বাবা প্রবাসী তাই তার লাশ প্রবাসেই থাকুক।
লিখেছেন লিখেছেন ইছমাইল ১২ মে, ২০১৪, ০২:৫২:০৯ দুপুর
বাবাকে নিয়ে এটি আমার ২য় লিখা, বাবা মায়ের এক নৈতিক ভালোবাসার ফসল আমি নিজেই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে নাম বা ব্যক্তিটি আমাদের মাথার উপর চায়ার মত কাজ করেন তিনিই সকলের পরম শ্রদ্ধাভাজন বাবা। জীবনের শক্তির উৎস বাবা। আমার লিখাটা মূলত বাবাকে নিয়ে নয়, বাবার প্রবাসী জীবন নিয়ে, যে সময় টুকু বাবা মূলত সন্তানদের সুখের জন্য অনেক দুঃখ করে কাটান।
উত্থান-পতন, সাফল্য-ব্যর্থতা,কষ্ট, শূন্যতা মানই প্রবাস। যদিও অনেকের ধারনা প্রবাস মানে বস্তাভরা টাকা আর আয়েশী জীবন। বাস্তবে তা পুরোপুরি ভিন্ন, যদিও অল্প সময়ের ব্যবধানে যোগ্যতা ও কঠোর পরিশ্রম করে অনেকে সফলতা পেলে ও তার সংখ্যা হাতে গুনা কয়েক জন হবে।
উদ্ভেগ, উৎকন্ঠা আর চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটে প্রবাসীদের। কর্মছাড়া যেখানে জীবন চলেনা। নির্মম নিষ্ঠুর কঠিন বাস্তবতা প্রকৃত প্রবাসী ছাড়া আর কেউ বিশ্বাস করবেনা। টাকার পেছনে দোড়াতে গিয়ে সবাই ভূলে যায় আপন পর। “সম্পর্ক” থাকলে ও তা নামে মাত্র।
কঠিন এক নিয়মে বাঁধা প্রবাস জীবন। কবুতরের খাঁচার মত দম বন্ধ হওয়া রূম, যেখানে ১০/১২ জন লোককে একাত্রে থাকতে হয় অনেকটা জেল খানার মত। ভোর চারটা্য বাথরূমের সামনে লম্বা লাইন, অসহনীয় ঘরমের মাঝে ও দু’বেলা খাবারের জন্য হাঁড় ভাঙ্গা খাটুনি, অবশেষে ক্লান্তির ঘুম। বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টগুলো বুকের ভেতরেই রেখে জীবন চালিয়ে যান একজন প্রবাসী বাবা শুধু মাত্র প্রিয় সন্তানদের সুখের জন্য। যে সন্তানদের জন্য বাবা নিজের জীবন, যৌবন সবকিছু শেষ করে গেলন। সেই বাবা মারা যাওয়ার পর তার লাশ ও নাকি সন্তানেরা দেখতে চাইবেনা!! কি বিচিত্র এই সমাজ, দেশে একজন মানুষ গুম হলে বা মারা গেলে তার লাশের জন্য কত আকুতি, অথচ একজন প্রবাসী বাবা মারা যাওয়ার খবর শুনে Click this link ও সন্তানেরা তার প্রিয় বাবার লাশ দেশে নিতে ইচ্ছুক না! এর কারন কি? শুধুই প্রবাস নাকি সন্তানদের উচ্ছ শিক্ষা! প্রবাসী বাবার টাকায় সন্তানদের যে উচ্ছ শিক্ষা, সে শিক্ষা যদি বাবার পরিচয় ভুলিয়ে দেয়, কি লাভ সে শিক্ষায়?
অনেক প্রবাসী আছেন মৃত্যুর পর হয়তো স্বজনরা মূল্যহীন লাশের দেশে নিয়ে আসতে চাননা বা আনেন না। তেমনি একজন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মোহাম্মদ শফিকুর রহমান, ২২ বছরের প্রবাস জীবনে স্ত্রী ও তিন মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলার প্রাণপণ লড়াই করেছেন।
তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে বর্তমানে সিলেট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, মেঝো মেয়ে পড়ছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সবার ছোট মেয়ে সিলেটের রাগিব রাবেয়া ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সন্তানদের মানুষ করতে ২২ বছর ভুলে থেকেছেন প্রিয়তমা স্ত্রী, অতি আদরের সন্তান ও প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশকে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! নিজের জীবনের মূল্যবান ২২টি বছর যাদের জন্য কুরবানি করেছেন মৃত্যুর পর সেই স্ত্রী সন্তানরা তার লাশটিও দেখতে চাইবে না, এটা কি করে সম্ভব। প্রবাসী বাবা কি এতই অযগ্যো ছিলেন আপন সন্তানদের নিকট, যার কারনে মারা যাওয়ার পর ও সঠিক মূল্যয়ন পাননি। নাকি উচ্ছ শিক্ষা! যে শিক্ষা আপন জন্মদাতার পরিচিয় ভুলিয়ে দেয়, কি লাভ সে শিক্ষায়। বাবা সন্তানদের উচ্ছ শিক্ষিত করতে বেস্তছিলেন ঠিকই কিন্তু নৈতিক বা আদর্শিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেন নি!!
বুঝলাম বাবা শিক্ষিত ছিলেন না যার কারনে সন্তানদেরকে শিক্ষিত করতে চেয়েছেন। কিন্তু যে শিক্ষার ধারা বাবা মা নৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, কি লাভ সে শিক্ষায়, যে শিক্ষা ব্যবস্হা আপন জন্মদাতার পরিচয় ভূলিয়ে দেয়!!
শিক্ষা কি? সে কি শুধুই বিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন। সম্পদ কি? সে কি শুধুই অর্থ বৃত্ত অর্জন। যে পিতা মাতার জন্য আমরা এই পৃথিবীর আলো দেখেছি, যারা আমাদেরকে হাত ধরে চলতে বলতে শিখিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে নিজে না খেয়ে আহার তুলে দিয়েছেন আমাদের মুখে, সেই পিতা মাতা কি সম্পদ নন আমাদের জীবনে? তাদের সেবা করতে শিখা কি, সেটা কি শিক্ষা নয়? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি এই নৈতিক শিক্ষায় আমাদের নৈতিক বোধ ও মানসিকতা মানবিক হয়ে উঠুক।
যার কারনে আমরা গর্বিত, হোক না একজন প্রবাসী নির্মান শ্রমিক তার পরে ও উনিই বাবা। তাই ভালোবাসি বাবাকে, দিবসের অপেক্ষায় না থেকে সবাই সব সময়ে রবের শেখানো দোয়া ربي ارحمهما كما ربياني صغيرا রাব্বির হাম হুমা কামা রাববা ইয়ানি সাগিরা পড়ুন।
(বিশেষ ধন্যবাদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর)
ইছমাইল, (সাবেক শিক্ষার্থী,চবি),
প্রবাসী, (দুবাই,সংযুক্ত আরব আমিরাত)।
বিষয়: Contest_father
১৬১৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাবা বাবাই তাদের কোনো ছাচে ফেলে পরিমাণ করা যায় না। সুন্দর লিখেছেন কিছুটা অন্তত শিখতে পারলাম লেখার মাধ্যমে। ধন্যবাদ
টাকা থাকলে বউয়ের ভালবাসা পাবেন আর পাবেন মেয়েদের শ্রদ্ধা , না থাকলে শফিক সাহেবের পরিনতি বরণ করতে হবে ।
বাবাকে শ্রদ্ধা করার কি আছে ! কারণ মায়ের পায়ের নিচেই তো সন্তানের বেহেশত ! মাকে পর পর ৩ টা গোল্ড মেডেল দিলেও বাবার জন্য আছে শুধুমাত্র তাম্র পদক !
অথচ এই যে মেয়েদের মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ তা কিন্তু হাঁড় ভাঙ্গা খাঁটুনী দিয়ে জোগাড় করছে বাবাই , মা না ।
অথচ শেষ কালে বাবার কি প্রাপ্যটাই না দিল তারা ।
রত্ন গর্ভা মা এর জন্য পুরষ্কার আছে , কিন্তু এটা বলা হয় না যে এ মায়েরা কি একা কিছু পারতো বাবা ছাড়া ? কি সন্তান জন্মদানে কি লালন পালনে ?
তাই মর্যাদার দিক দিয়ে বাবা আর হ্বকের বেলায় মায়েরা এগিয়ে।
মূলত বাবা, মায়ের হ্বকের কথা কোরআন শরীফে খোটা দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি অমুসলিম বাবা, মায়ের হ্বকের কথা ও কোরআন শরীফে এসেছে। পাশ্চাত্যের অনুকরন করতে গিয়ে আমরা ভুলে গিয়েছি আমদের জন্মদাতাদের অধিকার। থুথু মারি সেই সভ্যতাকে, যে সভ্যতা জন্মদাতাদের অধিকার ভূলিয়ে রাখে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন