আইসিটি’র নিরপেক্ষতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার জন্য আন্তর্জাতিক তদন্ত করুন। - লর্ড এভেবারী ও লর্ড কার্লাইল

লিখেছেন লিখেছেন ডাক দিয়ে যাই ১৪ জুন, ২০১৩, ০১:১২:৩৯ রাত

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আাদলতের কার্যক্রম নিয়ে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করলেন লর্ড এরিক এভেবারী এবং লর্ড কার্লাইল। জেনেভাস্থ ই্উনাইটেড নেশনস হাই কমিশন ফর হিউম্যান রাইটস – এর হাই কমিশনার নাভী পিল্লাই বরাবর লিখিত এক চিঠিতে তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

চিঠিতে তারা বলেন, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সর্বদলীয় হিউম্যান রাইটস গ্রুপ এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। লর্ড কার্লাইল এবং লর্ড এরিক এভেবারী বলেন, বেশ কিছুকাল থেকেই আন্তর্জাতিক আদালতের কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন কার্যক্রমকে সমালোচনা করে বেসরকারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিবৃতি আপনার দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকবে। একজন অভিযুক্তের মৃত্যুদন্ডাদশে নিয়ে করা আপীলের কার্যক্রম শেষ হয়ে তা এখন রায়ের অপেক্ষায় আছে। এই প্রেক্ষাপটে আপনার উচিত হবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে একটি নিরপেক্ষ প্রতিনিধি দলেকে পুরো বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষন করার জন্য আমন্ত্রন পাঠানোর অনুরোধ জানানো। এই প্রতিনিধি দল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম পর্যালোচনা করবে। কারাবন্দী বিচারাধীন ব্যাক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো জানবে।

চিঠিতে তারা আরো বলেন, আমরা পুরোপুরি বিচার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি। যারা অন্যায় করেছে দায়মুক্তির জন্য তাদের বিচার হওয়া জরুরীও বটে। তবে বিচার পক্রিয়ায় সরকারের দায়িত্ব হলো মানবাধিকার নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া যথাযথ অনুসরণ করা এবং নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান থেকে বিচ্যুতির অর্থ হলো কাঙ্খিত শান্তি, নিরাপত্তা এবং জাতির কল্যাণ অর্জন ব্যহত হবে। নির্যাতিতদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কেন্দ্রীয় লক্ষ্যও এতে অর্জিত হবেনা।

২০১২ সালের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয় আন্তর্জাতিক আইনের সাথে এর অসংগতি এবং মান বজায় না থাকার জন্য। যদিও কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছিল যেমন, দোষ প্রমাণের আগে অভিযুক্তকে নির্দোষ মনে করা, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এসব কেবলমাত্র তাত্ত্বিকতায়ই রয়ে গেছে। বাস্তবে যার প্রয়োগ হয়নি। পুরো বিচার পক্রিয়া ধরেই, যা শুরু হয়েছিল ২০১১ এ বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের অধিকার সংরক্ষনে ব্যর্থতার কারণে ব্যপক সমালোচনার শিকার হয়ে আসছিল।

সম্মানিত লর্ডগণ আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে কতিপয় বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ নিয়ে বেশ কিছু চিঠি চালাচালি এবং জরুরী আপীল পেশ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবট্রিারি ডিটেনশন, ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড এন্ড ভলান্টারি ডিসএপিয়ারেন্সেস, স্পেশাল র‍্যাপোটিয়ার অন এক্স্ট্রা জুডিশিয়অল, সামারী এন্ড আরবিট্রারি এক্সেকিউশন, স্পেশাল র‍্যাপোটিয়ার অন দি ইনডিপেডেন্স অব জাজেস এন্ড লয়ারস এবং স্পেশাল র‍্যাপোটিয়ার অন টরচার।

ট্রাইব্যুনাল তার প্রথম রায় ঘোষণা করে মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে। তিনি পলাতক থাকায় তার অনুপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করা হয়। ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ এ এক্স্ট্রা জুডিশিয়ালের ওপর বিশেষ দূত ক্রিস্টফ হেইনস এবং স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়ার অন ইনডিপেডেন্স অব জাজেস এবং লয়ার্স গ্যাব্রিয়েলা ক্নাউল এক বিবৃতিতে বলেন, তারা আবুল কালাম আযাদের বিচার পক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারের অভাব দেখতে পেয়েছেন। মি হেইনস জোর দিয়ে বলেন, মৃত্যুদন্ডাদেশ কেবল তখনই দেয়া যায় যেখানে ন্যায়বিচার নিশিশ্চত করার জন্য প্রয়োজনীয় রক্ষাকবচ নিশ্চিত করা হয়েছে। অন্তত পক্ষে আিইসিসিপিআর এ যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ন্যূনতম সেসব বিষয়গুলোও অনুসরণ করা উচিত ছিলো।

গ্যব্রিয়েলা ক্নাউল বিচারক, সরকারী কৌশলীদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি ট্রাইব্যুনালের ওপর সরকারী প্রভাব নিয়েও উস্মা প্রকাশ করেন।

লর্ড এভেবারী এবং লর্ড কার্লাইল আরো বলেন, আমরা দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে সরকার সাক্ষীদের যথাযথ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ৫ নভেম্বর ২০১২ এ অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী সুখরঞ্জর বালীকে পুলিশ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গন থেকে অপহরণ করে। কয়েকমাস পরে বালীকে কোলকাতার একটি জেলে বন্দী অবস।থায় পাওযা যায়। ভারতের জেলে বন্দী থাকা অবস্থাতেই এক স্টেটমেন্টে বালী নিশ্চত করেন যে আদালত প্রাঙ্গন থেকেই পুলিশের ভ্যানে তাকে অপহরণ করা হয়। তাকে ঢাকার একটি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় যা ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় বলে তিনি জানতে পারেন। এই ঘটনা একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবী রাখে।

বালী একজন হিন্দু ১৯৭১ সালে তার পরিবারের একজন নিহত হয়। সরকার, জাময়াতে ইসলামী বা অন্যকোন রাজনৈতিক দলের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তিনি বাংলাদেশ এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

২৬ মে ২০১৩ এ আলী আহসান মুজাহিদ এর আইনজীবি মুন্সি আহসান কবির সরকার পক্ষের একজন সাক্ষী জালালউদ্দিনের হাতে লাঞ্ছিত হন। অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। ঐ আইনজীবি মারাত্মক আহত হলেও এর বিপক্ষে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। এই ঘটনাও একটি আন্তর্জার্তিক তদন্তের পক্ষে জোরালো সমর্থন দেয়।

হাউজ লর্ডসের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাইবূনাল সফরের কর্মসূচী বাতিল করতে হয় বাংলাদেশের পরিস্থিতির কারণে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আশঙ্কা করছিলেন এই ঘটনা ব্যবহার করে সরকার আইসিটি’র সিদ্ধান্তকে জায়েজ করার অজুহাত পেতে পারে। আমাদের আশংকা যে সত্য তা স্টিফেন জে র‍্যাপের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর থেকেই প্রমাণিত হয়। সরকার তার বক্তব্যকে বিকৃত করে উপস্থাপন করেছেন।

তারা বলেন, উপরে উল্লেখিত ঘটনাসমূহ এবং স্পেশাল প্রসিডিওর্সের রিপোর্ট ও বেসরকারী এনজিও সমুহের সামলোচনার আলোকে এটি এখন ইউএন হিউম্যান রাইটস কমিশনের দায়িত্ব এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা যে বাংলাদেশ সরকার প্রতিনিধি দলকে ইচ্ছাকৃতভাবে আমন্ত্রণ জানায়নি কিনা। যদি তাই হয় তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আইসিটি’র কার্যক্রম, নিরপেক্ষতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার বিষয়গুলো জানাতে হবে। আমরা পূণর্ব্যক্ত করতে চাই যে, অভিযুক্তদের মাথায় মৃত্যুদন্ডের খাড়া থাকারে প্রেক্ষিতে এবিষয়ে আপনার আশূ হস্তক্ষেপ জরুরী।

বিষয়: রাজনীতি

১১৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File