হুর-গেলেমান, আমি যা বুঝেছি (সকলের মতামত আশা করছি)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৬:৪৭:৫৫ সন্ধ্যা
অনেকদিন যাবত একটা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারিনি তবে এখন পর্যন্ত পড়াশোনা করে যতটুকু বুঝেছি তাই সকলের সাথে শেয়ার করছি।
ইসলামে যে শব্দ দুইটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচার চালু আছে সেই দুইটা শব্দ হলো ‘হুর’ এবং ‘গেলেমান’। অনেকেই বলে থাকেন বেহেশতে পুরষরা সত্তরটি হুর পাবে কিন্তু মহিলারা কিছুই পাবে না এটা এটা আল্লাহর বে-ইনছাফি (নাউজুবিল্লাহ)। তবে আমাদের সমাজে এই শব্দ দুইটার সঠিক ব্যাখ্যাও বেশি একটা পাওয়া যায় না যার কারনে এত বিভ্রান্তি।
আমি এখন পর্যন্ত যা বুঝেছি তা হলো- যেই শিশুরা ছোট বেলায় মারা যায় তারা যেহেতু মুসলিম অবস্থায় মারা যায় সেহেতু তারা জান্নাতি হবে। আর এই জান্নাতিদেরকে দিয়েই আল্লাহ বেহেশতকে সাজাবেন। এই শিশু জান্নাতিদেরকে দিয়েই আল্লাহ জান্নিাতিদেরকে খেদমত করাবেন। সেই শিশু জান্নাতিদের সংখ্যাটা হয়তো এক একজন জান্নাতির জন্য সত্তর বা কম বেশি হতে পারে।
শিশু অবস্থায় যারা মারা যায় তারা কাফের, মুশরিক বা মুসলমান যার ঘরেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন তারা জান্নাতি হবে আর মেয়ে শিশুদেরকে বলা হবে ‘হুর’ এবং ছেলে শিশুদেরকে বলা হবে ‘গেলেমান’ তারাই জান্নাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।
বলা হয়ে থাকে যে, জান্নাতিদের সাথে হুরদের বিয়ে দেওয়া হবে আর এই হুরদের সাথে মানুষের কোন সম্পর্ক নেই, যদি তাই হবে তাহলে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে, এক গ্রহের কারো সাথে কি আরেক গ্রহের কারো বিয়ে হওয়া সম্ভব? যেমন মানুষ এবং জিনের সাথে বিয়ে সম্ভব নয়।
তাই আমার বুঝ হলো, হুর এবং গেলেমান নারী এবং পুরুষ উভয় জান্নাতিদের জন্যই থাকবে। এখানে কোন পক্ষপাতিত্ত করা হবে না বরং জান্নাতিরা হবেন সকল বিষয়ে পরিপূর্ণ তৃপ্ত।
এখন এই বিষয়ে যারা জানেন তাদের মতামত আশা করছি, আশা করি সকলের জানা বিষয়গুলো শেয়ার করার মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারবো ইনশাল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
৩০০৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি বলেছেনঃ-
সকলের জানা বিষয়গুলো শেয়ার করার মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারবো ইনশাল্লাহ।
মুতাশাবিহাতের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া অসম্ভব!!
আল্লাহতায়ালা এবং রসূলুল্লাহﷺ থেকে এ বিষয়ে সতর্কবানী রয়েছে!
তবে আলোচনা করা যেতে পারে!!
জানিনা আপনার "ধারণা" নিতান্তই "ধারণা" কি না!!
"হূর" প্রসংগে কুরআন-হাদীসের বর্ণনার কিছুটা নিচে দেয়া হলো (হয়তো আপনার পড়া হয়েছে)-
সূরা আর-রহমান-এ বলা হয়েছেঃ-
৭২.) তাঁবুতে অবস্থানরত হুরগণ।৫১
৫১) ‘হুর’ শব্দের ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা সাফ্ফাতের তাফসীর, টীকা ২৮-২৯ এবং সূরা দুখানের তাফসীর টীকা ৪২। রাজা বাদশাহ ও আমীর উমরাদের জন্য প্রমোদ কেন্দ্রসমূহে যে ধরনের তাঁবু খাটানো হয়ে থাকে এখানে তাঁবু বলতে সম্ভবত সেই ধরনের তাঁবু বুঝানো হয়েছে। জান্নাতবাসীদের স্ত্রীগণ সম্ভবত তাদের সাথে প্রাসাদে বাস করবে এবং তাদের জন্য বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত প্রমোদ কেন্দ্রসমূহের তাঁবুতে হুরগণ তাদের জন্য আনন্দ স্ফূর্তি ও আরাম-আয়েশের উপকরণ সরবরাহ করবে। আমাদের এ ধারণার ভিত্তি হচ্ছে, প্রথমে উত্তম চরিত্র ও সুদর্শনা স্ত্রীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর স্বতন্ত্রভাবে আবার হুরদের কথা উল্লেখ করার অর্থ হচ্ছে, এরা হবে স্ত্রীদের থেকে ভিন্ন প্রকৃতির নারী। উম্মে সালামা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস থেকে এ ধারণা আরো দৃঢ় ভিত্তি লাভ করে। তিনি বলেছেন “আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল পৃথিবীর নারীরাই উত্তম না হুরেরা? রসূলুল্লাহ ﷺ জবাব দিলেনঃ হুরদের তুলনায় পৃথিবীর নারীদের মর্যাদা ঠিক ততটা বেশী যতটা বেশী মর্যাদা আবরণের চেয়ে তার ভিতরের বস্তুর। আমি জিজ্ঞেস করলাম এর কারণ কি? তিনি বললেনঃ কারণ, পৃথিবীর নারী নামায পড়েছে, রোযা রেখেছে এবং ইবাদত-বন্দেগী করেছে।” (তাবারানী) এথেকে জানা যায় যেসব নারীরা দুনিয়াতে ঈমান এনেছিল এবং নেক কাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকেই দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছিলা তারাই হবে জান্নাতবাসীদের স্ত্রী। তারা নিজেদের ঈমান ও নেক আমলের ফলশ্রুতিতে জান্নাতে যাবে এবং একান্ত নিজস্বভাবেই জান্নাতের নিয়ামত লাভের অধিকারিনী হবে। তারা নিজেদের ইচ্ছা ও পছন্দ অনুসারে হয় নিজেদের পূর্বতন স্বামীদের স্ত্রী হবে-যদি তারাও জান্নাতবাসী হয়। নয়তো আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে অন্য কোন জান্নাতবাসী পুরুষের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবেন যদি তারা উভয়েই পরস্পরে সাহচর্য ও বন্ধুত্ব পছন্দ করে। এরপর থাকে হুরদের বিষয়টি। তারা নিজেদের কোন নেক কাজের ফলশ্রুতিতে নিজ অধিকারের ভিত্তিতে জান্নাতবাসিনী হবে না। বরং জান্নাতের অন্যান্য নিয়ামতের মত একটি নিয়ামত হিসেবে আল্লাহ তাদেরকে যুবতী, সুন্দরী ও রূপবতী নারীর আকৃতি দিয়ে জান্নাতবাসীদেরকে নিয়ামত হিসেবে দান করবেন যাতে তারা তাদের সাহচার্য উপভোগ করতে পারে। তবে কোন অবস্থাতেই তারা জিন বা পরী শ্রেণীর কোন সৃষ্ট জীব হবে না। কারণ, মানুষ কখনো ভিন্ন প্রজাতির সান্নিধ্যে ও সাহচর্যে অভ্যস্ত ও তৃপ্ত হতে পারে না। এ কারণে, খুব সম্ভব তারা হবে সেই সব নিষ্পাপ মেয়ে যারা প্রাপ্ত বয়স্কা হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছিল। তাদের পিতা-মাতাও জান্নাত লাভ করেনি যে, সন্তান হিসেবে পিতা-মাতার সাথে জান্নাতে থাকার সুযোগ পাবে।
************
সূরা আদ দুখান-এর এ আয়াতটিতে খুব পরিস্কারভাবে বলা হয়েছেঃ-
৫৪).... আমি সুন্দরী হরিণ নয়না (হূর)নারীদের** সাথে তাদের বিয়ে দেবো।
**মূল শব্দ হচ্ছে بِحُورٍ عِينٍ
حور শব্দটি حَوْرَاء শব্দের বহুবচন। আরবী ভাষায় সুন্দরী নারীকে حَوْرَاء বলা হয়। عَيْنٌ শব্দটি عيناء শব্দের বহুবচন। এ শব্দটি বড় চোখ বিশিষ্ট নারীদের বুঝাতে ব্যবহার হয়।।
====
সূরা সাফফাত-এ বলা হয়েছেঃ-
৪৮) আর তাদের কাছে থাকবে আনত নয়না সুলোচনা (হূর)নারীগণ**...
**সম্ভবত এরা সেসব মেয়ে হবে যারা প্রাপ্ত বয়স্কা হবার আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে এবং যাদের পিতামাতা জান্নাতলাভের অধিকারী হয়নি। অনুমানের ভিত্তিতে একথা বলা যেতে পারে যে, এ ধরনের ছেলেদেরকে যেমন জান্নাতবাসীদের সেবায় নিযুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা হামেশা বালকই থাকবে ঠিক তেমনি এ ধরনের মেয়েদেরকে জান্নাতবাসীদের জন্য হূরে পরিণত করা হবে এবং তারা চিরকাল উঠতি বালিকাই থাকবে। অবশ্য এ ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন।
সূরা আত-তূর-এ বলা হয়েছেঃ-
২৪.) তাদের সেবার জন্য সেসব বালকেরা ছুটাছুটি করতে থাকবে যারা কেবল তাদের জন্য নির্দিষ্ট হবে** তারা এমন সুদর্শন যেন সযত্নে লুকিয়ে রাখা মোতি।
**এ সূক্ষ্ম বিষয়টি বিশেষ লক্ষণীয় যে, غِلْمَانُهُمْ বলা হয়নি, বরং غِلْمَانٌ لَهُمْ বলা হয়েছে। যদি غِلْمَانُهُمْ বলা হতো তাহলে তা থেকে এ ধারণা করা যেতে পারতো যে, দুনিয়ায় যারা তাদের খাদেম ছিল জান্নাতেও তাদেরকেই তাদের খাদেম বানিয়ে দেয়া হবে। অথচ প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে দুনিয়ার যে ব্যক্তিই জান্নাতে যাবে সে তার উপযুক্ত পাত্র হিসেবেই যাবে এবং দুনিয়ায় সে যে প্রভুর খেদমত করতো বেহেশতেও তাকে সেই প্রভুর খাদেম বানিয়ে দেয়া হবে তার কোন কারণ নেই। বরং এমনও হতে পারে যে, কোন খাদেম তার নেক আমলের কারণে জান্নাতে প্রভুর চেয়েও উচ্চ মর্যাদা লাভ করবে। সুতরাং غِلْمَانٌ لَهُمْ বলে এ ধারণা পোষণের কোন অবকাশই রাখা হয়নি। এ শব্দটি এ বিষয়টি পরিষ্কার করে দেয় যে, এরা হবে সেই সব বালক যাদেরকে জান্নাতে তাদের খেদমতের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে।
*********************
গিলমানদের বর্ণনা এখানে দেখুন-
৪৫.) শরাবের ঝরণা থেকে পানপাত্র ভরে ভরে তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে।
শরাবের পানপাত্র নিয়ে ঘুরে ঘুরে জান্নাতীদের মধ্যে কারা পরিবেশন করবে সেকথা এখানে বলা হয়নি। এর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে অন্যান্য স্থানেঃ
وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَهُمْ كَأَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَكْنُونٌ
“আর তাদের খিদমত করার জন্য ঘুরবে তাদের খাদেম ছেলেরা যারা এমন সুন্দর যেমন ঝিনুকে লুকানো মোতি।” (আত্ তূর, ২৪)
وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَنْثُورًا
“আর তাদের খিদমত করার জন্য ঘুরে ফিরবে এমন সব বালক যারা হামেশা বালকই থাকবে। তোমরা তাদেরকে দেখলে মনে করবে মোতি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।” (আদ দাহর, ১৯)
তারপর এর বিস্তারিত বর্ণনা হযরত আনাস (রা.) ও হযরত সামুরাহ ইবনে জুনদুবের (রা.) বর্ণিত রসূলুল্লাহ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসগুলো থেকে পাওয়া যায়। সেগুলোতে বলা হয়েছে “মুশরিকদের সন্তানরা জান্নাতবাসীদের সেবক হবে।” (আবু দাউদ তায়ালিসী, তাবারানী ও বাযযার) এ হাদীসগুলো সনদের দিক দিয়ে দুর্বল হলেও অন্যান্য বহু হাদীস থেকেও জানা যায়, যে শিশুরা বয়প্রাপ্ত না হয়ে মারা যায় তারা জান্নাতে যাবে। তাছাড়া একথাও হাদীস থেকে জানা যায় যে, যেসব শিশুর পিতামাতা জান্নাতবাসী হবে তারা নিজেদের বাপ-মায়ের সাথে থাকবে, যাতে তাদের চোখ শীতল হয়। এরপর অবশ্যই এমন সব শিশু থেকে যায় যাদের বাপ-মা জান্নাতী হবে না। কাজেই তাদের ব্যাপারে একথা যুক্তিসঙ্গত মনে হয় যে, তাদেরকে জান্নাতবাসীদের খাদেম বানিয়ে দেয়া হবে।
(এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনার জন্য “ফাতহুল বারী” ও “উমদাতুল কারী”র জানায়েয অধ্যায়ের ‘মুশরিকদের সন্তানদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে’ অনুচ্ছেদে, “রাসায়েল ও মাসায়েল” ৩য় খণ্ড ১৭৭-১৮৭ পৃষ্ঠা দেখুন।)
***********
সূরা আলে ইমরান-এর ৭নং আয়াতটি দেখুনঃ-
৭) তিনিই তোমাদের প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছেন। এ কিতাবে দুই ধরনের আয়াত আছেঃ এক হচ্ছে, মুহকামাত, যেগুলো কিতাবের আসল বুনিয়াদ৫ এবং দ্বিতীয় হচ্ছে, মুতাশাবিহাত৬ যাদের মনে বক্রতা আছে তারা ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সবসময় মুতাশাবিহাতের পিছনে লেগে থাকে এবং তার অর্থ করার চেষ্টা করে থাকে। অথচ সেগুলোর আসল অর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। বিপরীত পক্ষে পরিপক্ক জ্ঞানের অধিকারীরা বলেঃ “আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এসব আমাদের রবের পক্ষ থেকেই এসেছে”।৭ আর প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানবান লোকেরাই কোন বিষয় থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
৫) মুহকাম পাকাপোক্ত জিনিসকে বলা হয়। এর বহুবচন ‘মুহকামাত’। ‘মুহকামাত আয়াত’ বলতে এমন সব আয়াত বুঝায় যেগুলোর ভাষা একেবারেই সুস্পষ্ট, যেগুলোর অর্থ নির্ধারণ করার ব্যাপারে কোনো প্রকার সংশয়-সন্দেহে অবকাশ থাকে না, যে শব্দগুলো দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য উপস্থাপন করে এবং যেগুলোর অর্থ বিকৃত করার সুযোগ লাভ করা বড়ই কঠিন। এ আয়াতগুলো ‘কিতাবের আসল বুনিয়াদ’। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে এ আয়াতগুলো সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ করে। এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে দুনিয়াবাসীকে ইসলামের দিকে আহবান জানানো হয়েছে। এগুলোতেই শিক্ষা ও উপদেশের কথা বর্ণিত হয়েছে। ভ্রষ্টতার গলদ তুলে ধরে সত্য-সঠিক পথের চেহারা সুস্পষ্ট করা হয়েছে। দ্বীনের মূলনীতি এবং আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদাত, চরিত্রনীতি, দায়িত্ব-কর্তব্য ও আদেশ-নিষেধের বিধান এ আয়াতগুলোতেই বর্ণিত হয়েছে। কাজেই কোন সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তি কোন্ পথে চলবে এবং কোন্ পথে চলবে না একথা জানার জন্য যখন কুরআনের শরণাপন্ন হয় তখন 'মুহকাম' আয়াতগুলোই তার পথপ্রদর্শন করে। স্বাভাবিকভাবে এগুলোর প্রতি তার দৃষ্টি নিবন্ধ হয় এবং এগুলো থেকে উপকৃত হবার জন্য সে প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।
৬) ‘মুতাশাবিহাত’ অর্থ যেসব আয়াতের অর্থ গ্রহণে সন্দেহ-সংশয়ের ও বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে দেবার অবকাশ রয়েছে।
বিশ্ব-জাহানের অন্তর্নিহিত সত্য ও তাৎপর্য, তার সূচনা ও পরিণতি, সেখানে মানুষের অবস্থান, মর্যাদা ও ভূমিকা এবং এ ধরনের আরো বিভিন্ন মৌলিক বিষয় সম্পর্কিত সর্বনিম্ন অপরিহার্য তথ্যাবলী মানুষকে সরবরাহ না করা পর্যন্ত মানুষের জীবন পথে চলার জন্য কোন পথনির্দেশ দেয়া যেতে পারে না, এটি একটি সর্বজনবিদিত সত্য। আবার একথাও সত্য, মানবিক ইন্দ্রিয়ানুভুতির বাইরের বস্তু-বিষয়গুলো, যেগুলো মানবিক জ্ঞানের আওতায় কখনো আসেনি এবং আসতেও পারে না, যেগুলোকে সে কখনো দেখেনি, স্পর্শ করেনি এবং যেগুলোর স্বাদও গ্রহণ করেনি, সেগুলো বুঝাবার জন্য মানুষের ভাষার ভাণ্ডারে কোন শব্দও রচিত হয়নি এবং প্রত্যেক শ্রোতার মনে তাদের নির্ভুল ছবি অংকিত করার মতো কোন পরিচিত বর্ণনা পদ্ধতিও পাওয়া যায় না। কাজেই এ ধরনের বিষয় বুঝাবার জন্য এমন সব শব্দ ও বর্ণনা পদ্ধতি অবলম্বন করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে, যেগুলো প্রকৃত সত্যের সাথে নিকটতর সাদৃশ্যের অধিকারী অনুভবযোগ্য জিনিসগুলো বুঝাবার জন্য মানুষের ভাষায় পাওয়া যায়। এ জন্য অতি প্রাকৃতিক তথা মানবিক জ্ঞানের ঊর্ধ্বের ও ইন্দ্রিয়াতীত বিষয়গুলো বুঝাবার জন্য কুরআন মজীদে এ ধরনের শব্দ ও ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। যেসব আয়াতে এ ধরনের ভাষা ও শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোকেই ‘মুতাশাবিহাত’ বলা হয়।
কিন্তু এ ভাষা ব্যবহারের ফলে মানুষ বড় জোর সত্যের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে অথবা সত্যের অস্পষ্ট ধারণা তার মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে, এর বেশী নয়। এ ধরনের আয়াতের অর্থ নির্ণয়ের ও নির্দিষ্টকরনের জন্য যত বেশী চেষ্টা করা হবে তত বেশী সংশয়-সন্দেহ ও সম্ভাবনা বাড়তে থাকবে। ফলে মানুষ প্রকৃত সত্যের নিকটতর হবার চাইতে বরং তার থেকে আরো দূরে সরে যাবে।
কাজেই যারা সত্যসন্ধানী এবং আজেবাজে অর্থহীন বিষয়ের চর্চা করার মানসিকতা যাদের নেই, তারা ‘মুতাশাবিহাত’ থেকে প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা লাভ করেই সন্তুষ্ট থাকে। এতটুকুন ধারণাই তাদের কাজ চালাবার জন্য যথেষ্ট হয়। তারপর তারা ‘মুহ্কামাত’ এর পেছনে নিজেদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে। কিন্তু যারা ফিত্নাবাজ অথবা বাজে কাজে সময় নষ্ট করতে অভ্যস্ত, তাদের কাজই হয় মুতাশাবিহাতের আলোচনায় মশগুল থাকা এবং তার সাহায্যেই তারা পেছন দিয়ে সিঁদ কাটে।
=====
আল্লাহতায়ালাই সর্বজ্ঞ-
“হে আমাদের রব! যখন তুমি আমাদের সোজা পথে চালিয়েছো তখন আর আমাদের অন্তরকে বক্রতায় আচ্ছন্ন করে দিয়ো না, তোমার দান ভাণ্ডার থেকে আমাদের জন্য রহমত দান করো কেননা তুমিই আসল দাতা।"
অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে জানানোর জন্য, আল্লাহ আপনাকে এর উত্তম জাযা দান করুন।
আল্লাহ কখনো অন্যায় বিচার করেন না। এমনকি কেউ তার কাছে অভিযোগ করবে, সেই সুযোগও তিনি দেন না। কাজেই এই হুর গেলমান সম্পর্কে আমরা আসলে ভুল বুঝছি। তাছাড়া আমাদের সীমিত জ্ঞানে জান্নাতের পরিবেশ সম্পর্কে ধারনা করা অসম্ভব। জান্নাতে পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য হুর থাকবে। কাজ করার জন্য অনেক গোলাম থাকবে। কিন্তু এরা কেউই মানুষ নয়। এরা কেউই দুনিয়াতে আমাদের মতন জীবন জাপন করেনি। কেউই পাপ পুন্য করেনি। ওরা মানুষের আকৃতিতে বানানো আল্লাহর অন্য এক সৃস্ট। মানুষকে সৃস্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য। আর জান্নাতের হুর-গোলাম এদেরকে সৃস্টি হয়েছে জান্নাতীদের সেবা করার জন্য। এখন, পুরুষের জন্য হর আছে, নারীদের জন্য কেন নেই সেটা জানতে - এখানে বিস্তারিত দেখুন
মন্তব্য করতে লগইন করুন