বিএনপি কি একটি রাজনৈতিক দল?
লিখেছেন লিখেছেন কামরুল আলম ০২ মার্চ, ২০১৩, ১১:৪১:৫৯ সকাল
অবশেষে জামায়াতের পেছনে আসতে হলো বিএনপিকে। আন্দোলন সংগ্রামে তাদেরই নেতৃত্বে থাকার কথা ছিল। কিন্তু একটার পর একটা ইস্যু থাকার পরও ভদ্রতার খোলসে ঘরে বসে আঙুল চুষছিল বাংলাদেশের এ্ প্রধান বিরোধীদল।
যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জামায়াতের ৯ জন শীর্ষ নেতার পাশাপাশি বিএনপি দলীয় ২ জন শীর্ষ নেতাও অভিযুক্ত এবং বিচারাধীন। তারপরও নিজেদেরকে যুদ্ধাপরাধের গন্ধমুক্ত রাখতে জামায়াতকে মাঠ ছেড়ে দিয়েছিল তারা। ভাবনা চিন্তা না করেই শাহবাগের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতেও কার্পন্য করেননি দলটির নেতারা। কারামুক্ত হয়ে জিয়ার মাজারে ফুল দিতে গেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বয়ং মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শাহবাগের আন্দোলনকে গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন বলে সমর্থন দিয়েছিলেন। মীর্জা আব্বাসও শাহবাগী তারুণ্যের জয়গান গেয়ে তাদের ভোটাধিকার যেন অন্য কেউ কেড়ে নিতে না পারে সেজন্য সজাগ থাকতে আহবান করেছিলেন। তার মানে মীর্জা সাহেবরা ধরেই নিয়েছিলেন এই তরুণ প্রজন্ম তাদেরকেই ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আলেম-ওলামাদের আন্দোলন দেখে তাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসে। দেশের ইসলামপ্রিয় তৌহিদী জনতার ভোটের লোভে পড়েই চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন নিয়ে আসে বিএনপি। সর্বশেষ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর তার জনপ্রিয়তার স্রোতে অকাতরে মানুষের প্রাণ বিসর্জনে আর চুপ থাকতে পারেননি তারা। জামায়াতের ২ দিন হরতালের সাথে আরো একদিনের হরতাল দিয়ে সবাইকে রাজপথে নেমে আসার আহবান জানান বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে অনেকেই ‘আপোষহীন নেত্রী’ বলে থাকেন। সরকার কর্তৃক ‘গণহত্যা’ এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের প্রতিবাদে তাঁর এই কর্মসূচিকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। আবার শেষ মুহূর্তে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর পকেটে ঢুকায় ব্যঙ্গ বিদ্রুপও করছেন কেউ কেউ। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কোন পথে হাঁটে বিএনপি?
বিএনপির এই দোদুল্যমান চলা দেখে আজ অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, বিএনপি কি সত্যি সত্যি কোন রাজনৈতিক দল? ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা গ্রহণের পরপর পিলখান ট্রাজেডিতে উল্লেখ করার মতো কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি দলটি। এসময় বিএনপির জায়াগায় আওয়ামীলীগ থাকলে সরকার পতনের ঘন্টা বাজিয়ে ছাড়তো বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ কোন ইস্যুতেই সক্রিয় হতে পারেনি বিএনপি। এক পর্যায়ে সেনা নিবাসের বাড়ি থেকে বেগম জিয়াকে বের করে দেওয়া হলে অশ্রু বিসর্জনের পাশাপাশি হরতালের কর্মসূচি দিলেও খুব একটা সাড়া মেলেনি জনগণের। জনগণের সাথে সম্পৃক্ত ইস্যুতে হরতাল না দিয়ে বেগম জিয়ার বাড়ি কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় হরতাল দেওয়াকে ভাল চোখে দেখেনি জনগণ। শেষ দিকে ইলিয়াস আলীর মতো নেতাকে গুম করার পর হঠাৎ করেই যেন ঘুম ভেঙে গিয়েছিল বিরোধী দলের। তারা লাগাতার বেশ ক’টি হরতাল পালন করে রাজপথে সক্রিয় হতে চেয়েছিল। কিন্তু এসব কর্মসূচিতে পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে কয়েকজন নিহত হওয়ার পর আবার স্তব্ধ হয়ে যায় দলটি। জামায়াতের বিপর্যয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি দলটিকে। উল্টো জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন দন্ডের পরে বিএনপি মনে করেছিল সরকারের সাথে আঁতাত করেছে জামায়াত। তাই ১৮ দলের ব্যানারে আর কোন কর্মসূচি দেওয়া থেকে বিরত থাকে তারা। শেষ পর্যন্ত জামায়াতের সাথেই কাঁধে কাঁধ মেলাল দলটি।
শুক্রবার (১ মার্চ ২০১৩) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে জামায়াত ঘোষিত ২ দিনের লাগাতার হরতালের সাথে আরো ১ দিনের হরতাল কর্মসূচি যোগ করে তৌহিদী জনতাকে রাজপথে নেমে আসার আহবান জানালেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এখন রাজপথে তারা কতটুকু সক্রিয় থাকতে পারেন তার উপরই নির্ভর করছে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।
---000---
কামরুল আলম
সম্পাদক: সোনার সিলেট ডটকম।
বিষয়: রাজনীতি
৮১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন