ইসলামপন্থী হওয়াই যেখানে অপরাধঃ নির্যাতিত এক ভাইয়ের ডাইরী থেকেঃ
লিখেছেন লিখেছেন সালাহউদ্দিন নাসিম ২৬ মার্চ, ২০১৫, ০৮:৪৫:১১ রাত
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩: কুরআনের পাখিকে অন্যায় ভাবে খুনের চেষ্টার রায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ ! সাতজন ভাইয়ের মর্মান্তিক শাহাদাত সহ অসংখ্য ভাই গুলিবিদ্ধ । অথচ নতুন করে শুরু হল মামলার আগমন এবং নির্যাতনের পালা। অস্থায়ি জীবনটাকে আরও একটু স্থায়িত্বের সাধ দিল এই ঘটনা ।চলছে একের পর এক ঘটনা । গ্রামের সকল বাড়ি পুরুষশুন্য।
২ নভেম্বর ২০১৩: রাতে বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করে আমি একজায়গায় চলে যাই আর এক জায়গায় আব্বু । সকালে কান্নাজড়িত কন্ঠে আম্মুর ফোন-বাবা! একখনি বাড়িতে আয় ! অজানা শংকায় বাড়িতে এসে দেখি আব্বু স্ট্রোক করেছেন এবং সবাই কান্নাকাটি করছে । রাতে কখনযে স্ট্রোক করেছেন কেউ বলতে পারেন না কারন আব্বু অন্য একজনের রান্নাঘরে ঘুমাচ্ছিলেন ! আম্মু ফজরের নামাজের জন্য ডাকতে গিয়ে দেখেই ঐ অবস্থা ! সঠিক সময়ে টের না পাবার ফলে রক্তক্ষরনের পরিমান বেশী হয় এর ফলে ডান হাত এবং ডান পা প্যারালাইড হয়ে যায় ! সুন্দর সংসার এবং ভবিষ্যত স্বপ্ন এক মুহুর্তেই ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল।
২ মে ২০১৪: হঠাৎ করেই গ্রেফতার হয়ে গেলাম ! ৬টি মিথ্যে মামলা নিয়ে জেলজীবন শুরু ২ জুলাই ১৪ হঠাৎ করেই জামিনের খবর পাই ! আমার চাচাতো ভাই গাড়িতে করে বাড়ির কাছাকাছি নিয়ে এসে যে সংবাদটি দিলেন তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না ! দাদীর একান্ত আদরের বড় নাতী আমি ! গ্রেফতারের কথা শুনে আমার কথা বলতে বলতেই স্ট্রোক! কিছুদিন মৃত্যুশয্যায় থেকে থেকে একদিন আগে মারা গেছেন ! চাচাত ভাইয়ের কান্না যেন আমাকে স্পর্শ করছিল না ! আমি যেন পাথর হয়ে গিয়েছিলাম !
এরপরো রেহাই নেই ! ঘরে অসুস্থ বাবা অথচ পাশে থাকার সুযোগ নেই ! অধিকাংশ সময় খোলা আকাশের নীচে কাটছিল রাত্রগুলো । কখনো রাত্রে সবে ঘুম এসেছে অমনি ঝুমঝুম বৃষ্টি ! ভিঝে একাকার হয়ে গেছি আবার শীতের কনকনে ঠান্ডায় ঘরের বাইরে থেকেছি তবু একটাই ভেবেছি এই আমার একটাই দোষ আমি আল্লাহর পথে থাকতে চেয়েছি সবাইকে আল্লাহর পথে ডাকতে চেয়েছি !
১৪ জানুয়ারি ১৫: ছোট বোনের বিয়ে হবার কথা ইসলামী আন্দোলনেরই এক ভাইয়ের সাথে ! কিন্তু নাহ ! বিয়ে বাতিল করে দিতে হল ! আব্বু অসুস্থ তাকে তো দেখতেই পারছিনা ওদিকে বাজারটা পর্যন্ত মা নিজে করছেন ! একজন সবল যুবক ছেলে হিসেবে এটা আমার জন্য কতটা কষ্টের !
৭মার্চ ১৫: রাত তিনটার দিকে আমাদের পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি আমার বড় চাচার স্ট্রোক এবং মেডিকেল নেবার পথে মৃত্যুবরন! চাচাত ভাই ও আমি শেষবারের মত দেখতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম । হায়েনারাও সুযোগ পেয়ে বাড়ির আশপাশে অবস্থান নিল । আর আমরা কোনক্রমেই যেতে পারলাম এমনকি বাড়ির অন্যান্য পুরুষ সদস্যরাও জানাজায় অংশ নিতে পারল না ! আত্মীয় স্বজন এসে দাফন কাফনের ব্যাবস্থা করলেন ! অবশেষে কয়েকদিন পর রাতের আধারে চুপিসারে কাউকে না জানিয়েই বাড়ি গেলাম ।দশ মিনিটের মত ছিলাম । সবাই আমাকে দেখে কাঁদতে লাগল কিন্তু কান্নার শব্দ যেন বাহিরে গিয়ে আমি এসেছি এটা যেন প্রকাশ না হয়ে যায় এজন্য মুখ চেপে কাঁদছিল সবাই ।
হায়রে আমার দেশ ! কাঁদার স্বাধীনতাটুকু কেড়ে নিল !
আজ আমি আর আমার অপর একজন ইসলামী আন্দোলনের ভাইয়ের সীমানা জেলখানার মত বদ্ধ একটি রুম । আর রাতে বেলায় কাথা কম্বল নিয়ে সিমক্ষেত,বেগুন ক্ষেত. আলুক্ষেত
ঝোপঝাড়ের আড়ালে . . . . রাতে মশার গুনগুন গান আমাদের ঘুম পাড়িয়ে দেয় ! হঠাৎ চোখ খুলে যায় , শব্দ শুনেই বুঝতে পারি বাড়িতে বাড়িতে মাঝ রাতে হায়েনাদের অভিযান ! এভাবেই রাতের পর রাত বাইরে কাটানোর কারনে অসুস্থ হয়ে গেছি কিন্তু ডাক্তার দেখানোরও উপায় নেই . . . . .
ভাইটির ডাইরীটি পড়া শেষ হতেই দেখলাম আমার বালিশ ভিজে একাকার হয়ে গেছে চোখের জলে ! প্রতি ফোটা জল ঐ ভাইটির জন্য দোয়া হয়ে ঝড়ছিলঃ প্রভু গো ! শুধু তোমাকে ভালবাসার কারনে যাদের ঘরবাড়ী ত্যাগ করতে হয়েছে তাদের প্রত্যেকের জন্য তুমি জান্নাতে ঘর বানিয়ে রেখ ! এদের সবাইকে তুমি রহমতের চাদরে ঢেকে রাখ..............
বিষয়: বিবিধ
১২৬২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন