জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাঃ ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার- ৩

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৫:২৫:৪০ বিকাল



যে কোন কিছুরই একটা নীতিমালা থাকবে বা থাকা দরকার। কিন্তু সেই নীতিমালায় যদি থাকে ভিন্নমত দমনের কৌশল বা হাতিয়ার তাহলে কখনই সেটা দেশ বা জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। সম্প্রচার নীতিমালার ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। নীতিমালায় এমন কিছু বিষয় আছে যা দেশ ও জাতির জন্য সাংঘাতিক সমস্যার কারন হয়ে দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক সমাজ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দ সহ সকলেই এই নীতিমালার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সকল কিছুকে থোরাই কেয়ার করে সরকার নীতিমালাকে সরকারী গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত করে ফেলেছেন।

এখন দেখি কি আছে সেই স¤প্রচার নীতিমালায় যার জন্য এত কথা-

নীতিমালায় বলা হয়েছে- ‘‘সশস্ত্র বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কিছু স¤প্রচার করা যাবে না”।

যদি এই ধারাটি কার্যকর হয় তাহলে দেশে এক অরাজকতার সৃষ্টি হতে পারে। তার বাস্তব প্রমান আমরা পাই নারায়নগঞ্জের সেভেন মার্ডারে। র‌্যাব কর্তৃক সেভেন মার্ডার সংঘটিত হলো, এখন যদি তাদের বিরুদ্ধে মিডিয়াগুলো বলে তাহলে সম্প্রচার নীতিমালার বিরুদ্ধাচরনের কারনে মিডিয়াকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয় আর যদি র‌্যাবের বিরুদ্ধে না বলে তাহলে র‌্যাবের এমন গর্হিত কাজ আরও বাড়তেই থাকবে। এমতাবস্থায় মিডিয়া কি ভুমিকা পালন করবে! সরকার যেখানে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কিছু সম্প্রচার করা যাবে না তাহলে এটা সম্প্রচার করলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে কি না?

এরকম নীতিমালা থাকলে ১০ ট্রাক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই প্রচার করা যেত না, কারন ঐ ঘটনায় এনএসআই ও ডিজিএফআই এর কর্মকর্তাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে বলা হয়েছে। এটা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের স্বকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকেই জানা গেছে। এরকম নীতিমালা থাকলে এবং সেটা মানতে হলে ২০০৫ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে সম্প্রচার মাধ্যমে কিছুই প্রচার করা যেত না। কারন, তাতে এ ঘটনায় পুলিশের তিন সাকেব মহাপরিদর্শক, এনএসআই এর দুজন সাবেক প্রধান ও সিআইডির তিন সাবেক কর্মকর্তা সহ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা ছিল এবং এ সংক্রান্ত মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। ডিজিএফআই, এনএসআই ইত্যাদি সরকারী সংস্থা ও সরকারের অনেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ভাবমুর্তি বিনষ্ট হতো। যেহেতু এসকল প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তার ভাবমুর্তির প্রশ্ন আসছে তাহলে কি আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই নীতিমালার আলোকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিষয়ে আর আগাবেন না, মামলা কি এখানেই স্থগিত রাখবেন, নাকি মামলাটাকে বাদ দিয়ে দিবেন। নীতিমালার আলোকে তো এটাই হয় যে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সুনাম রক্ষার্থে এই মামলার এখনই ইতি ঘটানো দরকার।

এই নীতিমালা মানতে হলে পুলিশ বা র‌্যাবের হেফাজতে নির্যাতন, বিচারবহির্ভুত হত্যা, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কেও কিছু সম্প্রচার করা যাবে না, কারন তাতে এই সংস্থাগুলোর ভাবমুর্তি বিনষ্ট হবে। এই নীতিমালা থাকলে র‌্যাবের সদস্যদের গুলিতে পা হারানো কিশোর লিমন সম্পর্কে স¤প্রচার মাধ্যমে কিছুই প্রচার করা যেত না। র‌্যাব এভাবে বিচারবহির্ভুত বেশ কিছু হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বা এখনো ঘটাচ্ছে এই নীতিমালার আলোকে তার কোন কিছুই প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না। এভাবে চলতে থাকলে তো মানুষ ঘর থেকেও বের হতে চাইবে না। অথবা সকলেই আতঙ্কে থাকবে। যে কোন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এসে যে কারো কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করবে যদি না দেয় তাহলে ক্রসফায়ারে দেয়ার ভয় দেখাবে বা ক্রসফায়ারেই দিয়ে দিবে অথচ এই সাংঘাতিক বিষয়টাও এই নীতিমালার কারনে প্রচার করা যাবে না। অবস্থাটা এমন যে, ডাংগায় বাঘ আর জলে কুমির। । এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা যাব কোথায়। কার কাছে গিয়ে দুঃখের কথাগুলো বলবো! ঢাকার মিরপুরে বিহারী পল্লীর কথা আমরা সকলেই জানি। এতগুলো মানুষকে পুড়িয়ে মারার পরেও কাউকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো গেল না। কাল বিহারী পল্লিতে এমন ঘটনা ঘটলে পরশু আমাদের পল্লীত ঐ ঘটনা ঘটবে না এর নিশ্চয়তা কি?

মিরপুর থানা পুলিশের এসআই জাহিদ এর নির্যাতনে এক ঝুট ব্যবসায়ীর মৃত্যু যদি স¤প্রচার মাধ্যমে প্রচার না হতো তাহলে জাহিদকে আজকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যেত না, যদিও বা মূল হোতারা পার পেয়ে গেছে।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আবুল কালাম আযাদ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে ম্যানেজ করেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ আছে, এই নীতিমালার আলোকে সেই বিষয়টিও প্রচার করা যাবে না কারন তাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়!

এরকম বেশ কিছু ধারা ও উপধারা আছে যা দেশ ও জনগনের জন্য মারাত্মক হুমকির কারন হয়ে দেখা দিতে পারে। কারো নিকট থেকে কোটি টাকা নিয়ে গেলে বা জবাই করে মেরে ফেললেও কিছু বলতে পারবেন না বরং আপনাকে নিরবে শুধু চোখের পানিই ফেলতে হবে।

দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন যে, মূলত নারায়নগঞ্জের ঘটনার পরই সরকার এই স¤প্রচার নীতিমালা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

চলবে.....

বিষয়: বিবিধ

১০১৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

268707
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৭
এক্টিভিষ্ট লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ । চলুক

ভাবি ভালো? Love Struck Love Struck
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৭
212897
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছেন।
268745
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৫০
ফেরারী মন লিখেছেন : যা বলেছেন ভালো বলেন তবে একটা নীতিমালা থাকার কি দরকার নেই?
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৯
212898
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : আমি তো বলেছি যে, একটা নীতিমালার অবশ্যই দরকার আছে। উপরে আমি সেটাই বলেছি।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File