বাংলা ছন্দের প্রাথমিক ধারনা

লিখেছেন লিখেছেন কামরুল আলম ০৩ মে, ২০১৪, ১১:৪০:৪২ সকাল



কবিতা বা ছড়া লেখা কঠিন কোন কাজ নয়। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে কাক এর সংখ্যার চেয়ে কবির সংখ্যা নাকি বেশি। হতে পারে, একজন কবি হিসেবে এরকম কথা শুনে গর্ব বোধ করি! কারণ কবিদের অবজ্ঞা করে এমন কথা বলা হলেও আমি মনে করি সত্যি যদি দেশে কবির সংখ্যা কাকের সংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয়ে যেত তাহলে মন্দ হতো না। কিন্তু মাঝে মাঝে খারাপ লাগে যখন দেখি অনেক কবি বা ছড়াকার ছন্দ সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা ছাড়াই কাব্য চর্চা করে যান। শুরুটা ছন্দজ্ঞান ছাড়াই হবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন লিখতে লিখতে সাহিত্য জগতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার মতো সময় চলে আসবে তখনও কি ছন্দ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা আমাদের উচিত নয়? অনেক কাব্য প্রতিভা আছেন যারা ছন্দজ্ঞান ছাড়াই নির্ভুল কবিতা বা ছড়া রচনা করতে পারেন। এটা অনেক সময় হয়ে গেলেও তাদের চলার পথে যে কোন মুহূর্তে ছন্দ পতন ঘটতে পারে। তাই ছন্দ সম্পর্কে অন্তত প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করাটা কবিতা বা ছড়া সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

ছন্দ কাকে বলে?

বিভিন্ন ছন্দ বিশেষজ্ঞ ছন্দকে বিভিন্ন আঙ্গিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। আসুন প্রথমে তাদের বক্তব্যগুলো এক নজরে দেখে নেই।

প্রখ্যাত ছান্দসিক প্রবোধচন্দ্র সেনের মতে ‘শিল্পিত বাক্রীতির নামই ছন্দ।’

অমূল্যধন মুখোপধ্যায় বলেছেন, ‘ যেভাবে পদবিন্যাস করিলে বাক্য শ্রুতিমধুর হয় এবং মনে রসের সঞ্চার হয়, তাহাকে ছন্দ বলে।’

তারাপদ ভট্টাচার্য ছন্দ বলতে ‘গতি সৌন্দর্য’ বুঝিয়েছেন এবং তিনি সাহিত্যিক ও ব্যবহারিক অর্থে ছন্দকে ‘ভাষার অন্তর্গত প্রবহমান ধ্বনিসৌন্দর্য’ বলে উল্লেখ করেছেন।

কেউ কেউ ‘নির্দিষ্ট সংখ্যক অক্ষর ও যতিবিশিষ্ট সুখপাঠ্য পদ-বিন্যাসই ছন্দ’- এ ধরনের সংজ্ঞাও প্রদান করেছেন।

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘বাক্যস্থিত পদগুলিকে যেভাবে সাজাইলে বাক্যটি শ্রুতিমধুর হয় ও তাহার মধ্যে ভাবগত ও ধ্বনিগত সুষমা উপলদ্ব হয়, পদ সাজাইবার সেই পদ্ধতিকে ছন্দ বলে।’

অধ্যাপক মাহবুবুল আলম তাঁর ‘বাংলা ছন্দের রূপরেখা’ গ্রন্থে ছন্দের সূত্র নির্দেশ করতে গিয়ে বলেন, ‘বাক্য-পরম্পরায় ভাষাগত ধ্বনি প্রবাহের সুসমঞ্জস, সঙ্গীতমধুর ও তরঙ্গ-ঝঙ্কৃত বঙ্গি রচনা করা হয় পরিমিত পদবিন্যাসরীতিতে- তাকে ছন্দ বলেন।’

অতএব, বিশেষজ্ঞদের উপরোক্ত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, ‘ছন্দ হচ্ছে কোন ভাষার এমন এক ধরনের পদবিন্যাসরীতি যা বাক্যকে তরঙ্গিত, শ্রুতিমধুর এবং সুখপাঠ্য করে তোলে।

ছন্দ কেন প্রয়োজন?

কবিতা বা ছড়ার প্রাণ হচ্ছে ছন্দ। গদ্যে যে কথাটি সাধাসিধে বলে মনে হয় সে কথাটাকেই ছন্দোবদ্ধভাবে বললে অনেক বেশি শ্রুতিমধুর শোনায়। মানুষের মনে রাখাটাও সহজ হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ লক্ষ্য করুন- ‘এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে/ তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।’ এই দুটি লাইনকে গদ্যের ভাষায় লিখলে কেমন লাগে? ‘এইখানে ডালিম গাছের তলায় তোর দাদীর কবর, তিরিশ বছর থেকে দুই নয়নের জলে ভিজায়ে রেখেছি।’

এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘শুধু কথা যখন খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে তখন কেবলমাত্র অর্থকে প্রকাশ করে। কিন্তু সেই কথাকে যখন তির্যক ভঙ্গি ও বিশেষ গতি দেওয়া যায় তখন সে আপন অর্থের চেয়ে আরও কিছু বেশি প্রকাশ করে।’

(আগামী পর্বের আলোচ্য বিষয়- বাংলা ছন্দের উপাদান)।

তথ্যসূত্র: বাংলা ছন্দের রূপরেখা- মাহবুবুল আলম

বিষয়: সাহিত্য

২৯৪২ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

216818
০৩ মে ২০১৪ সকাল ১১:৫৪
বাকপ্রবাস লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ Rose Rose
০৩ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৭
165173
কামরুল আলম লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও প্রিয় বাকপ্রবাস।
216821
০৩ মে ২০১৪ দুপুর ১২:০৬
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : লাইক
০৩ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৭
165174
কামরুল আলম লিখেছেন : থ্যাংকস্ ভাই।
216823
০৩ মে ২০১৪ দুপুর ১২:১৪
bojrokonTho লিখেছেন : dhonnobad..
০৩ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৭
165175
কামরুল আলম লিখেছেন : থ্যাংক ইউ।
216833
০৩ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৪২
হতভাগা লিখেছেন : আগে যখন বিভিন্ন কবিদের কবিতা পড়তাম তখন ছন্দ মিলিয়ে পড়তে খুব ভাল লাগতো এবং তাড়াতাড়ি মুখস্থও হয়ে যেত । এসব কবিতার পুরোটা বা কয়েক লাইন পরীক্ষায় আসতো ।

রবীন্দ্রনাথের বীর পুরুষ কবিতা পুরোটা মুখস্থ ছিল । ফ্লাস ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষায় এসেছিল সেটার শেষের ৮ লাইন লিখার জন্য ! প্রথমে একটু থতমত খেয়ে গেলেও পুরোটা পড়া ছিল বিধায় লিখতে পেরেছিলাম । আমাদের সাথে যে ছেলেটি বৃত্তি পেয়েছিল সে আমার থেকে শুনে ও দেখে লিখেছিল ।

যা হোক , এখন কোন কবিতা দেখলে ছন্দ মিলিয়ে পড়তে চেষ্টা করি । ৩-৪ লাইন পড়ার পর যখন দেখি যে ছন্দ মেলানো যাচ্ছে না তখন ক্ষান্ত দেই । তাই এখন কারও কবিতা পেলেও পড়তে চাই না যদি ছন্দ না মিলানো যায় ।

আচ্ছা , এখনকার কবিতা গুলো কি খুব উচ্চমার্গের কবিতা যে ছন্দ মিনালো যায় না ?

নজরুল ইসলাম , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ কবির যে কবিতা গুলো আমরা পড়তাম সে গুলো কি এখনকার কবিদের কবিতার তুলনায় ছড়া ?
০৩ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫০
165176
কামরুল আলম লিখেছেন : আগেকার দিন কি এ্রখন আর আছে? তবে 'ছন্দমিল' ছাড়া শেষ দিকে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও কিছু কবিতা লিখে গেছেন। এখন আধুনিক যুগ! তাই কবিতায় মিলযুক্ত ছন্দ খুঁজে পাওয়া কঠিনই বটে। তথাপিও ছন্দ ছাড়া কবিতা হয় না এটাই সত্য। হতে পারে 'অন্তমিল' ছাড়া গদ্য কবিতা। কিন্তু সেখানেও ছন্দ থাকতে হয়। আমার লেখায় এ বিষয়গুলো আলোচনায় রাখার চেষ্টা করবো।
216843
০৩ মে ২০১৪ দুপুর ০১:১০
egypt12 লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে Rose; তবে এই ব্লগে কবিতার দাম কম :(
০৩ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৬
165172
কামরুল আলম লিখেছেন : হ্যাঁ ভাই, আমিও জানি এই ব্লগে রাজনৈতিক প্যাঁচাল বেশি চলে। তারপরও কিছু কবিতা প্রেমিক থাকতে পারে সেই আশায়.....
216848
০৩ মে ২০১৪ দুপুর ০১:২১
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো, পরবতী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ছন্দ বিষয়ে আমারও লেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু ব্যস্ততার কারনে হয়ে উঠছে না, আপনি চালিয়ে যান...শুভ কামনা রইলো
০৪ মে ২০১৪ রাত ০২:১২
165264
কামরুল আলম লিখেছেন : শুভকামনা আপনার জন্যেও।
216908
০৩ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:০৪
খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : কামরুল ভাই ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল লেগেছে।
আপনি মনে হয় অনেক দিন পরে আসলেন। কোথায় ছিলেন? আমি হাবিবুল্লাহ।
আচ্ছা ভাই, একটা ছড়া একবার আপনার ব্লগেও মনে হয় দেখেছিলাম। পরে অনেকের ব্লগেই দেখলাম। পরে সন্দেহে পড়ে গেলাম আসল লেখক কে?
ছড়াটি হলো
এই ছবিটা আমার গাঁয়ের এই ছবিটা মায়ের
এই ছবিটা আমার বোনের নূপুর পরা পায়ের
........
......।
০৪ মে ২০১৪ রাত ০২:১৪
165265
কামরুল আলম লিখেছেন : আপনি কেমন আছেন? আসলে এসবি থেকে টুডে টুমরো হয়ে অনেক পথ পাড়ি দিতে হলো তো? তাই অনেক দিন দেখা হয় না! না ভাই, এ ছড়াটি আমার লেখা নয় আর আমার ব্লগেও কখনো শেয়ার করেছি বলে মনে পড়ছে না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File