চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালযের প্রথম দিন..

লিখেছেন লিখেছেন ইছমাইল ১৩ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:৩৯:২৭ দুপুর

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয। বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার উত্তরে হাটহাজারী থানার ফতেপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামে পাহাড়ি ও সমতল ভূমির উপর অবস্থিত। পাহাড়,ঝর্ণা,লেক,পাখি,হরিণ সহ জীব বৈচিত্র এ ক্যম্পাসে এনে দিয়েছে ভিন্ন এক মাধুর্যতা।

দীর্ঘ সময় চট্টগ্রাম শহরে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালযে ভর্তি হওয়ার পূর্বে কোনোদিন ক্যম্পাসে যাওয়া হয়নি, যার কারনে বিশ্ববিদ্যালযে যাওয়ার বা যোগাযোগের মাধ্যম সম্পর্কে যথেষ্ট ধারনা ছিলোনা।

চট্রগ্রাম শহর থেকে চট্রগ্রাম রাঙ্গামাটি রুটের বাসে করে বিশ্ববিদ্যালযের ১ নং গেটে নামলাম। তখন সময় বেলা ১টা। একেবারে নতুন হওয়ায় কি করবো, কোথায় যাবো কিছুই ঠিক করতে পারছিলাম না। বিশ্ববিদ্যালযের ১ নং গেটে অনেক গুলো বাস দাড়ানো, বাস একটু পর পর আসা যাওয়া করছে ক্যম্পাস থেকে ১ নং গেটে। বাস গুলো বিশ্ববিদ্যালযের ছাত্রদের জন্য ফ্রি (যা বিশ্ববিদ্যালযের ভর্তি হওয়ার পর জেনেছিলাম) হলে ও তা আমি না জানার কারনে একট রিক্সায় উঠলাম। রিক্সা রেলগেট পার হতেই দেখলাম টেম্পুতে করে রক্তাত্ব এক ছাত্রকে নিয়ে কয়েক জন শহরের দিকে যাচ্ছে।ক্যম্পাসে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিলো যার কারণে রিক্সা ও আর বেশি দুর যায়নি। মাঝপথে রিক্সা থেকে নামার পর দেখলাম চবি’র শাটল ট্রেন শহর মুখী, যেখানে তিল পরিমান যায়গা খালি নাই।ভীড়ের মাঝেই ছাত্রলীগ স্লোগান দিচ্ছে শিবিরের চামড়া, তুলে নেব আমরা। একটা দুইটা শিবিরে ধর সকাল বিকাল নাস্তা কর সহ আরো অনেক স্লোগান। আর তাদের হাতে ছিলো লাঠি, হকিষ্টিক সহ দেশীয় অনেক অস্র। শাটলের এই দৃশ্য থেকে হারিয়ে ছিলাম ভাবনার রাজ্যে, ভাবছিলাম এটাই কি আদর্শ একটি ঐতিহ্যবাহী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র?

এসব যখন ভাবছিলাম ঠিক তখনই অপরিচিত একটি লোক আমার পিঠে হাত দিয়ে বললো কি ভাবছেন, এসব কিছুনা, ক্যম্পাসে নতুন আসছেন তো তাই হয়তো!! কয়েক দিন থাকলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ক্যম্পাসে নতুন শুনে সেই অপরিচিত লোকটি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন, সংঘর্ষের কারনে বিশ্ববিদ্যালযের মূল সড়কে না গিয়ে শুকনো মওসুম হওয়ায় তার সাথে জমি দিয়ে হাটতে শুরু করি, অনেকক্ষন হাটার পর বিশ্ববিদ্যালযের এফ রহমান হলের সামনে এসে পৌছলাম, এরপর অপরিচিত সেই লোকটি আমার কাছ থেকে বিদায় নিলো।

এফ রহমান হলে পরিচিত এক বড় ভাইয়ের রুমে গিয়ে এলাকার আরো দুই জন পরীক্ষার্থীর সাক্ষাত হলো যারা আমার পূর্ব পরিচিত। সবাই মিলে দুপুরের খানা খেলাম, ঘড়িতে তখন বেলা ২টা ৩০মিনিট।দুপুরের খাওয়ার পর তিন পরীক্ষার্থী মিলে বিশ্রাম নিচ্চিলাম ঠিক এমন সময় বড় ভাই এসে আমাদের তিন জনকে বললো তোমরাতো পরীক্ষা দিলে ও বিশ্ববিদ্যালযে চান্স পাবেনা, তাই তোমাদেরকে আমার রুমে সিট দিয়ে ও লাভ হবেনা! আমার রুমে অন্য পরীক্ষার্থী থাকবে, তোমরা অন্য রুমে থাকার ব্যবস্হা কর, এই বলে বড় ভাই রুম থেকে চলে গেলেন। কথাগুলো শুনার পর ভাবছিলাম এই ক্যম্পাসে আমার আগমন কতটুকু সুখকর হবে?

বর্তমান সময়ের মত তখন মোবাইল সবার হাতে ছিলনা, মধ্যবিত্ত পরিবারেব সন্তান হিসেবে আমার কাছে ও মোবাইল ছিলনা। মাগরিবের নামাজের পর অনেক কষ্টে আলাউদ্দিন ভাইকে খুজে পেলাম, এশার নামাজ ও রাত্রের খাওয়ার পর আমাদের তিন জনের জন্য আলাউদ্দিন ভাই শাহজালাল হলে একটা রুম ঠিক করে দিয়েছিলেন, দুইটা সিঙ্গেল খাট থাকায় দুই খাটে দুই জনের আর অন্যজনের থাকার ব্যবস্হা হল একটা বসার লম্বা চেয়ারে।

কষ্টকর জার্নি, আতংকের পথচলা, অবশেষে ক্লান্ত শরীরের ঘুমের মাধ্যমেই শেষ হল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালযের প্রথম দিন,

দিনটি ছিলো ১৮ মার্চ ২০০৩।

(জীবনের পথছলায় দিনটিকে বার বার মনে পড়ে যায়)

ইসমাইল,

সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই,)।

বিষয়: বিবিধ

১০৯৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

207070
১৩ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:০২
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৩ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:০৭
155598
ইছমাইল লিখেছেন : Good Luck Good Luck Happy
207320
১৩ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:২৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর পরিবেশ হতে পারত বিশ্বের শ্রেষ্ঠগুলির একটি। কিন্তু রাজনিতি সবকিছুকে ধ্বংস করেছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File