৭১-এ গোলাম আযম যা বলেছিলেন
লিখেছেন লিখেছেন গেরিলা ১৪ জুলাই, ২০১৩, ০৫:২৬:২২ বিকাল
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে কী বলেছিলেন গোলাম আযম? সেসময়কার বিভিন্ন পত্রিকা থেকে তার কথাবার্তার সংকলন [এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত]।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের রায় ঘোষণার জন্য সোমবার দিন নির্ধারণ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।৭১-এ গোলাম আযম যা বলেছিলেন
১৯৭১ সালে রাও ফরমান আলীর সঙ্গে বৈঠকে গোলাম আযম। ছবি সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চের সৌজন্যে
তার বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ১৯৭১ সালে গোলাম আযমের কর্মকাণ্ড নিয়ে নিয়মিত খবর প্রকাশ হয়েছিল সেসময়কার দৈনিক পত্রিকাগুলোয়। সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চের সৌজন্যে সেইসব খবরের কিছু সমকালের পাঠকদের জন্য সংকলিত করা হলো:
৪ এপ্রিল: ১২ জন নেতার সমন্বয়ে গঠিত এক প্রতিনিধি দল 'খ' অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন মৌলভী ফরিদ আহমদ, অধ্যাপক গোলাম আজম, খাজা খয়েরউদ্দীন, জনাব শফিকুল ইসলাম, মওলানা নুরুজ্জামান প্রমূখ।
অবিলম্বে সমগ্র প্রদেশে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রতিনিধি দল সামরিক আইন প্রশাসককে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস এবং জনগণের মন থেকে ভিত্তিহীন ভয় দূর করার উদ্দেশ্যে তারা ঢাকায় নাগরিক কমিটি গঠন করারও প্রস্তাব দেন। পূর্ব পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা এবং ভারতের বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণার প্রতিবাদ করেন এই প্রতিনিধি দল।
দৈনিক পূর্বদেশের ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিলের সংখ্যায় সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের এক প্রেস রিলিজের বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ করা হয়।
৬ এপ্রিল: আরো কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা পৃথকভাবে টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বলে দৈনিক আজাদ ও দৈনিক পাকিস্তানে ৭ এপ্রিলের সংখ্যায় সরকারি হ্যান্ডআউটের বরাত দিয়ে জানানো হয়।
এই নেতাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র উজির জনাব হামিদুল হক চৌধুরী, প্রাদেশিক জামাতে এছলামীর সভাপতি অধ্যাপক গোলাম আজম, জমিয়তে উলামায়ে এছলামের প্রাদেশিক শাখার সভাপতি পীর মোহসীন উদ্দিন আহমদ ও স্থানীয় বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট জনাব এ. কে. সাদী।
৭১-এ গোলাম আযম যা বলেছিলেন
১৯৭১ সালে গোলাম আযমের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য নিয়ে বাংলা ভাষার বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবর। সৌজন্যে সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চ
'হ্যান্ড আউটে বলা হয় যে, নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ ও পাকিস্তানে সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁহারা বলেন যে, প্রদেশের দেশপ্রেমিক জনসাধারণ ভারতের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীতে সহায়তা করিবে।'- এই খবর দৈনিক পাকিস্তানে প্রকাশ হয় ৭ এপ্রিল।
৮ এপ্রিল: গোলাম আযম, মওলানা নুরুজ্জামান ও গোলাম সারওয়ার একটি যুক্ত বিবৃতি দেন। বিবৃতির একটি অংশে বলা হয়, 'ভারত পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে। ভারতীয় বা পাকিস্তান বিরোধী এজেন্টদের বা অনুপ্রবেশকারীদের যেখানেই দেখা যাবে, সেখানেই পূর্ব পাকিস্তানের দেম প্রেমিকরা তাদের নির্মূল করবে।'
৯ এপ্রিল: রেডিও পাকিস্তান থেকে প্রচারিত একটি ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় লোক সবায় বাংলাদেশের শরনার্থীদের সাহায্য দেওয়ার আশ্বাসের গোলাম আযম বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মত দায়িত্বশীল ব্যক্তি পূর্ব পাকিস্তানীদের প্রতি যে সমর্থন ও সমবেদনা জানিয়েছেন, তাতে আমি বিস্মিত হয়েছি।
ওই ভাষণে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, 'পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী পাঠিয়ে ভারত প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশপ্রেমের মূলে আঘাত হেনেছে। এ ধরনের অনুপ্রবেশ এ প্রদেশের মুসরমানদের কোনো কাজেই আসবে না।'
দৈনিক সংগ্রামের ১১ এপ্রিলের সংখ্যায় ভাষণটি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ভাষণের একটি অংশে গোলাম আযম বলেন, 'ভারত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করছে। পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র জনগণকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে নিয়োজিত করে পূর্ব পাকিস্তানকে দাসে পরিণত করতে চায়।'
৯ এপ্রিল: শহরের জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পরিবেশ সৃষ্টির জন্য খাজা খয়ের উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে ১৪০ সদস্যবিশিষ্ট নাগরিক শান্তি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- একিউএম শফিকুল ইসরাম, অধ্যাপক গোলাম আজম, মওলানা সৈংদ মোহাম্মদ মাসুম, আবদুল জব্বার খদ্দর, মাহমুদ আলী, এমএকে রফিকুল হোসেন, ইউসুফ আলী চৌধুরী, আবুল কাসেম, এম ফরিদ আহমদ, অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, সৈয়দ আজিজুল হক, এসএম সোলায়মান, পীর মোহসীন উদ্দীন, শফিকুর রহমান রহমান, মেজর আসফারউদ্দীন, সৈয়দ মোহসেন আলী, অ্যাডভোকেট ফজলুল হক চৌধুরী, সিরাজউদ্দিন, অ্যাডভোকেট আতাউল হক খান, অ্যাডভোকেট এটি সাদী, মকবুলুর রহমান, মোহাম্মদ আকিল, অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস, 'ইংগ পাকিস্তান' সম্পাদক নুরুজ্জামান, মফিজুল হক, অ্যাডভোকেট আবু সালেক, অ্যাডভোকেট আব্দুন নঈম প্রমুখ।
১০ এপ্রিল দৈনিক পাকিস্তান, ১১ এপ্রিল দৈনিক পাকিস্তান ও দৈনিক সংগ্রামে এই সংক্রান্ত খবর গুরুত্ব নিয়ে প্রকাশ করা হয়।
৭১-এ গোলাম আযম যা বলেছিলেন
১৯৭১ সালে গোলাম আযমের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য নিয়ে বাংলা ভাষার বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবর। সৌজন্যে সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চ
১২ এপ্রিল: জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম থেকে ঘটা করে একটি মিছিল বের করে শান্তি কমিটি। মিছিলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান, ইয়াহিয়া কান, আইয়ুব খান, আল্লামা ইকবাল, ফাতেমা জিন্নাহসহ আরো কয়েকজনের ছবি বহন করা হয়। ফেস্টুনে লেখা ছিলো 'পাক-চীন জিন্দাবাদ', 'দুষ্কৃতিকারী দূর হও-মুসলিম জাহান এক হও', 'ভারতকে খতম করো, পাকিস্তানকে রক্ষা করো'।
মিছিলের নেতৃত্ব দেন গোলাম আযম, খাজা খয়ের উদ্দীন, শপিকুল ইসলাম, পীর মোহসেন উদ্দিন, সৈয়দ আজিজুল হক, মাহমুদ আলী, আবদুল জব্বার খদ্দর, এটি সাদী প্রমুখ।
এই মিছিলে উচ্চারিত স্লোগানগুলোর কয়েকটি হলো: 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ, কায়দে আজম জিন্দাবাদ, ইয়াহিয়া খান জিন্দবাদ, টিক্কা খান জিন্দাবাদ', 'পাকিস্তানের উৎস কি- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু', 'আল্লাহ মেহেরবান, ধ্বংস কর হিন্দুস্তান'।
এই মিছিলের শেষে গোলাম আজমের নেতৃত্বে যে মোনাজাত পরিচালিত হয় তাতে বলা হয়, 'পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সত্যিকারের মুসরিম সৈনিক হিসেবে দেশ রক্ষার যোগ্যতা অর্জনের জন্য আল্লাহর দরগাহে দোয়া করেন। সত্যিকারের মুসলমান ও পাকিস্তানী হিসেবে বেঁচে থাকার ও পাকিস্তানে চিরদিন ইসলামের আবাসভূমি হিসেবে টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বশক্তিমানের নিকট দোয়া করেন।'
১৩ এপ্রিল দৈনিক সংগ্রামে পুরো ৮ কলাম জুড়ে শিরোনাম করে এই সংবাদ প্রকাশ করে।
১৪ এপ্রিল: ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ‘নাগরিক শান্তি কমিটি’র নাম বদলে ‘পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি’ রাখা হয়। এই সভায় শান্তি কমিটির জেলা ও মহকুমা পর্যায়ের ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। ১৬ এপ্রিল দৈনিক সংগ্রাম ও দৈনিক পাকিস্তানে এই সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
১৬ এপ্রিল: সন্ধ্যায় নুরুল আমিনের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি একটি প্রতিনিধি দল গর্ভনর ভবনে পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
শান্তি কমিটির এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন সৈয়দ খাজা খয়ের উদ্দীন, অধ্যাপক গোলাম আজম, আবদুল জবআর খদ্দর, অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, নুরুজ্জামান মেজর আফসার উদ্দীন প্রমূখ।
১৭ এপ্রিল দৈনিক সংগ্রাম ও দৈনিক পাকিস্তানে এপিপির বরাত দিয়ে এই সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
১৮ এপ্রিল: লাহোরে জামায়াতে ইসলামীর দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'দুষ্কৃতিকারীরা এখনো পূর্ব পাকিস্তানে তৎপর রয়েছে এবং তাদের মোকাবিলা করার জন্য জনগণকে অস্ত্র দেওয়া উচিত।'
তিনি আরো বলেন, 'পূর্ব পাকিস্তানে অধিক সংখ্যক অমুসলমানদের সহায়তায় শেখ মুজিবুর রহমানের হয়তো বিচ্ছিন্নতায় ইচ্ছা থাকতে পারে, তবে তিনি প্রকাশ্যে কখনো স্বাধীনতার জন্য চিৎকার করেননি।' অবশ্য তার ছয় দফা স্বাধীনতাকে সম্ভব করে তুলতে পারতো বলে তিনি উল্লেখ করেন।
৭১-এ গোলাম আযম যা বলেছিলেন
১৯৭১ সালে গোলাম আযমের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য নিয়ে বাংলা ভাষার বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবর। সৌজন্যে সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চ
মওলানা ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, আতাউর রহমান খানরাই মূলত প্রকাশ্যে বিচ্ছিন্নতার দাবী তোলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, 'বিচ্ছিন্নতার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু করেছিলেন তাদের তো গ্রেপ্তার করা হয়নি।'
তিনি বলেন, 'সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে প্রায় সকল দুস্কৃতিকারীদের উৎখাত করেছে এবং বর্তমানে এমন কোনো শক্তি নাই যা সেনাবাহিনীর প্রাধান্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।'
'দেশকে খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ছিলো না। পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক গোলযোগ ১৮৫৭ সালে বাংলায় বিদ্রোহী আন্দোলনের চেয়ে দশগুণ বেশি শক্তিশালী ছিলো।'
তিনি আরো বলেন, 'বিরোধী ব্যক্তিরা এখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করার সাহস না পেয়ে বরং রাতের অন্ধকারে ধ্বংসাত্মক কাজে নিজেদের লিপ্ত রেখেছে। আমার দল পাকিস্তানের তৎপরতা দমনের যথাসাধ্য চেষ্টা করবে এবং এ কারণেই দুস্কৃতিকারীদের হাতে বহু জামাতকর্মী শহীদ হয়েছে।'
এর আগে ১৭ জুন লাহোর বিমানবন্দরে তিনি বলেন, 'জনগণ পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ সাহায্য ও সহযোগিতা দানে ইচ্ছুক, কিন্তু জীবননাশের হুমকি দেওয়ায় তারা এ ব্যাপারে পূর্ণ সাহায্য দান করতে পারছে না। প্রকৃত অপরাধীকে ধরতে পারলেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ করায়ত্ত করা সম্ভব হতো।'
২১ জুন দৈনিক সংগ্রামে এপিপি ও পিপিআইর বরাত দিয়ে এই সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সম্পাদকীয়তেও জনগণকে অস্ত্র সরবরাহ করায় সরকারের প্রতি আবেদনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
২২ জুন: গোলাম আজমের একটি সাক্ষাৎকার ছাপানো হয় দৈনিক সংগ্রামে। এতে তিনি বলেন, 'পূর্ব পাকিস্তান ইসলাম ও পাকিস্তানের জন্য অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছে। আরো কোরবানী দেয়ার জন্য তারা প্রস্তুত আছে।'
২২ জুন করাচীর এক হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'পূর্ব পাকিস্তানীরা সর্বদাই পশ্চিম পাকিস্তানী ভাইদের সাথে একত্রে বাস করবে।'
এখানে তিনি আরো বলেন, 'নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসূচীর উদ্দেশ্য ছিলো পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া।'
জনগণের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং দুস্কৃকৃতিকারী ও রাষ্ট্রবিরোধীদের কার্যকরীভাবে প্রতিহত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আবেদন জানান। পাকিস্তানকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করেন তিনি।
২৩ জুন দৈনিক সংগ্রামে গোলাম আযমের এই ভাষণ ফলাও করে প্রকাশ করা হয়।
৩ আগস্ট: দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম বর্তমান পরিস্থিতিকে যুদ্ধ পরিস্থিতি হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: এই যুদ্ধ শুধু ধস্ত্রের নয়, আদর্শিক যুদ্ধ। আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এই দেশকে বাঁচিয়ে রাকাল জন্য যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে।
৭১-এ গোলাম আযম যা বলেছিলেন
১৯৭১ সালে গোলাম আযমের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য নিয়ে বাংলা ভাষার বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবর। সৌজন্যে সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চ
১৪ আগস্ট: দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, আজাদী দিবসে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক সভা আয়োজন করে। সভায় তিনি (গোলাম আযম) বলেন'পাকিস্তানের দুশমনদের মহল্লায় মহল্লায় তন্ন তন্ন শরে খুঁজে তাদের অস্তিত্ব বিলোপ করার জন্য দেশপ্রেমিক নাগরিক শান্তি কমিটির সাথে সহযোগিতা করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।
১৬ আগস্ট: পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় বিরুদ্ধে শক্তির মোকাবেলার আহ্বান শিরোনামে দৈনিক পাকিস্তানে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সেনাবাহিনী ও শান্তি কমিটির মধ্যে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে জামায়তনেতা (গোলাম আযম) বলেন, বিচ্ছিন্নতবাদীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্যে শান্তি কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। শান্তি কমিটি যদি দুনিয়াকে জানিয়ে না দিত যে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ দেশকে অখণ্ড রাখতে চায় তবে পরিস্থিতি হয়তো অন্য দিকে মোড় নিত। তিনি বলেন দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর, তাই দেশের মানুষকে বোঝানোর দায়িত্ব শান্তি কমিটির হাতে তুলে নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া ঘরে ঘরে যেসব দুশমণ রয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করার উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
ইসলামিক একাডেমী হলে জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার সভায় অধ্যাপক গোলাম আযম বলেন, কোন দেশ তার নিজের দেশের লোকদের দ্বার শাসিত হলেই আজাদ হবে, সাধারণ আজাদীর এই সংজ্ঞা ইসলাম স্বীকার করে না। বাংলাদেশ বাংগালীদের দ্বারা শাসিত হবে এ মতবাদ শেখ মুজিব বা শ্রী তাজুদ্দীনের।
১৬ আগস্ট এই খবর প্রকাশ হয় দৈনিক সংগ্রামে।
২১ আগস্ট: এপিপির বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করে দৈনিক সংগ্রাম। এতে বলা হয়, গতকাল (২০ আগস্ট) অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার দ্বিতীয় অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের রাজিনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। অধিবেশনে ভাষণ দেন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে প্রধান অধ্যাপক গোলাম আযম ও জেনারেল সেক্রোঁরী জনাব আবদুল খালেক। জামায়অতে প্রধান মওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী এতে উপস্থিত ছিলেন।
লাহোর থেকে পিপিআই জানান, ভারতীয় যুদ্ধবাজ ও তাদের চরদরে যোগসাজসে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ব্যক্তিদের দমন করার জন্য সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন মজলিসে শূরা তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
২৬ আগস্ট: তিনি (গোলাম আযম) পেশোয়ারে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন,“পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের মীরজাফরী ও ভারতের দূরভিসন্ধি হতে সশস্ত্র বাহিনী দেশকে রক্ষা করেছে। দুষ্কৃতকারী ও অনুপ্রবেশকারীদের ধ্বংস করার কাজে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সেনাবাহিনীকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে।
দৈনিক সংগ্রামে এ খবর প্রকাশ হয়।
২ সেপ্টেম্বর: দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, অধ্যাপক আযম জানান যে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খতম করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের সকল একমনা ও দেশপ্রেমিক জনগণ এক সাথে কাজ শরে যাচ্ছে। বিশেষ করে রেজাকাররা ভালো কাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
২ সেপ্টেম্বর: তিনি (গোলাম আযম) বলেন, কোন ভাল মুসলমানই তথা কথিত 'বাংলাদেশ আন্দোলনের' সমর্থক হতে পারে না। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নির্মূল করার জন্য একমন ও দেশপ্রেমিক লোকেরা একত্রে কাজ করে যাচ্ছেন। রাজাকাররা খুবই ভাল কাজ করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই খবর প্রকাশ হয় দৈনিক পাকিস্তানে।
১৭ অক্টোবর: পরিশেষে অধ্যাপক গোলাম আযম জোর দিয়ে বলেন, দেশে একমাত্র বেসামরিক সরকারই স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারে। জামায়ায়ে ইসলামী গোটা দেশে বেসামরিক সরকার কায়েমের পথকে সুগম করার জন্যই শান্তি কমিটির মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দৈনিক সংগ্রাম এ খবর প্রকাশ করে।
২৪ নভেম্বর: পূর্ব পাকিস্তানে শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে সকল দেশপ্রেমিক, শান্তি কমিটির সদস্য এবং রেজাকারদের উন্নতমানের ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে সজ্জিত করার জন্য অধ্যাপক গোলাম আযম দাবী জানান।
দৈনিক সংগ্রাম এ খবর প্রকাশ করে।
২ ডিসেম্বর: রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট বৈঠক করেন গোলাম আযম। এরপর সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য দেন তিনি।
জনাব গোলাম আযম এই মর্মে আশা প্রকাশ করেন যে বর্তমান সংকট মোকাবিলা করার জন্য জনগণ সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করিবেন। তথাকথিত মুক্তিবাহিনীকে শত্রুবাহিনী রূপে আখ্যায়িত করিয়া তিনি বলেন যে তাহাদিগকে মোকবিলা করার জন্য রাজাকাররাই যথেষ্ঠ। এ প্রসঙ্গে রাজাকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
এই খবর প্রকাশ হয় দৈনিক ইত্তেফাকে।
বিষয়: বিবিধ
২০৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন