= মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ও তাঁর অনুগ্রহে, সৎ-মুসলমানদের জন্য কিছু জরুরী দোয়া =
লিখেছেন লিখেছেন মনসুর ০৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:১৯:৫০ দুপুর
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। (পরম করুণাময় মহান আল্লাহর নামে শুরু)
নেক আমল তথা সৎ-জীবন যাপনের জন্য একজন সৎ-মুসলমানের উচিৎ সদা-সর্বদা মহা আল্লাহতায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ, মহান আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীনের সার্বক্ষণিক সাহায্য ও অনুগ্রহ ছাড়া কারও পক্ষে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
যে কোনো দোয়া করার আগে ও পরে আল্লাহর রাসুল হজরত মোহাম্মদ সাল্লাললাহু আলাইহেওয়া সাল্লাম এর শানের দরুদ-সালাম পড়লে ঐ দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
একটি দরুদ শরিফ : আল্লাহুম্মা সল্লে আলা সাইয়্যেদেনা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আলি সাইয়েদেনা মুহাম্মাদিন ওয়া বারিক ওয়াসাল্লিম।
১। দোয়া : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহয়ি ওয়া ইয়ামুতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।’
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি এক। তার কোনো শরিক নেই, সার্বভৌমত্ব তারই, সব প্রশংসা তারই জন্য, তিনিই জীবন ও মৃত্যুদান করেন আর তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (তিরমিজি)।
মরতবা : প্রতি ওয়াক্তে ফরজ নামাজের পর এক/তিন বার পড়লে খবিস ইবলিসের কুমন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
২। দোয়া : বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি লা হাওয়া ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ।
অর্থ : আল্লাহর নামে বের হলাম এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম। আল্লাহ ছাড়া অকল্যাণরোধ বা কল্যাণ হাসিল করার শক্তি অন্য কারো নেই।
মরতবা : হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় এই দোয়াটি বলবে, তাকে বলা হয়- তোমাকে হেদায়েত দেয়া হয়েছে, যথেষ্ট দেয়া হয়েছে এবং হেফাজতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর শয়তান তার থেকে দূরে চলে যায় (তিরমিজি)।
৩। দোয়া : রাব্বানা লা তুযিগ কুলুবানা বা’দা ইজ হাদাইতানা ওয়াহাব লানা মিল্লাদুনকা রাহমা- ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! হেদায়েত প্রদান করার পর আপনি আমাদের অন্তঃকরণকে বক্র করবেন না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন! নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর দাতা।
মরতবা : দোয়াটি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত। যা সূরা আল ইমরানের ৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এ দোয়া বেশি বেশি পাঠ করলে দ্বীনের পথে ও হেদায়েতের ওপর টিকে থাকা সহজ হয়।
৪। দোয়া : রব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আন্তাছ সামিয়্যুল আলীম ওয়া তুব আলাইনা ইন্নাকা আন্তাত তাওয়াবুর রহীম।
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের যাবতীয় সৎকর্মসমূহ কবুল করুন। অবশ্য আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন এবং আমাদের তওবাকে কবুল করুন। আপনিই এক মাত্র বান্দার তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু।
মরতবা : বান্দার দোয়া করার অক্ষমতা-অপারগতা দুর হয়ে নেক-মকবুল দোয়া করা সহজ হয়।
৫। দোয়া : আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা আল'আফিয়াহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি।
মরতবা : বান্দার পক্ষে দুনিয়াবী জীবন-যাপন করা সহজ হয়।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আল্লাহুম্মা আমীন।
৬। দোয়া : আলহামদু লিল্লাহি আ’লা কুল্লি নি’মাতিহী, আলহামদু লিল্লাহি আ’লা কুল্লি আ-লা-ইহী, আলহামদু লিল্লাহি ক্বাবলা কুল্লি হালিন, ওয়া ছাল্লাল্লাহু আ’লা খাইরি খালক্বিহী মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলিহী ওয়া আছহাবিহী আজমাঈ’ন, বিরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমীন।
দোয়ার ফযীলতঃ এ দোয়াটির ফযীলত ও মর্তবা সম্বন্ধে ছাহাবীদের মধ্যে পরস্পর এখতেলাফ রয়েছে। আমিরুল মু’মিনীন হযরত ওমর (রা) বলেন যে, এ দোয়া যে ব্যক্তি শ্রদ্ধাসহকারে পাঠ করবে তার ছয়শত বৎসরের আদায় করা নামাজ এর বরকতে আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যাবে। অনুরুপ হযরত ওসমান (রা) বলেছেন, সাতশত বৎসরর এবং হযরত আলী কাররাল্লাহু ওয়াজহু বলেছেন, যদি এ দোয়া পাঠকারীর এক হাজার বৎরের নামাজ কাজা হয়ে থাকে। তাও এ দোয়ার বরকতে আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে কবুল হয়ে যাবে।
হযরত রাসূলে করীম (সঃ) এর মহিমায় এ পবিত্র দোয়ার ফযীলত বর্ণনাকালে ছাহাবীগন প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের এ রুপ ছয়, সাতশত ও হাজার বৎসর (হায়াত) বয়স কোথায়? যে এর নামাজ কবুল হবে? তখন রাসূলুল্লাহ (স) বললেন যে, এ দোয়া পাঠকারীর বাপ, দাদা, পরদাদা ও আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের নাম কবুল হয়ে বৎসর পূরন করা হবে। সুবাহানাল্লাহ্। (সূত্র : ছহীহ্ নূরাণী অজিফা শরীফ)
৭। দোয়া : আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়াজ্বালজালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার গুণবাচক নাম সালাম। তুমি শান্তিদাতা। তুমি কল্যাণময়। তুমি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।
৮। দোয়া: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজাঝি ওয়াল কাসালি ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবুনি ওয়াল বুখুলি ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিত দাইনি ওয়া কাহরির রিজালি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি যাবতীয় চিন্তা ও পেরেশানি থেকে। তোমার আশ্রয় প্রার্থণা করছি সবধরণের অক্ষমতা ও অলসতা থেকে। আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি কাপুরুষতা ও কৃপনতা থেকে। আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি অত্যাধিক ঋণ ও মানুষের ক্রোধ থেকে।
ফজিলত: হজরত আবু সাঈদ খুদরি [রা.] বলেন; একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রাসুল তাকে বললেন, আবু উমামা! ব্যাপার কী, নামাজের সময় ছাড়াও তোমাকে মসজিদে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে? আবু উমামা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অনেক ঋণ এবং দুনিয়ার চিন্তা আমাকে গ্রাস করে রেখেছে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালিমা শিখিয়ে দেব, যেগুলো বললে আল্লাহ তায়ালা তোমার চিন্তাকে দূর করে দেবেন এবং তোমার ঋণগুলো আদায় করে দেবেন। তিনি বলেন: জি হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উপর্যুক্ত দোয়াটি শিখিয়ে দেন এবং তা সকাল সন্ধ্যায় পড়তে বলেন। আবু উমামা বলেন আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দোয়াটি পড়তে লাগলাম ফলে আল্লাহ তায়ালা আমার চিন্তা দূর করে দিলেন এবং আমার ঋণগুলোও আদায় করে দিলেন। [আবু দাউদ-১৫৫৭ হায়াতুস সাহাবা-৭২৪]
বিষয়: বিবিধ
১৮৭২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ খায়ের
জাযাকাল্লাহ খায়ের
মন্তব্য করতে লগইন করুন