রিসালে-ই নূর থেকে হযরত বদিউজ্জামান সাঈদ নূরসী (রহঃ)-এর বাণী সমূহ (সংক্ষিপ্ত ভাবে)।
লিখেছেন লিখেছেন মনসুর ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:১৩:৫৩ রাত
রিসালে-ই নূর - হযরত বদিউজ্জামান সাঈদ নূরসী (রহঃ)(১৮৭৬-১৯৬০), তুরষ্ক।
১। সর্বদাই "বিসমিল্লাহ সকল কল্যানের মূল। আমরাও প্রথমে তা দিয়ে শুরু করি। এই আমার নফস! জেনে নাও, এই মুবারক বাক্যটি যেমন ইসলামের নিদর্শন, তেমনি মহাবিশ্বে বিদ্যমান সমস্থ কিছু লিসান-ই-হাল (শারীরিক ভাষা) দ্বারা বিরামহীনভাবে উচ্চারিত যিকির।"
২। একজন সৎ মুসলমানের জন্য - ঈমানের মাঝে নিহিত রয়েছে বিশাল প্রশান্তি ও নিয়ামত এবং ব্যপক সুখ ও স্বাদ। তাই আমাদের সর্বদাই বলা উচিৎ, "সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর যিনি আমাদেরকে দ্বীন ইসলাম ও পরিপূর্ণ ঈমান (নিয়ামত হিসাবে) প্রদান করেছেন"।
৩। একজন মুমিনের জন্য - ইবাদত এক বড় ব্যবসা ও সুখ; অনতদিকে পাপ ও লালসা এক বড় ক্ষতি ও ধ্বংস-এর কারণ। আখেরাতের মত দুনিয়ার শান্তিও ইবাদত এবং মহান আল্লাহ-এর সৈনিক হওয়ার মধ্যেই নিহিত। তাই আমাদের সর্বদাই বলা উচিৎ, "মহান আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করছি, তাঁর আদেশ সমুহের আনুগত্য এবং ভালোকাজগুলির সফল পরিসমাপ্তিতে পৌছানোর জন্য"।
৪। একজন সৎ মুসলমানের জন্য - নামায খুবই মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ, একই সাথে অতি সহজে ও অল্প পরিশ্রমে আদায় করা যায়। নামাজ রুহ (আত্মা), ক্বালব (অন্তঃকরণ) ও আ'কল (বোধ)-এর জন্য প্রশান্তি বয়ে আনে, আবার দেহের জন্যও কঠিন কোনো কাজ নয়। আর, নামায আদায়কারীর অপরাপর সকল মুবাহ (শরিয়ত মতে বাধ্য নয় এমন) কাজ ও ইতিবাচক দুনিয়াদারী আমল সৎ নিয়তের দ্বারা করা হলে তা এবাদতে পরিনত হয়। এভাবে পুরোজীবনকে আখেরাত (পরকাল)-এর সুফলে (বা সফল প্রাপ্তিতে) পরিনত হতে পারে।
৫। আমাদের জন্য, ঠিক সময়ে সঠিক ভাবে নামায আদায় করা ও সদা-সর্বদা কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এক মহা-মানবিক দায়িত্ব। তাই আমাদের উচিৎ, হিদায়েত (সঠিক পথ) ও নেক তাওফিক (সৎ-সফলতা)-এর জন্য পরম করুণাময় মহান আল্লাহ নিকট প্রার্থনা করা।
৬। একজন মুমিনের জন্য - আপন জান ও মাল-সম্পদ মহান আল্লাহর নিকট বিক্রি করা এবং তাঁর বান্দা ও সৈনিক হওয়া এক বিরাট লাভজনক ব্যবসা ও সম্মানজনক পদমর্যাদা। এটি তেমন কঠিন কোনো কাজ নয়। শুধু একজন একনিষ্ঠ সৌনিকের মত মহান আল্লাহ নামে শুরু করবে, তাঁরই উপর ভরসা করে তাঁর নামে চলবে এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে। তাঁর প্রদর্শিত পথে চলবে, শান্তি পাবে। কোনো ভাবে গুনাহ হয়ে গেলে মহান আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তওবা করে মাফ চাইবে - ইয়া রব (হে প্রভু), আমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা কর, আমাদেরকে তোমার নেক বান্দা হিসাবে কবুল কর, আমাদেরকে নিয়ামত হিসাবে দেওয়া তোমার আমানত যতক্ষন ফিরিয়ে না নাও ততক্ষন পর্যন্ত তা সংরক্ষন করার তৌফিক দান কর, আল্লাহুম্মা আমীন।
৭। কায়নাতের (বিশ্বের সকল সৃষ্টিজগত) দুর্বোধ্য গোপন রহস্য উন্মোচনকারী - মানব রুহের জন্য শান্তির দরজা উন্মোচক গুরুত্বপূর্ণ দুই রহস্যময় চাবি;
এক. সবরের সাথে স্রষ্টার উপর তাওয়াক্কল (ভরসা) করে তাঁর নিকট আশ্রয় নেওয়া এবং
দুই. শুকরিয়া জানিয়ে রাজ্জাক (রেজেক দাতা)-এর নিকট প্রার্থনা ও দোয়া করা ভিষন রকম উপকারী, সেই সাথে দুটি গুরুত্বপূর্ণ (মানুষের উপর সকল অশুভ প্রভাবের বিরুদ্ধে) প্রতিষেধক।
সেই জন্য আসুন সকলে বলি - হে মহান আল্লাহ তুমি আমাদের ক্বলব-কে ঈমান ও পবিত্র কুর'আনের নূরের দ্বারা নূরান্বিত কর। আমরা সর্বদাই তোমার মুখাপেক্ষি, এই বোধকে জাগ্রত করার মাধ্যমে আমাদেরকে সমৃদ্ধ কর। তোমার রহমত থেকে আমাদেরকে বাদ দিও না, তুমি আমাদেরকে তোমার প্রতি তাওয়াক্কালকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর, তুমি আমাদেরকে আমাদের নফসের নিকট ছেড়ে দিও না। তোমার হাফিজ নামের অসিলায় আমাদেরকে রক্ষা কর। তোমার হাবিব ও সকল জগতের জন্য রহমতের পয়গম্বর হজরত মুহাম্মদ (সাঃ), তাঁর সকল বংশধর ও সাহাবীগণ, অনান্য নবী ও রাসুলগণ, তোমার নিকটবর্তী ফেরেশতাগণ ও সালিহ বান্দাদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক, আল্লাহুম্মা আমীন।
৮। এই দুনিয়ায় মানুষের জন্য "ইয়া আল্লাহ" (হে মহান-প্রভু, আল্লাহ) আর "লা ইলাহা ইল্লালাহ" (কেউ নেই উপাসনার যোগ্য মহান আল্লাহ ব্যতিত) বাক্যদ্বয়ের উপলবদ্ধিই পারে মানুষকে সকল সৃষ্টি ও মহাবিশ্বের রহস্যকে উন্মোচন করাতে। ফলে সঠিক দ্বীনকে জানা-বুঝা মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যদি কেউ এই দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনকে তার আসল উদ্যেশ্য মনে করে থাকে, দৃশ্যত সে জান্নাতের মধ্যে আছে মনে হলেও কার্যতঃ সে আছে জাহান্নামে। একজন মুমিনের জন্য দুনিয়া যতই নিকৃষ্টজনক ও কষ্টকর মনে হোক না কেনো, এই দুনিয়াকে সে জান্নাতে যাওয়ার পথে অপেক্ষাগার হিসাবে দেখার কারনে আনন্দ বোধ করে, আর ঈমানের সাথে সহনশীলতা ও ধৈর্যের মাধ্যমে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে থাকে।
৯। একজন সৎ মুসলমানের জন্য - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হিকমত বোঝা খুবই জরুরী। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অনেক হিকমতের মধ্যে একটি হচ্ছে যে, নামাজ বিশাল এক ইলাহী ব্যবস্থাপনার দর্পণ এবং মহান আল্লাহর দেওয়া সামগ্রিক নিয়ামত সমূহের একটি প্রতিফলক - ফলে ঐ সুনির্দিষ্ট সময়গুলিতে কাদির-ই-যুলজালালকে (অতিউচ্চ মর্যাদার মহাপরাক্রমশালী) আরো বেশী তাসবীহ ও তাযিমের জন্য, প্রতি দুই ওয়াক্তের মাঝে প্রাপ্ত সীমাহীন নেয়ামতের শুকুর ও হামদ হিসাবে, আপন প্রভুর কাছে নিঃশর্ত আত্ম-সমার্পনের জন্য, আপন সৃষ্টিকর্তাকে বরকতময়-প্রাচুর্যপূর্ণ অভিবাদন জানাতে, রাসুলে করিম (সাঃ)-কে সালাম জানিয়ে তার সাথে কৃত শপথকে নবায়ন করতে, মহান আল্লাহর প্রতি নিজের আনুগত্যকে প্রকাশ করতে এবং মহান আল্লাহ-র চরম-পরম একাত্ববাদকে স্বাক্ষ্য দিতে "সুনির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় অবশ্যকীয়ভাবে" নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
সুন্দর কিছু কথামালা উপস্হাপন করায় অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহু খাইরান....।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন