ঈদের গল্পঃ গরীবের মুখে হাসি
লিখেছেন লিখেছেন কামরুল আলম ৩০ জুলাই, ২০১৪, ০১:৩৭:৩৯ রাত
শালটিয়া ইউনিয়নের বাঘঘোড়া গাঁয়ের মেয়ে হাজেরা বানু। বাঘ আর ঘোড়া দুটোই শক্তিশালী প্রাণী। লোকে বলে এই গাঁয়ের লোকজন বেশি শক্তিশালী হওয়ার কারণেই গ্রামটির নাম ‘বাঘঘোড়া’ রাখা হয়েছিল! হাজেরা বানু এসব কথা তার বাপজানের কাছে বহুবার শুনেছে। হাজেরার বাবা হাশেম মিয়ার বয়স হয়েছে। মেয়েটাকে সেই যে বিয়ে দিয়ে পাইকপাড়া তথা জেলে পাড়ায় পাঠালেন তার পর থেকে আর খুব একটা খবর নেওয়া হয় না। বছরে আধা বছরে এক আধবার মেয়েকে দেখতে গেলেও অল্প সময়ে কি আর প্রাণভরে মেয়েকে দেখা হয়? এদিকে হাশেম মিয়ার স্ত্রী হানিফা বিবিও বারবার তাগিদ দিচ্ছেন মেয়েটাকে নাইওয়র করাতে। মেয়েটার কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে সন্তান এসেছে অথচ সেই সন্তান তার নানা-নানীর কাছে যাবে না তা কি হয়?
হাশেম মিয়া গরীব মানুষ দিন আনে দিন খায়। সারাদিন লোকের বাড়িতে গতর খেটে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত তার দৈনিক আয়। একমাত্র ছেলেটা সারাদিন ভ্যানগাড়ি টানে। গাড়িটা একটা এনজিও থেকে লোন করে কেনা। লোন পরিশোধ হলে গাড়ির মালিকানা পাবে হাশেম মিয়ার পুত্র আব্দুল্লাহ। সেই আশাতেই এখন দিন কাটছে তাদের। সেদিন রাত্রে হাজেরা আর তার কন্যা আমিনা প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল হাশেম মিয়া ঘরে।
হানিফা বিবির একটাই কথা, আব্দুল্লাহর বাপ, তুমি কিন্তু কাইলই আব্দুল্লাহরে পাঠাইবা আমিনারে আনতে। হাশেম মিয়া হাসে। কুপিটা নিভিয়ে কাঁথা বালিশের সাথে দেহটাকে বিছিয়ে আড়মোড়া ভঙিতে বলে, বুঝলা আব্দুল্লাহর মা, আমাগো আমেনা কিন্তু এক্কেরে চাঁদের মতন সুন্দর হইছে।
তুমি কিভাবে জানলা, জানতে চায় হানিফা বিবি। আর কইও না, সেদিন গঞ্জে ওই আনিস মেম্বারের লগে দেখা অইল। হেই কইলো আমেনা নাকি দ্যাখতে খুবছুরত হইছে। হে আরো কি কইল জান? কি কইল? কইল আমেনার দাদী নাকি নাতনির লাগি গরু শিন্নি দিবার মানত করেছে।
কও কি?
ঠিকই কইতাছি। তা ঈদের তো আর বেশি দেরি নাই। তুমি ওগো কখন আনাইবায়?
ভাবতাছি ঈদের পরেই আনাই।
আরে না, ঈদের অহনও তিন হপ্তা দিরঙ আছে। আমি কই কি, তুমি কাইলই আব্দুল্লাহরে পাডাও। মেয়েটা আমার মা হইছে, তাই বইল্যা কি নিজের মায়েরে দেখবার মুন চায় না?
ঠিক আছে, আমি তাইলে কাইলই আব্দুল্লাহরে পাডাইতাছি। অহন ঘুমাও তো। ঘুমাইতে দিরঙ অইলে পরে ফজরের নামাজটা ধরতে পারুম না। ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা, আমুতু ওয়াহইয়া’ বলে চোখ বন্ধ করল হাশেম মিয়া। লোকটা বরাবরই ধর্মপ্রাণ মানুষ। ছোটকালে মসজিদ মক্তবে গিয়ে কুরআন আর নামাজ পড়তে শিখেছিল। সেই সম্বল নিয়েই সে এখনও নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। শখ করে নিজের ছেলের নাম আব্দুল্লাহ রেখেছিল। আব্দুল্লাহ মানে আল্লাহর গোলাম। ভেবেছিল ওকেও নিজের মতো নামাজী হিসেবে তৈরি করবে। কিন্তু নিয়তি তার স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি। আব্দুল্লাহর এসব ধর্ম কর্ম মোটেই পছন্দ না। ছোটবেলা থেকেই ওর এইসব নীতি কথা পছন্দ হতো না। আব্দুল্লাহর কথা হলো আল্লাহ যদি এতই দয়ালু হন, তাহলে তিনি আমাদের কেন গরীব রাখলেন। মহা ধনী না বানালেও অন্তত খেয়ে পরে থাকার মতো অবস্থায় তো আল্লাহ আমাদের রাখতে পারতেন। আমাদের এত কষ্ট দেখেও কি আল্লাহর দয়া হয় না? হাশেম মিয়া অনেক বুঝিয়েছে এসব বিষয়ে। বলেছে, দেখ বাবা আল্লাহ মানুষরে অভাব অনটন বালা মুছিবত দিয়ে তাঁর বান্দাগো পরীক্ষা করবার চায়। এই পরীক্ষায় পাস দিলে আল্লাহ আমাগো আখেরাতে তার ফল দিব। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
বাড়ির সামনে রিক্সা ভ্যানের বেল বাজছে শুনে ঘর থেকে বের হলো সোহেল। কোলে তার প্রিয় ভাতিজি আমিনা। ওর কপালে কাজলের কালো টিপ আর মুখে নজরকাড়া হাসি।
আরে আব্দুল্লাহ ভাই, আপনে? বলে এগিয়ে গেল সোহেল। নিজের তালতো ভাইকে চিনতে একটুও ভুল করে নি সোহেল।
হ আমি আইয়া পড়লাম আমিনারে নিতে, বলতে বলতে নিজের ভাগনীকে কোলে টেনে নিল আব্দুল্লাহ। আমিনাকে আদর আর চুমা দিতে দিতে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো আব্দুল্লাহ। হাজেরা তখন গোয়াল ঘরের গোবরগুলো হাত দিয়ে ঝুড়িতে ভরছিল। আজ ঘরটা লেপতে হবে। হঠাৎ নিজের সামনে মার পেটের ভাইকে দেখে যারপর নাই আনন্দিত হয়ে উঠল হাজেরা।
এতদিন পর তোগো মনে পড়ল আমার কথা? অভিমানের সুরে ছোট ভাইকে শোধাল সে।
কি যে কস্ বুবু, তুই কি ভাবতাছস আমরা তোরে ভুইল্যা গেছি। মা য়ে তোর কথা ভাবতে ভাবতে একবারে শেষ হইয়া যাইতাছে। বাপজানও কথা কয় তোরে নিয়া।
এতই যদি ভাবে তোয় আমারে দেখবার আয় না ক্যান?
বুবু তুই হুদাই ভাবছিস্। তুই তো জানস চাইলেই ঘরবাড়ি ছাইড়া আওন যায় না। তাছাড়া বাপজান তো রোজই মাইনসের বাড়িতে কামে যায়। আওনের সময় কই।তুই তো আইবার পারিস মাঝে মাঝে। হের লাইগ্যাই তো আইলাম। তোয় আইজ মুই কিন্তু তোগোরে লগে লইয়া যাইতে আইছি।
কস কি?
হ, হের লাইগ্যাই তো বাপজান মোরে পাডাইল।
কে আইলোরে বউ? বাইরের কথার আওয়াজ শুনে ভিতর থেকে করিমন বিবি হাজেরার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন। মোর ভাই আইছে মা, আব্দুল্লাহ। তাইলে ঘরে লইয়া আয়, উঠানে খাড়াইয়া কথা কইতাছস ক্যান? হাজেরার এতক্ষণ আবেগে বিষয়টি খেয়ালই হয়নি। ভাইকে ঘরে বসতে দিবে। সে তাড়াতাড়ি গোবরওয়ালা হাত পরিস্কার করে আব্দুল্লাহকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। ভাইকে বসতে দিল একটি মোড়ায়। মেম্বার বাড়ি থেকে এই মোড়াটি সে নিয়ে এসেছিল গত বছর। আব্দুল্লাহ তার বোনের হাতে একটি পলিথিনের ব্যাগ ধরিয়ে দিল। এসব আননের কি দরকার ছিল ভাই? হাত বাড়িয়ে ব্যাগটি নিতে নিতে বলল হাজেরা। মুখে এমন কথা বললেও খুশিতে আটখানা হলো সে। কারণ তার ভাই যদি খালি হাতে আসতো তাহলে তার শ্বাসুড়ি করিমন বিবি অনেক কথা শোনাতেন। একবার হাজেরার বাবা হাশেম মিয়া খালি হাতে চলে এসেছিলেন। সেই দিন দুপুরে না খাইয়ে বিদায় করা হয়েছিল তাকে। করিমন বিবি বলেন, এইটা হইল আমাগো রসুমাত। কুটুম বাড়ি গেলে মিঠাই নিয়া যাইতেই হইব। নইলে আবার কিসের কুটুম্ব?
আব্দুল্লাহর ভাগ্যই বলতে হবে। আজ গফুর জেলের জালে বড় দুইটা কাতলা আর বেশ কিছু ছোট মাছ ধরা পড়েছে। বরাবরের মতো গফুর বাড়ি এসে এক খাবলা ছোট মাছ আলাদা করে বাজারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে যাচ্ছিল। তখনই দেখল পুকুরপাড়ে আব্দুল্লাহর ভ্যান গাড়িটি রাখা।
হেলিকপ্টার নিয়া কেডা আইলোরে? গফুর অনুমান করছিল তার শালাই হবে। আব্দুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল, কেমুন আছেন ভাইসাব?
ও তুমি, তা শালা বাবু কি আইজ হঠাৎ কইরা পথ ভুইল্যা গেছিলা।
ভাইসাব কি যে কন! আমি আইছি বুবুরে আর আমিনারে নিতে।
নিতে মানে? কই নিবা?
ক্যান, আমাগো বাড়ি।
কইলেই অইল? তোমার বুবুরে নিতে চাও ন্যাও। তয় আমার মাইয়ারে কিন্তু নিবার দিমু না।
ক্যান ভাইসাব, আমিনার কি নানা বাড়ি যাওয়ার শখ নাই।
জিগাও না ওরে। কিরে তুই যাইবি আমার লগে? আমিনাকে চুমা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো আবদুল্লাহ।আমিনা কেবল হাসছে।
দেখছো ভাইসাব, ও যাইবার কথা হুইনা কেমন হাসতেছে।
নিবার যখন চাইছো ন্যাও, তয় দুই দিনের বেশি কিন্তু ওগো রাখতে পারবা না।
ক্যান ভাইসাব, মাত্র দুই দিন ক্যান। মায়ে তো কইচে কমসে কম এক হপ্তা ওগোরে রাখবে। এ সময় পাশের ঘর থেকে গফুরের মা বললেন, তোমার মায়ে আমার নাতনিরে খাওয়াইব কি এতদিন? একে তো রোজার মাস।তাও আবার নিদানের দিন।
হেই নিয়া আপনেরে ভাবতে অইব না মাওইজি। আমার ভাগনীর জন্য আমি সব করবার পারুম।
তাইলে কিন্তু ঈদের আগে আর বইন-ভাগনীরে ফেরত পাঠাইবার পারবা না।
আপনের অনেক দয়া মাওইজি! ওগোরে লগে লইয়া ঈদ করবার যে আমাগো বড় সখ।
তা ভাইগনীরে কি রহম ঈদের জামা কিন্যা দিবা হুনি?
দিমু মাওইজি! বাজারের সেরা ঈদের জামাটাই আমার ভাগনীরে কিন্যা দিমু।
আব্দুল্লাহকে দেখে ছোট কাতলা মাছটা রেখে দিল গফুর। আর কিছু ছোট মাছও বাড়িয়ে রাখলো বাড়ির জন্য। বাদ বাকি নিয়ে রওয়ানা দিল গফরগাঁও বাজারের উদ্দেশ্যে। আমিনা জন্মের পর এই প্রথম নানাবাড়ি এল। নানা-নানীও এই প্রথম তাদের নাতনীকে দেখছে। নাতনীর আগমনে হাশেম মিয়া দুই তিনদিন কোথাও কাজে যায় নাই। আব্দুল্লাহও ভাগনীকে নিয়ে এসে ভ্যানগাড়ি নিয়ে বের হয় নাই কিছুদিন। ঘরে যা চাল-ডাল ছিল তা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ায় বাপ বেটা দুজনেরই খেয়াল হলো কাজের খোঁজে বেরোতে হবে। হাশেম মিয়া আব্দুল্লাহকে ডেকে বলল, দ্যাখ বাবা, আল্লাহ-খোদার নাম নিয়া ভ্যান লইয়া একটু গঞ্জের দিকে রওয়ানা দেয়। কিছু রোজগার করে আনতে না পারলে তোর বইন-ভাগনীর কাছে যে মান সম্মান হারাইতে অইব।
হ বাপজান, তুমি ঠিকই কইছো। আমি কাইলই গঞ্জে যাইতেছি। তাছাড়া আমেনার দাদী আমারে চ্যালেঞ্জ দিয়াছিল ভাগনীরে ঈদের জামা কিন্যা দিতে পারমু কি না। আমি কিন্তু বইলা দিছি বাজারের সেরা জামাটাই আমি ওরে কিন্যা দিমু। ঠিকই কইছস। তাছাড়া তোর বইনের লাগিও একখানা ভালা শাড়ি কিনন দরকার।
আজ ক’দিন যাবত হাশেম মিয়া কাজের ধান্দায় ঘুরেও কারো বাড়িতে কোন কাজ পাচ্ছে না। আরিফ মেম্বারের কাছ থেকে কিছু টাকা কর্জ করে আপাতত সংসার চালাচ্ছে। আশায় আছে আব্দুল্লাহ গঞ্জ থেকে ফিরলেই কর্জ শোধ করে দিবে। দেখতে দেখতে ঈদ নিকটবর্তী হয়ে গেল। শবে ক্বদরের রাত্রে আব্দুল্লাহ খালি হাতে গঞ্জ থেকে ফিরে এল।
কি খবর, বাবা আব্দুল্লাহ, কেমন রোজগার অইল? গভীর আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল হাশেম মিয়া। খবর ভালা না বাপজান। দেড় হপ্তা গঞ্জে ঘুইরা মাত্র আড়াইশ ট্যাকা রোজগার অইছে। তার মধ্যে খরচাপাতি বাদে মাত্র চল্লিশ ট্যাকা বাঁচাইবার পারছি!
কস্ কি আব্দুল্লাহ! এহন তাইলে আমাগো কি অইব। মেয়ে-নাতনীরে ঈদের জামা ক্যামনে দিমু? আর কর্জের ট্যাকাই বা শোধ দিমু ক্যামনে?
হ বাপজান? এহন আমাগো কি হইব?
আল্লাহরে কওয়া ছাড়া এহন আর কিছুই করার নেইরে আব্দুল্লাহ। গভীর নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল হাশেম মিয়া।
রাখো তোমার আল্লারে কওয়া। তোমার আল্লায় কি ট্যাকা-পয়সা কিছূ দিবনি তারে কইলে? ধৈর্যহারা আব্দুল্লাহ চেঁচিয়ে উঠল।
হ দিব। হাশেম মিয়া জোর গলায় বলল। তুই আমার লগে নামাজে চল। আইজ ক্বদরের রাইত। হুনছি এই রাইতে ভাগ্য নির্ধারণ অয়। এই রাইতে আল্লার কাছে চাইলে নিশ্চয়ই আল্লায় দিব।
বাপ-বেটা মিলে মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে যথাক্রমে এশা, তারাবীহ ও বিতরের নামাজ আদায় করল। তারপর ইমামের সাথে দোয়ায় শরীক হলো। আব্দুল্লাহ এর আগে কখনোই আল্লাহর কাছে এত আন্তরিকভাবে কিছু চায়নি। আজ যখন ইমাম সাহেব দোয়া করছিলেন, আল্লাহ আমাদের সকলে মনের আশা পূরণ করে দাও। তখন আব্দুল্লাহ মনে মনে বলল, আল্লাহ আমার ভাগনিরে যেন বাজারের সেরা জামাটা কিন্যা দিবার পারি, তুমি হেই ব্যবস্থা কর।
নামাজ থেকে বের হতেই ফিরোজের সাথে দেখা হল আব্দুল্লাহর। ফিরোজ মিয়া এই গ্রামেরই ছেলে। দীর্ঘদিন থেকে সিলেটে রিক্সা চালায় বলে গ্রামে খুব একটা দেখা যায় না। আব্দুল্লাহকে দেখেই ফিরোজ বলল, কিরে আব্দুল্লাহ, দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
আর কইস না ফিরোজ। মনডা বেজায় খারাপ আছে।
ক্যান্? কি হয়েছে? আব্দুল্লাহ ফিরোজকে সবকিছু খুলে বলল। ফিরোজ বলল, তুই কি চাকরী করবি?
তুই কি কইতাছস? মূর্খ মাইনসের আবার চাকরী?
আরে করবি কি না তাই বল। আমি এখন একটা পানির কোম্পানিতে চাকরী করি। মাসে ভাল মাইনে পাই।
পানির কোম্পানিতে কি চাকরী করস তুই?
আরে ভ্যান গাড়ি চালাই আর কি।
মাসে কত মাইনে পাস্?
সব মিলিয়ে দশ এগারো হাজারের কম না!
বলিস কিরে, এত ট্যাকা?
হ, হেরলাইগাই জিগাইলাম, তুই করবি কি না?
আমার কি চাকরী হইব? ক্যান্ হইব না। আমি কইলেই হইবো। আমাগো হামহাম কোম্পানির এমডি ছার খুবই ভালা মানুষ। দাঁড়া আমি এহনই ফোন করতাছি।
ফিরোজ পকেট থেকে মোবাইল বের করে নাম্বার টিপতে লাগলো।
‘হ্যালো ছার, আমি ফিরোজ কইতাছি।’ ‘ছার, একটা ভাল ভ্যান ড্রাইভার পাইছি। আমাগো গ্রামের পোলা। খুব ভাল পোলা ছার।’ ‘আচ্ছা ছার, ও ঈদের পরদিনই চইলা আইব’।
মোবাইল অফ করতেই আব্দুল্লাহ আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল, তোর ছার কি আমারে যাইতে কইছে?
যাইতে কইছে মানে, তোর চাকরী হয়ে গেছে আব্দুল্লাহ। কইছিলাম না, আমি কইলে ছার না করতে পারব না।
তোরে যে কি বলে ধন্যবাদ দিমু?
আরে ধুর, ধন্যবাদ ক্যান্ দিবি? বল শুকুর আলহা’মদুলিল্লাহ! তোর চাকরীর ব্যবস্থা তো আল্লায় করছে।
হ, না মানে…। আব্দুল্লাহ আমতা আমতা করতে লাগলো।
ফিরোজ বলল, হ আমাগো ছার কইছে যে কোন কাজে কামিয়াব হইলে আল্লাহ পাকের শোকর গোজার করা লাগে।
হ বুঝছি এহন, হের লাইগাই বাপজান কইছে আল্লাহর কাছে ক্বদরের রাইতে কিছু চাইলে পাওয়া যায়। কিন্তু আমি তো আল্লাহর কাছে আমার ভাগনীরে এই ঈদে একটা লাল টুকটুক জামা কিন্যা দিবার তৌফিক চাইছিলাম। তয় চাকরী তো ঈদের পরে পামু।
সবকিছু শুনে ফিরোজ ওকে সান্তনা দিল। আর পকেট থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে বলল, এই নে, পনেরোশ টাকা তোগো সবার ঈদের জন্য। আর পাঁচশ টাকা তোর সিলেট যাওয়ার ভাড়া। আব্দুল্লাহ হা করে ফিরোজের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
কিরে কি হইল আব্দুল্লাহ?
না মানে কইছিলাম কি, তোর ট্যাকা আমি নিমু ক্যান্?
আরে তুই আমার বন্ধু না?
হ বন্ধুই তো।
তাইলে এত শরম করতাছস ক্যান? আর তাছাড়া তুই তো আগামী মাসেই আমার মতো মোটা অংকের মাইনে পাবি। তখন তুই আমার ট্যাকা ফেরৎ দিবি।তোগো কমপানিতে আমার বেতন কত হইবরে ফিরোজ?
পরথম অবস্থায় আট হাজারের মতো পাইবি।
আলহা’মদুলিল্লাহ! এইবার আমি বুঝবার পারলাম আল্লাহ সত্যি আমাগো কথা হুনেন। আমি ভাবতাম গরীবরে আল্লায় ভালবাসে না। এহন দেখতাছি আমার মতো গরীবের মুখেও আল্লায় হাসি ফুটাইতে জানে।
আব্দুল্লাহ তার বাবার সামনে গিয়ে বলল, বাপজান, আমি কথা দিতেছি আর কোনদিন নামাজ কালাম বাদ দিব না। আল্লাহর কাচে আইজকা আমি যা চাইছিলাম তা পাইছি। দোয়া শেষ করার এক ঘন্টার মধ্যেই পাইছি। ঘটনা শুনে হাশেম মিয়ার চোখে পানি চলে এল।
বিষয়: সাহিত্য
১৬৬৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঈদ মোবারক!
মন্তব্য করতে লগইন করুন