ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রপথিক শহীদ আব্দুল মালেক

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ১৫ আগস্ট, ২০১৫, ০৩:১১:০৯ দুপুর



ভূমিকাঃ

ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশে যে কয়েকজন ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন শহীদ আব্দুল মালেক তাঁদের মধ্যে অন্যতম। একজন তুখোর মেধাবী ছাত্র হয়েও যিনি লোক চক্ষুর অন্তরালেই থাকতে পছন্দ করতেন। আব্দুল মালেকের প্রত্যেকটি কাজই ছিল দ্বীনের উদ্দেশ্যে। জানার আগ্রহ ছিল তাঁর অনেক বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আব্দুল মালেক খুব কম সময়ের মধ্যেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সমর্থ হন। তাঁর সকল কাজের মধ্যমনি ছিল কিভাবে ইসলামী শিক্ষাকে এদেশে বাস্তবায়ন করা যায়। ইসলামী শিক্ষার কথা বলতে গিয়ে নিজের জীবনকে একেবারে তুচ্ছ মনে করে শাহাদাতের অমিয় পেয়ালা পান করেন শহীদ আব্দুল মালেক।

ছাত্র হিসেবে আব্দুল মালেকঃ

১৯৪৭ সালে জনগ্রহণকারী শহীদ আব্দুল মালেক বগুড়ার অদূরবর্তী থানা ধুনটের খোকসাবাড়ীতে মৌলভী মুন্সি মোহাম্মদ আলী ও মা ছাবিরুন নেছার ৫ জন ছেলের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। একাডেমিক জীবনের হাতেখড়ি থেকে শুরু করে সর্ব্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ পর্যন্ত তিনি মেধার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। খোকসাবাড়ী প্রাইমারী স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে তিনি স্কলারশীপ লাভ করে ভর্তি হন গোসাইবাড়ী হাইস্কুলে। সেখানেও তিনি অষ্টম শ্রেণিতে স্কলারশীপ লাভ করেন। জ্ঞানের তীর্ব আকাঙ্খা নিয়ে এবার তিনি নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন বগুড়া জেলা স্কুলে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আব্দুল মালেক শিক্ষক শিক্ষার্থীর ভালবাসা অর্জন করতে সমর্থ হন। সময় গড়িয়ে এবার এলো এস.এস.সি পরিক্ষা। দেখা গেলো এবারও তিনি তাঁর মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। এস.এস.সি পরিক্ষায় তিনি রাজশাহী বোর্ডে মেধা তালিকায় একাদশ স্থান অর্জন করেছেন।

তারপর শুরু হলো উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পথ চলা। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেন রাজশাহী কলেজে। আব্দুল মালেক এবার আরও ভাল রেজাল্ট করতে সামর্থ হলেন। এইস.এস.সি পরিক্ষায় এবার তিনি মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। উচ্চ শিক্ষার সুতীব্র আকাঙ্খা নিয়ে এবার তিনি প্রাণ রসায়নে ভর্তি হলেন প্রাচ্চের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেও তিনি প্রথম স্থান অধিকার করতে থাকেন। শাহাদাত বরণ কালে তিনি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

কর্মী হিসেবে আব্দুল মালেকঃ

আব্দুল মালেক একজন নীরব কর্মী ছিলেন। অতুলনীয় প্রতিভার অধিকারী হয়েও তিনি কখনো গর্ব করে বেড়াতেন না। তিনি শুধূ আল্লাহর উপর ভরসা করেই সামনের দিকে এগুতে চাইতেন। আর তাইতো তিনি নবম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় তাঁর পিতার নিকট লিখলেন-

“বাড়ির কথা ভাবিনা, আমার শুধু এক উদ্দেশ্য খোদা যেন আমার উদ্দেশ্য সফল করেন। কঠিন প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছি এবং কঠোর সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি দোয়া করবেন খোদা যেন সহায় হন। আমি ধন সম্পদ কিছুই চাই না শুধু যেন প্রকৃত মানুষরুপে জগতের বুকে বেঁচে থাকতে পারি।”

আব্দুল মালেক ছিলেন একজন নির্ভরযোগ্য কর্মী। যখন তিনি ঢাকা শহর শাখার অফিস সম্পাদক তখন অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সেই অফিসের চেহারা পাল্টে দিলেন। আব্দুল মালেকের দায়িত্বশীল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বলেছেন-

“আব্দুল মালেকের সহযোগিতায় ঢাকা শহর শাখার পর পর তিনজন সভাপতি যত সহজে বিরাট দায়িত্ব পালন করেছেন তেমন আরামে ও সহজে গুরু দায়িত্ব পালনের সুযোগ কোনদিন কেউ পেয়েছে বলে আমার জানা নাই।”

শহীদ আব্দুল মালেক একদম সাধারণ জীবন যাপন করতেন। তাঁর একটা মাত্র জামা ছিল। সারাদিন কাজ শেষে রাতে রুমে এসে সেটা ধুয়ে শুকাতে দিতেন আর তা পরের দিন পড়ে আবার দ্বীনের কাজে বেড়িয়ে যেতেন।

ইসলামী আন্দোলনের একজন উদিয়মান কর্মী হিসেবে তাঁর মন ছিল মানবতার দরদে ভরপুর। দুঃখ দূর্দশাগ্রস্থ মানুষের অবস্থা জানাও ছিল তাঁর অন্যতম কর্মসূচী। বর্তমান আমীরে জামায়াত বলেছেন- ‘‘ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কর্মীরা বাড়িতে যাচ্ছে। রাতের ট্রেনে আব্দুল মালেক বাড়ি যাবেন শুনেছি। দু’একদিরে মধ্যে দেখা হয়নি। সময় মতো স্টেশনে গিয়ে হাজির হলাম। আব্দুল মালেককে খুঁজে পেতে বেশ সময় লেগেছে। কারন তিনি মধ্যম শ্রেণীতে উঠেন নি। আমাকে দেখে তিনি বেশ অপ্রস্তুত হলেন। আমার স্টেশনে যাওয়া তাঁর কাছে কেমন যেন লেগেছে। বেশ একটু জড়সড় হয়ে বলতে লাগলেন, আপনি স্টেশনে আসবেন জানলে আমি যে করেই হোক দেখা করেই আসতাম। অবশ্য একবার খোঁজ করেছি আপনাকে পাইনি। আমি কথাগুলোর দিকে কান না দিয়ে কামরাটার দিকে ভাল করে দেখছিলাম। তিল ধরনের জায়গা নেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে সারারাত। আমি চেষ্টা করলাম ইন্টারে জায়গা করে দেয়ার। টিকিটের ঝামেলাও চুকিয়ে দেয়া যেত। কিন্তু রাজি করানো সম্ভব হলো না। আব্দুল মালেক অকপটে বলেই ফেললেন, এই লোকগুলোর সাথে আলাপ করলে আমার ভাল লাগবে। তখনো বুঝতে পারিনি কত মর্যাদাবান ব্যক্তির কাছে এই কথাগুলো শুনছি।’’

দায়িত্বানুভূতি ও স্বতঃস্ফুর্তততা ছিল শহীদ আব্দুল মালেকের চারিত্রিক বৈশিষ্টের অন্যতম দিক। এব্যাপারে মাওলানা নিজামী বলেন-

‘‘সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে একদিন ঢাকায় প্রবল বৃষ্টি হয়ে গেল। আগামসি লেনস্থ সংঘের পূর্ব পাক দপ্তর থেকে বেরোবার উপায় ছিল না আমাদের। বস্তির লোকেরা বিশ্ববিদ্যালয় পুরাতন কলভবন, হোসেনী দালান ও সিটি ল’কলেজে আশ্রয় নিয়েছে। আমি কোন মতে ফজলুল হক হলে গেলাম। ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যার্থে আমরা কি করতে পারি সে সম্পর্কে পরামর্শ করাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে কথা উঠার আগেই আব্দুল মালেকের মুখে খবর পেলাম ঢাকা শহর অফিসে পানি উঠেছে। বৃষ্টি একটু থেমে যেতেই তিনি অফিসে গিয়ে সব দেখে এসেছেন। অধিক পানি ওঠায় কাগজপত্রাদি সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আব্দুল মালেক ওগুলো সব ঠিক ঠাক করে এসেছেন। তাঁর দায়িত্ব সচেতনতার এ চাক্ষুষ প্রমানটুকু আমার পক্ষে কোনদিনই ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তারপর কর্মী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে একদিন নিউমার্কেট ও আরেক দিন জিন্নহ এভিনিউয়ে রোড কালেকশন করা হলো। অল্প সময়ে কর্মীদেরকে জমায়েত করে এত বড় কাজ আঞ্জাম দেয়ার মতো আর কোন কর্মীই ছিল না। আমারতো কাজ ছিল শুধু কাগজের টুকরায় কিছু নোট লিখে অথবা আধঘন্টা পনের মিনিটের আলাপে মোটামুটি কিছূ বুঝিয়ে দেয়া। আব্দুল মালেকের সুদক্ষ পরিচালনায় সংগৃহিত অর্থের নিখুত হিসাব পেলাম। সিকি, আধুলি, পাই পয়সা থেকে নিয়ে কত টাকার নোট কতটি, তার হিসেবের ব্যবস্থাও তিনি করে রেখেছিলেন। এরপর তিন দিন তিন রাত একটানা পরিশ্রম করে আব্দুল মালেক অল্প সংখ্যক কর্মী নিয়ে চাল বন্টনের কাজ সমাধান করে ফেললেন। সেদিন আব্দুল মালেককে স্বচক্ষে অমানুষিক পরিশ্রম করতে দেখেছি। আর মুরুব্বি সেজে পরামর্শ দিয়েছ কাজটা আর একটু সহজে কিভাবে করা যায়। এই ভাগ্যবান ব্যক্তির পরিশ্রমকে লাঘব করার জন্য সেদিন তার সাথে মিলে নিজে হাতে কিছু করতে পারলে আজ মনকে কিছু শান্তনা দিতে পারতাম।’’

নেতা হিসেবে আব্দুল মালেকঃ

সাধারণত একজন নেতার যে সকল গুনাবলী থাকা দরকার শহীদ আব্দুল মালেকের মধ্যে তার পুরোটাই ছিল। ১৯৬৮-৬৯ এর সেশন শুরু হয়েছে। আব্দুল মালেক ঢাকা শহর শাখার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কার্যকরি পরিষদের নিখিল পাকিস্তান ভিত্তিতে নির্বাচিত তিনজন সদস্যের মধ্যে তিনি অন্যতম। ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি ছিলেন আপোষহীন, নির্ভীক। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইসলামী আন্দোলনের কাজ অনেকটা গতিশীল হলো। তিনি ছিলেন কর্মীদের একজন আস্থাবান দায়িত্বশীল। এত বড় একজন দায়িত্বশীল হয়েও তিনি কর্মীদের খোঁজ-খবর নিতে ভুলতেন না। শহীদ আব্দুল মালেকের একটা চিরাচরিত অভ্যাস ছিল চিঠির মাধ্যমে কর্মীদের প্রেরণা যোগানো। তিনি নিয়মিতই বিভিন্ন কর্মীকে চিঠি লিখতেন। এমনি একজন কর্মী বেলালকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন-

‘‘সৃষ্টির আদি থেকে একটি শ্বাশ্বত নিয়মের মতো এ সত্য চলে এসেছে যে, মহাপুরুষরা সত্যের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজের মন-প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন। নির্মম সমাজ সেই মহা পুরুষকেই কঠিন ও নির্দয়ভাবে আঘাতের পর আঘাত হেনেছে। বিদ্রুপ, লাঞ্ছনা ও গঞ্জনার এই ইতিহাস নতুন কিছিু নয়। আরবের বালুকণা ও প্রস্তর কাদের তাজা খুনে রঞ্জিত হয়েছিল? ওমর, ওসমান, আলী আর হাসান হোসাইন এর জীবন নাশের জন্য কারা দায়ী? ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ, মুহাম্মদ ইবনে কাশিম, কোতায়বা কাদের চক্রান্তে নিহত হয়েছিলেন? ইসলামের ইতিহাস পড়ে দেখ, রক্তের লাল স্রোত শুধু কারবালায়েই শেষ হয়ে যায়নি। আজও পৃথিবীর বুকে সহস্র কারবালা সৃষ্টি হচ্ছে। আজো মুসলমান ফাঁসির মঞ্চে নিজের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে খোদার দ্বীনকে টিকিয়ে রাখার জন্য। তোমরাতো পৃথিবী দেখনি, দেখনি মুসলমানদের উপর নির্যাতন, শোননী তাদের হাহাকার। যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানব নিজের জীবন তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেন, যার জন্য হাজারো মুজাহীদের তপ্ত রক্ত পৃথিবীর মাটি লাল করে দিয়েছে, সেই ইসলামই লাঞ্ছিত হচ্ছে মুসলমানদের হাতে।”

একটা বিষয় খেয়াল করার মতো। তিনি আজ থেকে প্রায় ৪৬ বছর আগে যেই বিষয়টা নিয়ে লিখেছিলেন আজও সেই অবস্থার তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। এই তো সেদিন আব্দুল কাদের মোল্লাকে (রাহ) বিনা অপরাধে (তাঁর অপরাধ শুধু একটাই যে তিনি ইসলামী আন্দোলন করেন) ফাঁসি দিয়ে হত্যা করলো এদেশেরই নামধারী মুসলমান সরকার। আজও মুসলমানদের হাতেই ইসলামের সর্বনাশ হচ্ছে। মিশরে মুসলমানের (জেনারেল সিসি) হাতেই হাজার হাজার মুসলমান নিহত হলো। আমাদের এই সবুজ বাংলাদেশে মুসলমান শাসকের হাতেই শত শত মুসলমান নিহত হলো-হচ্ছে। ফিলিস্তিনের মুসলমানদের আজ পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। মায়ানমারের মুসলমানদের পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। চীনের মুসলমানদেরকে রোজা পর্যন্ত রাখতে দেয়া হচ্ছে না। এক কথায় আজকে সমগ্র বিশ্বের প্রায় সকল মুসলমানই বিশেষ করে মুসলমানের মতো যারা জীবন যাপন করতে চায় তাদের সকলেই কঠিন নির্যাতনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন।

আব্দুল মালেক জানতেন যে ইসলামী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া মানেই কঠিন পরিক্ষাকে মাথাপেতে নেওয়া। সেটা জেনে পথ চলার কারনেই কোন প্রতিবন্ধকতা তাঁর পথ আগলে রাখতে পারেনি। পাহাড়সম দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে গেছেন সম্মুখ পানে। তাঁর বলিষ্ঠতা, আত্মবিশ্বাস এবং সংগ্রামী চেতনার পরিচয় মিলে নিম্নের এই লেখায়-

‘‘জানি আমার দুঃসংবাদ পেলে মা কাঁদবেন, কিন্তু উপায় কি বলুন? বিশ্বের সমস্ত শক্তি আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। আমরা মুসলমান যুবকেরা বেঁচে থাকতে তা হতে পারে না। হয় বাতিল উৎখাত করে সত্যের প্রতিষ্ঠা করবো নচেৎ সে প্রচেষ্টায় আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে। আপনারা আমায় প্রাণভরে দোয়া করুন জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়েও যেন বাতিলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারি। কারাগারের অন্ধকার, সরকারী যাতাকলের নিষ্পেষণ যেন আমাকে ভড়কে দিতে না পারে।”

সত্যিই আব্দুল মালেককে কোন কিছুই ভড়কে দিতে পারেনি। তিনি পাহাড়ের মতো অটল অবিচল থেকে দ্বীনের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। আব্দুল মালেক যে কত দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন তার নজির মিলে তাঁর এক বক্তব্যের মাধ্যমে। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা (রাহ) এক সময়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বললেনঃ আমি যখন ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগ দিলাম তখন এক কর্মী শিক্ষা শিবিরে ঢাকায় আসলাম। আব্দুল মালেকের কথা শুনেছি কিন্তু তাঁকে তখন পর্যন্ত দেখা হয়নি। তিনি ছিলেন সেই শিক্ষা শিবিরের ব্যবস্থাপক। কিন্তু প্রায় তাঁকে দেখা যেত না। শেষ দিনে এসে তিনি একটা ছোট্ট বক্তব্য দিলেন। তাঁর বক্তব্যটা ছিল এরকম-

‘‘...আমরাতো জেনে বুঝেই এ পথে এসেছি। এই পথ থেকে ফিরে যাওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। আমরা যদি পিছনের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো যে অনেকদূর পথ পেরিয়ে এসেছি, কিন্তু সামনের দিকে তাকালে মনে হবে আমাদের আরও অনেক পথ চলতে হবে। এই পথে চলতে গিয়ে যতি আমরা দ্রুতগামী কোন বাহন পাই তাহলে সেটাতে সওয়ার হয়েই মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছবো, যদি তেমনটা না পাই তাহলে শ্লোথ কোন বাহনে করে হলেও আমরা সেই মঞ্জিলে পৌঁছার চেষ্টা করবো। এই পথ চলতে গিয়ে বাতিল শক্তি যদি আমাদের পা দুটো কেটে ফেলে তাহলে আমরা হাতের উপর ভর করে মঞ্জিলে পৌঁছার চেষ্টা করবো। বাতিল শক্তি যদি আমাদের হাত দুটোকেও কেটে ফেলে তাহলে আমরা আমাদের শরীরের উপর ভর করে মঞ্জিলের দিকে এগিয়ে যাব, এই পর্যায়ে বাতিলেরা যদি ধর থেকে আমাদের মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তাহলে আমরা আমাদের চোখ দিয়ে সেই মঞ্জিলের দিকে চেয়ে থাকবো, বাতিল শক্তি যদি আমাদের চোখ দুটোও তুলে নেয় তাহলে আমরা আমাদের মন দিয়ে ধ্যান করবো যে কখন আমরা আমাদের মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছবো, এরপরও আমরা বাতিলের সামনে কখনো মাথা নত করবো না।’’

আজকে আমাদের মাঝে বক্তা এবং শ্রোতা, নেতা এবং কর্মী আব্দুল মালেক এবং আব্দুল কাদের মোল্লা কেউই আর বেঁচে নেই। দুজনই শাহাদাতের অমিয় পেয়ালা পান করে আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে অবস্থান করছেন। দু’জই আজকে সফল মানুষের খাতায় না লিখিয়েছেন। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন এক উজ্জ্বল প্রেরণা। শহীদ আব্দুল মালেক আমাদেরকে সেই পথে চলার প্রেরণা দেয়ার জন্য তাঁর প্রিয় কর্মী বেলালকে আরেকটি চিঠিতে লিখলেন-

‘‘প্রিয় বেলাল, মুসলমানদের জিন্দেগী খুবই কঠিন। জাহানে নও এ হয়তো পড়ে থাকবে। গত ২৯ আগষ্ট মিশরে যারা ইসলামী আন্দোলন করতেন সেই ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ৩ জন নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রখ্যাত চিন্তাবীদ সাইয়েদ কুতুব শহীদ। ১৯৫৪ সালেও এ দলের ৬ জন নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মিশরের সর্ব্বোচ্চ বিচারপতি ড. আব্দুল কাদের আওদাহ। এ সময় সাইয়েদ কুতুবের দশ বছরের কারাদন্ড হয়। ইসলামী আন্দোলনে মিশরের মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। জয়নব আল গাজালী নামে এক মহিলাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। সাইয়েদ কুতুবের বোন হামিদা কুতুবকে দেয়া হয়েছে ১০ বছরের কারাদন্ড। বেলাল চিন্তা করতে পারকি এদের কথা। এদের জীবন শহীদের, মুজাহীদের জীবন। মৃত্যুও শহীদের মৃত্যু। এদের অপরাধ ছিল এই যে, এরা মিশরের প্রেসিডেন্ট নাসেরের অনৈসলামী কাজের সমালোচনা করেছিলো। আমাদেরকেও ওদের মতো হতে হবে। রাসূলের (সা) পথ শাহাদাতের পথ। তোমরা তাই জেগে ওঠো, তৈরী হও সেই চুড়ান্ত সংগ্রামের জন্য। এই শপথ নাও।

তোমাদের মালেক ভাই,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩ই মার্চ, ১৯৬৭।’’

শাহাদাতের প্রেক্ষাপটঃ

আব্দুল মালেক সর্বদাই শহীদি তামান্নায় উজ্জিবিত ছিলেন। তিনি লেখা-পড়ার চেয়ে ইসলামী আন্দোলনকে কোন অংশেই কম গুরত্ব দিতেন না বরং কিছু সময় বেশিই গুরত্ব দিতেন। তাঁর সহপাঠি ও সহকর্মীরা তাঁকে পরিক্ষায় খুব ভাল ফল করার দিকে মনযোগী হওয়ার পরামর্শ দিলে তিনি মৃদু হেসে বলতেন-

‘‘বেঁচে থাকার জন্য ডিগ্রী নিতে হবে যাতে আয়-রোজগারের একটা পথ হয়। কিন্তু ওটাকে জীবনের চরম লক্ষ্য বানিয়ে নিতে চাই না। খুব ভাল রেজাল্টের ধান্দা করলে ক্যারিয়ার গড়ার নেশায় পেয়ে বসার আশঙ্কা আছে।’’

মজার বিষয় হলো, উপরিউক্ত মন্তব্য করার পরেও কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রটি আব্দুল মালেকই ছিলেন। আর সেই কারনেই তিনি খুব ভাল ভাবেই উপলব্ধিই করতে পেরেছিলেন যে, শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হওয়া দরকার। বর্তমানেও তার ব্যতিক্রম নয়। আজকে এমন একটা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে যে, এখান থেকে নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ গড়ে ওঠা অনেকটা অসম্ভব ব্যাপার। স্কুল কলেজে ধর্মীয় শিক্ষা নাই বললেই চলে আর মাদরাসাতে যা চালু আছে ইসলাম শেখার জন্য সেটাও অপ্রতুল বললে মনে হয় না বেশি বলা হবে। আজকে ছোট ছেলে-মেয়েদের শেখানো হচ্ছে কিভাবে সুদ কষার অঙ্ক করতে হয়। যারা ছোটবেলা থেকেই সুদের হিসেব নিকেষ করতে শিখছে তারা বড় হয়ে সেই সুদকে যে কতখানি প্রত্যাখ্যান করতে পারবে তা বলা কঠিন। মিষ্টার আর মৌলভীতে বিভক্ত করা হচ্ছে আমাদের পুরো জাতিকে। ইসলামের যতটুকু শিক্ষা এখন পর্যন্ত চালু আছে তা শুধু ব্যক্তি উদ্যোগেই। শহীদ আব্দুল মালেক এই বিষয়গুলো হৃদয় দিয়ে উপলব্ধী করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি মনে করেছিলেন যে, এটার অবসান ছাড়া সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই তিনি ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য যেখানে যতটুকু সময়-সুযোগ পেয়েছেন লুফে নিয়েছেন।

তারই অংশ হিসেবে ১৯৬৯ সালে শহীদ আব্দুল মালেক সহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এয়ার মার্শাল নূর খানের সাথে সাক্ষাৎ করে দেশে সার্বজনীন ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর দাবী করেন। শহীদ আব্দুল মালেকের প্রতিনিধি দলের পর দেশের অন্যান্য আরও সংগঠন একই দাবী তুলেন। সবার দাবীর মুখে অল্প কিছুদিনের মধ্যে সরকার নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। এটি ছিল পাকিস্তান আমলের গঠিত সর্বশেষ শিক্ষা কমিশন। গঠিত শিক্ষা কমিশন একটি শিক্ষা নীতিও ঘোষনা করেন, ঘোষিত শিক্ষানীতিতে কিছু ত্র“টি-বিচ্যুতি থাকলেও এতে ইসলামী আদর্শের প্রাধান্য পরিলক্ষি হয়। কিন্তু বাধসাদে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ধ্বজাধারীরা। তারা এ শিক্ষা নীতি বাতিলের দাবী জানায়। এমনিই প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তি কি হবে তা নিয়ে জনমত জরিপের আয়োজন করা হয়। জনমত জরিপের অংশ হিসেবে ১৯৬৯ সালের ২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইন্সটিউিট অব পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশন (নিপা) ভবনে (বর্তমান ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ) এ শিক্ষানীতির উপর একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনা সভায় বামপন্থিদের বিরোধীতামূলক বক্তব্যের মধ্যে শহীদ আব্দুল মালেক মাত্র ৫ মিনিট বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। অসাধারণ মেধাবী বাগ্মী শহীদ আব্দুল মালেকের সেই ৫ মিনিটের যৌক্তিক বক্তব্যে উপস্থিত সবার চিন্তার রাজ্যে এক বিপ্লবী ঝড় সৃষ্টি করে। ফলে সভার মোটিভ পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যায়। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তির বিষয়ে তিনি সেদিন স্পষ্ট করে বলেছিলেন-

‘‘এ শিক্ষানীতির Basic সম্পর্কে বলা হয়েছে Pakistan must aim at ideological unity, not at ideological vacuum-it must impart a unique and integrated systen of education wich can impart a common set of cultural values based on the precepts of Islam.’’ তিনি বক্তব্যে Common set of cultural values এর ধারনা উত্থাপন করে এর সুন্দর ব্যাখ্যা ও যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বলেন এর মানে One set of cultural values নয়। One set of cultural values সোভিয়েট রাশিয়াতে রয়েছে। যেখানে রয়েছে একটি Authorian society আর সেখানে বিভিন্ন অংগ রাষ্টগুলো তাদের Cultural কে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়ে সেখানে একটি One set of cultural values তৈরী করেছে। আমরা এটার বিরোধী। আমরা এখানে চাই Common set of cultural values not One set of cultural values.’’

তাঁর বক্তব্যের এ ধারনাটিকে খুব সুন্দরভাবে যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করার কারনে সেদিন উপস্থিত শ্রোতা, সুধীমন্ডলী এবং নীতি নির্ধারকরা শহীদ আব্দুল মালেকের বক্তব্যের সাথে ঐকমত্য পোষন করে একটি সার্বজনীন ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। আব্দুল মালেকের তত্ত্ব ও যুক্তিপূর্ণ অথচ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ক্ষিপ্ত করে দেয় ইতোপূর্বে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে বক্তব্য রাখা বাম, ধর্মনিরপেক্ষ ও ইসলাম বিরোধী বক্তাদের। সকল বক্তার বক্তব্যের মাঝ থেকে নীতি নির্ধারক এবং উপস্থিত শ্রোতা-সুধীমন্ডলী যখন আব্দুল মালেকের বক্তব্যকে পূর্ণ সমর্থন দেন তখন আদর্শের লড়াইয়ে পরাজিত বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠির সকল ক্ষোভ গিয়ে পড়ে শহীদ আব্দুল মালেকের উপর। নিপার আলোচনা সভায় বাম ও ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে জনমত তৈরীতে ব্যর্থ হওয়ার পর তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ডাকসুর নামে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার পক্ষে প্রস্তাব পাশ করানোর উদ্দেশ্যে দশ দিনের ব্যবধানে অর্থাৎ ১২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে (টি.এস.সি) এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শহীদ আব্দুল মালেক সহ কয়েকজন ইসলামী শিক্ষার উপর কথা বলতে চাইলে তাদের সেই সুযোগ দেয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। সভার এক পর্যায়ে জনৈক ছাত্রনেতা ইসলামী শিক্ষার প্রতি কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখে। তখন উপস্থিত শ্রোতারা এর তীব্র বিরোধীতা করে ইসলামী শিক্ষার পক্ষে শ্লোগান দেন। সাথে সাথে বাম ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ক্যাডাররা হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর। সন্ত্রাসীদের ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শহীদ আব্দুল মালেক তাঁর সাথীদের স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেন। এসময় সকল সঙ্গীকে নিরাপদে বিদায় দিয়ে শহীদ আব্দুল মালেক ২-৩ জন সাথীকে সাথে নিয়ে টি.এস.সির পাশ দিয়ে হলে ফিরছিলেন। হলে ফেরার পথে লোহার রড, হকিস্টিক নিয়ে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীরা তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাঁকে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নিয়ে ইটের উপর মাথা রেখে ইট, লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে রক্তাক্ত ও অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। মারাত্মক আহত হন তাঁর সঙ্গী গাজী ইদ্রীসও। আহত এবং সংগাহীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার ৩ দিন পর ১৫ আগস্ট শাহাদাতের অমিয় পেয়ালা পান করে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পক্ষে যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া ইসলামের এই সুমহান বক্তা- ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রপথিক শহীদ আব্দুল মালেক। ১৯৬৯ সালের ১৫ আগস্ট বিশ্বের যে প্রান্তেই শহীদ আব্দুল মালেকের শাহাদাতের সংবাদ পৌঁচেছে ইসলাম প্রেমিক প্রতিটি মানুষের চোখের পানি সেখানে ঝড়েছে। আব্দুল মালেকের শাহাদাতে শুধু এদেশের জনগনের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়নি বরং বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তর থেকে বিবেকবান মানুষের কান্নার ধ্বনী শোকের আবহ তৈরী করেছিল। শহীদ আব্দুল মালেকের শাহাদাতের সংবাদ শুনে সেদিন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ) বলেছিলেন-

‘‘আব্দুল মালেক বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রথম শহীদ তবে শেষ নয়।’’

শহীদ আব্দুল মালেকের নেতা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন-

‘‘তুমি পরে এসে আগে চলে গেছো, আল্লাহর দরবারে অনেক বড় মর্যাদায় ভূষিত হয়েছ, তাই তোমাকে বড় ঈর্ষা হয়। শাহাদাতের পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত তোমাকে বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে, একনিষ্ঠ সহকারী হিসেবে নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু আল্লাহর দরবারে শাহাদাৎ কবুলের মুহুর্ত থেকে আমি তোমাকে নেতা মানছি। তোমার কর্মতৎপরতা, আত্মগঠনে নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের প্রশ্নে সতর্কতা ও ন্যায়নিষ্ঠার যে উদাহরণ তোমার জীবন থেকে আমি পেয়েছি তা সাধ্যমত নিজে অনুসরণ করা ও অন্যকে অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করাকে আমার নৈতিক দায়িত্ব মনে করছি।”

শেষ কথাঃ

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেনঃ যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলোনা বরং তারা জীবিত কিন্তু এব্যাপারে তোমাদের কোন চেতনা নাই। শহীদ আব্দুল মালেক আজকে আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া প্রেরণা চির ভাস্বর হয়ে আছে এবং থাকবে। একজন আব্দুল মালেকের জায়গায় আজ লক্ষ লক্ষ আব্দুল মালেক ছুটে এসেছে। শহীদ আব্দুল মালেক ইসলামী শিক্ষা বা ইসলামী আন্দোলনকে প্রতিষ্ঠিত হিসেবে দেখে যেতে পারেননি ঠিকই কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য তাঁর উত্তরসূরীরা জানবাজ চেষ্টা করছে এবং করবে। পেছন থেকে প্রেরণা যোগাবে লক্ষ কোটি শহীদের মিছিলে শামিল হওয়া শহীদ আব্দুল মালেক। মরহুম কবি মতিউর রহমান মল্লিকের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বললে বলতে হয়-

‘‘শহীদ মালেক আজো আমায় ডাকে

সকল বাধা পেরিয়ে যেত

সেই দিশারী আড়াল থেকে হাঁকে...।’’

বিষয়: বিবিধ

১৬৬২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

335966
১৫ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৫:১৮
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : অনুপ্রেরনার প্রতিক
ধন্যবাদ
১৫ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
277905
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
335970
১৫ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৫:২৩
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : "তোমরা ভুলে গেছো মালেক ভাইয়ের নাম? যে মালেক জীবন দিয়ে দ্বীনের পথে করেছে সংগ্রাম"
ধন্যবাদ আপনাকে
১৫ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
277906
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাই।
336048
১৬ আগস্ট ২০১৫ রাত ০২:৩৭
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

অনেককিছু জানলাম লিখাটি পড়ে!আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন!

জাযাকাল্লাহু খাইর!
২২ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৯:১০
279239
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : আমিন
336080
১৬ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৪৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২২ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৯:১১
279240
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File