উচ্ছ শিক্ষা, প্রবাস (মধ্যপ্রাচ্য) অত:পর বিয়ে বিড়ম্বনা!!!
লিখেছেন লিখেছেন ইছমাইল ২১ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:২৪:০১ দুপুর
ছেলের শিক্ষাগত যোগ্যতা কি? কি করে? মেয়ের বাবার ছুড়ে দেয়া প্রশ্নে ছেলে পক্ষের জবাব ছিলো বিএ পাস, দুবাইতে প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে। মেয়ের বাবার এক কথা আর যা হোক এমন পাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিবেন না।
যার কথা লিখছিলাম ঢাকা কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে বর্তমানে দুবাইতে দুবাই ইমিগ্রেশন অনুমোদিত একটি টাইপিং অফিসের ইনচার্জের দায়িত্বে আছেন প্রায় তিন বছর। তার মাসিক বেতন ৪৫০০ দিরহাম। ২০১২’র মাঝামাঝি বিয়ে করার জন্য দেশে গিয়েছিলেন নিজ দেশে পরবাসী এই লোকটি।চার মাস দেশে অবস্হান করে ও কোনো উপযুক্ত পাত্রীর সন্ধান না পেয়ে পুপাতো বোনের হাতে আংটি পরিয়ে আবার ফিরে আসে আপন গন্তব্য প্রবাসে।
এরকম ঘটনা বর্তমানে আমাদের দেশে অহরহ, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্হানরত শিক্ষিত যুবকদের ক্ষেত্রে। শিক্ষিত যুবক, শিক্ষিত পাত্রী খুজবে এটা খুবই স্বাভাবিক। যা কম শিক্ষিতদের ক্ষেত্রে পরিক্ষিত হয়না, কারন কম শিক্ষিত পাত্র কোনভাবে পাত্রীর সন্ধান পেলেই খুশি থাকেন তার শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণে।
দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা প্রবাসীদের বিরাট অংশ থাকেন মধ্যপ্রাচ্যে, যারা জীবিকার তাগিদে পরিবার ও স্বজনদের ছেড়ে দীর্ঘদিন দেশের বাহিরে আছেন, অথচ মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের প্রতি আমাদের দেশের মানুষদের একটা ধারনা যে যারা মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন তাদের সবাই কুলি, মুজুর বা লেবার। তাই তাদের বিবাহযোগ্য অর্নাস বা বিএ অধ্যয়নরত কন্যার জন্য কোনো মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী ছেলের প্রস্তাব নিয়ে গেলে বাবা মা বলেন আমার মেয়ে এখনো ছোট, বিয়ের বয়স হয়নি। বাবা মায়ের দৃষ্টিতে বিয়ের বয়স কখন হবে তা বুঝার আগেই ছেলে মেয়েদের অহরহ প্রেম হয়ে যাচ্ছে। যা চিন্তা প্রতিবন্ধী অভিভাবক, তথা বেকুব অভিভাবকদের চোখে পড়েনা। আমাদের অভিভাবকগণ মনে করে তাদের ছেলে/মেয়ে অশ্লীল কাজ করতে পারে না । যেখানে ১৫ -১৬ বছর বয়স থেকেই যে পর্ণগ্রাফি দেখা শুরু হয়, ইভ টিজিং করা শুরু হয় এমনকি অবৈধ যৌনাচারে জড়িত হয়ে পরে সেদিকে খেয়াল নাই!! বাল্য বিবাহ করা যাবেনা !!কিন্তু এই অপকর্ম করলে অসুভিধা নাই!! আসলে যেই সমাজে ব্যভিচার সস্তা হয়ে যায় ,সেই সমাজে বিয়েতো কঠিন হবেই।
মধ্যপ্রাচ্যের শিক্ষিত পাত্রের সাথে বিয়ে না দিলে ও ইউরোপ আমেরিকার অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিতে যেভাবে মেয়ের বাবারা ব্যাস্ত থাকে , মেয়েরা ও প্রতিযোগীতা করে ইউরোপ আমেরিকার ছেলের সাথে বিয়ে বসতে। যদি ও পাত্র স্বল্পশিক্ষিত! তাতে কি? সত্যিই বিচিত্রতার অনেক কিছুই দেখা মেলে এই দেশে।
আমাদের দেশে শিক্ষিত একটা ছেলে যেভাবে ব্যংক,বীমা সহ সরকারী, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, শিক্ষিত একটা ছেলে সেভাবে প্রবাসে ব্যংক,বীমা সহ সরকারী, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কাজ কর্ম চালিয়ে যেতে সক্ষম। নাকি আমাদের দেশের শিক্ষিত জনশক্তি দেশের বাইরে অক্ষম! কতিপয় লোকের ধারণা শিক্ষিত জনশক্তি দেশের বাইরে অক্ষম! যদি শিক্ষিত জনশক্তি দেশের বাইরে অক্ষম হয় তাহলে কি লাভ আমাদের এই শিক্ষাব্যবস্হার! যেখানে past, present, future শিখতে গিয়ে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় লাইফ শেষ হয়।
নাম ডাকহীন এমন অনেক শিক্ষিত জনশক্তি আছেন যারা নিজ নিজ যোগ্যতায় প্রবাসে খুবই ভালো অবস্হানে। Alnaboodah দুবাই’র অন্যতম একটি কোম্পানি, আমার পরিচিত এক বড় ভাই Alnaboodah গ্রপে চাকুরী করেন, যার মাসিক বেতন ৩০০০০ হাজার দিরহাম। নিজ যোগ্যতায় তিনি চাকুরী পেয়েছেন। হ্যা এটাও অস্বীকার করছিনা যে যোগ্যতাসম্পন্ন জনশক্তির চাইতে অধক্ষ জনশক্তির পরিমাণ বেশি, যাদের মাসিক বেতন ৮০০ থেকে ১০০০ দিরহাম। বেতন যাই হোক অবস্হান অনুযায়ী কেউ মূল্যয়ন করেনা প্রবাসিদের।
পরিবারের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে, নিজের বিলাস-ব্যাসন ত্যাগ করে, আধা পেট খেয়ে, নির্ঘুম রাত কাটানো প্রবাসের এই মানুষ গুলো আমাদেরই কারো সন্তান, কারো ভাই যাদের আয়ের উপর শুধু একটি পরিবার চলেনা! দেশের অর্থৈতিক উন্নয়নে ও যাদের অবদান রয়েছে।
আপন পরিবারের সন্তানের মতই প্রবাসি পাত্রদের মূল্যয়ন করুন, এতে হয়তো প্রবাসি পাত্রদের কষ্ট কিছুটা হলে ও কমবে। কারো করূনা নয়, মূলত নৈতিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে আমার মতো হাজারো প্রবাসী।
ইছমাইল,
দুবাই,সংযুক্ত আরব আমিরাত.
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৩ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ মনের কথাগুলো সুনিপুঁন ভাবে মালগাঁধার জন্য।
ইউরোপ আমেরিকায় ঐসব পোলাপান যা আয় করে তার চেয়ে খুব একটা কম আয় করে না দুবাইওয়ালারা। তারা লাক্সারীও কম করে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন