প্রজন্ম চত্বর...এবং কিছু কথা...
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নবাজের স্বপ্ন ০৩ মার্চ, ২০১৩, ০২:৩১:২৬ রাত
*** আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা (গত ২২'নবেম্বর-১২ইং এ বাবা মারা গেছেন) তিনি পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করেছেন। তবে তথাকথিত সনদ ধারি মুক্তিযোদ্ধায় বিশ্বাসি ছিলেন না মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। যতোবার বাবাকে বলছি যে সনদটা উঠিয়ে রাখুন ততোবার তিনি ভয়ংকর রেগে যেতেন। বাবা সব সময় বলতেন "কিছু পাওয়ার আশায় বা লাভের জন্য যুদ্ধ করিনি", আর যে দেশে কাগজ দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা প্রমান করতে হয় সে দেশে তোরাও (আমাদের বলতেন) কখনো কোথাও বলবি না যে, তোর বাবা মুক্তিযোদ্ধা...
এতো প্যাঁচালাম কারন একটাই 'দয়াকরে কেউ উল্টাপাল্টা গাল দিবেননা, আমার বাবাকে দয়াকরে অসম্মান করবেন না সবার প্রতি অনুরোধ রইলো............
প্রজন্ম চত্বর যে উদ্দেশ্যে বা যেভাবে হলো তা আর বলার প্রয়োজন নেই কারন প্রায় ১ মাস হয়ে যাওয়ার পর পৃথিবীর প্রায় সবাই ইতিমধ্যে জেনেছেন। নতুন প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তারা ৪২ বছর পর ৭১'র চেতনায় জেগে উঠেছে এটা বিশাল ব্যাপার। আমরা ব্লগার বা তরুনরাও ভাবিনি এতো বড় গন সমাবেশ এবং তা দীর্ঘ্যদিন ধরে চলতে থাকবে।
যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে এ আন্দোলনে ছিলোনা কোন দলের ব্যানার বা কোন সংগঠনের পোষ্টার। যা ছিলো তা নতুন প্রজন্মের দৃঢ় চেতনা ও তারুন্যে প্রবল শক্তি। আর ছিলো যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের প্রতি চড়ম ঘৃনা।
পরবর্তীতে তরুন প্রজন্মের "যুদ্ধাপরাধী রাজাকার" বিরোধী এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ততা প্রকাশ করে সমাজের সকল পেশা ও শ্রেনীর সাধারন মানুষ। প্রতিদিন উত্তাল হতে থাকে শাহাবাগের যুদ্ধাপরাধী রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার তারুন্যের এ আন্দোলন ।এবং দেশ ও দেশের বাইরে থেকেও বাংলাদেশী যারা আছেন তারাও এ আন্দোলনের সাথে একাত্ততা প্রকাশ করেন।
যুদ্ধাপরাধী রাজাকার কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিলো শাহাবাগে তারুন্যের আন্দোলন যার প্রধান দাবি ছিলো সকল "যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকার" এর ফাঁসি। ইতিমধ্যে ৭১'এর কুখ্যাত "যুদ্ধাপরাধী রাজাকার" মাওলানা সাঈদীর ফাঁসি'র রায় প্রদান করেছেন আদালত। সাঈদী'র ফাঁসির রায়ে তরুন প্রজন্মের যে আন্দোলন তার সফলতাই বলা যায়। দল, মত, ধর্ম, জাত, পাত ভুলে সকল পেশার সকল বয়সের মানুষ যুক্ত হয়েছিলো এই আন্দোলনে । এখানে না ছিলো আওয়ামী লীগ, ছিলোনা বিএনপি বা জাতীয় পার্টি কিম্বা কোন ডান-বাম পন্থী, শুধুই ছিলো "বাংলাদেশ পন্থী" সবাই বাংলাদেশী। ৭১' এ যেমন সবাই ছিলো (জামায়াত ছারা) স্বাধীনতার চেতনায় উদ্দিপ্ত এক জাতি সবার বুকেই ছিলো একটাই চাওয়া "হানাদার মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ" , তরুন প্রজন্মের ২০১৩'র আন্দোলনেও ঠিক তেমনই (জামাত,রাজাকর ছারা) সকল বাংলাদেশী'র বুকে ছিলো একটাই কথা "যুদ্ধাপরাধী রাজাকার" সবাইকে ফাঁসি দেয়া এবং রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাওয়ার কথা। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার সাঈদী'র ফাঁসি'র রায়ের মাধ্যেমে বলা যায় সেই ৭১'র মতোই আরেকবার স্বাধীনতার পথেই হাটছে বাংলাদেশ।
ব্লগ এ ব্লগারের মাধ্যমে চলমান এই "যুদ্ধাপরাধী রাজাকার" দের ফাঁসির দাবির আন্দোলন। ব্লগার লাকি এ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন ব্লগে একটা লেখার মাধ্যমে। মহৎ একটা উদ্দেশ্য সব ব্লগার বন্ধুদের আহবান করেছিলেন এগিয়ে আসুন এবং প্রতিবাদ জানান "যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের" যাবজ্জিবন শাস্তি নয় চাই ফাঁসি... বিশাল সাহসি না হলে একজন সাধারন মেয়ে এমন ডাক দেয়ার কথা চিন্তাও করতেন না। প্রথম দিকে আন্দোলন চলছিলো ঠিক ভাবেই এবং মধ্যমনি যার থাকার কথা তিনিই (লাকি) ছিলেন।স্লোগান স্লোগানে মুখোরিত করছেন প্রজন্ম চত্বর রাত দিন ২৪ ঘন্টা, শারিরিক ভাবে নির্যাতিত হয়েছেন 'জামাত-শিবির' চক্রের হাতে তবুও তাকে থামানো যায়নি। বিভিন্ন হুমকিতেও দমানো যায়নি লাকিকে। সবই চলছিলো যেভাবে চলার কথা। কিন্তু হঠাৎ করে যেন ছন্দপতন ঘটলো ...............
১০/১২ দিন যেমন নির্দলীয় নিরপেক্ষ আন্দোলন চলছিলো হঠাৎ করে মনে হলো প্রজন্ম চত্বর যেন রং হারাচ্ছে!! লাকির জায়গায় লাকি নেই, নেই জনতার ভিরের মধ্যেও..... সেখানে নতুন কিছু দেখা যাচ্ছে। লাকির হাতের মাইক কিভাবে যেন চলে গেলো ডা. সাহেবের হাতে এবং মঞ্চে তার আশেপাশে যারা আছেন তাদের বেশির ভাগই একটা দলের আঙ্গসংগঠনের শীর্ষনেতা পর্যায়ের চেনামুখ!! কিন্তু কেন?? এমন হবারতো কথা ছিলোনা...........
প্রজন্ম চত্বর কি ছিনতাই হয়ে গেলো?? কোন দলীয় ব্যানার এখানে ঢোকার কথা নয়!! এখন মাঝে মধ্যে প্রজন্ম চত্বরকে ১টা দলের "দলীয় চত্বর" বলে মনে হয়। কোথায় গেল লাকি? লাকি এখন মঞ্চে নেই, জনতার ভিড়েও নেই, শাহাবাগের আশে পাশেও এখন লাকিকে দেখা যাচ্ছেনা কিন্তু কেনো?? মাঝে মধ্যে কিছু কিছু দলীয় স্লোগানও ভেসে আসে মঞ্চ থেকে!! কিন্তু স্লোগান তো হবার কথা ছিলো রাজাকার বিরোধী স্লোগান। মঞ্চে যাদের থাকার কথা তারা নেই। এখানে রাজাকার, জামায়াত, শিবির বিরোধী ভাসন থাকার কথা অন্য কোন দল বা ব্যক্তি নিয়ে বিষোদগার করার প্রয়োজন কি খুব বেশি ছিলো?? প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অন্যকোন দল ও ব্যক্তি'র প্রতি কটুক্তি সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এমন কিছু করা বা বলা উচিত নয় যাতে মানুষকে বিভ্রান্ত হতে হয়। একটা মহান উদ্দেশ্যে তরুনদের যে উদ্যোগ তাতে কোন প্রশ্নবোধক চিন্হ থাকলে সেটা দুঃখজনক বটে।
কোন দলীয় ব্যানার বা দলীয় বক্তব্য দিয়ে তারুন্যের এই আন্দোলনকে বিভক্ত করবেন না। এ আন্দোলনকে দলীয় আন্দোলনের রং দিয়ে রঙীন করে তরুনদের চেতনাকে ছোট করা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এখনো সময় আছে চোখ খুলে রাখুন ব্লগার ও তারুন্যের আন্দোলনের সফলতা যেনো ছিনতাই নাহয়ে যায়। ইতিমধ্যে যেটুকু ছিনতাই হয়েছে আর যেন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখুন। এতো মানুষের ঘাম ঝড়ানো ফসল অন্যকেউ নিয়ে যাক তা নিশ্চই কেউ মেনে নিবেন না!! আপনার ফসল যেনো আপনার গোলায় উঠে তা নিশ্চিৎ করা আপনার নিজের দায়িত্ব.............
ভালো থাকবেন সবাই সব সময়। সব যুদ্ধাপরাধী রাজাকারের ফাঁসি হোক, রাজাকার মুক্ত হোক আমার সোনার বাংলাদেশ, পবিত্র হোক দু:খিনী এই দেশ জননী.............
...........................................................................................
৩' মার্চ-২০১৩ইং
ঢাকা।
বিষয়: বিবিধ
১৯২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন