ইকোনমিষ্টের অপ-সাংবাদিকতার জবাব তৈরী করা হচ্ছে

লিখেছেন লিখেছেন গেরিলা ২৪ মার্চ, ২০১৩, ১২:৫৪:০২ দুপুর



ইকোনমিষ্টের অপ-সাংবাদিকতার জবাব তৈরী করা হচ্ছে। যে প্রতিবেদনটি তারা ছাপিয়েছে তাতে দ্বৈত অবস্থান নিয়েছে ইকোনমিষ্ট। প্রকাশ্যেই তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

১। নাৎসি নেতা আইখম্যানকে তৃতীয় একটি দেশ থেকে অপহরন করে নিয়ে এসে তার বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা ন্যায় বিচারের মানদন্ড নিশ্চিত করে কিনা সে ব্যাপারে তাদের কোন মতামত নেই। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের হত্যাকারী ঘাতক মাইনউদ্দিনকে অপহরন করে নিয়ে ট্রাইব্যুনালে বিচারের সম্মুখীন করলে সেটাও একই ব্যাপার হবে নাকি ন্যায়বিচারের বিরোধী হবে ইকোনমিষ্টের মতামত জানা দরকার।

২। আইখম্যান একজন জার্মান, তার বিচারের দাবীদার রাষ্ট্র ছিল ইসরায়েল। পৃথক দুই রাষ্ট্রের নাগরিক যে আবার পালিয়ে আজেন্টিনায় বসবাস করছিল। বাংলাদেশে যাদের বিচার হচ্ছে তারা আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী নয়। তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। কারও কারও নাগরিকত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দেশের নাগরিকদের হত্যায় মদদদানের অভিযোগে এবং দেশবিরোধী অবস্থানের জন্য বাতিল করে তাদের আইনের সম্মুখীন করা হয়েছিল। আমরা দেখেছি পরবর্তী সময়ে তারা আবার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করেছেন। শুধু মাত্র ৭৫ এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারনে এতটা সময় ধরে এদের বিচারের সম্মুখীন করা যায়নি। মনে রাখা দরকার এসব অপরাধীর নাগরিকত্ব বা জাতীয়তা ভিন্ন নয়। এরা পাকিস্থানী নাগরিক নয়। এইসব অপরাধীর অপরাধের ধরনটাই শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক। আর এ ধরনের অপরাধের বিচার করার জন্য বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে যে আইন প্রনয়ন করেছিল তার ভিত্তিতেই দেশীয় আদালতে এর বিচার হচ্ছে। উল্লেখ্য এই আইন অনুসরনে পরবর্তীতে জাতিসংঘ মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞা প্রনয়ন করেছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সহ পৃথিবীর অসংখ্য দেশ এই বিচারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ইকোনমিষ্ট কি বলতে চায় একটি দেশ তার নাগরিকদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের দেশীয় ভাবে স্থাপিত আদালতে বিচার করতে পারবে না?

৩। বিচার প্রক্রিয়ায় কিসের ভিত্তিতে তারা নিশ্চিত হলেন সরকার হস্তক্ষেপ করছে তার কোন উদাহরন বা রেফারেন্স প্রতিবেদনে আসেনি। এটি শুধু মাত্র অভিযোগ করার উদ্দেশ্যেই বলা।

৪। বিবাদী পক্ষের সব সাক্ষীকে সাক্ষ্য দিতে দেয়া হচ্ছে না এই অভিযোগের কোন ভিত্তি নাই। বিবাদী পক্ষ শুধুমাত্র বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার জন্যে বিশাল সাফাই সাক্ষির লিষ্ট প্রদান করেছে। পৃথিবীর আর কোন আইসিটি ট্রাইব্যুনালে সাফাই সাক্ষীর নজির নেই। তারপরও আদালত আসামী পক্ষের সেই সব সাক্ষীকে সাক্ষ্য দিতে হাজির করতে বললেও দিনের পর দিন আসামী পক্ষ সাক্ষীদের হাজির না করে সময় প্রার্থনা করে মামলা পরিচালনায় দীর্ঘসুত্রিতার সৃষ্টি করছে। আদালত অসংখ্যবার সময় দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত আসামী পক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারলে সাক্ষ্য গ্রহন সমাপ্ত ঘোষনা করছে। আদালতের এহেন উদারতায় দেশের নাগরিককূল চরম ভাবে অসন্তুষ্ট।

৫। পৃথিবীর কোন দেশের আদালতে কি নজির আছে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে এর মাঝখানে বা শেষে কোন বিচারপতি পদত্যাগ করলে, মারা গেলে বা অপসারিত হলে সেই বিচার প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করা হয়েছে? ইকোনমিষ্ট এমন একটা উদাহরন দেখাতে পারবে কি?

৬। জামায়াত নেতারা ঘোষনা দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। দলটির তৎকালীন প্রধান গোলাম আযম শান্তি কমিটির কর্তাব্যক্তি ছিলেন। আধাসামরিক বাহিনী রাজাকার, আলবদর, আলশামস গঠনের মুল উদ্যোক্তা ছিলেন। পাকিস্থানের রাষ্ট্রিয় আদেশে সৃষ্ট এই সব বাহিনীর সকল হত্যা ও ধ্বংশ যজ্ঞের দায়ও তাই তার। জামাত প্রধান নিজামী আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। সেক্রেটারি মুজাহিদ ছিলেন সেকেন্ড ইন কমান্ড। মীর কাসেম ছিলেন আলবদর বাহিনীর তৃতীয় কর্তাব্যক্তি। কামারুজ্জামান আলবদর বাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার হিসাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। কাদের মোল্লা দলীয় সিদ্ধান্তে এবং স্বীয় ঢাকার মিরপুরে হত্যা যজ্ঞ চালিয়েছেন। সাইদী যুদ্ধাপরাধের দায়ে ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারান্তরালে ছিলেন। এটা প্রমানিত গোটা জামায়াত দলটিই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তখন অবস্থান নিয়েছিল এখনও তাই আছে। দালালদের একদলে সমবেত হওয়ার ঘটনাটি কোন ক্রমেই বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। তাই তাদের গ্রেফতার এবং বিচারের সম্মুখীন করার ঘটনাটি কোন ক্রমেই রাজনৈতিক দল দলন হতে পারে না। ইকোনমিষ্ট কি তবে নাৎসীদের রাজনৈতিক অধিকার ফেরতদানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে?

৭। সাক্ষীদের, তাদের নিকট আত্মীয়দের হত্যা করছে, বা হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে জামাত। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের দেশ ছাড়তেও তারা বাধ্য করছে। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের মেইনষ্ট্রীম মিডিয়া সরব। সরকারের পক্ষে জামাতের সাক্ষীদের গায়েব করার দাবী ভুয়া, বানোয়াট এবং অপ্রমানিত অভিযোগ।

সবশেষে ইকোনমিষ্ট বলেছে তারা জামায়াত প্রীতি থেকে নয় ন্যায় বিচারের তাগিদে প্রতিবেদনটি করেছে। আমরা ইকোনমিষ্টের এমন দাবী জোরের সাথে প্রত্যাখ্যান করছি। ইকোনমিষ্ট প্রথম থেকেই মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর জেরে তারা এখন পর্যন্ত অনেকগুলো বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। স্কাইপি কেলেংকারির ঘটনাটির সাথেও তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। আমরা জানি মানি ক্যান বাই এভরিথিং। তবুও মুল্যবোধ আর আদর্শকে আর বিক্রি না করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানাই। আসুন এইসব দানব হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমাদের পৃথিবীটাকে আমরা নিরাপদ করে তুলি। আমরা ইকোনমিষ্টের প্রতি আহ্বান জানাই বাংলাদেশে আন্দোলনের নামে জামাতিদের বৃক্ষ কর্তন আর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন ছাপুন। এই সব মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে আমাদের সাহায্য করুন। এর বিনিময়ে আমরা আপনাদের ভালবাসা দিতে পারবো, টাকা পয়সা দিতে পারবো না। ধন্যবাদ

বিষয়: বিবিধ

১১০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File