অপপ্রচার প্রচারেরই অংশ, প্রসঙ্গঃ ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ০৩ অক্টোবর, ২০১৫, ০৬:৩২:২৭ সকাল

ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। আল্লাহর রাসূল (সা.) যখন ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন তখন আরবি ভাষাভাষি কাফির-মুশরিকরা ভালোভাবেই বুঝেছিলেন যে এটা কোনো সাধারণ দাওয়াত নয় বরং এটা হলো একটা অনেক বড় আন্দোলন আর সেই কারণেই তারা এর বিরোধিতা শুরু করে। তারা যদি ইসলামকে আমাদের মতো শুধু নামাজ-রোজার মতো ইবাদাতগুলোর মতোই মনে করতেন তাহলে আল্লাহর রাসূলের সাথে কোনো বিরোধ হতো না। আমরা ইসলামকে ছোট পরিসরে দেখি, তাই ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করি, এটা আমাদের জ্ঞানের স্বল্পতারই প্রমাণ। আর এই জ্ঞানের স্বল্পতা হেতু আমরা ইসলামকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসলেও ইসলামী আন্দোলনকে অবজ্ঞা করি। মোদ্দাকথা হলো ইসলামকে প্রতিটি সেক্টরে সেট করার যে চেষ্টা সেটাই ইসলামী আন্দোলন। অবশ্য এই আন্দোলনকে আমরা জিহাদ বলেও জানি।

আমরা জানি, যেটা এক নাম্বার সেটার আদলে দুই নাম্বার জিনিস তৈরি করে চালিয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা বাজারে আছে। যেটা দুই নাম্বার সেটার কিন্তু আর দুই নাম্বারি হয় না। মোট কথা এক নাম্বারেরই দুই নাম্বার হয়। আর একটা বিষয় হলো ভালোর সাথেই কিন্তু সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, খারাপকে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে না। ইসলাম যেহেতু ভালো তাই এটাকে দুই নাম্বার সাজানোর একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায় এবং ইসলাম যেহেতু এক নাম্বার সেহেতু এটাকে দুই নাম্বার বানানোরও একটা অপপ্রয়াস লক্ষ করা যায়। আর এ কারণেই বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের অপ-প্রচার চালানো হচ্ছে। অবশ্য এই অপ-প্রচার যে এখনই শুরু হয়েছে ব্যাপারটা তা নয় বরং এই অপপ্রচার শুরু হয়েছে ইসলামের আদিকাল থেকেই।

অপ-প্রচারের ধরন

আগেই বলা হয়েছে যে, ইসলামের বিরুদ্ধে অপ-প্রচার শুরু থেকেই ছিল। কখনও এর মাত্রা ছিল বেশি আর কখনও ছিল কম কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়নি একটি দিনের জন্যও। বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে এসে এর মাত্রা আরও কয়েকগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্য অপ-প্রচারকারীরা সবসময়েই এর কৌশল পাল্টিয়েছে। কখনও প্রত্যক্ষভাবে আবার কখনও পরোক্ষভাবে তারা এই কাজ করেছে। কখনও নিজেরা সরাসরি অপ-প্রচার চালিয়েছে আবার কখনও নামধারী কিছু মাওলানা বা মুসলিম লেখককে দিয়ে তারা এই কাজ করিয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চে এসে নামধারী অনেক বড় মাওলানা ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে এসে দাঁড়িয়েছিল আবার বিষাদ সিন্ধুর মতো বই লিখিয়ে ইসলামের ইতিহাসকে বিকৃত করে মুসলমানদেরকে পঙ্গু বানিয়ে রেখে দিয়েছিল একটি গ্রুপ যার খেসারত আমাদেরকে এখনও দিতে হচ্ছে এবং আরও অনেকদিন দিতে হবে বলেই মনে হয়!

বর্তমানে আমরা মুসলিমরা দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দেওয়ার কারণে বিশেষতঃ আমাদের দেশের আলেম ওলামাগণ ইসলামের সঠিক চিত্র জনগণের সামনে যথাযথভাবে তুলে ধরতে না পারার কারণে বর্তমানে আমাদের দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে ইসলামের যে নাড়ীর সম্পর্ক ছিল তা দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। উপরন্তু সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়া, বহুজাতিক কোম্পানি এবং অমুসলিম শক্তির সম্মিলিত ইসলাম বিরোধী প্রচারণা, অপসাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং মুসলিম তরুণ-যুবকদেরকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় ইসলামী আদর্শ, তাহযীব-তামাদ্দুন আজ কোণঠাসা প্রায়! অমুসলিম শক্তিগুলো এক্ষেত্রে যতটা অগ্রসর আমরা যেন ঠিক ততটাই পিছিয়ে আছি।

১৯৭৯ সালের ১৬ এপ্রিল টাইম ম্যাগাজিনে একজন খ্রিস্টান লেখকের একটি আর্টিকেল ছাপানো হয়েছিল। সেখানে বলা হয় যে, ১৮০০ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত এই দেড়শত বছরে পাশ্চাত্যে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে ৬০ হাজারেরও বেশি বই লেখা হয়েছে। হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে ইসলামের বিরুদ্ধে একটিরও বেশি বই লেখা হয়েছে। আর ৯/১১ এর পরে এর প্রবণতা আরো অনেক বেড়ে গেছে। এখনতো প্রতিদিন অনেক অনেক বই এবং আর্টিকেল লেখা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা সন্তোষজনক নয়।

রাসূলের (সা.) যুগে অপ-প্রচার

মুহাম্মদ (সা.) যখন রাসূল হননি তখন মক্কার সকল মানুষের কাছেই তিনি অনেক বেশি সম্মানীয় ব্যক্তি ছিলেন। সবাই তাকে বিশ্বস্ততার অপর নাম “আলামীন” হিসেবেই জানতো। কিন্তু তিনি যখন রিসালাতের দায়িত্ব পালন করছিলেন তখন দেশের কর্তা ব্যক্তিরা তার বিরুদ্ধে লেগে যায়, আলামীন আর আলামীন থাকে না হয়ে যায় “পাগল”! রাসূলের (সা.) বিরুদ্ধে শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন ধরনের অপ-প্রচার আর নির্যাতন। কেউ তাকে বলত পাগল, কেউ বলত কবি আবার কেউ বলত গণক। রাসূল (সা.) কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে রিসালাতের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। একসময় দেখা গেল যে, সেই অপ-প্রচারটাই প্রচারে রূপ নিল। লোকজন যেভাবেই হোক পাগল, কবি বা গণককে দেখবে, দেখতে এসে রাসূলের (সা.) কথায়, কুরআনের বাণী শুনে মুগ্ধ হয়ে মুসলিম হয়ে যেতেন।

আমরা সকলেই সেই ঘটনাটা জানি। একদিন এক বুড়ি নিজের পোটলা নিয়ে যারপরনাই হাঁপাতে হাঁপাতে নিজ এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন আর মুহাম্মাদের (সা.) উপর অভিশাপ দিচ্ছিলেন। তিনি রাসূলকে (সা.) চিনতেন না। মুহাম্মাদ (সা.) বুড়িকে বললেন : বুড়িমা তোমার পোটলাটা আমাকে দাও আমি তোমাকে তোমার গন্তব্যস্থলে দিয়ে আসছি। যথাস্থানে গিয়ে বুড়ি রাসূলকে (সা.) অনেক অনেক দোয়া করলেন। রাসূল (সা.) যখন চলে আসছিলেন তখন বুড়ি তাঁর পরিচয় জানতে চাইলেন। মুহাম্মাদ (সা.) বললেন, বুড়ি মা, আপনি যেই মুহাম্মাদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে এসেছেন আমি সেই মুহাম্মাদ (সা.)। বুড়ি তখন তার ভুল বুঝতে পারলেন এবং রাসূলের (সা.) অনুসারী হয়ে গেলেন।

দেশ-বিদেশে মুহাম্মাদের (সা.) নামে অপ-প্রচার চালিয়েছে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী। আর এই অপ-প্রচারটাই প্রচারে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। রাসূল (সা.) ইচ্ছা করলেও হয়তোবা এত দ্রুত সকলের মাঝে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে পারতেন না, যদি না অন্যরা তাঁর নিকটে আসত। আর অন্যান্যরা অবশ্য এসেছে একজন পাগলকে দেখার জন্য, যেই পাগলের কাছে না যাওয়ার জন্য সরকারপ্রধানরা বলছে সেই পাগলকে একবার দেখাই দরকার- এই চিন্তা নিয়েই মূলতঃ তাঁর কাছে যাওয়া। কিন্তু শাসক গোষ্ঠী যদি এই অপ-প্রচার না চালাতেন তাহলে অন্যান্য দেশের লোকেরা রাসূলের (সা.) ব্যাপারে জানতে হয়তো আরও কয়েক যুগ লেগে যেত অথবা কখনও জানাই হতো না।

এভাবেই মূলতঃ অপ-প্রচারগুলো প্রচারে রূপ লাভ করে থাকে।

বর্তমান বিশ্বে অপপ্রচার

বর্তমান বিশ্বে অপ-প্রচারের কিছু নমুনা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, এ ছাড়াও অনেক অপ-প্রচার আমরা লক্ষ্য করি। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারের অন্যতম শব্দ হলো “জঙ্গি”। এই শব্দটা বিশ্বের মানুষ এমনভাবে খাচ্ছে যে, মুসলমানেরাও বেশিরভাগ সময় বিভ্রান্ত হয়ে যায়। আর জঙ্গি শব্দটা শুধু মুসলমানদের বেলায়েই প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জরিপ চালালে দেখা যাবে যে, যে সকল সন্ত্রাসী কাজকর্মের জন্য মুসলমানদেরকে জঙ্গি নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে তার নব্বই ভাগেরও বেশি কাজ করছে অমুসলিমরা। অথচ সেই কাজের জন্য তাদেরকে খ্রিস্টান জঙ্গি, ইহুদি জঙ্গি, হিন্দু জঙ্গি বা বৌদ্ধ জঙ্গি বলা হচ্ছে না! ইহুদিরা মুসলমানদেরকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে সেটা নাকি তাদের আত্মরক্ষার অধিকার। অন্যদিকে ফিলিস্তিনী শিশুরা পাথর দিয়ে ঢিল ছুঁড়লে সেটা হয় জঙ্গিবাদী!

আফগানিস্তান বা ইরাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে হাজার হাজার মুসলমানকে বোমা নিক্ষেপ করে মারা হচ্ছে আর তাদের এসব কাজের প্রতিবাদ করাটা হয়ে যাচ্ছে জঙ্গিপনা!

মিয়ানমারে নিয়ত বিনা অপরাধে (মুসলমান হওয়াটাই শুধু অপরাধ!) মুসলমানদেরকে পুড়িয়ে, কুপিয়ে মারা হচ্ছে, মিডিয়ায় কিন্তু সেই বৌদ্ধদেরকে কখনও বলা হয় না যে বৌদ্ধ জঙ্গিরা মুসলমানদেরকে পুড়িয়ে মেরেছে!

ভারতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে অথচ হিন্দু জঙ্গিরা এই কাজগুলো করছে এটা কিন্তু মিডিয়ায় আসছে না! এটার অন্যতম কারণ হলো আমাদের মুসলমানদের হাতে শক্তিশালী কোনো মিডিয়া নেই।

একটা ঘটনা উল্লেখ করছি- সম্ভবত এটা আমেরিকায় ঘটেছে। ঘটনাটা হলো- এক তরুণকে একটি হিংস্র কুকুর আক্রমণ করেছে। তরুণটির অবস্থা তখন মরণাপন্ন। পাশ দিয়ে একজন যুবক যাচ্ছিল। যুবকটি এই দৃশ্য দেখে নিজের জান বাজি রেখে কুকুরকে মেরে তরুণটিকে উদ্ধার করে। সেই মুহূর্তে একজন সাংবাদিক উপস্থিত হয়। এমন একটি মহৎ কাজের জন্য সাংবাদিক যুবকটিকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দেন এবং একটি ছবি তুলে নেন। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয়ের এক পর্যায়ে যখন জানতে পারেন যে, যুবকটি হলো মুসলমান তখনই ঘটে বিপত্তিটি। পরের দিনের পত্রিকায় বড় করে ছাপানো হয়, মুসলমান যুবক কর্তৃক খ্রিস্টানের কুকুর হত্যা! সেই সাংবাদিক সত্যি ঘটনাটা পুরোপুরি চেপে গিয়ে মুসলমানরা যে কত হিংস্র হতে পারে সেটা প্রমাণ করার জন্য কুকুর মারার বিষয়টা তুলে ধরলেন আর তরুণকে বাঁচানোর বিষয়টা এড়িয়ে গেলেন! এভাবেই নিত্য বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপ-প্রচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

অবশ্য এর ব্যতিক্রম কিছু বিষয়ও লক্ষ করা যায়। আবুল হোসেন ভট্টাচার্জ, মো. আসাদ, বেলাল ফিলিপস এর মতো বিখ্যাত ব্যক্তিরা পবিত্র কুরআনের ভুল ধরতে গিয়ে, অপ-প্রচারের মানসিকতা নিয়ে কুরআনের কাছে গিয়ে নিজেরাই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে বিস্তারিত লেখার আশা রইল।

বাংলাদেশে অপ-প্রচার

প্রায় নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু এখানেও ইসলামের বিরুদ্ধে অপ-প্রচার থেমে নেই। বাংলাদেশের মুসলমানেরা অনেক বেশি সহজ-সরল। এখানকার শাসকেরাও মুসলমানের দাবিদার। আর এই কারণেই এখানে অপ-প্রচারকারীরা সহজে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। এছাড়া পাশ্চাত্য দেশের কালচার-অপসংস্কৃতি আমাদের দেশকে ছেয়ে ফেলেছে। সব মিলিয়ে অপ-প্রচারকারীদের কাজ করাটা সহজ হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে এখন কেউ কেউ মুসলমান পরিচয় দেওয়াটায় সংকোচবোধ করেন। মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে ভয়ে ভয়ে থাকেন। ইসলামের কোনো অনুষ্ঠানে যেতে চান না লোকে দেখে ফেলবে এই ভয়ে! দাড়ি রাখতে এবং টুপি পড়তে চান না জঙ্গি হওয়ার ভয়ে। কেউ একজন একটু বড় দাড়ি রাখলেই তাকে জঙ্গি বলে ক্ষেপানো হয়! মাদরাসায় পড়লেই তাকে জঙ্গি হওয়ার প্রজনন ক্ষেত্রের সাথে তুলনা করা হয়। মাদরাসায় পড়–য়াদের সরকারি চাকরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়, এরকম আরো অনেক কিছু।

কয়েকদিন আগে একটা নাটক দেখলাম। একজন মেয়ে একটা কালো বোরকা পরেছেন, এক মহিলা তাকে থামিয়ে দিয়ে তার মুখটা দেখতে চাইলেন। কারণ হিসেবে বললেন যে বোরকা অপরাধীরাই পরে থাকে নিজেকে ঢাকার জন্য। সেই মেয়ে যখন মুখ খুললেন তখন মহিলা তাকে বললেন যে, এত সুন্দর চেহারাটা কি ঢেকে রাখার জন্য। তিনি বললেন বোরকাটা আমাকে একটু দাও আমি পরি। পরার শেষে বললেন দেখোতো আমাকে কেমন লাগে, অন্য মেয়েটি তখন বললেন যে সত্যি বলছি, আপনাকে পেতিœর মতো লাগছে। তখন তিনি বললেন যে, বোরকা পরলে এরকম পেতিœর মতোই লাগে, এখন থেকে এত সুন্দর চেহারাটাকে ঢেকে রাখার জন্য বোরকা পরা যাবে না!

এই ছোট্ট অভিনয় থেকেই বোঝা যায় যে, বাংলাদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারটা কত গভীর থেকে শুরু হয়েছে।

আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ সংগঠনের লোকেরা নিজেরা নিজেরা খুনোখুনি করছে, মরছে-মারছে, দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নিয়মিত মহড়া দিচ্ছে। তাদের দ্বারা ধর্ষিতা হচ্ছেন অসংখ্য মা-বোন, নিঃস্ব হচ্ছেন অনেক পরিবার অথচ তাদের কাজকে ছেলেখেলা হিসেবে দেখা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কাজ হিসেবে দেখা বা দেখানোর অপ-প্রয়াস চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে মাদরাসার ছাত্র, জামায়াত-শিবির, হেফাজতসহ ইসলামী আন্দোলনের কাজে অংশগ্রহণকারীদের থেকে কোন ধরনের অস্ত্র না পাওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে! তাদেরকে গ্রেফতার করে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস রিমান্ডে নিয়ে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে, বছরের পর বছর জেলে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে, ঘর-বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে! এসব করার পিছনে একটিই কারণ, আর তা হলো বাংলাদেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে বিদায় করা।

কিন্তু মজার বিষয় হলো, আল্লাহর রাসূলের (সা.) সময় অপ-প্রচারের কারণে জানার আগ্রহ নিয়ে যেমন অন্যান্যরা ইসলামের দিকে ছুটে এসেছিলেন ঠিক তেমনি বাংলাদেশেও অপ-প্রচারটাই প্রচারে রূপান্তরিত হয়ে মানুষজন ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের দিকে ছুটে আসছেন। তার বড় প্রমাণ হলো উপজেলা নির্বাচন।

মানুষজন অপ-প্রচারের কারণে আমাদের খারাপ হিসেবে জানতে পারছেন কিন্তু আমরা যদি রাসূল (সা.) বুড়ির সাথে যেভাবে আচরণ করেছেন সেভাবে জনগণের সাথে আচরণ করি তাহলে অবশ্যই দৃশ্যপট পাল্টে যাবে ইনশাল্লাহ।

শেষ কথা হলো, ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন কখনো অপ-প্রচারের তোয়াক্কা করেনি, করবে না। ইসলাম হলো একটা গতিশীল আন্দোলনের নাম। এই আন্দোলনকে কেউ কখনও আটকিয়ে রাখতে পারেনি এবং পারবেও না। পাহাড় থেকে ঝরনা নেমে আসে আর তার লক্ষ্য হলো সাগর, সেই ঝরনাকে কেউ আটকিয়ে রাখতে পারে না। ঝরনা নদীতে পড়ে আস্তে আস্তে চলে যায় সাগরের দিকে। তাতে যদি কেউ বাঁধ দিয়ে আটকে রাখতে চায় তাহলে সে অন্যদিক দিয়ে সাগর পানে যাওয়ার চেষ্টা করবে, যদি সেদিক দিয়েও বাধার সৃষ্টি করা হয় তাহলে বাঁধের উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকবে, যদি সেই সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে বাঁধ ভেঙে হলেও সেই ঝরনার পানি সাগরের দিকে ছুটে যাবেই। ইসলামী আন্দোলনও তার ব্যতিক্রম নয়। বাধা যাই আসুক না কেন সেগুলোর মোকাবেলা করেই ইসলামী আন্দোলন সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, এই সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা আর অপপ্রচারের মোকাবেলা করে ইসলাম টিকে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাল্লাহ।

লেখাটি অন্য শিরোনােম চলতি সপ্তাহের সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে-http://weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=19376

বিষয়: বিবিধ

১৪৩৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

344154
০৩ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১১:৩৫
ইবনে হাসেম লিখেছেন : লিখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী হয়েছে। নির্বাচিত হবার যোগ্য। মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। আবু তাহের ভাইকে ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহ।
০৪ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৫:৫৮
285606
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : উৎসাহমূলোক মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।
344175
০৩ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:১২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রচার(অপপ্রচার!) ছাড়া আর কোন পথ নাই। এই জন্যই ইসলামের বিরুদ্ধে এত পয়সা খরচ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্য সত্যই থাকে। সোভিয়েট ইউনিয়ন ডারউইনবাদ প্রচারে রাষ্ট্রিয়ভাবে অনেক ব্যায় করেও এখনও সেটা বৈজ্ঞানিক পর্যায়েও স্বিকৃতি লাভ করতে পারেনি।
০৪ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৫:৫৮
285607
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : সহমত
344186
০৩ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:৫৩
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : মাশা আল্লাহ।দারুন লিখেছেন।
০৪ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৫:৫৯
285608
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : ধন্যবাদ।
344199
০৩ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:০১
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। কথা গুলো চমৎকার! আসলে ভালো কিছু খারাপ লোকেরা সইতে পারেনা, সইতে না পারার কারনেই তারা অপপ্রচার চালায়.... কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ভালোটা সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে।
০৪ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৫:৫৯
285609
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : সহমত। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File