‘নিরাপত্তা বাহিনী আমাকে অপহরণ করে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়’ : সেই সুখরঞ্জন বালী এখন কলকাতার জেলে বন্দি : বালীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান এইচআরডব্লিউ’র স্টাফ রিপোর্টার
লিখেছেন লিখেছেন ফরিদ উদ্দিন তালুকদার ১৭ মে, ২০১৩, ০৯:২৩:৫৫ রাত
সুখরঞ্জন বালীর কথা মনে আছে? জীবনবাজি রেখে এ অসমসাহসী মানুষটি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বরেণ্য আলেম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, আদালতে তিনি প্রকৃত কাহিনী তুলে ধরবেন। বলবেন, সাঈদী তার ভাইকে খুন করেননি। কিন্তু তিনি ওই সাক্ষ্য দিতে পারেননি। ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে তাকে অপহরণ করে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী। সে কাহিনী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও তোলপাড় সৃষ্টি করে। এরপর আর তার খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই সুখরঞ্জন বালী বেঁচে আছেন। তিনি কলকাতার একটি কারাগারে বন্দি জীবনযাপন করছেন। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাকে অপহরণ করে ভারত সীমান্তে ঠেলে দেয়। কারাগারে থেকেই এক বিবৃতিতে বালী তার অপহরণ ও ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার কাহিনী তুলে ধরেন। গতকাল ইংরেজি দৈনিক নিউএজ-এ এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন ডেভিড বার্গম্যান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন সাক্ষী ছিলেন সুখরঞ্জন বালী। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপহরণ করে। কলকাতার একটি কারাগারে তার খোঁজ পাওয়া গেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা পিরোজপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক সুখরঞ্জন বালী নিশ্চিত করেছেন যে, গত বছর ৫ নভেম্বর সকালে ট্রাইব্যুনালের ফটক থেকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। ওইদিন জামায়াত নেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন তিনি।
ভারতের কারাগারে আটক অবস্থায় দেয়া এক বিবৃতিতে বালী বলেন, তাকে আদালত চত্বর থেকে অপহরণ করে পরে পুলিশের গাড়িতে করে একটি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই অফিসের ডেস্কে একটি পেপারস্ট্যাম্পে কিছু শব্দ দেখে তিনি বুঝতে পারেন যে, সেটি পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবির অফিস।
সুখরঞ্জন বালী কলকাতার দমদম সংশোধন কেন্দ্রে আটক রয়েছেন বলে গত ফেব্রুয়ারিতে তথ্য পায় নিউএজ। তাকে দেখতে পরিবারের সদস্যরাও সেখানে গিয়েছিলেন। এরপর এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে এবং কীভাবে তিনি সেখানে গেলেন, তা জানতে কাজ করে আসছিল পত্রিকাটি।
পত্রিকাটি তার সঙ্গে দেখা করতে এবং একটি বিবৃতি নিতে ওই কারাগারে প্রবেশে সক্ষম একজন ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নিরাপত্তার কারণে তিনি তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা বিএনপির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ট্রাইব্যুনালে মূলত এ দুটি দলের নেতাদের বিচার চলছে।
বিবৃতি নেয়া ওই ব্যক্তি নিশ্চিত করেছেন, যে ব্যক্তি বিবৃতি দিয়েছেন, বালীর আসল ছবির সঙ্গে তার সম্পূর্ণ মিল রয়েছে, অর্থাত্ তিনিই সুখরঞ্জন বালী।
বিবৃতি নেয়া ওই ব্যক্তি বলেন, ‘বালী পুরো ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা দেন। আমি মনে করি, ঘটনাটি সত্য না হলে তার কাছ থেকে এমন বিবরণ আসা খুবই কঠিন।’ অবশ্য বালীকে তখন নার্ভাস দেখাচ্ছিল বলেও ওই ব্যক্তি নিউ এজ-কে জানান।
বিবৃতিতে বালী বলেন, ওই অফিসের লোকজন পুলিশের পোশাক পরিহিত ছিল এবং আমাকে যারা অপহরণ করেছিল, তারা সাদা পোশাকে ছিল।
ওই অফিসে তাকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি বলে তিনি জানান। তবে তিনি ‘কেন আমি সাঈদী সাহেবের পক্ষে’—এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল...। তারা বলেছেন, আমাকে হত্যা করা হবে এবং সাঈদী সাহেবকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে।’
বিবৃতি অনুযায়ী, গত ২০১২ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে হস্তান্তরের আগে ঢাকায় তাকে ছয় সপ্তাহ অবৈধভাবে আটক রাখা হয়। প্রথম তিন মাস তাকে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে আটক রাখা হয়।
গত ৩ এপ্রিল ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দেশটির ফরেনার অ্যাক্ট-১৯৪৬-এর অধীনে কলকাতার একটি আদালত বালীকে ১০৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়। যেহেতু বিচার চলাকালে এ সময়টা তিনি কারাভোগ করেছেন, তাই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাকে যে কোনো দিন বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে (বালীর বিষয়ে) কোনো তথ্য নেই। আমি যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের (পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) সঙ্গে কথা বলেছি এবং তিনি বলেছেন, তিনি কিছুই জানেন না। এ মুহূর্তে বালী কোথায় আছে, তিনি তা-ও জানেন না।’
গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আল্লামা সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এর মধ্যে একটি হলো সুখরঞ্জন বালীর ভাই বিশা বালীকে হত্যা।
আদালত রা%9
বিষয়:
১৩৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন