব আমিরাত।
০৮-০৭-২০১৪
বিষয়: বিবিধ
১১৯৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পুলিশ সপ্তাহ যেমন পুলিশদের ভাগ্য খুলে দেবার মাস ,তেমনি রমজান মাস ব্যবসায়ীদের জন্য মাসব্যাপী ঈদের মত ।
১০০ টাকা কেজি লম্বা বেগুন কিনেছি কিছুক্ষন আগে , যেটা ৩৫-৪০ টাকার মধ্যে ছিল মাস খানেক আগে । হরতাল , অবরোধ কিছুই এখন নেই । তাদের কাছে জিনিসের দাম বাড়ার ছুতা হল - রমজান মাস।
মন্তব্য করতে লগইন করুন