সাকা চৌধুরীর রায় লেখা হয়েছে আইন মন্ত্রনালয়ে

লিখেছেন লিখেছেন ডাক দিয়ে যাই ০১ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:৩২:১৯ রাত

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার রায় লেখা হয়েছে আইন মন্ত্রনালয়ে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে যে রায় দেয়ার কথা রয়েছে সেই রায়ের কপি পাওয়া গেছে ভারপ্রাপ্ত আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হকের অফিসের একটি কম্পিউটারে। এতে আরো যে বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে তা হল- বিচার শেষ হবার আগেই রায় লেখা শুরু হয়েছে। ফাইলের তথ্যে দেখা যায় ২৩ মে রায় লেখা শুরু হয়েছে, যখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ চলছিল। এ তথ্যগুলো পাওয়া যায় http://justiceconcern.org/ নামক ওয়েব সাইেট। যেখানে রায়ের খসড়া এবং ফাইনাল কপি আপলোড করা হয়।

১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধী মোট ২৩ টি অভিযোগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছিল। সেখান থেকে মোট ১৭টি অভিযোগের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হাজির করে। যেহেতু রাষ্ট্রপক্ষ ১৭টি অভিযোগের পক্ষে সাক্ষী হাজির করেছে, তাই এ ১৭টি অভিযোগের বিষয়ে রায় লেখা হয়েছে মর্মে দেখা যায় আইন মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া রায়ের কপিতে। আইন মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া আজকের রায়ে দেখা যায়- ১৭টি অভিযোগের মধ্যে মোট ৯টি অভিযোগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আটটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

২৩টি অভিযোগের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ছয়টি অভিযোগের পক্ষে কোন সাক্ষী হাজির করেনি। সে ছয়টি অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমানে ব্যর্থ হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

১৭টি অভিযোগের মধ্যে যে ৯টি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সেগুলো হল ঃ

 ২ নং অভিযোগ ঃ মধ্য গহিরায় গণহত্যা।

 ৩নং অভিযোগ ঃ নূতন চন্দ্র হিংস হত্যা।

 ৪নং অভিযোগ ঃ জগৎমল্ল পাড়া গণহত্যা।

 ৫ নং অভিযোগ ঃ সুলতানপুরে নেপাল চন্দ্র ও অপর তিনজনকে হত্যা।

 ৬ নং অভিযোগ ঃ ৬৯ পাড়া গণহত্যা।

 ৭ নং অভিযোগ ঃ সতিশ চন্দ্র পালিত হত্যা।

 ৮ নং অভিযোগ ঃ মোজাফফর ও তার ছেলে শেখ আলমগীর হত্যা।

 ১৭ নং অভিযোগ ঃ নিজাম উদ্দিন আহম্মদকে অপহরণ ও নির্যাতন।

 ১৮ নং অভিযোগঃ সালেহউদ্দিন আহমদকে অপহরণ ও নির্যাতন।

১৭টি অভিযোগের মধ্যে যে ৮টি অভিযোগ থেকে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে খালাস দেয়া হয়েছে সেগুলো হলোঃ

 ১ নং অভিযোগ ঃ গুডস হিলে সাতজনকে অপহরণ করে ও নির্যাতন করে।

 ১০ নং অভিযোগ ঃ মানিক ধরের বাড়ি লুট।

 ১১ নং অভিযোগ ঃ বোয়াল খালী গণহত্যা।

 ১২ নং অভিযোগ ঃ বিজয় কৃঞ্চ ও দুইজনকে হত্যা।

 ১৪ নং অভিযোগ ঃ হানিফ হত্যা।

 ১৯ নং অভিযোগ ঃ মাহবুব আলম হত্যা।

 ২০ নং অভিযোগ ঃ এখলাস হত্যা।

 ২৩ নং অভিযোগ ঃ সলিমুল্লাহর উপর নির্যাতন।

যে ৬টি অভিযোগের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করেননি সেগুলো হলোঃ ৯, ১৩, ১৫, ১৬, ২১ এবং ২২। রায়- এ লেখা হয়েছে এ ৬টি অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।

যেখানে পাওয়া গেল ফাইলটি ঃ আইন মন্ত্রণালয়ের ষষ্ঠ তলার একটি কম্পিউটারের ডি-ড্রাইভে "Local Disk (DHappy" এই রায়ের কপি পাওয়া যায়। কম্পিউটারের প্রত্যেকটি ফাইল বা ডকুমেন্টের উৎস নির্ণয়ক তথ্য ঐ ফাইল/ডকুমেন্টে সংরক্ষিত থাকে। এই তথ্য ঐ ফাইল বা ডকুমেন্টের প্রপারেটিস অপশনে গেলে পাওয়া যায়। এই রায়ের কপিটি যে ফাইল পাওয়া গেছে তার প্রপারটিস পরীক্ষা করে নি¤েœাক্ত তথ্য পাওয়া যায়।

“ডি ড্রাইভ” এর “আলম” নামক ফোল্ডারের সাব ফোল্ডার “ডিফারেন্ট কোর্টস এন্ড পোস্ট ক্রিয়েশন” এর মধ্যে আরেকটি সাব ফোল্ডার “চীফ প্রসিকিউটর-ওয়ার ট্রাইব্যুনালস” এর মধ্যে রাখা রায়ের খসড়া কপিটির নাম ছিল “সাকা ফাইনাল-১”। ইংরেজিতে উক্ত ফাইল পাথটি হলো- D:\Alam\DIFFERENT COURTS n POST CREATION\War Crimes Tribunal\Chief Prosecutor – War Tribunal\saka final – 1.doc.

রায়টি লেখা চূড়ান্ত করার পরে খসড়া কপির নাম‘saka final – 1’ ’ পরিবর্তন করে রাখা হয়- `ICT BD Case No. 02 of 2011 (Delivery of Judgment) (Final)’

আলম নামের যে ব্যক্তির ফোল্ডারে ফাইলটি পাওয়া গেছে সেই আলম হলেন আইন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক এর কম্পিউটার অপারেটর।

বিচার শেষের আগেই রায় লেখা শুরু ঃ

আইন মন্ত্রনলায়ের যে ফাইলটিতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের কপি পাওয়া গেছে সেই ফাইলটির প্রপার্টিজ অপশনে দেখা যায় ফাইলটি তৈরি করা হয়েছে ২০১৩ সালের ২৩ মে ১২টা ১ মিনিটের সময়। ফাইলের সাইজ ১৬৭ কেবি। পৃষ্ঠা ১৬৪। এডিট করা হয়েছে ২৫৮৭ মিনিট পর্যন্ত।

ফাইল অনুযায়ী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় লেখা শুরু হয় ২৩ মে। কিন্তু ওই সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহন চলছিল। গত ১৪ই অগাষ্ট’১৩ইং তারিখে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার সমস্ত কার্যক্রম শেষ হয় এবং রায়ের জন্য তারিখ অপেক্ষমান ঘোষনা করা হয়। সে অনুযায়ী দেখা যায়, বিচার শেষ হবার তিন (০৩) মাস আগেই রায় লেখা শুরু হয় আইন মন্ত্রনালয় থেকে।

চৌধুরীর প্রতি ক্ষোভ :

রায়ের এক স্থানে সালাহউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখা হয়েছে যে, বিচারপতিগণ আদালত কক্ষ ত্যাগ করার সময় তিনি উঠে দাঁড়াতেন না। এছাড়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মাঝে মধ্যে ট্রাইব্যুনালে বিচারপতিদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার সাহেব বলে সম্বোধন করতেন। এ বিষয়টিও রায়ে ক্ষোভের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিষয়: রাজনীতি

১৫০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File